Hare to Whatsapp

কৃষকদের আর্থ সামাজিক মানােন্নয়নে ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, আগষ্ট ৮, : নয়াদিল্লিতে ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সভাপতিত্বে নীতি আয়ােগের গভার্নিং কাউন্সিলের ৭ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নীতি আয়ােগের ভাইস চেয়ারম্যান, আয়ােগের গভার্নিং কাউন্সিলের সদস্যগণ ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্ম পরিকল্পনা ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব পায় কৃষি, শিক্ষা, শহুরে পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা কেন্দ্রিক প্রশাসনিক উদ্যোগ।

মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার খাদ্য সুরক্ষা, পুষ্টি সংক্রান্ত নিরাপত্তা, মাটির গুণমান উন্নয়ন এবং কৃষকদের আর্থ সামাজিক মানােন্নয়নে একটি ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩) হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনায় ৫০,০০০ হেক্টর এলাকায় ভুট্টা ও মাষকলাই চাষ করে শস্য বৈচিত্র্যকরণ করা হবে। সেজন্য এনএসসি থেকে উচ্চ গুণমানের বীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়াও রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যােজনা ও এনএফএসএম প্রকল্পে সংকর জাতীয় ভূট্টা চাষের জন্য ৬,০০০ টাকা প্রতি হেক্টরে এবং মাষকলাই চাষের জন্য ৯,০০০ টাকা প্রতি হেক্টরে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন সংকর জাতীয় ও উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, ক্লাস্টার ব্যবস্থায় চাষ, সেচের সুবিধা, প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা ও কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষিকাজে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়ােগের উদ্দেশ্যে রাজ্যস্তরে স্টিয়ারিং কমিটি ও বাস্তবায়নকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কৃষকদের ডাটাবেস তৈরি করার জন্য নির্দিষ্ট পরিচালনগত নীতি নির্ধারন করা হয়েছে। এখন ল্যান্ড রেকর্ডস এন্ড স্যাটেলমেন্ট দপ্তর জমির ডাটাবেসের এপিআই তৈরি করছে। এই দপ্তর ইতিমধ্যে সমস্ত গ্রামের জিও রেফারেন্সিং শুরু করেছে। কৃষকদের ইউনিক আই ডি-এর মাধ্যমে এক ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে তালিকাবদ্ধ করা হবে। এতে সমস্ত কৃষকদের ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে কৃষক কেন্দ্রিক সুবিধা দেওয়া যাবে। ডাল, তৈলবীজ ও অন্যান্য কৃষিজাত ফসলের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার উপর গুরুত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ২৩,৭৩২ হেক্টর এলাকা ডাল চাষের আওতায় রয়েছে। যা নাকি রাজ্যের মােট চাহিদার মাত্র ২৪ শতাংশ পূরণ করতে পারবে। তেমনি রাজ্যের ১৫, ১৬৫ হেক্টর এলাকায় যে তৈলবীজ চাষ ও উৎপাদন হয় তা রাজ্যের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। ন্যাশনাল ওয়েল অন এডিবল ওয়েল-পাম ওয়েল প্রকল্পে রাজ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৩০ হেক্টর এলাকায় পাম ওয়েল চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সুবিধার্থে ভারত সরকারের সাথে। ভায়্যাবিলিটি গ্যাপ পেমেন্ট সম্পর্কিত এক মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার, উপযুক্ত সার ব্যবহার, মাটির গুণমান উন্নয়ন, কাস্টম হায়ারিং সেন্টার স্থাপন, ঋণের সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমান সরকার গঠনের পর ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের ২১ শতকের উপযােগী দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করতে গুণগত শিক্ষার সুযােগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই পরিবর্তনের কারণে ত্রিপুরার পারফরম্যান্স গ্র্যাডিং ইনডেক্স (পিজিআই) এ উন্নতি হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ত্রিপুরার পিজিআই ক্যটাগরি ছিল পঞ্চম গ্রেড। ২০১৯-২০ সালে তা হয়েছে প্রথম গ্রেড। রাজ্য সরকার আগস্ট, ২০২২ এর মধ্যে ড্রপ আউট ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করতে বিদ্যালয় চলাে অভিযান চালু করেছে। বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিডিও লেকচার সম্প্রচার করা হচ্ছে বলে ত্রিপুরা টি ভি চ্যানেলের মাধ্যমে। নতুন শিক্ষা নীতি অনুযায়ী পি এম পােষণ প্রকল্পে শিশুদের সকালবেলার পুষ্টির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার সেই অনুযায়ী ধলাই অ্যাসপিরেশন্যাল জেলায় এই প্রকল্প চালু করেছে। নিপুন ভারত প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সমস্ত প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ৯০ শতাংশ শিক্ষককে নিষ্ঠা ৩.০-এর আওতায় ফাউন্ডেশন্যাল লিটারেসি ও নিউমারেসিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়গুলির প্রস্তুতিমূলক প্রকল্প ‘বিদ্যা সেতু তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া রাজ্যের বর্তমান ১০০টি বিদ্যালয়কে উন্নতমানের সুযােগ-সুবিধায় সজ্জিত করতে ‘মিশন-১০০ বিদ্যাজ্যোতি’ নামক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়গুলিতে পরিকাঠামাে উন্নয়ন সহ বিভিন্ন সুযােগ সৃষ্টি করতে রাজ্য সরকার আগামী তিন বছরে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়ােগ করবে।

তাছাড়া নতুন শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নে রাজ্য সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে, এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করা, শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ১৩৫টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা, ৩৬৫টি বিদ্যালয়ে আই সি টি প্রােজেক্ট স্থাপন করা, ৯০টি বিদ্যালয়ে টিংকারিং ল্যাব চালু করা, ইঞ্জিনীয়ারিং ও মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ‘সুপার-৩০' প্রকল্প চালু করা ইত্যাদি। তাছাড়া ৮১২টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস এবং ৩০৪টি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি (রাজ্যে এই প্রথম) শীঘ্রই চালু করা হবে।

তেমনি উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও ইউজিসি/এআইসিটিই প্রশিক্ষিত/স্বীকৃত শিক্ষক নিয়ােগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কলেজ/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ন্যাক/এনবিএ স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চয়েস ভিত্তিক ক্রেডিট সিস্টেম চালু করা, কলেজগুলিতে নতুন নতুন বিষয় চালু করা, ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থাংনের সুযােগ সম্প্রসারণে দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোর্স চালু করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। একটি জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে রাজ্যে এবং টিআইটি-তে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ড্রোন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটিতে ১টি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যেখানে দুটি এমএসএমই প্রকল্প চলছে। উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্পগুলিকে উৎসাহিত করতে আইটি দপ্তরের অর্থে ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ একটি উদ্ভাবনীমূলক কেন্দ্র গড়ে তােলা হচ্ছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে রাজ্য সরকার স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ছাত্রীদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। রাজ্য ২০৩০-এর মধ্যে ৩০ শতাংশ জিইআর অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগােচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নগর কেন্দ্রিক প্রশাসনের উন্নয়নে জিআইএস ভিত্তিক সম্পত্তি কর প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যা শীঘ্রই চালু হবে।

২০টি শহুরে স্বশাসিত সংস্থার জন্য বিশেষ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। পুর এলাকায় ১৮টি পরিষেবার মধ্যে ১৭টি’র দায়িত্বভার পুর সংস্থাগুলির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। অনেকগুলি পুর পরিষেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। অগ্নি সংযােগের ঘটনা, চুরি ইত্যাদির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ছােট ও মাঝারি দোকানদারদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমার ব্যবস্থা করেছে যার জন্য সরকার তাদের প্রথম প্রিমিয়াম ১,০০০ টাকা প্রদান করছে। জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ত্রিপুরা জল বাের্ড গঠন করেছে। এই বাের্ড ১ এপ্রিল ২০২২ থেকে কাজ করছে। ত্রিপুরা রিয়্যাল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হয়েছে। ৮৪টি রিয়্যাল এস্টেট প্রকল্পে ৩, ১৩৪টি অ্যাপার্টমেন্ট নথীভুক্ত হয়েছে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.