Share Whatsapp

রাজ্যে রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের মতাে প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৭, : ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ এন্ড ড: বি আর আম্বেদকর টিচিং হাসপাতালকে সুসংহতকরণের মাধ্যমে মনিপুরের রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের মতাে প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই এর অনুমােদনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট প্রস্তাব পাঠানাে হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ড. দেবাশিষ বসু এই সংবাদ জানান। স্বাস্থ্য সচিব জানান, রাজ্যের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে রাজ্য সরকারের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছানাে যায়, সেই লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বত্র কর্মযজ্ঞ চালু রয়েছে। রাজ্যের জনগণকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্যে বর্তমানে ৬টি রাজ্যভিত্তিক হাসপাতাল, ৬টি জেলাভিত্তিক হাসপাতাল, ১৪টি মহকুমা হাসপাতাল, ২১টি সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১১৮টি আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৯৯৯ টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১৩টি ব্লাডব্যাঙ্ক (সরকারী-১১, বেসরকারী-০২), ৬টি (সরকারি -০৪, প্রাইভেট - ০২) ব্লাড কম্পােনেন্ট সেপারেশন ইউনিট, ৭টি ব্লাড স্টোরেজ সেন্টার রয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর সুভাশিষ দাস জানান, রাজ্যের শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে গড়ে তােলার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব- সুস্থ কৈশাের অভিযানের সূচনা করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে জাতীয় কৃমিনাশক দিবসে ৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ১৯৩ জন ছেলেমেয়েদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানাে হয়েছে। ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৭৯২ জন ৯ মাস বয়স থেকে ৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিটামিন-এ পরিপূরক খাওয়ানাে হয়েছে। ইনটেনসিফায়েড ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ পক্ষকাল কর্মসূচির আওতায় ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৯৪৮ জন ০-৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের ও আর এস খাওয়ানাে হয়েছে। আয়রন ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন কর্মসূচির আওতায় ১০ লক্ষ ৭ হাজার ১৪৫ জন ৬ মাস বয়স থেকে ১৯ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের আই এফ এ সিরাপ, গােলাপী এবং নীল ট্যাবলেট খাওয়ানাে হয়। এ বছরের ২১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমগ্র রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব- সুস্থ কৈশাের অভিযান-২.০র বিশেষ কর্মসূচি সংগঠিত করা হয়। এই কর্মসূচিতে জাতীয় কৃমিনাশক দিবসে ১০ লক্ষ ১ হাজার ৬৭০ জন ছেলেমেয়েদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানাে হয়েছে। ১ লক্ষ ৬ হাজার ৯৯ জন ছেলেমেয়েদের ৯ মাস বয়স থেকে ৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিটামিন-এ পরিপূরক খাওয়ানাে হয়েছে। ইনটেনসিফায়েড ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ৪৮ হাজার ২৭৭ জন ছেলেমেয়েদের ০-৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের ও আর এস খাওয়ানাে হয়েছে। আয়রন ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন কর্মসূচির আওতায় ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন ছেলেমেয়েদের ৬ মাস বয়স থেকে ১৯ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের আই এফ এ সিরাপ, গােলাপী এবং নীল ট্যাবলেট খাওয়ানাে হয়। পােষন অভিযান-এর অন্তর্গত শূন্য থেকে ৬ বছর বয়সের ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৩২ জন ছেলেমেয়েদের ওজন ও উচ্চতা মাপার মাধ্যমে পুষ্টিমান নির্ণয় করা হয় এবং তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

মিশন ডিরেক্টর জানান, রাজ্যে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ুষ্মন ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরােগ্য যােজনা প্রকল্প চালু করা হয়।২০২২-২৩ অর্থবছরে (আগস্ট মাস পর্যন্ত) ১৫ হাজার ৫০৬ টি আয়ুষ্মন ই-কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

এই প্রকল্পে ৩১ হাজার ৬৬৪ জন চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। তিনি জানান,সকল অংশের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সু-নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রে উন্নীত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৩৪ টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১০১

টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ১৪ টি আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রে উন্নীত করা হয়েছে। জননী শিশু সুরক্ষা কর্মসূচিতে ২০২২-২৩ (জুলাই পর্যন্ত) অর্থ বছরে ৯ হাজার ৬৮২ জনগর্ভবতী মহিলা ও ১ হাজার ৯৩৪ জন নবজাত শিশুকে পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জননী সুরক্ষা যােজনায় ২০২২-২৩ (জুলাই পর্যন্ত) অর্থবর্ষে তপশীলি জাতি, জনজাতি এবং দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী সাধারণ ক্যাটাগরির ৩০০০ জন গর্ভবতী মায়েদের জননী সুরক্ষা যােজনা-র আওতায় বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে মায়েদের প্রসবকালীন নিরাপত্তার জন্য ৭ টি ‘মায়ের ঘরও চালু করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে মিশন ডিরেক্টর জানান, জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ (জুলাই পর্যন্ত) অর্থবর্ষে ১৪ হাজার ৫৮৫ জন শিশুকে পূর্ণ টিকাকরণ করা হয়েছে এবং ১৩ হাজার ২১২ জন গর্ভবতী মা’কে টিটেনাস-ডিপথেরিয়া টিকা প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রূপায়নের ফলে সম্পূর্ণ টিকাকরণের হার বেড়ে হয়েছে ৯৪% শতাংশ। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ডায়ালাইসিস প্রােগ্রামে ২০২২-২৩ (জুলাই পর্যন্ত) অর্থবর্ষে বিনামূল্যে ৮ হাজার ৪৮১ টি হেমােডায়ালাইসিস সেশনের মাধ্যমে রােগীদের পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকারের সাফল্য তুলে ধরে অধিকর্তা ডা: চিন্ময় বিশ্বাস জানান, আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের অধীনে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে কার্ডিওলজি এবং ইউরােলজি বহির্বিভাগ পরিষেবা শুরু হয়েছে।জয়ন্তী ব্লকে স্বনির্ভর জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ চালু হয়েছে। মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে যেখানে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, জেরিয়াট্রিক বিভাগ রয়েছে সেখানে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৬০ শয্যা বিশিষ্ট করা হয়েছে।রাজ্য সরকারের ৩৫ শতাংশ শেয়ারে হাপানিয়াস্থিত ত্রিপুরা ইন্সটিটিউট অব প্যারামেডিকেল সায়েন্স (টিপস)-এর অধীনে স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব নার্সিং-এ এম এসসি নার্সিংয়ে এই প্রথমবার ভর্তির জন্য ৩ টি নমিনেশন জারি করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা আরও জানান, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ইকফাই ইউনিভার্সিটিতে ৫০ আসন বিশিষ্ট জিএনএম কোর্স চালু করা হয়েছে। আইএলএস নার্সিং ইনস্টিটিউট, আগরতলাতে ৫০ আসন বিশিষ্ট বিএসসি নার্সিং কোর্স চালু করা হয়েছে। সর্বদয়া ইনস্টিটিউট অফ নার্সিং সায়েন্স, মেলাঘরে ৬০আসন বিশিষ্ট জিএনএম কোর্স চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, রিপস্যাটে ৬ আসন বিশিষ্ট এম ফার্মা কোর্স চালু করা হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছর থেকে ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব প্যারামেডিক্যাল সায়েন্স-এ ৬ টি নতুন কোর্স চালু করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিকারের সাফল্য তুলে ধরে অধিকর্তা ডা: শুভাশিষ দেববর্মা জানান,স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে সম্প্রতি কুলাইস্থিত ধলাই জেলা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে অক্সিজেন সাপাের্ট সহ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও উদয়পুর এবং শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। আইজিএম হাসপাতালের দন্ত বিভাগে ৪ টি অত্যাধুনিক দন্ত চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে।দন্ত বিভাগে ওপিডিও চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, আইজিএম হাসপাতালে জি + ৭ ভবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলা ওয়ার্ড, চক্ষু বিভাগ, প্যাথােলজি ল্যাবরেটরি এবং অর্থপেডিক বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবার কল্যাণ ও রােগ প্রতিরােধক অধিকারের অধিকর্তা ডা: রাধা দেববর্মা জানান,২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সিপাহীজলা জেলার বক্সনগরে, খােয়াই জেলার কল্যাণপুরে এবং গােমতী জেলার নূতনবাজারে ৩টি নতুন সিএইচসি বিল্ডিং-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও স্টাফ কোয়ার্টারসহ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মতিনগর পিএইচসি-এর নতুন বিল্ডিং-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলিও তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে ধরেন।




You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.