।।বিপর্যস্ত রেশনিং, অর্থ দূরঅস্ত, সংকটের পদধ্বনি।।

প্রদীপ চক্রবর্তী

রাজ্যের উপজাতিয় অধ্যূষিত পার্বত্য এলাকায় লকডাউন জনিত কারনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে ।কারন রেশনিং ব্যবস্হা প্রায় বিপর্যস্ত।একারনে সাধারণ মানুষ তেমন সরকার ঘোষিত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না তেমনি এরা পাচ্ছেন না রেশন সামগ্রী।লকডাইনে পরিবহন ব্যবস্হা তো নেই, তদুপরি রেশন ডিলাররা বরাবরই ভোক্তাদের নানা ভাবে বন্চিত করে থাকে।এটা অবশ্য বহু দিনের সমস্যা।নুতন সমস্যা তো নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নাতিনমনু,পুতিনমনু,ছামনু,করবুক,শিলাছড়ি , আনন্দবাজার,দশদা কিংবা ক্লাকসি,মমপুই ১/২ সহ রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব নায্যমূল্যের দোকান রয়েছে তার অধিকাংশই দূরবর্তী অন্চলে অবস্হিত।তদোপরি নিয়মিত তো খোলাই হয়না,বা খোলা হলেও এক, দুদিন খোলা হয়ে থাকে। ভোক্তা দূর থেকে আসেন, দোকানের সামনে বসে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। সারাদিন অপেক্ষার পর দেখা যায় আর খোলাই হল না।বাধ্য হয়ে এরা খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়ীর পথে পা বাড়ান। এদের হয়ে কেউ বলার নেই বা দরবার করার নেই। এদের নিয়ে ডিলার বাবুদের বড় অংশের কোন মাথা ব্যথা নেই। এদের মাথাব্যথা শুধু নেতা, অফিসারদের নিয়ে। মাথা ব্যথা হলো ম্যানেজ করার।

এই তেমন থালছড়া,গোবিন্দবাড়ী,নাতিনমনু সন্নিহিত অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতিদের ছামনু বাজার থেকে রেশন নিতে হয়।ওইসব অন্চলের জন্য ডিলার রয়েছে কিন্তু এরা দোকান খুলে বসে আছে ছামনু বাজারে।মানিকপুরে অবশ্য লবনছড়া,আদি রোয়াজা পাড়া সহ আরো কয়েকটি অন্চলে র রেশন সপ মানিকপুর বাজারেই। কিন্তু ভোক্তা দূর্ভোগ সেই আদি অনন্ত কালের মতোই। এদের দূর্ভোগ আদৌ হ্রাস পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ এরা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরে ই রয়েছে,বলা চলে থাকবেও। কেননা পরিকাঠামো তেই গলদ রয়েছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার রোধ জনিত কারণে কেন্দ্র, রাজ্য নানা সুযোগ-সুবিধা ঘোষনা করেছে। কিন্তু উপজাতিয়দের মধ্যে কজন সুবিধা পাচ্ছেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইচ্ছে করলে কর্তৃপক্ষ এসব খোঁজ নিতেই পারে এদের স্বার্থেই।বলা হয়েছে আর্থিক সহায়তা এরা পেয়ে যাবেন ব্যান্কের মাধ্যমে অর্থাৎ অর্থ সরাসরি ব্যান্ক একাউন্টে চলে যাবে।

কিন্তু যায়নি তো।আজো এই প্রতিবেদক ছামনু,মানিকপুর,ছৈলেংটার কয়েকজনজনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছে।এরা যা বলেছে তাতে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়।ও সব অন্চল গুলিতে ব্যান্ক তো দূরের কথা , নানা ব্যান্কের যে সব এজেন্ট রয়েছে তাঁরা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট গ্রামে যাচ্ছেন না। অজুহাত সেই করোনার। এই পরিস্থিতিতে সরকার যত আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা বা বরাদ্দ করুক না কেন অর্থ গরীব দূঃস্হ উপজাতিয়রা পাবেনা।এখনো এরা কোন আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা বিনামূল্যের চাল,ডাল কিছুই পায়নি।যদিও উপজাতিয়দের অধিকাংশ ডাল খায় না অর্থাৎ ডাল ওদের না পসন্দ।

কিন্তু এই বিপন্ন সময়ে ওদের দিকে তাকানো তো সরকারের দায়িত্ব।সরকার তো এসব দায়িত্ব পালন করছেই না।উপমুখ্যমন্ত্রী তো আজ অমরপুর ছুটে গেছেন,বৈঠক করেছেন।বৈঠকে তিনি যা শুনেছেন তাতে উনি স্তম্ভিত। নির্দেশ দিয়ে এসেছেন ঠিকই কিন্তু সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে।

এই মুহূর্তে উপজাতিয় এলাকায় যুদ্ধকালীন পরিস্হিতিতে উপজাতিয় ভোক্তাদের কাছে সরকারী ভাবেই রেশন ও অর্থ পৌঁছিয়ে দেয়া জরুরি ।তেমনি উপজাতিয় অন্চলে স্বাস্হ্য পরিষেবায় যত্নবান হওয়া জরুরি। অধিকাংশ স্বাস্হ্য কেন্দ্র,উপস্বাস্হ্য কেন্দ্র,ডিসপেনসারী প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। কেননা চিকিৎসক ও দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মীরা তো যেতেই পারছেন না।যাবে কি করে? গাড়ী ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ।সরকার এ সব স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ভাবেই নি।অথচ ভাবা উচিত ছিল সবার স্বার্থে ই।

অন্যদিকে এখন শুখা মরশুম। জলের তীব্র সংকট।সংকট আরো তীব্রতর হয়ে উঠতে পারে আগামীদিনে।সেই সাথে আন্ত্রিক ও ম্যালেরিয়া জাঁকিয়ে পড়ার প্রবনতা রয়েছে এরাজ্যে র প্রত্যন্ত অঞ্চলে।মনে রাখতে হবে ছামনু, লঙ্গাই উপত্যকা র সেইসব ভয়াবহ দিনগুলির কথা,যেসব দিনে একের পর এক মৃত্যু হয়েছে।নাতিনমনুতে মৃত্যর হাতছানিতে তটস্থ পরিবারের লোকজন শিশু সন্তানকে না পুড়িয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।এ সব আমার দেখা, অভিজ্ঞতা।মেনিঙ্গোককালে শুরু হয়েছিল মৃত্যু মিছিল।

এখন তো পরিস্থিতি অতীতের প্রেক্ষাপটে এবং করোনা জনিত কারণে আরো উদ্বেগজনক।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
04.04.2020Niladri PaulDuring NORMAL TIME, Govt SERVANTs are off from their duties HOW VOTERS EXPECT THEIR SERVICE IN PRESENT SITUATION?????