বহুমুখী উন্নয়নের ফলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে বেস্ট পারফর্মার রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা উঠে এসেছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ৫, : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাইছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলকে কিভাবে আরও বেশি করে স্বনির্ভর করা যায়। তিনি বুঝতে পেরেছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের যদি উন্নয়ন না হয় তবে সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষেরও কোনও অবস্থাতেই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই দিশাতেই এই অঞ্চলে দ্রুতগতিতে এখন উন্নয়নের কাজ চলছে। চন্ডিপুর ব্লক কার্যালয়ের পাশের মাঠে ঊনকোটি জেলার জন্য ৪ মার্চ ৩৭টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। প্রকল্পগুলির জন্য মোট ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ১৬২ কোটি টাকারও বেশি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরায় এসে বলেছিলেন ত্রিপুরার জন্য হীরা মডেল দেওয়া হবে। পরবর্তী সময় ত্রিপুরার জন্য তিনি সত্যি সত্যি হীরা মডেল দিয়েছেন। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এদিন ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এজন্য ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ২৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঊনকোটি জেলা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোস্টেল, ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে টিলাবাজার উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন জলাশয়ের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন, ১ কোটি ১৪ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা ব্যয়ে চন্ডিপুর ব্লক কার্যালয়ের সম্প্রসারণ, নুনছড়ায় ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে জল জীবন মিশনে পানীয়জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি। এছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আজ ২০টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন।
প্রকল্পগুলি রূপায়ণে ব্যয়ে হবে ১৩৭ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকার বেশি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি হলো ২৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অনুমোদিত ব্যয়ে জেলাশাসক কার্যালয় নির্মাণ, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কৈলাসহর মহকুমা শাসক কার্যালয় নির্মাণ, ১৪ কোটি ৭৪ হাজার টাকা বায়ে রামকমল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাড়ি নির্মাণ, কৈলাসহরে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বায়ে জেলা পরিবহণ কার্যালয় নির্মাণ, পাইডুর বাজারে ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওয়ার্কিং উইমেন হোস্টেল নির্মাণ, চন্ডিপুরে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ড্রাগ ডি-এডিকশন সেন্টার, ৮ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রামকৃষ্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন বাড়ি নির্মাণ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, হীরা মডেলের মধ্যে জাতীয় সড়ক, রেল যোগাযোগ ও এয়ারওয়েজের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এটা আগে কখনও ভাবা যায়নি। তিনি বলেন, সারা রাজ্যেই এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এটা সম্ভব হয়েছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার রয়েছে বলেই। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার কাজ করে বলেই শান্তি শৃঙ্খলা রাজ্যে বিরাজ করছে। একদিকে শান্তি শৃঙ্খলা অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে মানুষ সহজেই এক স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারছেন। তার সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটছে। ফলে এখন রাজ্যে মাথাপিছু আয়ও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বহুমুখী উন্নয়নের ফলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে বেস্ট পারফর্মার রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আগামীদিনেও আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, এই সরকারের গত দু'বছরে কৈলাসহরে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। মনু নদীর বাঁধ ভাঙ্গন রোধের সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাম্বো মিশনে কৈলাসহরে ১৫০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। বিসি নগরে ইন্টিগ্রেটেড ফিসিং সেন্টার অ্যাকোয়া পার্ক তৈরি করা হবে। তারজন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তারও কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়াও কৈলাসহরে অনেক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে যা মানুষের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। সভাপতির ভাষণে ঊনকোটি জিলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস শিলান্যাস হওয়া প্রকল্পগুলির কাজ সময়মতো শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক ডি কে চাকমা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইডিসির চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, ত্রিপুরা ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মবম্বর আলি, ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাঙ্গির, সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মনু ভ্যালি চা বাগানে কর্মরত অবস্থায় প্রয়াত শ্রমিক রামজয় পালের স্ত্রী রুমা পালের হাতে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকার চেক তুলে দেন।
আরও পড়ুন...