স্কচ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পাচ্ছে রাজ্যের বায়োটেকনোলজি দপ্তর : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ২১, : রাজ্যের বায়োটেকনোলজি দপ্তরকে কলেজ বায়োটেক ক্লাব প্রকল্পের জন্য জাতীয়স্তরে স্কচ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান করা হবে। আগামী ২৯ মার্চ নয়াদিল্লির হ্যাবিটেট সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। ২০ মার্চ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই সংবাদ জানান। তিনি জানান, দেশের মধ্যে স্কচ একটি স্বাধীন ও নামী সংস্থা। স্কচ মূলত: গুড গভর্নন্যান্স পরিবেশ সুরক্ষা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এই তিনটি বিষয়ে কাজ করে। স্কচ প্রত্যেক বছর দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি সংস্থাগুলির অভিনব প্রয়াসের মূল্যায়ণ করে। এবছর এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য ২৭টি রাজ্যের প্রায় ৪০০টি প্রকল্পের আবেদনপত্র এই সংস্থায় জমা করা হয়। প্রজেক্টগুলির বেশ কয়েকটি স্তর মূল্যায়ণের পর এই সংস্থা চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে। বায়োটেকনোলজি দপ্তর এর আগে ২০২২ সালে তার অভিনব বায়োভিলেজ ২.০ প্রজেক্টের জন্য স্কচ সিলভার অ্যাওয়ার্ড পায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বায়োটেকনোলজি দপ্তর ইতিমধ্যে রাজ্যে ২৪টি বায়োভিলেজ ২০ প্রজেক্ট রূপায়ণের কাজ করছে। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে আরও ৬টি বায়োভিলেজ ২.০ রূপায়ণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুণেস্থিত একটি বেসরকারি সংস্থা ত্রিপুরাতে বায়োভিলেজ ২.০ প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং কয়েকটি বায়োভিলেজ প্রকল্প পরিদর্শণ করেছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দপ্তর ১৭টি কলেজ বায়োটেক ক্লাব রাজ্যের ১৭টি ডিগ্রী কলেজে বাস্তবায়ণ করেছে। ২০২৫- ২৬ অর্থবছরে আরও ৪টি বাস্তবায়ণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তিনি বলেন, কলেজ বায়োটেক ক্লাব প্রকল্প এবছর পর্যন্ত শুধুমাত্র সাধারণ ডিগ্রী কলেজের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থ বছর থেকে এর পরিধি মেডিক্যাল, ভেটেরিনারি, কৃষি, মৎস্য ইত্যাদি মহাবিদ্যালয়কেও এর আওতায় আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কলেজ বায়োটেক ক্লাবের মাধ্যমে রাজ্যে নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে। পরবর্তীতে রাজ্যের আর্থসামাজিক ও জৈব প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যবহার হবে। ইতিমধ্যে তেচোখা মাছ ব্যবহারে মশার লার্ভা দমন, প্রো বায়োটেক ব্যবহারে সুগন্ধী ধানের গুণগত মান বৃদ্ধি, ভার্মিকম্পোস্ট-এর নিবিড় ব্যবহার, ফ্রেট প্রযুক্তির মাধ্যমে জলের দূষণ সনাক্তকরণ ইত্যাদি প্রযুক্তি তৈরীর কাজ চলছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রাপ্ত অর্থে মাছের বিকল্প খাদ্য তৈরীর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। ১৭২টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিএনএ ক্লাব গঠন করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ৫০টি স্কুলে গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে ছাত্রছাত্রীরা আজ রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ভেষজ আবির তৈরী, মাশরুম চাষ, ফল থেকে ডিএনএ সনাক্তকরণ, ভেষজ উদ্যান তৈরী সহ মোট ৮০ রকম বিজ্ঞান ভিত্তিক কাজ করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় কাগজের রিসাইক্লিং এর জন্য বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে আলোচনা চলছে৷ তিনি বলেন, এই ডিএনএ ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি স্কুলকে চার বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য কারিগরি সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়া ত্রিপুরা বায়োটেকনোলজি কাউন্সিল বাগমাস্থিত বাড়াভাইয়া অর্চার্ডকে প্ল্যান্ট ব্যাঙ্ক অর্ডার্ডে পরিণত করার কাজ করছে। এবছর মোট ১৫০০ জন ছাত্রছাত্রী এই বাগান পরিদর্শন করেছে।
তিনি বলেন, এই দপ্তর এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টিটিউট ফর বায়োরিসোর্স এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট স্থাপনের জন্য মৌ স্বাক্ষর করে। টিএফডিপিসি কার্যালয়ে (বিল্ডিং) এটি স্থাপনের উদ্যোগ চলছে। এতে ঔষধি গাছের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভেষজ ঔষধ তৈরীর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ৫ থেকে ১০টি বায়োভিলেজ স্থাপনের প্রয়াস নেওয়া হবে। এডিসিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ডেক্স স্থাপন করা হবে। এলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও ডোনার মন্ত্রকের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্য রাজ্য থেকে এগিয়ে রয়েছে। নগর উন্নয়নের সব জিআইএস ম্যাপিং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তর থেকে করা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের সচিব ড. কে শশী কুমার এবং বায়োটেকনোলজি দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা অঞ্জন সেনগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন...