Hare to Whatsapp
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ অনুসরণ করে আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে: মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, মে ১০, : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ ও ভাবধারা এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ অনুসরণ করে আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি ভারতবর্ষকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে। ভারতবর্ষ বহু মুনি ঋষিদের দেশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতাে বিদ্বান ব্যক্তিরা এই দেশে জন্মেছিলেন।৯ মে আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়ােজিত কবি প্রণাম ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং শিক্ষা দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এদিন কবি প্রণাম ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সহ অতিথিগণ। কবি প্রণাম অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথিতযশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী জয়তী চক্রবর্তী, মনােময় ভট্টাচার্য ও বাচিক শিল্পী দেবেশ ঠাকুর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতার কথা মনে পড়লে উঠে আসে সেই একটিই নাম। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ত্রিপুরার সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল আত্মিক সম্পর্ক। রাজন্য আমলে বহুবার তিনি ত্রিপুরায় এসেছেন। ত্রিপুরা নিয়ে রচনা করেছেন একাধিক বিখ্যাত উপন্যাস ও নাটক। পরাধীন ভারতবর্ষেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, সাহিত্য ও ভাবধারা মানুষের মনে ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি সম্পর্কে যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জনমানসে প্রভাব ফেলেছিল। ভারতবর্ষে মােঘলরা ৬০০ বছর ও ইংরেজরা ২০০ বছর শাসন করেছিল। তবুও আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করতে পারেনি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মােদি একজন সম্পূর্ণ ভারতীয়। তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গুণাবলী। প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টাতেই দেশে জনধন অ্যাকাউন্টের মত উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টাতেই জল জীবন মিশন, ত্রিপুরায় মহিলাদের চাকুরি ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিগত ৪০ বছরে পূর্বেকার সরকার রাজ্যে যে কাজ করতে পারেনি, সেই কাজ প্রায় ৪ বছরের মধ্যে করে দেখিয়েছে বর্তমান সরকার।
এদিন অনুষ্ঠানে রাজ্যে আগর শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়েও আলােচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ত্রিপুরাতে আগর শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আলােচনা করতে আজ ভিয়েতনামের লাওস থেকে এক প্রতিনিধি দল রাজ্যে এসেছেন। আগামীতে তারা ত্রিপুরাতে আগর শিল্পের জন্য বড় ধরণের অর্থ বিনিয়ােগ করবে। আগামী কয়েকবছরের মধ্যেই ত্রিপুরাতে আগর বিক্রির মধ্যদিয়ে ২/৩ হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি তৈরি হবে। ত্রিপুরা ছােট রাজ্য হলেও কাজ করে দেখানাের মানসিকতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, আজকের দিনেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গিকতা অপরিসীম। রবীন্দ্র ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী প্রজন্মকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন যথার্থ অর্থেই মানবপ্রেমী। রবীন্দ্র রচনাগুলিতে সমাজের অনেক কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায়। রবীন্দ্র রচনা পড়লে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মনে আসবে না। ত্রিপুরার মহারাজাদের সঙ্গেও কবিগুরুর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে ত্রিপুরা যে পর্যটন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে সেটা অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কবি প্রণাম ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, কবিগুরু, বিশ্বকবি, গুরুদেব - এই তিন নামে আমরা যাকে চিনি তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গতকাল থেকে সারা রাজ্যে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগরতলাতে কেন্দ্রীয়ভাবে জন্মজয়ন্তীর আয়ােজন করা হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা ভাবনা, আদর্শ, ভাবধারা, নীতিকে পাথেয় করে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। স্বাধীনতা সংগ্রামেও কবিগুরুর উল্লেখযােগ্য অবদান ছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশদের দেওয়া নাইট উপাধি পরিত্যাগ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শের মধ্যে দিয়েই আমাদের সংস্কৃতি আরও বিকশিত হবে এবং এগিয়ে যাবে। যতদিন গদ্য, কবিতা, নাটক থাকবে ততদিন আমাদের মাঝে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব প্রশান্ত কুমার গােয়েল। তিনি তার বক্তব্যে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি রাজন্য আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই রাজ্যে আগমনের বিষয়বস্তু আলােকপাত করেন। তিনি বলেন, মহারাজা বীরচন্দ্র কিশাের মাণিক্য বাহাদুর থেকে শুরু করে মহারাজা বীরবিক্রম কিশাের মাণিক্য বাহাদুর পর্যন্ত সময়কালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুবার এই রাজ্যে এসেছেন। মুকুট, রাজর্ষি, বিসর্জন - কাব্যগ্রন্থগুলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই অমর সৃষ্টি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. অরুনােদয় সাহা, শিক্ষা দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, অধিকর্তা রতন বিশ্বাস, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষ দেব প্রমুখ। দুইদিনব্যাপী কবি প্রণাম অনুষ্ঠানকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসে আঁকো প্রতিযােগিতা, সমবেত আবৃত্তি প্রতিযােগিতা, সমবেত সঙ্গীত প্রতিযােগিতা, আকস্মিক বক্তৃতা প্রতিযােগিতা সহ একাধিক কর্মসূচি। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী, পুর নিগমের মেয়র সহ অন্যান্য অতিথিগণ। কবি প্রণাম ও পুরস্কার বিতরণী পর্বের পর অনুষ্ঠিত হয় মনােজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।