লকডাউন: ত্রিপুরাতে যা বলা হচ্ছে মুখে তা বাস্তবে মিলছে না, মিসকলে চাকুরির মতই জাদুর ভেলকিবাজী
পুরুষোত্তম রায় বর্মন
লকডাউন চলছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পূর্বে সরকারি ঘোষণায় জানানো হয়েছিল , অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না । দোকান, বাজার, রেশন শপ, ওষুধখানা, হাসপাতাল ইত্যাদি জরুরী পরিষেবা লকডাউনের আওতার বাইরে । বাজার খোলা থাকার অর্থ হল দোকানিরা আসবেন, ক্রেতারা যাবেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে। অফিসে রোস্টার ডিউটি, কর্মচারীদের যেতে হবে। লকডাউনে জরুরী প্রয়োজনে নাগরিকরা বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন। গতকাল আগরতলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় কাউকে পেলেই পুলিশ বেধড়ক মেরেছে। এমন কি বৈধ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও রেহাই দেওয়া হয়নি লাঠির উপর্যুপরি আঘাত থেকে । ঔষুধ আনতে বেরিয়েছেন, পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে ক্যামেরার সামনে। গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন , রাস্তায় পেয়ে পুলিশ মেরে গুরুতর আহত করেছে। বাজারে সব্জী বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা, পুলিশের লাথি মেরে সবজি গুলি লন্ডভন্ড করেছে। ডেলিভারি বয়দের মেরেছে। প্রথমত বলা প্রয়োজন, লকডাউনের সময় কেউ যদি অকারণে বাড়ি থেকে বের হয় তবে তাকে এভাবে লাঠিপেটা করা বেআইনি । একেবারেই আইনবহির্ভূত । আইন পুলিশকে শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহ করার অনুমতি দেয় না। আইন ভাঙলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। আর যারা জরুরী প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হন তাদেরকে এইভাবে লাঠিপেটা করা চরমভাবে নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হঠাৎ করে ২১ দিনের লকডাউনে ত্রিপুরা সহ সারাদেশের কোটি কোটি মানুষ অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন । যারা দিন আনি দিন খাই তাদের অবস্থা সুখী মধ্যবিত্তদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তবু সাধারণ মানুষ বৃহত্তর স্বার্থে এবং নিজেদের বাঁচার স্বার্থে তা মেনে নিয়েছেন । খালি পেটে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়া যায় না। সাধারণ মানুষ প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু অতি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে যারা বের হতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের উপর পুলিশি হিংস্রতা কোনভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়। জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পুলিশ ও রাষ্ট্রশক্তি স্বৈরতান্ত্রিক পথে চলার চেষ্টা করলে তা কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পথে অন্তরায় হবে । কিন্তু মনেহচ্ছে করোনা জনিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করার সচেতন অপপ্রয়াস চলছে। পুলিশ প্রকাশ্যে যেভাবে ক্যামেরার সামনে সগর্বে মানুষকে তুইতোকারি করে লাঠিপেটা করলো তা স্পষ্ট আইনের ভয় নেই। আমাদের আদালত ও বিচার ব্যবস্থাও পুলিশী বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে আইনি দায়িত্ব পালনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। এর ফলে পুলিশের এত বেপরোয়া মনোভাব। উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের সামনেই লাঠিপেটার বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে । ফেসবুকে কিছু নাগরিক লাঠিপেটা কে সমর্থন করছেন, তাদের জন্য বলা, আগামী দিনে কিন্তু আপনিও এভাবে লাঠির আদর খাবেন যখন অতি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হবেন । আপনার কথাও শুনবে না , মাথায় পড়বে বৃষ্টির মতো লাঠির বাড়ী। তাই সাধু সাবধান । আর একটা জরুরী বিষয় । সাধারণ পুলিশকর্মীরা ও আধিকারিকদের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। প্রশাসনের দায়িত্ব তাদেরকে সবাইকে মাস্ক সরবরাহ করা। বিনা মাস্কে নিজেদের বিপন্ন করে, অন্যদের বিপন্ন করে ডিউটি করা উচিত নয়।
শুধু ত্রিপুরাতে নয়, সারাদেশেই লকডাউনের সময় পুলিশের বাড়াবাড়ির খবর আসছে । পশ্চিমবাংলায় একজন পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে । অপরাধ, দুধ আনতে বাইরে বেরিয়েছিল।
লাঠিপেটা করে করোনা মোকাবিলা করা যায় না । নিরীহ নাগরিক, জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায়, তাকে হাতের সুখে মেরে করোনা বিপদ দূর করা যায় না । এ কথা বুঝতে রাজি নয় পুলিশ বাহিনী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংবেদনশীলতায়। এমন ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তও আছে। এর জন্য ধন্যবাদ সংশ্লিষ্টদের। সার্বিক চিত্র এর বিপরীত। পুলিশের এই ধরনের হিংস্রতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।