রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করার জন্য শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে : মুখ্যমন্ত্ৰী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ২৭, : রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করার জন্য শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অঙ্গ হিসেবে গত ৫টি আর্থিক বছরে রাজ্যে বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকারের অধীনে এখন অব্দি বিভিন্ন স্তরের মোট ৪,৬৫৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। ২৬ মার্চ রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীদের উন্নত শিক্ষাদানের জন্য টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ত্রিপুরা (টি.আর.বি.টি.)-র মাধ্যমে টেট পরীক্ষা উত্তীর্ণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করার ফলে গুণগত শিক্ষার মান বেড়েছে। এই সময়ে যে ৪,৬৫৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে স্নাতক শিক্ষক রয়েছেন ৩,৬১৫ জন এবং অস্নাতক শিক্ষক রয়েছেন ১,০৪১ জন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে রাজ্যে নিপুণ ত্রিপুরা মিশন চালু করা হয়েছে। এরপর থেকে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের অন্তর্ভুক্ত প্রাক-প্রাথমিকস্তর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে নিপুণ ত্রিপুরা মিশনের অধীনে ১০ হাজার ১৮২ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমার্সি (এফ.এল.এন.)-র প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলিতে কার্যক্রমভিত্তিক পাঠদান শুরু হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিপুণ ত্রিপুরার বাস্তবায়নে প্রশিক্ষিত করে তুলতে ২০০ জন ব্লক রিসোর্সপার্সন এবং ক্লাস্টার রিসোর্সপার্সনকে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। শিশুর প্রাক-শৈশবকালীন যত্ন এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ২,৬৪৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সাথে সাথে বিভিন্ন রকমারি খেলার সরঞ্জাম প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। পিএম-পোষণ প্রকল্পে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকার কর্তৃক অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পাঠরত (প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) সকল ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিদ্যালয় দিবসে রান্না করা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা এবং ঊনকোটি জেলায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া এলাকার (চা বাগান এলাকাস্থিত) ২৪টি নির্বাচিত স্কুলের ২,৯৯৮ জন ছাত্রছাত্রীদের দুধ খাওয়ানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিড-ডে-মিলের পাশাপাশি, ধলাই জেলার (অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্ট) অন্তর্গত সকল সরকারি ও সরকার কর্তৃক অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় প্রাক- প্রাথমিক (প্রি-প্রাইমারি) এবং প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত ৪৭,৭৯২ জন ছাত্রছাত্রীকে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে প্রতিটি বিদ্যালয় দিবসে প্রাতঃরাশ প্রদান করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে স্বল্প খরচে, নিজের হাতে শিক্ষণ শিখন সহায়ক উপকরণ তৈরিতে এবং ব্যবহারে উৎসাহিত করতে রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় রাজ্যস্তরীয় শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপকরণ প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতা। এই প্রদর্শনীতে ১৬০টিরও বেশি জেলাস্তরে নির্বাচিত শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপকরণ প্রদর্শিত হয় এবং সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণি উপযোগী স্তরে পৌঁছে দিতে এন.সি.ই.আর.টি-র আদলে রাজ্যেও বিদ্যাসেতু মডিউল নামক ৯ সপ্তাহের একটি ব্রিজ কোর্স চালু করা হয়। ২০২৪ সালে রাজ্যে এই বিদ্যাসেতু মডিউলের ব্যবহার এবং ফলাফল এন.সি.ই.আর.টি.-র প্রতিনিধিদল কর্তৃক বেসলাইন এবং এন্ডলাইন ইভালুয়েশনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এতে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে নিপুণ মিশনের বাস্তবায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার জন্য বিদ্যালয়ে নতুন করে পাঠ্যক্রম, সহ-পাঠ্যক্রম, ওয়ার্কবুক ও টি.এল.এম. প্রদান করা হচ্ছে।
বিধায়ক মানব দেববর্মার অন্য একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গোলাঘাটি বিধানসভার অন্তর্গত শ্রীনগর গাবর্দি হায়ার সেকেন্ডারি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করার পরিকল্পনা দপ্তরের রয়েছে। নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করার জন্য দপ্তর থেকে অর্থ দপ্তরের কাছে ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্থ পাওয়া গেলেই খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমার একটি প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ছৈলেংটা দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা দপ্তরের রয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে এস্টিমেট বিবেচনা করে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য অর্থ দপ্তরের কাছে অর্থ অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাবিত অর্থ অনুমোদিত হলেই নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন...