প্রসঙ্গ মারণব্যাধি করোনা ও লকডাউন - “সবে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ”
সপ্তশীষ দেব
নোবেল জয়ী বিশ্ব শান্তি দূত মাদার টেরেসা বলেছিলেন “আপনি যদি একশত লোককে খাওয়াতে না পারেন, অন্তত একজন লোককে খাওয়ান”। আর উনি এই কথাটা আমাদের ভারতবর্ষের মাটিতে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন। কারন শান্তির জননী মাদার টেরেসা জানতেন যে এই ভারতবর্ষই এমন একটা দেশ যে কিনা অনন্তকাল ধরে সর্ব ধর্ম সুখ-শান্তি এবং বিশ্বের মঙ্গলে সবার আগে কামনা করে থাকে। আর সেটা আজও আমরা বার বার প্রমান করে যাচ্ছি, মারণব্যাধি করোনার প্রকোপে সম্পূর্ণ বিশ্ব যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন অর্থনীতি, ব্যবসায়িক বাজারে প্রতিযোগিতা সবকিছুকে ভুলে মানুষের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ১৩২ কোটির ভারতবর্ষ সম্পূর্ণ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে। যেখানে বিশ্বের তাবর তাবর দেশ সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করতে হাজার বার চিন্তা করছে।
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর এটা বিশ্বাস যে এই দেশ ভয়াবহ পরস্থিতির মধ্যেও একে অপরকে সাহায্য করতে কখনো পিছু পা হয় না। তাইতো তিনি জি-২০ সমাবেশে দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন যে আমার দেশের মানুষের জীবন আগে, আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা সবাই এক হয়ে এই মারণব্যাধি কে হারাবো। আর কেনই বা বলবেন না, বিশ্বকবি রবি ঠাকুর যে এই দেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”। এই দেশ যুবক-যুবতিদের দেশ, এই দেশ কর্ম কে ধর্ম মেনে চলার দেশ। তাই করোনা পরবর্তী অর্থনীতির ক্ষয়-ক্ষতি এই দেশের যুবক-যুবতিরা ঠিক সামলে নেবে, এটা আমাদের সকলের দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু তার আগে এই কঠিন পরস্থিতিতে এই দেশের মেরুদণ্ড দেশের বয়স্কদের, দেশের ভবিষ্যৎ ছোট ছোট শিশুদের জীবন রক্ষা করতে হবে। শুধু মাত্র এই সকল শ্রেণীর লোকেদেরই নয়, প্রত্যেকটি ভারতবাসীর জীবন রক্ষার সঙ্কল্প নিতে হবে। আর ঠিক তার জন্যই এই ২১ দিনের লকডাউন এবং এই লকডাউনের নিয়ম কানুন গুলি সঠিক ভাবে পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সমস্ত রাজ্যের রাজ্য সরকার ২১ দিনের লকডাউন চলাকালে নাগরিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের জোগান দিতে যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, বিশেষ করে গরীব অংশের মানুষদের জন্য।কিন্তু এই বিশাল দেশে বিশাল জনসংখ্যার চাপে সব জায়গাতে হয়তো সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে সমস্ত সহযোগিতা পৌঁছতে পারছে না, আর বাধ্য হয়ে গরীব অংশের মানুষদের রাস্তায় বেড়িয়ে আসতে হচ্ছে। গরীব অংশের মানুষদের এইভাবে রাস্তায় বেড়িয়ে আসা লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে আর করোনার প্রকোপকে বাড়িয়ে তুলতে একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে তুলছে।
তাই এই পরিস্থিতিতে আসুন না আমি, আপনি আমরা সবাই মিলে মাদার টেরেসার সেই কাথাটি স্মরন করে আমাদের যতটুকু সামর্থ্য সেই সামর্থ্য থেকে নুন্যতম একটি মানুষকে একটু সাহায্য করি, আর তাকে রাস্তায় বেরনো থেকে আটকাই। ভারতে ২৫% লোক দীনমুজুরের কাজ করে সংসার চালিয়ে থাকে, সংখ্যার নিরিখে সেটা দাঁড়াবে ৩৩-৩৫ কোটির কাছাকাছি। আর এই ৩৫ কোটি লোককে আমরা বাকি ৯৫-১০০ কোটি লোকেরা কি পারিনা এক মুঠো করে দু-বেলা অন্ন দিতে, আমার তো মনে হয় নিশ্চয়ই পাড়ি।
মনে রাখবেন এই গরীব লোক গুলি যেভাবে রাস্তায় বেড়োচ্ছে এদের মধ্যে যদি করোনা ছড়ায়, তাহলে কিন্তু আমি আপনি কেউই রক্ষা পাবোনা। তাই চলুন না সরকারের ভুল-ত্রুটি, রাজনৈতিক রঙ, ধর্ম, বর্ণ এসব ভুলে সবাই মিলে এই করোনা কে আমরা পরাজিত করি। এই তো আবার কিছুদিন পর আসছে দুর্গাপূজা, ঈদ, বড়দিন যখন আমরা হাত খুলে উৎসবের জন্য চাঁদা দেবো। আসুন না সেই চাঁদার কিছু অংশ দিয়ে নিজের নিকটবর্তী গরীব লোকটাকে কিছুদিনের জন্য দুবেলা দুমুঠো অন্ন দিয়ে একটু সাহায্য করি। এতে করে ভগবান আমাদের কতটুকু আশীর্বাদ করবেন সেটা আমার জানা নেই, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের রাতের ঘুমটা আমরা শান্তিতে ঘুমাব এটা ভেবে যে আমিও এই করোনা মোকাবিলায় একজন সৈনিক তা নিশ্চিত বলতে পারি।
হয়তো বা অনেক বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে ছোট মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে ফেললাম। তার জন্য আমি করজোড়ে সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু এই দুঃসময়ে এই বিনম্র আবেদনটুকু না করে থাকতে পারলাম না। চলুন না সেই ছোটবেলার মত এক স্বরে আবার সবাই মিলে বলে উঠি;
“সবে মিলে করি কাজ।
হারি জিতি নাহি লাজ”।।