Share Whatsapp

রাজ্যে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরাের শাখা খােলার প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, অক্টোম্বর ১১, : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা গত ৮ অক্টোবর গুয়াহাটিতে মাদক পাচার ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির আঞ্চলিক বৈঠকে রাজ্যে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরাের শাখা খােলার প্রস্তাব দিয়েছেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীগণ। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ড্রাগ পাচার রুখতে যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন।

১০ অক্টোবর বিকেলে সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা মাদক পাচার ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আলােচনার বিষয়সমূহগুলি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অমিতাভ রঞ্জন, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আলােচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মায়ানমার থেকে ত্রিপুরা হয়ে বিভিন্ন ড্রাগ বাংলাদেশে পাচার হয়। তাছাড়াও মায়ানমার থেকে মিজোরাম ও আসাম হয়ে ত্রিপুরা দিয়ে ড্রাগ পাচার হয় বাংলাদেশে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরা হয়ে কফ শিরাপও বাংলাদেশে পাচার হয়। রাজ্যে বহু বছর ধরে গাঁজা চাষ করার বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর নেশামুক্ত ভারত গড়ার সাথে রাজ্যেও নেশামুক্ত ত্রিপুরা অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। বেশি সংখ্যায় ড্রাগ বাজেয়াপ্ত করা রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম বলে বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৭০০টি ড্রাগ পাচারকারী গাড়ি আটক করা হয়েছে। নেশা বিরােধী অভিযানে রাজ্যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। তাতে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ১৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। মামলাগুলির ট্রায়াল পর্যবেক্ষণ এবং পাবলিক প্রসিকিউটার ও সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটারের সাথে যথাযথ সমন্বয়ের ফলে ৭টি মামলায় অভিযুক্তগণ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ড্রাগ পাচার রুখতে বিশেষ অভিযান সংগঠিত করার পাশাপাশি নিয়মিত আকস্মিক পরিদর্শন করা হচ্ছে। ত্রিপুরা পুলিশ ড্রাগ পাচারে যুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলায় আর্থিক তদন্তে অ্যাকাউন্ট সিজ করা সহ সম্পত্তি ও নগদ অর্থ মিলিয়ে মােট ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অর্থ উদ্ধার করেছে। তাছাড়া গাড়ি সহ প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠকে কেন্দ্রীয় সংস্থা যথাক্রমে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরাে (এনসিবি), এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) সাথে নিয়মিত সমন্বয় রাখার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়াও নর্থ ইস্টার্ন পুলিশ একাডেমি (এনইপিএ), ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমি (এনপিএ) নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরাে (এনসিবি) ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরােতে (আইবি) পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং স্কুল, কলেজ, সামাজিক ক্ষেত্রে পুলিশি উদ্যোগ ও প্রয়াস কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতা গড়ে তােলার কথা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠকে রাজ্যে স্কুল প্রহরি গ্রুপ গঠন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানাের জন্য সােশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়াও বৈঠকে আন্তর্জাতিক সীমান্তে ফেন্সিংহীন এলাকায় বিএসএফ মােতায়েন জোরদার করার পাশাপাশি আসাম ও মিজোরাম সীমান্তে চেকিং সহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উপর মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে গুরুত্ব আরােপ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। আসাম, মিজোরাম ও ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টদের মধ্যে প্রতিমাসে বৈঠক করার পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সাথে আরও বেশি করে সমন্বয় সাধনের উপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। ড্রাগ পাচার রুখতে ফেন্সিং সহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন, আলাে, ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ইমিজারি সফটওয়ার, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাদক পাচার রুখতে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন সহ নাকা পয়েন্টগুলিতে আরও বেশি নজরদারি এবং যানবাহন সহ জাতীয় সড়কে টহল বাড়ানাের বিষয়টি সম্পর্কেও উত্থাপিত করা হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি লাগেজ স্ক্যানার / ফুল বডি ভেহিক্যাল স্ক্যানারের প্রয়ােজনীয়তার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। গণসচেতনতামূলক কর্মসূচির জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ ও গাঁজা চাষের পরিবর্তে লাভজনক বিকল্প অর্থকরি ফসল চাষের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরে হয়েছে। মাদক পাচার ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির আঞ্চলিক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে নর্থ ইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের বিষয় সমূহ নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের বিষয়গুলি নিয়ে বিশদ আলােচনা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টিও সভার আলােচনায় প্রাধান্য পায়।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.