জয়পুরের ফুসফুস ও চলমান প্রাকৃতিক বৈপরীত্য
রিদম সাহা
October 8, 2025
এটি জয়পুরের ঢোলকাবাধের ঘটনা, যা জয়পুরের ফুসফুস নামেও পরিচিত।এখানে জয়পুর সরকার পিএম ইউনিটি মলের ভিত্তিপ্রস্তরের জন্য শত শত একর জঙ্গল কাটতে চায়, এই জঙ্গলে ২৫০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এবং ময়ূর, নীলগাই ইত্যাদি ৮০ ধরণের পাখি ও প্রাণী বাস করে । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারত সরকার সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের সরিয়ে তাদের জমিতে পিএম ইউনিটি মল তৈরি করতে চায়।জোর করে তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে । কিন্তু এই দুর্যোগ ধ্বংসের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে সামনে এসেছিল , এই বন প্রতি বছর ২৫০ টন অক্সিজেন উৎপন্ন করে । এই বনটি জয়পুরের তাপমাত্রা প্রায় দু থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম রাখতে সাহায্য করে, এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে , এখানে ৬০ এর ও বেশি ঔষধি ভেষজ এবং অসংখ্য বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়।এই ধরনের সবুজ স্থান প্রাকৃতিক বায়ু বিশুদ্ধকারী হিসেবে কাজ করে, দূষণকারী পদার্থ শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে। দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলিতে যেখানে খোলা জমির স্থান কংক্রিটের দখলে, এই বনগুলি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।উপরন্তু, গাছের ছাউনি জীববৈচিত্র্যকে সমর্থন করে, পরিযায়ী এবং স্থানীয় পাখির প্রজাতি, পোকামাকড় এবং পরাগরেণুদের আশ্রয় দেয় - যার মধ্যে অনেকগুলিই কাছাকাছি কৃষি এবং বাগানের পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।কাছাকাছি বাসিন্দাদের জন্য, ঢোল কা বধের মতো স্থানগুলি মানসিক এবং শারীরিক সুবিধা প্রদান করে - হাঁটা, বিশ্রাম, ব্যায়াম এবং প্রকৃতির সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের জায়গা - যা আধুনিক শহরে ক্রমশ বিরল হয়ে উঠছে।
বন উজাড় করে দেওয়া এটি প্রথমবার নয়। ২০২৩ সালে অশোক গাহলোট সরকার এই জঙ্গল টি কেটে এই ফিনটেক পার্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই সময় তিনি ব্যর্থ হলেন কারণ হাজার হাজার মানুষ ওনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিল ,দিয়া কুমারী ও সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু আজ তাঁর সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ইউনিটি মলের জন্য এই বন কেটে ফেলা হচ্ছে ।উন্নয়ন করো কিন্তু গাছ কেটে না।আজ জয়পুরের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি থেকে ৪৮ ডিগ্রি। সেই সময় খুব বেশি দূরে নয় যখন এটি ৫৫ থেকে ৬০ ডিগ্রি ছুঁয়ে যাবে।আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি যে যদি কোন অনুর্বর জমি থাকে তাহলে এই পিএম ইউনিটি মল ওখানে বানানো হোক এবং এই ২৫০০ ভিন্ন প্রজাতি গাছপালা এবং ৮০টি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয় ,কারণ জলের ফোয়ারা দিয়ে তাপমাত্রা নামানো যাবে না। তার জন্য যে গাছপালা এখনো আছে ,তাদের আমাদের রক্ষা করতে হবে।আর এই ধরণের বন উজাড় যদি ক্রমাগত চলতে থাকে, তাহলে অক্সিজেনের কোন ঔষধ নেই এই যুক্তি ছেড়ে দিন।
এই বন কেবল সবুজ আবরণের চেয়ে অনেক বেশি কিছু - এটি এই বনে থাকা পশু প্রাণীদের বাড়ি
আকাশ জাগানো পাখিদের কিচিরমিচির, বনফুলের উপর নাচতে থাকা প্রজাপতিদের, নিম গাছের নীচে খেলা করা শিশুদের এবং এর তাজা, শীতল বাতাসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা বয়স্ক পথচারীদের জন্য। এখানকার মাটি বর্ষাকাল, গ্রীষ্মের বাতাস এবং নির্বিঘ্ন জীবনের শান্ত আনন্দের স্মৃতি ধারণ করে।এমন এক পৃথিবীতে যেখানে আকাশ ক্রমশ ধূসর হয়ে উঠছে এবং বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, সেখানে ঢোল কা বধের মতো স্থান পবিত্র। এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সহাবস্থান, বিরতি এবং নিরাময় কী ? এখানকার প্রতিটি গাছই বছরের পর বছর ধরে বেড়ে উঠেছে - বছরের পর বছর বৃষ্টি, রোদ এবং নীরব স্থিতিস্থাপকতার কারণে। গাছ কেটে ফেলা কেবল কাঠ এবং পাতার ক্ষতি নয় - এটি একটি ক্লান্ত আত্মার ছায়া, মা পাখির বাসা, কল্পনার খেলার মাঠ এবং আগামীকালের আশার ক্ষতি।
আরও পড়ুন...