Hare to Whatsapp
রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯টি ত্রাণ শিবির খােলা হয়েছে : প্রধান সচিব
By Our Correspondent
আগরতলা, জুন ১৯, : টানা দু’দিনের প্রবল বর্ষণে রাজধানী আগরতলা শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের স্বার্থে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ১৮ জুন সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব পুনিত আগরওয়াল, কৃষি ও অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, খাদ্য দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরি, অগ্নি নির্বাপক ও জরুরি পরিষেবা দপ্তরের অধিকর্তা অনিন্দ ভট্টাচাৰ্য্য এবং স্টেট প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস সাংবাদিকদের আলােকপাত করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব শ্ৰী আগরওয়াল জানান, গতকাল থেকে অতি বর্ষনের ফলে হাওড়া নদীর জল সীমা বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৮৭ উচ্চতায় যায়। রাত্রিতে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কম হলে জল সীমার উচ্চতাও কিছুটা হ্রাস পেতে থাকে। আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত জলের উচ্চতা ১০.৭২ মিটার হয়। এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। গতকাল রাত্রে সদর মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে একটি দল হাওড়া নদি সংলগ্ন জল প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। আজ পরিস্থিতি অনুযায়ি ত্রাণ শিবির খােলা হয়। ত্রাণ শিবিরগুলিতে পানীয় জল থেকে শুরু করে খাওয়ার ব্যবস্থাও প্রশাসন থেকে করা হয়েছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আজ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালােচনা করেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন। রাজস্ব সচিব জানান, বৃষ্টির ফলে যেসব স্থানে জল আটকে ছিল সেখান থেকে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সারা ত্রিপুরা রাজ্য মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৯টি ত্রাণ শিবির খােলা হয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৩৭টি, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ১টি এবং খােয়াই জেলায় ১টি। ৩৯টি ত্রাণ শিবিরে মােট ২ হাজার ৫৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ শিবিরগুলিতে পানীয় জল, প্যাকেট ফুড তথা খাওয়ার ব্যবস্থাপনাসহ স্যানিটারী ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শিবিরের লােকেদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকরাও শিবিরগুলি পরিদর্শন করছেন।
তিনি জানান, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই পরিস্থিতি মােকাবিলায় কাজে লাগানাে হয়েছে। শ্রী আগরওয়াল জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের সহায়তার জন্য টোল ফ্রি ১০৭৭, আগরতলা পুরনিগমের ৯৮৬৩২0১৬৬৫, ইমারজেন্সি রেসপন্স সিস্টেমের ১১২ নম্বর, সি এম হেল্পলাইন ১৯০৫ এবং স্টেস্ট ইমার্জেন্সি সেন্টারের ১০৭০ নম্বরটিতে যােগাযােগ করে জরুরি সহায়তা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলে ১৯১২ এবং ৯৮৬৩৫৯৬০৮৩ এই নম্বরে যােগাযােগ করা যেতে পারে। তিনি জানান, পরিস্থিতি মােকাবিলায় ২৯টি নৌকাকে উদ্ধার কাজে লাগানাে হয়েছে। এরমধ্যে সদর মহকুমার ১৪, এনডিআরএফ ৪, পুরনিগমের ৪, টি এস আর এর ২টি, এবং আসাম রাইফেলসের ৫টি। তাছাড়া আজ সকালে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক, সদর মহকুমা শাসক ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিব ও আধিকারিকগণ বটতলা ব্রীজ, প্রতাপগড়, বলদাখাল, শ্রীলংঙ্কাবস্তি, চন্দ্রপুর, হরিজন কলােনী, ময়লাখলা ইত্যাদি প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
| খাদ্য দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্যে নিত্য প্রয়ােজনীয় সামগ্রীর মজুত যথেষ্ট রয়েছে। আতঙ্ক বা উদ্বেগের কিছু নেই। তিনি জানান, গতকাল রাত থেকে মেঘালয়ের খাসিয়া অঞ্চলে ভূমিধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সারাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে হালকা বৃষ্টিপাতের ফলে সারাইয়ের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত আর না হলে শীঘ্রই আসাম-আগরতলা সড়ক যােগাযােগ চালু করা সম্ভব হবে। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের একজন আধিকারিককে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানাে হয়েছে। মেঘালয়ের পূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যােগাযােগ রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, শিলচর থেকে পেট্রোল ও ডিজেল আসছে। বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রাজ্যে আসছে। রাজ্যে আরও ১৫ দিনের গ্যাস মজুত রয়েছে। এ মাসের রেশনের পুরাে চাল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়ােজনীয় সামগ্রীর বাফার স্টক আগামী ১ মাস পর্যন্ত রয়েছে বলে খাদ্য সচিব জানান। কালােবাজারি প্রতিরােধে সমস্ত জেলাশাসক ও মহকুমা শাসকদের নজরদারি রাখার জন্য খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কৃষি এবং আগ্নিনির্বাপক দপ্তরের সচিব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্ধার কাজ প্রশাসনের উদ্যোগে ২৪ ঘন্টা চালু রয়েছে। তিনি জানান, গতকাল ৪২ জন ছাত্র এবং শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। আজ ১১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের অধিকর্তা জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিনরাত কাজ করে চলছেন। আপদা মিত্র, সিভিল সিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা উদ্ধার কাজে নিয়ােজিত রয়েছেন।