নির্বাচন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপ
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ২১, : ভারতের ২৬তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) নির্বাচন কমিশনার ড. সুখবীর সিং সান্ধু এবং ড. বিবেক যোশীর সঙ্গে সমন্বয়ে সম্পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থাকে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকল ভোটারের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হয় এবং ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে তাদের অভিজ্ঞতা আনন্দদায়ক হয়। রাজনৈতিক দলগুলি যারা এই প্রক্রিয়ার মূল অংশীদার তাদেরও তৃণমূলস্তরে যুক্ত করা হচ্ছে।
প্রায় ১০০ কোটি ভোটারই যে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ তা নির্বাচন কমিশন পুনরায় নিশ্চিত করছে। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) এবং নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রযুক্তিগত পরামর্শ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। যদিও একজন ভোটার কেবল নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রেই ভোট দিতে পারেন এবং অন্য কোথাও নয়। কমিশন দেশব্যাপী দ্বৈত এপিক (ইপিআইসি) নম্বরের অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তিন মাসের মধ্যে বহু দশকের পুরনো এই সমস্যার সমাধান করবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ট সমন্বয় বজায় রাখার মাধ্যমে ভোটার তালিকার নিয়মিত আপডেটের ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কমিশনের আলোচনার সময় স্পষ্ট করা হয়েছিল যে, খসড়া ভোটার তালিকায় কোনও অন্তর্ভুক্তি বা নাম কাটা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট আইনী বিধানের অধীনে আপিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হতে পারে, যা জনগণের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী সকল রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত। যদি কোন আপিল না থাকে সেক্ষেত্রে নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশান অফিসার (ইআরও) কর্তৃক প্রস্তুত তালিকাই কার্যকর থাকবে। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশন ২০২৫ সালের ৭ মার্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ২০২৫ সালের ৬-১০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধন (এসএসআর) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মাত্র ৮৯টি প্রথম আপিল এবং মাত্র ১টি দ্বিতীয় আপিল দাখিল করা হয়েছে।
সকল যোগ্য নাগরিকের নামই যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে অর্থাৎ ১০০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তি তালিকায় সুনিশ্চিত করা, ভোটদান সহজতর করা এবং একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের মধ্যে ভোট দানের অভিজ্ঞতা প্রদান করা নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। কোন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই যাতে ভোটারের সংখ্যা ১২০০-র বেশি না হয় এবং এই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ভোটারদের ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত হয় তা সুনিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমনকি দুর্গম গ্রামীণ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতেও মৌলিক সুযোগ সুবিধাগুলি (এএমএফ) যাতে সুরক্ষিত থাকে তা সুনিশ্চিত করা হবে। শহর অঞ্চলের ভোটারদের ভোটদানের অনীহা দুর করতে এবং ভোট প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে তাদের চত্বরে অবস্থিত বহুতল ভবন এবং কলোনীগুলির মধ্যে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রায় ১ কোটি কর্মকর্তার ব্যাপক ও ধারাবাহিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৫ সালের ৪ ও ৫ মার্চ সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের (সিইও) দু'দিনের সম্মেলন নয়াদিল্লির আইআইআইডিইএম-এ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রথম বারের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জেলা নির্বাচন আধিকারিক (ডিইও) এবং নির্বাচন রেজিস্ট্রেশান আধিকারিক (ইআরও)-রাও এতে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ২৮টি নির্বাচনী স্টেকহোল্ডার ও তাদের সাংবিধানিক কাঠামো, নির্বাচনী আইন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) নির্দেশিকা অনুসারে দায়িত্বসমূহ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশিকার হ্যান্ডবুক ও ম্যানুয়ালকে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলা হবে। সম্মুখ সারির কর্মকর্তারা যাতে সহজভাবে সবকিছু বুঝে উঠতে পারেন এবং কার্যকরভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ডিজিট্যাল ট্রেনিং কিট তৈরী করা হবে। এনিমেটেড ভিডিও এবং একটি সমন্বিত ড্যাশবোর্ড প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং কার্যকর করবে। আগামী দিনে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিশেষ মডিউল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমস্ত ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলির সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩৬ জন সিইও, ৭৮৮ জন ডিইও এবং ৪১২৩ জন ইআরওকে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক এবং আলোচনা করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) দের সম্মেলনে নির্দেশ দেন। সমগ্র দেশে এধরণের বৈঠক তৃণমূল পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলির জমে থাকা এবং আকস্মিকভাবে উঠে আসা যেকোন সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সমগ্র দেশে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ভোটার তালিকার দাবি আপত্তি সহ নির্বাচনী আইনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি এবং তাদের মনোনীত বিএলএ-দের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) এছাড়াও সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে যেকোন পরামর্শ পাঠানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছে যা ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ এর মধ্যে জমা দেওয়া যাবে। এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলিকে সুবিধাজনক সময়ে দিল্লিতে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এই সাহসী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমস্ত স্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সকল গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে একটি অংশগ্রহণমূলক কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন...