লাগামহীন ভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য-সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, রেশন ডিলারদের বাড়াবাড়ি আতঙ্ককে আরো ভয়াবহ করে তুলছে
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রশাসন যতই মুখে বলুক, বা অসীম বাবুরা তল্লাশি চালান না কেন খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম হু হু করে বাড়ছেই। লাগামহীন ভাবে এই মুল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের একাংশের মানবিকতা বলতে কিছুই নেই, আছে শুধু সাধারনকে নিংড়ে নেয়া। অভিযোগ এঁরা শুধু নিজের স্বার্থের কথাই জানে, অন্যদের কথা গোল্লায় যাক।
বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রী মনোজ দেব ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন ও পরে কয়েকটি দোকান পরিদর্শন করেন। একটি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ ও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে ব্যবসায়ীরা যেমন আরো একরোখা হয়ে উঠেছেন।
রাজ্যের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র মহারাজগঞ্জ বাজার। আজ তো বাজারের ব্যবসায়ীরা একরোখা হয়ে গেছে। এদের মনোভাব এমন "দাড়াও, দেখাচ্ছি মজা। হাড়ে হাড়ে টের পাবে।" হাড়েহাড়ে টের তো পাচ্ছেই সাধারণ মানুষ। পাঁচ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেট ১০ টাকা, মুশুরি ডাল ১৪০ কিলো, চাল সাধারণ কিলো প্রতি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। তাও নাকি চালের ষ্টক নেই। আলু প্রতি কিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ একলাফে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা ১০০ গ্রাম, মাছ তো ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা কিলো, তাও সাধারণ মাছ। দূর্গন্ধ বেরুচ্ছে, মাছি ভনভন করছে সে মাছ ৪০০ টাকার কম নয়। বুঝুন ঠ্যালা। মাছ বাজারের আগুন দেখে কেউ সেদিকে পা বাড়াচ্ছে না। শুকনো মাছের বাজারেও হালকা।
শোনা যায়, আড়ত কন্ট্রোল করে থাকেন দাশ বাবু। সুদূর অতীতে অনিল বাবুর সাথে দহরম মহরম ছিল। এখন তো তিনি আবার সামনে পেছনে সান্ত্রী পরিবেষ্টিত হয়ে ফু ফু করে চলেন। তাঁর ফতোয়া অমান্য করার হিম্মত কোন মাছ ব্যবসায়ীর নেই বলে প্রকাশ। মহারাজগঞ্জ বলুন আর বটতলা সব খানেই তাঁর আধিপত্য।
মাছ তো আর এখন বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয়না। রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে মাছ আসে। মেলাঘড়, কাকড়াবন, উদয়পুর, অমরপুর, নুতন বাজার থেকেই আসে বেশী। ভোর ৩ থেকে ৪ টার মধ্যে মাছের ছোট ট্রাক পৌঁছে যায় বটতলায়। ট্রাক আসার আগেই মাছ বিক্রি হয়ে যায় কপর্দকহীন আস্তিন গুটানো বিএমএসের ষন্ডা পান্ডা মার্কা গোছের যুবকদের কাছে। ট্যা ফূ করার সুযোগ নেই। এদের কাছে তো মাছ বিক্রি করা হল, কিন্তু টাকার জন্য এদের পিছু পিছু ঘুরতে হবে বিকাল তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত। এ নিত্য দিনের চিত্র।
অথচ লকডাউনের ক্রান্তিকালে ডম্বুর জলাশয় হয়ে উঠতে পারে মাছ প্রিয় বাঙালিদের ভরসা কেন্দ্র।
কোন এক সময়ে সরকারী তরফে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে কাউন্টার করে ডম্বুরের মাছ বিক্রি করা হত। তরতাজা, নানা জাতের মাছ। আবার কেটেও বিক্রি হত। সাত সকালে থেকেই শুরু হয়ে যেত মাছ বিক্রি। দুঘন্টায় সব শেষ। কিন্তু আজ এসব ধূসর স্মৃতি। তবে প্রশ্ন কেন ডম্বুর জলাধারের মাছ এনে বিক্রি করা হয় না? ওই বিশাল পরিমাণ মাছ কাদের পেটে যায়? এসব অবৈধ ব্যবসা নিয়ে তদন্তের দাবী উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রায় নিত্যদিন স্হানীয় চ্যানেল গুলিতে ভাষনে বলছেন কেউ যেন বাড়তি মুনাফার চেষ্টা না করে। সরকারের নজরে এলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। ব্যবস্হা তো নেয়া হচ্ছে ঠিকই। সকালে দোকান সীল তো বিকালে সব ফূ৺। বিকালে দোকানে তালা সকালে আরো বেশী করে খোলা। দিব্যি মেজাজে দিলখুল ব্যবসায়ী।
প্রধান বাজার মহারাজগঞ্জে জিনিসের নাকি আকাল। গাড়ী আসছে না বলছে ব্যবসায়ী। কিন্তু রাত ৮টা বাজতেই একের পর এক পন্যবাহী ট্রাক বাজারে আসছে। রাতারাতি এক ট্রাক থেকে আনলোড করে অন্য ছোট ছোট গাড়ীতে লোড করা হচ্ছে। লোডিং আনলোডিংর কাজে যুক্ত বিহারী শ্রমিকদের এখন পোয়াবারো। ভোর ৪টা নাগাদ ওই ছোট ছোট ট্রাকগুলি ছুটে চলে বিলোনিয়া, সাব্রম, শিলাছড়ি, করবুক, নুতন বাজার, অমরপুর, উদয়পুর আর মেলাঘর, সোনামুড়ায়।
প্রশ্ন হচ্ছে বাজারের উপর কেন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। নিত্যদিন পন্য সামগ্রীর গায়ে হাত দেয়া যায় না। হাতে ছ্যাকা লাগছে আমজনতার।
আমজনতা ভাষন শুনতে খুব কমই চায়। এরা চায় আলু সেদ্ধ, ডাল ভাত খেতে। কিন্তু তার উপায়ও নেই বলা চলে।
বলা হচ্ছে নায্যমূল্যের দোকান থেকে সবাই সব কিছুই প্রায় পাবে বিশেষ করে বিপিএল, এপিএল ৫০,০০০ পরিবার।
অধিকাংশ নায্যমূল্যের দোকান বন্ধ। যেগুলি খোলা থাকে তাদের অধিকাংশই ভোক্তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। করবেই তো, এর যথেষ্ট কারন আছে। সরকার বদলের পরপরই বহু ডিলারশীপ বাতিল করে পৃষ্ঠা প্রমুখদের বসানো হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এদের একটি অংশ ধরাকে সরা বলে মনে করে।
বনমালীপুরের এক পৃষ্ঠা প্রমুখ, তাকে নূপুর নামেই সবাই চেনে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নাকি তাকে ডিলারশীপ দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর নামে। তাঁর ঔদ্ধত্য এমন ভোক্তাদের নিজেদের চাল, ডাল, চিনি, ময়দা, মেপে নিতে হয়। আর নুপুর নামীয়রা গোঁফে তা দিয়ে টাকা গুনে। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলে কি হবে, প্রতিকার নেই।
অথচ এখন মানবসভ্যতা গভীর সংকটে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দিন মজুরের রুটি নেই, সব অনিশ্চিত।এ অবস্থায় লাগামহীন ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো, রেশন ডিলারদের বাড়াবাড়ি আতঙ্ককে আরো ভয়াবহ করে তুলছে।