খাদ্য বিলির নামে রাজ্যের নানা অংশে লকডাউনের বিধিনিষেধের বারোটা বাজতে চলেছে
প্রদীপ চক্রবর্তী
রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের নানা অংশে লকডাউনের বিধিনিষেধের বারোটা বাজতে চলেছে। বাধা নিষেধ যেনো শিথিল হয়ে পড়ছে। অনেকেই অনেক কিছু মানছেন না। যারা মানছেন না তারা নিজেদের মর্জিমাফিক চলতে শুরু করেছে। এ করতে গিয়ে তাঁরা তো শুধু নিজেদের বিপদ থেকে আনছেন না, এরা রাজ্যের বিপদ আনতে শুরু করেছেন। বিপদ মানে ভয়ন্কর মারনব্যাধি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার। এরা ভুলেই যাচ্ছে করোনার ভয়ংকর বিপদের কথা।
অথচ কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব লকডাউন ১০০ শতাংশ হ্ওয়ার জন্য রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উনার ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দু-একদিনের মধ্যেই লকডাউনের বাধানিষেধ ঝুলে পড়তে শুরু করেছে। এরা কাউকেই আমল দিতে চাইছেই না। এদের ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হয় ওরাই সব রাজার রাজা।
বলছিলাম রাজধানীর কথা। বাধানিষেধ লাপরোয়া করে কিছু উচ্চিঙ্গের যুবক বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। রাজপথে শোঁশোঁ করে ছুটে চলছে। ট্রাফিকের বাধানিষেধ মানছেই না। পুলিশ কেও ওরা আমল দিচ্ছে না। ওদের গতিরোধ করলেও উল্টো পাল্টা বলে চলে চলেই যাচ্ছে। অনেকের বাইক, স্কুটার, স্কুটির সামনে সাঁটা থাকছে ON EMERGENCY DUTY MEDICAL SERVICE, WATER SUPPLY SERVICE, PRINTING SERVICE, ELECTRICITY SERVICE ইত্যাদি। এগুলোর সত্য মিথ্যা যাচাই করার সময় ও থাকেনা পুলিশের। তবে কোন কোন রুই কাতলা কিন্তু জালে পড়ছে। এদের তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। কাউকে কানধরে উঠবস করানো, বুকডন, ক্যাঙ্গারু লাফ, দৌড় দেওয়ানো। আবার সুতলিতে বিস্কুট ঝুলিয়ে দুদিকে নাড়ানো চাড়ানো। বিস্কুট মুখে পুড়তে গিয়ে একেকজন নাস্তানাবুদ।
এটা দরকার শহরে। শহরের অলিগলিতে। কেননা বাইক বাবুরা ষোড়শী বসিয়ে এগলি সেগুলি করে। ব্যস ভালোই আছে ওরা। বাইকে,ভ্যান পেট্রোল আছে, কিন্তু সব সময়তো ওদের পক্ষে গলি গলি যাওয়া সম্ভব হয় না।
অবিলম্বে এসব বন্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু কে করবে বা কিভাবে। যদিও সিসিটিভি বসানো আছে সব জায়গায়। এসব অতি বিপ্লবীদের কড়া হাতে দমন করা সমাজ, রাজ্যের সার্বিক স্বার্থে জরুরি। নতুবা তীরে এসে তরী ডুববেই।
আর এক নুতন সমস্যা শুরু হয় বিকাশ থেকেই। প্রতি পাড়ার গলি, মহল্লায় এক শ্রেণীর সব জান্তা যুবক আছে তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুল মারছে। অন্যরা আগ্রহ নিয়ে শুনছে। সবাই কিন্তু জটলা করেই এসব গুল শুনছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো গোল্লায়।
এভাবে চলতেই পারেনা। চলতে দেয়া যায়ও না। রামঠাকুর সঙ্ঘ, এমবিবি ক্লাব রোড, ফ্লাওয়ার্স ক্লাব, প্রান্তিক, জয়গুরু, আশ্রম চৌমুহনী, চন্দ্রপুর, গোর্খাবস্তী, এডভাইজার চৌমুহনী, বিজয়কুমার চৌমুহনী, দূর্গা চৌমুহনী, বটতলা চক্কর,গোলচক্কর সর্বত্রই এই চিত্র। পুলিশ জানেনা,এমন নয়। কিন্তু এদের তো তেমন লোকবলও নেই। ছাক্কা তুলে নিতে হয়তো পারে।
নুতন আরেক সমস্যা বদনকিতাব। রাস্তার ভবঘুরেদের দুয়েকজনকে বিস্কুট, জলের বোতল দিয়ে ছবি তুলে তাৎক্ষণিকভাবে পোস্ট করা। ব্যস হয়ে গেল। প্রচারে গেল।আর কি লাগে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুঃস্থদের মধ্যে নানা সংস্হার পক্ষে ত্রান সাহায্য বিতড়ন করা হচ্ছে। মঞ্চও গাদাগাদি, বেনিফিসিয়ারিও গাদাগাদি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা! বলিহারি, দেয়ার আছে দেয়া হল,ছবি তোলা হল, পোষ্ট হল, আর কি লাগে! হায় রাম।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে লক্ষনরেখা টেনে দিয়েছিলেন। নিষেধ করে দিয়েছিলেন কারো বাড়ীঘরে যেন কেউ না যায়। মানছিল সবাই। কিন্তু এখন ? যে কে সেই,মানে পুন্মুষিকভব। কাজের লোক আসছে, যাচ্ছে, কাজ করছে। সেনিটেশন চন্দ্রগ্রহে গেছে। এদিকে বিপদ বাড়ছেই বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথা আমল দিচ্ছে না কেউই। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়।
বিপদ তো আর একজনের জন্য আসে না। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন-এর ছবি দেখলেই আঁতকে উঠতে হয়। কিন্তু এ পান্ডব বর্জিত রাজ্যে কোন হেলদোল আছে বলে তথ্য ব্যবস্থাপনা মনে করে না।