'জাগৃতি কুইজ, ত্রিপুরা ২০২৫’ জ্ঞানার্জনে যুবসমাজের জন্য আরও একটি নয়া প্ল্যাটফর্ম
অশেষ সেনগুপ্ত
January 7, 2025
সালটা ২০০৭, শীতের নাচন আমলকীর ডাল বেয়ে নেমে এসেছে পৌষ পার্বনে। নতুন শিক্ষাবর্ষ আর নতুন বইয়ের সঙ্গে যেগুলির জন্য সবচেয়ে বেশী উদগ্রীব হয়ে থাকতাম আমরা, তার অন্যতম ছিল জেলাভিত্তিক বইমেলা ও বিজ্ঞানমেলা। তারপর বসন্ত এলেই শুরু হতো জেলাভিত্তিক নাট্য প্রতিযোগিতা। কিশোর জীবনে এক সমৃদ্ধ বিজ্ঞান মনস্ক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ পেতে এই মেলাগুলির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই প্রয়াসে নতুন পালক হিসেবে যুক্ত হতে চলেছে মেধা ও মনন নিরীক্ষার অন্যতম মাধ্যম কুইজ প্রতিযোগিতা। কারন কুইজ প্রতিযোগিতা মানেই শুধু জ্ঞান যাচাই নয়, এটি বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের মঞ্চ। তাই ত্রিপুরার শিক্ষা ও সচেতনতার পরিসরে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে চলেছে ‘জাগৃতি কুইজ, ত্রিপুরা ২০২৫’-এর মাধ্যমে। রাজ্য সরকারের খাদ্য, নাগরিক সরবরাহ ও উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তর এবং পরিবহন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেগা কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রথমবারের মতো কলেজ স্তরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উপভোক্তা অধিকার, সড়ক নিরাপত্তা এবং মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রথমবারের এই ‘জাগৃতি কুইজ, ত্রিপুরা ২০২৫’ আয়োজন করা হয়েছে তিনটি জেলা ভিত্তিক পর্যায় ও একটি রাজ্য স্তরের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। প্রথম ধাপে কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব বাছাই পর্ব। দ্বিতীয় ধাপে জেলা ভিত্তিক প্রতিযোগিতা, যা তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে -১১ জানুয়ারি, ২০২৫ দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী ও সিপাহিজলা জেলার প্রতিযোগিতা উদয়পুরে অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ উত্তর ত্রিপুরা, ঊনকোটি ও ধলাই জেলার প্রতিযোগিতা কুমারঘাটে আয়োজিত হবে। এবং ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ পশ্চিম ত্রিপুরা ও খোয়াই জেলার কলেজ, আই টি আই, পলিটেকনিক, নার্সিং ও মেডিক্যাল কলেজের প্রতিযোগিতা আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে।
তৃতীয় ধাপে প্রতিটি জেলা পর্যায়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী দল নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত হবে রাজ্য স্তরের চূড়ান্ত ফাইনাল। রাজ্যে দীর্ঘসময় ধরে মেগা কুইজ আয়োজনের অন্যতম অগ্রদূত tripurainfo.com এবং অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল অফ সায়েন্স রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই 'জাগৃতি কুইজ ' আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে।
উদ্যম ও সৃজনশীলতা বাড়াতে কুইজ প্রতিযোগিতায় দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত পুরস্কার। যেমন জেলা পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার ডিজিটাল ক্যামেরা, দ্বিতীয় পুরস্কার ডিজিটাল প্রিন্টার, তৃতীয় পুরস্কার স্মার্টওয়াচ। তেমনি রাজ্য পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার হিসেবে থাকছে ল্যাপটপ, দ্বিতীয় পুরস্কার ট্যাবলেট,তৃতীয় পুরস্কার স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হবে বিজয়ীদের হাতে। এছাড়া, অডিয়েন্স রাউন্ডেও থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কারের সুযোগ। সাধারণ দর্শকরাও কুইজের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে পুরস্কার জিতে নিতে পারবেন।
ত্রিপুরার শিক্ষাক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা এই কুইজ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। কুইজ মাস্টার হিসেবে থাকছেন আগরতলা 'স্কুল অফ সায়েন্স' এর অধ্যক্ষ অভিজিৎ ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা সরকারের সাধারণ প্রশাসন দপ্তরের উপসচিব নন্দু কুমার পানিক্কর এবং নবীন কুইজ মাস্টার হিসেবে আগরতলা অক্সিলিয়াম গার্লস স্কুল এর সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মধুজা দেবনাথ (মাহি)। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানের সার্বিক সঞ্চালনায় থাকবেন শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ সুভাশিস কর।
এই কুইজ শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং সচেতনতারও এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশ্বব্যাপী ভোক্তা অধিকার রক্ষা ও সড়ক নিরাপত্তা বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়। ত্রিপুরার এই কুইজ প্রতিযোগিতা তরুণ প্রজন্মকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রসঙ্গত প্রতিবছর ভারতে প্রায় ১.৫ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। নিরাপদ ড্রাইভিং ও ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলার প্রতি যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করাই এই কুইজের অন্যতম লক্ষ্য। তরুণদের মাদকাসক্তির কবল থেকে দূরে রাখতে এই কুইজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনে কোন রেজিস্ট্রেশন ফি নেই। প্রতিযোগীদের শুধুমাত্র তাদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম জমা দিতে হবে। প্রতিযোগিতার দিন বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক।
পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আশা ব্যক্ত করেন যে, ‘জাগৃতি কুইজ, ত্রিপুরা ২০২৫’ যুবসমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। এটি শুধু জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র নয়, বরং সচেতনতা, নেতৃত্ব এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলার এক অপূর্ব সুযোগ। ত্রিপুরার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটি হতে চলেছে এক নতুন অভিজ্ঞতা, যেখানে তারা অংশগ্রহণ করে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিকাশ ঘটাতে পারবে।
সুতরাং, আপনি কি প্রস্তুত এই বুদ্ধির লড়াইয়ে অংশ নিতে! সময় এসে গেছে, জ্ঞান ও সচেতনতার আলোয় আবারো নিজেকে আলোকিত করার।
যোগাযোগ: ইমেইল: [email protected]