পাহাড়ে মহাজনদের তৎপরতায় জুমিয়ারা সংকটে, সামনে ওদের দূর্দিন
প্রদীপ চক্রবর্তী
জলের অভাব মানুষ পাগল পাড়া। তা কোথায় এবং কিসের জল? তা এরাজ্যের পার্বত্য পল্লীসমূহে এবং দেশের ১০০ টি জেলায়। এরাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের পানীয় জল সংকট এখন তীব্র আকার ধারণ করতে চলেছে। ঠিক এই সময়ে ওদের একাউন্টে পৌঁছতে শুরু করেছে সরকারী অর্থ। প্রতি পরিবার পিছু ৫০০ টাকা। এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাসে এরা এই টাকা পাবেন। জুমিয়ারা পাচ্ছেন ১০০০ টাকা করে।
পাহাড়ী অঞ্চলে প্রায় ১২মাস জলের সংকট লেগেই থাকে। এবছরো ব্যতিক্রম নয়। পরিশ্রুত পানীয় জল তো দূরের কথা এঁরা নাওয়া খাওয়া জলই পায়না। এখন শুখা মরশুম। জল সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ভগবান সর্দার পাড়া, খানত্লাং এ তো এই সংকট ভয়াবহ। এক ফোঁটা জলের জন্য এরা হু হু করে এপ্রান্ত থেকে অপর টিলার নীচে কাকভোরে চলে যাচ্ছে। পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে মুলি বাঁশের খন্ড ডুকিয়ে জল সংগ্রহ করছে। এক কলসী জল ভরতে অন্তত দুঘন্টা লেগেই যাচ্ছে। কে বুঝবে এদের যন্ত্রনা? এ সমস্যা এই প্রথম নয়। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। সরকারের কোষাগারের বহু কোটি টাকা ব্যয়িত হয়েছে। কিন্তু সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়েছে। ইতরবিশেষ পরিবর্তন হয়েছে। পাহাড়ে জলের উৎস নেই। জলের স্তর বের করতেই ড্রিলিং ওয়ালাদের প্রান বায়ু বের হয়ে হয়ে যায়। অনেকেই কাজ ফেলেই চলে যায়। লংতরাই, আঠারোমুড়া, দেবতামুড়া ও জম্পুই তো উৎস পায়নি বরাত প্রাপকরা। ওরা কাজ ফেলে চলে এসেছে। প্রথম দিকে ট্যাঙ্কারে জল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেসব স্হানে এক ট্রাক জল পৌঁছে দিতে প্রায় সাড়া দিন লেগে যায়।ওদিকে জলের অপেক্ষায় মধ্য রাত থেকে পর্বত দূহিতাদের দীর্ঘ অপেক্ষা। ৪/৫ ঘন্টা অপেক্ষা করে হয়ত এক ডেগ জল মেলে আবার নিস্ফলা হয়ে ফিরেও যেতে হয়। জলের উৎস সৃষ্টি করতে অবশ্য বিপ্লব বাবু জোর দিয়েছেন। আপাতত ওই সব এলাকায় মোতায়েন টিএসআর ও বিএসএফ কে পানীয় জল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া যেতেই পারে। এক্ষেত্রে বড় সুফল পাবে উপজাতিয়রা। সেনিটাইজার না পেলেও ওরা সাবান দিয়ে দিনে যদি তিনবারও হাত ধূতে পারে তাহলে তো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে পাড়বে এরা। সেনিটাইজার পাওয়া ওদের কাছে দুস্তর যদি না সরকার আশা কর্মীদের মাধ্যমে সরবরাহ না করে।
লঙ্গাই থেকে লংতরাই,আঠারমুড়া থেকে সুবল সিং ,দেবতামুড়া পাহাড়ী অঞ্চল এখন জলের অভাবে খাঁ খাঁ করছে। পাহাড় হয়ে উঠেছে চাতক। পাহাড়ের ছড়াগুলি শুকিয়ে কাঠ। অল্পবৃষ্টি হয়েছে। আঙুল জল ধরেছে। তাও কর্দমাক্ত।
এদিকে এখন জুমিয়ারা জুমের ফসল কুমড়া, লাউ, ধান, শশা সহ অন্যান্য ফসলের বীজ রোপন করবে। নাইদি নাইদিক রবে হাত পা দুলিয়ে এরা রোপন করবে বীজ। টাক্কাল দিয়ে গর্ত করে সেই গর্তে বীজ রোপন করবে।
এরা তো জুমিয়া। এরাজ্যে জুমচাষি রয়েছে প্রায় বার হাজার। এটিলা ওটিলা ঘুরে ঘুরে ওরা জুম চাষ করে থাকে। এখন জুমিয়াদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবু আছে প্রায় বার হাজার। এদের মধ্যে ৭০০০ জুমিয়াকে সরকার মাসে মাসে এক হাজার করে টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই ঘোষণা করে বলেছেন এদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে এ টাকা চলে যাবে। এদের এই কঠিন সময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত যে জুমিয়াদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। যদিও এরা এখনো তা পায়নি। তবে বিপিএল পরিবারকে মাসে ৫০০/ করে প্রদানের টাকা কিন্তু এদের একাউন্টে যেতে শুরু করেছে। এপ্রিল,মে, জুন এই তিন মাস প্রতি পরিবার মোট ১৫০০/ টাকা পাবেন। এই টাকা দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে।
গ্রামীন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজ্যে গ্রামীণ ব্যাংক এর ১৫০টি শাখা রয়েছে,এর মধ্যে ৬৭টি রয়েছে শহর ও আধা শহর অঞ্চলে। বাকীগুলি একেবারে গ্রামাঞ্চলে। বিসনেস করসপনডেন্টন্সদের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এই দূঃসময়ে এই অর্থ উপজাতিয়দের খুবই কাজে লাগবে।
কিন্তু এই অর্থ এরা তিন চার দিনও রাখতে পারবেনা। কারন সুদখোর মহাজনরা বাড়ীতে এসে হইত্যা দিতে শুরু করেছে। এই সুদখোর মহাজনরা সব নিংড়ে নেয়। এরা আবার ব্যাংকের বিজনেস করসপনডেন্টন্সদের বাজার অফিসের সামনে ঘুরঘুর করতে থাকে।
সুদখোর মহাজনী প্রথার বিরুদ্ধে আঘাত হানার এখনই সময়। অন্যথায় এদের কবল থেকে মুক্ত করা যাবেনা গরীব জনজাতিদের।
সুদখোর মহাজনদের বাড়বাড়ন্ত এখনো গ্রাম পাহাড়ের অব্যাহত। এখন আদায় করবে সুদের টাকা,ফসল উঠার সময় ফসল সহ মূল টাকা। জলের দরে, ওজনে কমিয়ে ওদের উৎপাদিত পন্য মহাজনরা কিনে নেয় বা জোর করে রেখে দেয়। অন্যরা বেশী দামে কিনলেও ওদের কাছে বিক্রি করতেই পারেনা ওরা। যেন ওরা ক্রীতদাস বা প্রজা। এই মহাজনদের বুজরুকি আমি চাক্ষুষ করেছি বহু বছর। এরা এমন শয়তান ১০ কেজির ফসল ৬ কেজি করে দেয়। ওদের মুখের উপর কথা বলার উপায় থাকেনা। আশংকা পরে যদি টাকা না দেয়।