২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বিকশিত ত্রিপুরা গঠনে কার্যকরি ভূমিকা নেবে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, মার্চ ২৯, : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট জনহিতকর বাজেট। এই বাজেট রাজ্যের সমস্ত অংশের মানুষের কল্যাণকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানকে ফলপ্রসূ করতে বিকশিত ত্রিপুরা গঠনে এই বাজেট কার্যকরি ভূমিকা নেবে। বাজেটে মহিলা, যুব, দিব্যাঙ্গ, কর্মচারি, পেনশনভোগী, জনজাতি, তপশিলি জাতি, ওবিসি, কৃষক সহ প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২৮ মার্চ বিধানসভায় গত ২১ মার্চ অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়ের পেশ করা বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। আলোচনায় প্রথমে তিনি এই জনকল্যাণমুখী বাজেট তৈরির জন্য অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় এবং তার টিমকে ধন্যবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এবারের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটেরও প্রশংসা করে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষকে তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে কেন্দ্রীয় বাজেট বড় ভূমিকা গ্রহণ করবে।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আরও বলেন, রাজ্য সরকারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক কর্মসূচি, কৃষি উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেটে আয় ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতবারের তুলনায় ৪৬ ১৮.৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮-এর তুলনায় এই বাজেট বৃদ্ধির হার ১০৩.২১ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় এই বাজেট বৃদ্ধির হার ১২.৮৯ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতি কল্যাণে বর্তমান রাজ্য সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও সংবেদনশীল। জনজাতিদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে সরকার বরাবর সচেষ্ট রয়েছে। এবারের বাজেটে জনজাতি কল্যাণে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যে জাতীয় সড়কগুলির নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার ফলে জনজাতি এলাকা এবং সেখানকার বসবাসরত মানুষরাই সর্বাধিক উপকৃত হয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মিলিত প্রয়াসে বর্তমানে রাজ্য সন্ত্রাসবাদ মুক্ত হয়েছে। জনজাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতির সংরক্ষণে বাদ্যযন্ত্রাদির কর্মশালা আয়োজনের জন্য টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। মেধাবী জনজাতি ছাত্রছাত্রীরা যাতে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারেন তারজন্য চিফ মিনিস্টার্স ট্রাইবেল ডেভেলপমেন্ট মিশনের আওতায় সুপার ১০০ প্রোগ্রাম চালু করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত জল জীবন মিশনে ৬ লক্ষের বেশি পরিবারের মধ্যে পানীয়জলের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধিতে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাদের অ্যাকাউন্টে ৮৪২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলি যোজনায় এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের উপর সুবিধাভোগী তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে ১৬২ জনের বাড়িতে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। রাজ্যের মহিলাদের স্বশক্তিকরণে প্রতিটি জেলায় একটি করে মহিলা থানা, নবম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান, মহাবিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীদের স্কুটি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে মহিলা পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিণত করা হয়েছে। টি.আর.এল.এম.-এ প্রায় ৫৩ হাজারের উপর স্ব-সহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা নামক নতুন প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যার জন্য প্রতিটি কন্যা সন্তান পিছু ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে অন্ত্যোদয় পরিবারভুক্ত সদ্যজাত কন্যা সন্তানের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হবে, যা ১৮ বছর হলে পরে তোলা যাবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষজন যাতে আগরতলা শহরে এসে রাত্রিযাপন করতে অসুবিধা না হয়, তারজন্য ভারতমাতা ক্যান্টিন তথা নৈশ যাত্রীনিবাস স্থাপন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাছাড়াও চিফ মিনিস্টার স্কিম ফর মেন্টালি চ্যালেঞ্জডস পার্সনস নামক নতুন এক স্কিম চালু করা হবে। এর মাধ্যমে মানসিকভাবে দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের মাসিক ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হবে। তাছাড়াও তাদের জন্য আগরতলায় একটি রিক্রিয়েশন সেন্টার স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ.জি.এম.সি. এবং জি.বি.পি - হাসপাতালে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও সুপার স্পেশালিটি বিভাগ খোলার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় ট্রমা সেন্টার তৈরি করে রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতালগুলির উপর রোগীর চাপ কমানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে আগরতলার রাধানগর থেকে আই.জি.এম. হাসপাতাল পর্যন্ত ২.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উদয়পুরের জগন্নাথ চৌমুহনি থেকে খিলপাড়া পর্যন্ত ১.৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপুল নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রাণীপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ৫৫টি নতুন মিনি মোবাইল ভেটেরিনারি ইউনিট চালু করা হবে। তাছাড়া বামুটিয়ায় গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডকে নতুন দুগ্ধ উৎপাদন প্রকল্প তৈরিতে সহায়তা করা হবে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষার বিকাশে আমবাসা, কাকড়াবন ও করবুকে নতুন ৩টি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আগরতলা, উদয়পুর ও আমবাসায় ত্রিপুরা কম্পিটিটিভ এক্সামিনেশন সেন্টার চালু করা হবে।

প্রতিটি মহকুমায় একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিজ্ঞান এবং ইংরেজি বিষয়ের কোচিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। সদর মহকুমায় ৩টি কোচিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। কম্পিউটারভিত্তিক অনলাইন পরীক্ষার জন্য হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা গ্রাউন্ডে কম্পিউটারভিত্তিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। গন্ডাতুইসা ও কাকড়াবনে সিন্থেটিক ফুটবল টার্ফ বসানো হবে। দশরথ দেব স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট স্পোর্টস হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করার জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি উন্নয়ন ও রক্ষায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ অধ্যুষিত ব্লকগুলির আর্থসামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। আরক্ষা বাহিনীদের কাজের সুবিধার্থে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পশ্চিম আগরতলা, পূর্ব আগরতলা, বিলোনীয়া, বাইখোড়া, বাগবাসা ও মধুপুর পুলিশ স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন মহকুমার ফায়ার স্টেশনগুলির নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। আগামীদিনে রাজ্য থেকে যাতে সু-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উঠে আসতে পারেন তারজন্য রাজ্যে এবার যুব সাংসদ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে জি.এস.ডি.পি-তে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মাথাপিছু গড় আয়ের দিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিমের পরেই রাজ্যের অবস্থান। ষোড়শ অর্থকমিশনের রাজ্য সফরকালে দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.