পার্বত্য জনপদের গুমড়ানো কান্নায় বাতাস ভারী
প্রদীপ চক্রবর্তী
পানীয় জল সংকট, শুন্য ভাড়ার, রোগব্যাধির দাপটে ত্রস্ত পার্বত্য জনপদ। এখন ওদের বড়ই দূঃসময়।একদিকে ঘড়বন্দী, আয় নেই, আছে ব্যয়। লকডাউনে জান জেরবার।হাতে পয়সা নেই, ঘরে চাল বাড়ন্ত ।মরার উপর খাড়ার ঘা, শুখা মরশুমের সর্দী,কাশি, জ্বর আর অল্পবিস্তর আমাশয়।বিথী কুড়ুই। মানে অষুধ নেই। থাকবে কোথায়, কিভাবে? চিকিৎসক পাবে কোথায়? ১০/১২ মাইল গিয়েও দেখা মেলে না চিকিৎসকদের। মিলবেই বা কি করে? ওরা যে গাড়ীঘোড়া না থাকায় আসতেই পারেনা।
অথচ এখন দূঃসময়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন। অন্যদিকে শুখা মরশুম।লংতরাই, আঠারমুড়া, বড়মুড়া, দেবতমুড়া, শাখানে যে পাতা শুকিয়ে মাটিতে। প্রাক কালবৈশাখী ঝড়ে কিছু স্হানে অনেক কিছু নড়বড়ে হয়ে গেছে।ঘড়ের চাল মুখ থুবড়ে মাটিতে আবার কোথাও কোথাও টিনের চাল গাছের উপরে। সিমনা, গাবর্দি, জম্পুইজলায় উদ্বেগজনক চিএ। মুখ্যমন্ত্রী দেখে এসেছেন, কিছু আর্থিক সহায়তা করেছেন।
কিন্তু এখন যে পাহাড় রুক্ষ। সবুজের অস্তিত্ব নেই কোথাও। গাছের শুকনো পাতা ঝড়ে গেছে। সামান্য বাতাসে পাতা এটিলা থেকে ওটিলায় উড়ে পড়ছে।যদিও পাহাড় বেশ কবছর ধরে প্রায় উলঙ্গ। বনদস্যুরা পাহাড় সাবাড় করেছে। মদত জুগিয়েছে বনকর্মীদের একাংশ। বনের টাকায় শীতল বাবুরা শহরে ইমারত গড়েছে। এদের শহরেও বাড়ী, গ্রামের খামার বাড়ীতো আছেই। প্রতি শনিবার এরা চার চাকায় গ্রামের খামারে যায়, শাকসবজি চাষাবাদ, পরিচর্যা করে, পরদিন ভুড়িভোজ সেরে ওয়াক বাহান নিয়ে আগরতলায় ফেরে। ওদের একুল ওকুল দুকূল আছে, আর আমাদের থেকেও কিছু নেই। হয়তো বা আছে।
জুমিয়াদের সেই সংখ্যা এখন আর নেই। অনেক হ্রাস পেয়েছে। বহু জুমিয়া ঘড়ের সন্তান এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, তিরুবন্তপুরম, মুম্বাইয়ে এর মল, হোটেল গুলোতে ভূমিপুত্র যারা তাঁদের ছেলে মেয়েরা ফ্রন্ট ডেস্ক এ কাজ করছে। দিব্যি আছে এরা। ভালোই আছে।এরাজ্যের কেউ বাইরে গিয়ে অর্থাৎ চিকিৎসা করাতে গেলে কেউ অসুবিধায় পড়লে ওরা নানাভাবে সাহায্য করছে। হায়দ্রাবাদে অমিয় দেববর্মার অপারেশনের সময় ওরা মুহুর্তের মধ্যে বেশ কয়েক বোতল রক্ত দিয়েছে। কানাকড়িও নেয়নি।এমন অনেককেই এরা এভাবে সাহায্য করছে, এ মানবিক সাহায্য, সহযোগিতা। এদেরকে এখানকার নন্দননগরে ফাদার যোসেফ, মিনারা প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠিয়ে থাকে। বিভিন্ন বিমানবন্দরে ও রাজ্যের ছেলেরা রয়েছে। গ্রাউন্ড ষ্টাফ, ফ্রন্ট ডেক্স, কাউন্টার-এ ওরা কাজ করে।পরিচয় পেলে ওরা খানিক সময়ের জন্য আনন্দ অনুভব করে।খুব স্বাভাবিক।
মরশুমের শুরুতেই পার্বত্য পল্লীতে ডোবা, পুকুর, ছোটবড় জলাশয় শুকিয়ে গেছে। ওগুলির হাড়গোড় বেরিয়ে কাঠ।
অন্য অঞ্চলের কথা বাদই দিলাম কেননা তৎপর আধিকারিকরা এসব চেনেননা বা চেষ্টা ও করবেন না। হেজামারা থেকে সুবলসিং বাজারে যাওয়ার পথে আগেই দেখা যায় পুকুর ডোবার হালহকিকত। এত ভিতরে যেতে হয় না।
রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিশ্রুত পানীয় জল সংকট নিরসনে সরকার কাজ করছে বলে বরাবরই দাবী থাকে শাসকদলের। এই কদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সংকটের কথা স্বীকার করে বলেছেন সমস্যা নিরসনে কাজ চলছে।
রাজধানী তে বসে তো পার্বত্য পল্লীর সমস্যা অনুভব করা যায়না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীরা কি সংকটে তা ওরাই জানেন। মানিকবাবুর আমলে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের নামে কয়েক কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। পার্বত্য পল্লীসমূহে তাদের বাড়ীতে সিমেন্টের ফিল্টার সরবরাহ করা হয়েছে তারা সেগুলো আবর্জনার পাত্রে পরিণত করেছে। ওরা জানেই না কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। আর জলই পাবে কোথায়। এগুলোর জন্য ঠিকেদারদের টাকা দেয়া হয়েছে, সচেতনতামূলক পোষ্টার মুদ্রনের জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, হয়েছে ব্লক বাবু, ঠিকেদার আর গ্রামের টাউট বাটপারদের পকেট ভারী করা।দশদা বলুন, আনন্দবাজার বলুন, মহারানী, দামছড়া, করবুক, শিলাছড়ি, ভগবান সর্দার পাড়া, ঈশ্বর চন্দ্র রোয়াজাপাড়া, হারিয়ামনি রোয়াজা পাড়া, রইস্যাবাড়ী, পাড়াকলক, কাসকো সবখানেই একই অবস্হা।
এখন লকডাউন।করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার রোধে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য দপ্তর রয়েছে, রয়েছে কর্মী, কিন্তু ওরাতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতেই পারছেন না। একদিকে করোনা, অন্যদিকে পানীয় জল সংকট, শুন্য ভাড়ার, রোগব্যাধির দাপটে ত্রস্ত পার্বত্য জনপদ।