এ ঘটনা এক কথায় অমানবিক, অমানুষিক এবং আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী

পুরুষোত্তম রায় বর্মন

জয় কৃষ্ণ রায় আপ্তসহায়ক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন দুই এক বছর পূর্বে। কর্ম জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে যখন ত্রিপুরাতে উপদ্রুত আইন জারি হয় তখন দক্ষিণ জেলার জেলা শাসক ডি প্রকাশের আত্মসহায়ক ছিলেন। দেখেছেন উপদ্রুত এলাকা আইন জারি থাকাকালীন ত্রিপুরাকে। ওই সময় সেনাবাহিনীর সাথে দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা। কয়েকদিন পূর্বে হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। কোমরে বেল্ট বেঁধে রাখতে হয়। হাই প্রেসার আছে। বয়সজনিত অন্যান্য উপসর্গ আছে। সারাজীবন সুনামের সাথে কাজ করেছেন। কর্ম জীবনে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি এবং কোনদিনও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। জয়কৃষ্ণ বাবুর বাড়ি গাঙ্গাইল রোডে। ১৩ ই এপ্রিল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পাড়ার দোকান থেকে প্রয়োজনীয় ঔষুধ কিনবেন বলে। সাথে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছিল । বাড়ি থেকে বেরিয়ে কল্লোল সংঘের কাছে যাওয়া মাত্র দেখেন দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । একটির মধ্যে এস ডি এম অফিসের কিছু কর্মচারী। তাঁর হাঁটুর বয়সী। কর্মচারীরা মাইকে নগরবাসীকে ধমকাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। জয়কৃষ্ণ বাবুকে দেখেই চিৎকার করে উঠলো তারা কোথায় যাচ্ছিস। হাঁটুর বয়সী ছেলের কাছ থেকে এ ধরনের সম্বোধনে জয় কৃষ্ণ বাবু হতচকিত। অপমানে কুঁকড়ে যান। মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। কখনো এই ধরনের পরিস্থিতির সামনে পরেননি। আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ঘুরে চলতে শুরু করেছেন। হঠাৎ হিন্দিতে শুনলেন, শালাকো মারো। তারপরই পিঠে কোমরে একের পর এক লাথি। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন জয় কৃষ্ণ বাবু। এরপর টি এস আর জওয়ানের লাঠি জয়কৃষ্ণ বাবুর হাতে , মুখে , সারা শরীরে। প্রায় অচৈতন্য অবস্থা। গাড়ি দুটো চলে গেল। তারপর এলাকাবাসীরা জয় কৃষ্ণ বাবুকে উদ্ধার করে প্রথমে আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর জিবি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারে । বাঁ হাত ভেঙ্গে গেছে । সারা শরীরে ব্যথা । আর মনের ব্যথার কোন সীমা নেই। এখনো সন্ধ্যা রাত্রির দুঃসহ অভিজ্ঞতা দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে ফিরে আসে। কোনদিন ভাবেননি এভাবে স্বাধীন দেশের একজন প্রবীণ নাগরিক হয়েও পুলিশী হিংস্রতার শিকার হবেন।

জয় কৃষ্ণ বাবু একা নন। লকডাউন পর্বে রাজ্যজুড়ে এবং সারা দেশে হাজার হাজার নাগরিক এভাবে পুলিশি তাণ্ডবের শিকার হচ্ছেন। উদয়পুরে টিএসআর জওয়ানরা প্রকাশ্য দিবালোকে, প্রকাশ্য রাজপথে , স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মেরেছে এবং কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছে। অপরাধ কী। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ আনতে বেরিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হয়েছে কিভাবে পুলিশের একাংশ সাধারণ নাগরিকদের রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক লাঠিপেটা করছে । কান ধরে উঠবস করাতে বাধ্য করছে। এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না‌। একটা কথা বলা প্রয়োজন , লকডাউনের সময় জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসা যায়। কেউ যদি আইন অমান্য করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইন মোতাবেকই ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু তা না করে পুলিশের লাঠিপেটা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং নাগরিকদের মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পুলিশের আধিকারিকরা আইন মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। কঠিন পরিস্থিতিতে পুলিশ আধিকারিকরা দায়িত্ব পালন করছেন বলেই নাগরিকদের লাঠিপেটা করার লাইসেন্স তারা পেয়ে যান নি। আইন মেনেই দায়িত্ব পালন করতে হবে ‌। লকডাউন পর্বে সারাদেশে পুলিশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করছেন । নাগরিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.