করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা রাহুল গান্ধীর চিঠি
রাহুল গান্ধী
রাহুল গান্ধী ২৯ মার্চ, ২০২০
সাংসদ,
লোকসভা
সম্মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদি,
প্রধানমন্ত্রী, ভারত
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়,
মানবজাতির এই সুগভীর সংকটকালে লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস কর্মীদের পক্ষে আমি আপনার প্রতি আমার সহযোগিতা ও একাত্মভাব ব্যাক্ত করছি। ভারতবর্ষে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মোকাবেলা করতে সরকারের সকল প্রকার পদক্ষেপের সহযোগিতা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার রুখতে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে আপৎকালীন, কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতবর্ষে তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলছে। আমি আপনাকে আমাদের জনগন, সমাজ এবং অর্থনীতির উপর এই দেশব্যাপী লকডাউনের ভয়ঙ্কর প্রভাবের বিষয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
ভারতবর্ষের পরিস্থিতি পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার চাইতে সম্পূর্ণ পৃথক, এই বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। অন্যান্যঅনেক দেশ সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটছে।আমাদের দেশের জন্যে এবিষয়ে পৃথক রাস্তা অবলম্বন করতে হতে পারে। দৈনিকউপার্জনের উপর নির্ভরশীল লোকের সংখ্যা আমাদের দেশে এতটাই বেশি, যে সকলপ্রকার অর্থনৈতিক কার্যকলাপসম্পূর্ণরূপে স্থগিত করে দেওয়া একপ্রকার অসম্ভব। সম্পূর্ণ লকডাউনেরপ্রভাব কোভিড- ১৯ ভাইরাসকৃত মৃত্যুকেআরো ভয়াবহভাবে বর্ধিত করবে।
অতএব, আমাদের দেশের জনগনের এই জটিল বাস্তবতাকে মাথায় রেখে অনেক বেশি সূক্ষ্ম এবং লক্ষ্যাভিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে সরকারকে, বয়জ্যেষ্ঠএবং ভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কাযুক্ত সকলকে ‘আইসোলেট’ অর্থাৎ পৃথকীকরনের কাজ এবংএকইসঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে নিকট সংস্পর্শেআসার সম্ভাব্য সংকট সম্পর্কে কনিষ্ঠদের গুরুত্ব সহকারে অবহিত করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ।
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ প্রবীণজনগন বসবাস করেন। যদি দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন আরোপিত হয় ও দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়, লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক যুবতীরা দলে দলে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাবে। এতে তাদের পিতামাতা, প্রতিবেশী ও অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠ জনগনের সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা প্রবল ভাবে বেড়ে যাবে। এর ফলে মূল্যবান জীবনের হানি ঘটতে পারে।
সুতরাং, আমাদের অতি সত্বরআর দেশের জন্যে সামাজিক সুরক্ষার জাল সংহত করতে হবে এবং খেটে খেওয়া দরিদ্র মানুষের আশ্রয় ও সহায়তার জন্য সকল সরকারী সু্যোজ সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। সরকার যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণাইতিমধ্যেই দিয়েছেন, এটি এই সমগ্র ব্যবস্থার অত্যন্ত ইতিবাচক শুরুয়াৎ। কিন্তু এইসুবিধা প্রত্যেক মানুষের কাছে দ্রুত পৌছানোর কাজটিও গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, এর সুফলমানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য দয়াকরে বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা-সম্বলিত সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করুন, এইঅনুরোধ রাখছি। বড় জনসংখ্যার এলাকাগুলিতে হাজার হাজারবিছানা ওপর্যাপ্তপরিমাণ ভেন্টিলেটর সংযুক্ত বড়, করোনা-কেন্দ্রিক নিদিষ্ট হাসপাতালের প্রয়োজন হবে। যত দ্রুত সম্ভব, এইসব প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদির উৎপাদন শুরু করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, রোগ পরীক্ষার সংখ্যা প্রচুর পরিমানে বাড়াতে হবে, এবং এই ভাইরাসের প্রসারের সঠিক চিত্রটি বুঝতে হবে। তবেই একে রোধ করা সম্ভব হবে।
সরকারের এই হঠাৎ লকডাউনের সিদ্ধান্তের ফলে জনমানসে বিপুল পরিমান ভ্রান্তি এবং দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে। হাজার হাজার পরিযায়ীশ্রমিকদের বাড়িভাড়া না দিতে পারায় বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের অতি সত্বর এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে এদের বাড়িভাড়া প্রদান করা উচিৎ, যাতে এই পরিস্থিতিতে এঁদের বাসস্থানের সমস্যায় না পড়তে হয়। ছোট, বড় বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যেখানে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকেরা কর্মহীন, সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। তারা পায়ে হেঁটে সুদূর পথ অতিক্রম করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। অনেকেইমাঝপথে আন্তঃ রাজ্য সীমান্তে আটকে পড়ছেন। নিজেদের সামান্য উপার্জন ছাড়া এইসমস্ত লোকেরা পুষ্টিকর খাদ্য, ন্যূনতম চাহিদাগুলি না পেয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। গৃহাভিমুখে চললেও এরা আর সকলের মতই আশ্রয়পার্থী। তাঁদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ রাশি পৌঁছে দিয়ে আগামী কয়েকটি দুঃসহ মাস জীবনধারণে সহায়তা করা আশু কর্তব্য।
পাশাপাশি, এই মারণ ভাইরাসের যে আসল প্রভাব এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের অর্থনীতি যেভাবে স্তব্ধ হতে চলেছে, তার পূর্বে আমাদের মূল অর্থনৈতিক ও রনকৌশলগত প্রতিষ্ঠানগুলোকেপ্রয়োজনীয় সুরক্ষা বেষ্টনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত করতে হবে। যেকোন ধরনের পুনর্গঠনের কাজে আমাদের অসংগঠিতঅর্থনীতির সাঠে যুক্ত ছোট, মাঝারি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানএবং আমাদের কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এক্ষণে তাঁদের সাথে আলোচনা করে তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য সঠিক ও সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
এই বিশাল দুর্যোগের মোকাবেলা করার কাজে আমরাসবাই সরকারের সঙ্গে রয়েছি।
শুভেচ্ছান্তে
রাহুল গান্ধী