ত্রিপুরায় দ্বিতীয় করোনা রোগী এবং Covid-19 নিয়ে কিছু কথা
চক্রবর্তী পংকজ
ত্রিপুরায় দ্বিতীয় যে ব্যক্তিকে পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হিসাবে পাওয়া গেছে তিনি কিন্তু এই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনরকম লক্ষ্মণহীন (অ্যাসিম্পটোম্যাটিক) অবস্থায় আছেন বলেই জান যাচ্ছে। এবং উনার নিজদেহের ইনিউনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি যথেষ্ট থেকে থাকে তবে কোনরকম বাহ্যিক রোগলক্ষ্মণ দেখানো ছাড়াই তিনি সুস্থ, অর্থাৎ নিগেটিভও হয়ে যেতে পারেন। সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ, যদি সন্দেহবসে উনাকে পরীক্ষা করা না হতো, তবে হয়তো কোনদিন জানাই সম্ভব হতো না যে উনি কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর যেহেতু উনি নিজেও এটা কখনোই জানতে পারতেন না, তাই তিনি পজিটিভ থাকাকালীন সময়ে একজন সক্রিয় ক্যারিয়ার বা বাহক হিসাবে সমাজে চলাফেরা করতেন স্বাভাবিকভাবে। তাতে করে এই ভাইরাসটি উনার থেকে সমাজে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পরত খুব সহজেই। উনার হয়তো ইমিউনিটি ভালো, তাই কোন রোগলক্ষ্মণ প্রকাশ না করেই সুস্থ হয়ে যেতেন। কিন্তু এই সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত, অর্থাৎ লক্ষ্মণহীন পজিটিভ থাকা অবস্থায় তিনি সমাজে আর যাদেরকে এই ভাইরাস সংক্রমিত করে যেতেন তাঁদের সকলেরই যে ইমিউনিটির মাত্রা উনার মতোই তুঙ্গে থাকবে, এমন তো কোন কথা নেই। তাই, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সেই ভাইরাসের লক্ষ্মণ (রোগলক্ষ্মণ) প্রকাশ করতেন। চিকিৎসিত হতেন। হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতেন, অথবা যুদ্ধে হেরে যেতেন। তাই না ?
আর এখানেই হল ব্যাপক এবং নিবিড় (ইনটেনসিভ) টেস্টের গুরুত্ত্ব। এই জন্যই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বারবার পইপই করে শুধু একটি কথাই জোর দিয়ে বলে চলেছে, "টেস্ট, টেস্ট এন্ড টেস্ট"। শুধুমাত্র লক্ষ্মণ থাকলেই টেস্ট করা হবে, লক্ষ্মণহীন হলে টেস্টের দরকার নেই, এই তত্ত্বটি যে কতোটা ভ্রান্ত, অসাড়, বিজ্ঞানবিরোধী এবং বিপজ্জনক, তা সম্ভবত ত্রিপুরার এই দ্বিতীয় করোনা পজিটিভ কেসটি আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে এখনো যদি কেউ তা দেখে উঠতে অসম্মত হই বা অপারগ হই, তবে তা হবে নেহাতই আমাদের যার যার উপযুক্ত দৃষ্টিশক্তির অভাব। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর ভয়ঙ্কর মারাত্মক ফলও যে আমাদের ভোগ করতে হবে না, তাও সম্ভবত ভাবা নেহাত মুর্খামি ছাড়া আর কিছুই হবে না। এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। সময় খুব কম, দ্রুত চলে যাচ্ছে। তবু এখনো সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যায় নি। বেটার লেট দেন নেভার। তাই আর এক মুহূর্তও দেরি করে অযথা মুল্যবান সময় নষ্ট করে বিপদকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একদম ঠিক কাজ হবে না ।
যাই হোক। বিজ্ঞান আর অভিজ্ঞতার বাস্তব ও যুক্তিসম্মত বিশ্লেষণ সকলের দৃষ্টি উন্মোচনে সহায়ক ভুমিকা নিক। রক্ষা পাক মানব সভ্যতা। এইটুকু আশা আর বিজ্ঞান নির্দেশিত সামান্য আবেদনটুকু ছাড়া আর কিই বা করতে পারি ? তাই, একজন নাগরিক হিসাবে এবং বিজ্ঞানের একজন অতি সামান্য ছাত্র হিসাবে আমার কাজটুকু আমি করার চেষ্টা করলাম। একমত হওয়া বা না হওয়া, একমত হলে এক্ষুনি দেশে এবং রাজ্যে নিবিড় টেস্টের ব্যবস্থা করা বা না করা, সে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়িত করা বা না করা যাদের কাজ, উনারা নিশ্চয় উনাদের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী তা করবেন, এটাই আশা করতে চাইবো।