Hare to Whatsapp
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি দায়িত্ব নেওয়ার পর নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের দোরগােড়ায় নিয়ে এসেছেন : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, অক্টোম্বর ১১, : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন। গত ৮-৯ অক্টোবর গুয়াহাটির আসাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কলেজে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের দু-দিন ব্যাপী ৭০-তম প্ল্যানারি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের চেয়ারম্যান অমিত শাহ এই প্ল্যানারী মিটিং-এ সভাপতিত্ব করেন। কেন্দ্রীয় উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি সহ পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এই বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। ১০ অক্টোবর বিকেলে মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের দু’দিনব্যাপী ৭০তম প্ল্যানারি মিটিংয়ে আলােচনার বিষয়গুলাে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অমিতাভ রঞ্জন, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় যেমন, এসডিজি, ডিস্ট্রিক্ট ইন্ডিকেটর ফ্রেমওয়ার্ক ফর নর্থ ইস্ট, উত্তর পূর্বাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা, বেসরকারী ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ (পিপিপি), ৫জি পরিষেবা, ডিজিটাল স্কুল চালু, এন্টারপ্রেনারশীপের উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়সমূহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের অধিকারিকদের কাছে। উপস্থাপন করা হয়েছে।
বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের সামগ্রিক বকেয়া বিষয়গুলির দ্রুত সমাধানের জন্য উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদ ও ভারত সরকারের গােচরে আনতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডােনার মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও পর্ষদের অন্যান্য সদস্যদের কাছে তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি দায়িত্ব নেওয়ার পর নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের দোরগােড়ায় নিয়ে এসেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের শান্তি রক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গত ৮ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির ফলে এই অঞ্চলের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের মধ্যে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস সদর্থক আকার নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি রাজ্য সরকারের মূল অগ্রাধিকারের বিষয়। গত সাড়ে চার বছর ধরে রাজ্য সরকার বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে রাজ্যের আর্থ সামাজিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের দু-দিন ব্যাপী ৭০-তম প্ল্যানারি মিটিংয়ে পর্যটনের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর ৫ লক্ষ দেশ ও বিদেশের পর্যটক রাজ্যে ভ্রমণ করছেন। ত্রিপুরা ট্যুরিজম পলিসি-২০২০-২৫ রাজ্যে চালু হয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামাে ও পরিষেবা প্রদান করা। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সদর্থক সহায়তা সরকারের এই প্রয়াসকে উজ্জীবিত করবে বলে তিনি বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যােজনার অধীনে দেশের প্রতিটি রাজ্যে একটি এইমস্ স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজ্যেও এইমসের ধাঁচে একটি হাসপাতাল গড়ে তােলার জন্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত এই কাজটি করার জন্য এনইসির বৈঠকে তিনি দাবী জানিয়েছেন। টি বাের্ড, কফি বাের্ড, রাবার বাের্ড এবং স্পাইসেস বাের্ডের মতাে আগরতলাকে সদর দপ্তর করে রাজ্যে আগর উড বাের্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিবেচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনুরােধ জানিয়েছেন। রাজ্যের উৎপাদিত চা এর বাজারজাতকরণের জন্য ই-মার্কেট প্লেস-এর ব্যবহারের উপরও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরােপ করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের দু-দিন ব্যাপী ৭০-তম প্ল্যানারি মিটিংয়ে ত্রিপুরার চা বাংলাদেশে রপ্তানি করার জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গােচরে আনা হয়েছে। প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক রাজ্য। রাজ্যের রাবার উৎপাদকদের বিশেষ ইনসেনটিভ প্রদান এবং আধুনিক স্মােক হাউস নির্মানের জন্য রাবার বাের্ডকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অনুরােধ করতে মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। বাংলাদেশে রাবারজাত সামগ্রী রপ্তানীর ক্ষেত্রে বন্দরের বিভিন্ন বিধিনিষেধগুলি তুলে নেওয়া প্রয়ােজন বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সীমানায় একটি প্রধান ল্যান্ড পোের্ট স্থাপনের বিষয়টি ভারতের দিক থেকে পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ত্রিপুরাকে যুক্ত করার লক্ষ্যে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুকে বাংলাদেশের দিক থেকে কার্যকরভাবে চালু করতে সমস্ত সুযােগ সুবিধা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরােধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। মূহুরীঘাট এবং মনুঘাটে ইন্টিগ্রটেড ডেভেলাপমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মানে নাে অবজেকশন প্রদানের জন্য বাংলাদেশকে সরকারকে অনুরােধ করার বিষয়টিও আলােচনায় উত্থাপিত হয়। একেবারে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত সমস্ত পণ্য সামগ্রী পরিবহন করার অনুমতি প্রদানের বিষয়টি ভারত এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবী। তাই এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। রাজ্য সরকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং আগরতলার মধ্যে | বিমান পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইজন্য প্রতিবছর রাজ্য সরকার ভায়াবেল গ্যাপ ফান্ডিং হিসাবে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করবে। দ্রুত বিমান পরিষেবা চালুর বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে অনুরােধ জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সঁতার ও জিমন্যাসটিকসে বহু নামী খেলােয়াড় রয়েছেন এবং আগামীদিনেও বহু সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদ উঠে আসছেন। আগরতলায় নেতাজী সুভাষ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জিমনাসিয়াম হলটিকে ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিকস একাডেমী হিসাবে ঘােষণার জন্য রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনার জন্য রয়েছে। দ্রুত এটি কার্যকর হলে রাজ্যের ও দেশের খেলােয়াড়রা উপকৃত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। জাতীয় মানের একটি সুইমিং পুল নির্মানে অর্থ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানাের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। শহরে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড রাজ্যে মূখ্য দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রকের অনুমােদন ব্যতিরেকে রাজ্যে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সম্ভব নয়। তাই শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে দাবী জানিয়েছেন। আগরবাতির শলাকা পরিবহণের ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য কুমারঘাট রেল স্টেশন পর্যন্ত পার্সেল ভ্যানের পরিষেবা সম্প্রসারণের দাবী জানান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের জনজাতিদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লক এলাকায় বসবাসকারী জনজাতিদের উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষা, পরিকাঠামােগত উন্নয়ন, যােগাযােগ ব্যবস্থা এবং মজবুত জীবন জীবিকার উন্নয়নের জন্য ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তর ১৩০০ কোটি টাকার এক্সটারন্যাল এইডেড প্রজেক্টের একটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে পাঠিয়েছে। তাই এই বিষয়টিকে ত্বরানিত করা আবশ্যক বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবী জানান। সুবর্ণ জয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যােজনার অধীনে বিভিন্ন ক্যাপিটেল ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, মহিলা স্ব-শক্তিকরণ ও পরিকাঠামাে উন্নয়নে রাজ্য সরকারের বাজেটে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় করার ঘােষণা করার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী আলােচনায় তুলে ধরেন। উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদ উত্তর পূর্বাঞ্চলের নীতি আয়ােগ হিসাবে একটি একমুখী সমাধান কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। প্ল্যানারীর প্রথম দিনের বৈঠকে ডােনার মন্ত্রকের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সচিব, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবগণ এবং কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও দপ্তরের আধিকারিকগণ অংশ নেন।