Hare to Whatsapp
রাজ্যে মিশন অমৃত সরােবর প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার উপর মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্ব আরােপ
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ২, : গ্রামীন অর্থনৈতিক বিকাশে গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জনকল্যানমূলক প্রকল্পগুলি গ্রামীন এলাকার জনগনের আর্থসামাজিক মানােন্নয়নে বড় ভূমিকা নেয়। ১ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের পর্যালােচনা সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা। রাজ্যে গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির কাজের অগ্রগতি পর্যালােচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গ্রামীন এলাকার জনগনের সার্বিক বিকাশে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি দ্রত রূপায়নের পাশাপাশি যে সমস্ত কাজ অসম্পূর্ন রয়েছে তা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে। রাজ্যে মিশন অমৃত সরােবর প্রকল্পে কাজের গুনমান বজায় রাখার পাশাপাশি গ্রামােন্নয়ন দপ্তরকে বন দপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে দ্রুত শেষ করার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরােপ করেছেন। এক্ষেত্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করার জন্যও তিনি পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, রাজ্যে ৯৬৪টি অমৃত সরােবর করার জন্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৮ আগষ্ট ২০২২ পর্যন্ত রাজ্যে ৭৫টি অমৃত সরােবরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ৭৫টি অমৃত সরােবরের মধ্যে ২৫টি নতুন জলাশয় ও ৫০টি জলাশয়কে সংস্কার কাজ করা হয়েছে।
সভায় গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, গ্রামীন এলাকায় যে সমস্ত অসম্পূর্ন কাজ রয়েছে সেইগুলি আগামী ডিসেম্বর ২০২২-এর মধ্যে শেষ করতে হবে। তারজন্য দপ্তরের আধিকারিকদের আরও বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তিনি বলেন, রাজ্যের ১২টি অ্যাশপিরেশনাল ব্লক এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সেচ, প্রানীপালন, পানীয় জল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।
তা জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়ােজন। এর ফলে জনগন সরকারের জনকল্যানমূলক কাজ সম্পর্কে আরও বেশি অবগত হবে।
পর্যালােচনা সভায় গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্প সমূহের সাফল্য, অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ নিয়ে বিস্তৃত আলােচনা করেন। এম জি এন রেগা, মিশন অমৃত সরােবর, প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনা- গ্রামীন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ন্যাশনাল রুরবান মিশন, দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যােজনা জাতীয় গ্রামীন জীবিকা মিশন, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীন কৌশল্য যােজনা, সাংসদ আদর্শ গ্রাম যােজনা, মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যােজনা সহ পঞ্চায়েত দপ্তরের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সভায় আলােচনা হয়। বিশেষ সচিব জানান, ২০২১ ২২ অর্থবর্ষে এমজিএন রেগায় ৪২৬, ১৮ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। গড়ে ৭২ শ্রমদিবসের সৃষ্টি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ সম্পন্ন করেছে ১,০৯,২১৭টি পরিবার। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এখন পর্যন্ত ১৩৩.১৯ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। গড়ে ৩৩ শ্রম দিবস সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৭.৮৫ গড় শ্রমদিবস নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ধলাই জেলা।
সভায় বিশেষ সচিব জানান, রাজ্যের ১,৮৬৫টি পরিবার এমজিএন রেগায় ১০০ দিনের কাজ পেয়েছে। এমজিএন রেগায় ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত কাজ শেষ করার হার ৯১.৪৩ শতাংশ। ৬১ শতাংশ আধার লিংক ভিত্তিক অ্যাকাউন্টে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার করা হয়েছে। বিশেষ সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনা-গ্রামীন প্রকল্পে ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১,৫৬,৫২৮টি ঘর নির্মানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে কাচা ঘরের সংজ্ঞা পরিবর্তনের পর রাজ্যে এসইসি তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনা-গ্রামীন প্রকল্পে ১,৫৯, ৯১৩টি বরাদ্ধকৃত ঘরের মধ্যে ৩০ আগষ্ট ২০২২ পর্যন্ত ১, ১২,৪৫৪ টি ঘর নির্মানের কাজ শেষ হয়েছে।
পর্যালােচনা সভায় ত্রিপুরা গ্রামীন জীবিকা মিশনের আওতায় দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যােজনা জাতীয় গ্রামীন জীবিকা মিশনের কাজকর্ম নিয়ে আলােচনা করে ত্রিপুরা গ্রামীন জীবিকা মিশনের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক বিশাল কুমার জানান, রাজ্যের ৩.৪ লক্ষ মহিলাকে স্বসহায়ক গােষ্ঠীতে সংগঠিত করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৬৭৯২টি স্ব-সহায়ক গােষ্ঠীকে উন্নীত করা হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্ব-সহায়ক গােষ্ঠীকে প্রায় ২১৪.২৫ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদান করা হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার অধিক বলে জানান মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩৯৪৯টি মহিলা পরিচালিত স্ব-সহায়ক গােষ্ঠীকে উন্নীত করা হয়েছে। মহিলা স্ব-সহায়ক গােষ্ঠীকে নিয়ে ১৪১টি নতুন গ্রামীন সংস্থা (ভিলেজ অর্গানাইজেশন) গঠন করা হয়েছে। তাছাড়াও তিনি দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যােজনা-জাতীয় গ্রামীন জীবিকা মিশনের নতুন উদ্যোগসমূহ সহ দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীন কৌশল যােজনায় রুপায়িত কর্মসূচি সমূহ নিয়ে সভায় আলােচনা করেন।
পর্যালােচনাসভায় পঞ্চায়েত দপ্তরের বিভিন্ন কাজের বিষয়সমূহ নিয়ে আলােচনা হয়। কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রকল্প সহ চিফ মিনিস্টারস ফ্ল্যাগশীপ কর্মসূচি যেমন মুখ্যমন্ত্রী মডেল ভিলেজ স্কিম, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যােজনা গ্রামীন এবং মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যােজনা নিয়ে সভায় আলােচনা হয়। সভায় জানানাে হয় মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যােজনা-গ্রামীন প্রকল্পে ৭৩৩২ জন গ্রামীন দোকানদারকে বীমার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যালােচনা সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, গ্রামােন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব এল এইচ ডার্লং, অতিরিক্ত সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত থেকে আলােচনায় অংশ নেন।