শুধু মুখ্যমন্ত্রী, তার পুলিশ, চিকিৎসা কর্মীরাই নয়, করোনা মোকাবিলায় মিডিয়া কর্মীরাও প্রশংসনীয় কাজ করছে
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভয়ংকর মারনব্যাধি করোনার সংক্রমণ রোধে রাজ্যজুড়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশিতভাবেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর সংকল্প রাজ্যকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখা। এই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী দিনরাত এক করে দিয়েছেন। তাঁর বিরাম বলতে কিছুই নেই, আছে শুধু সংকল্প আর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে দেওয়া। এদের হাতে কিছু অর্থ কড়ি তুলে দেওয়া। সেই সাথে সংক্রমণ রোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অর্থের ব্যবস্হা করা। ইতিমধ্যে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।
মারন ব্যাধি করোনার সংক্রমণ রোধে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যে দাওয়াই দিয়েছেন তা একদিকে যেমন প্রশংসিত হয়েছে তেমনি মজুতদারদের বাড়তি মুনাফার উপর কোপ দিয়েছেন। জল গামছা ব্যবহারের পরামর্শ অত্যন্ত বাস্তব সম্মত তেমনি রাজ্যের হস্ততাত শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ। খবর হলো রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এখনো যেখানে যেখানে হস্ততাত রয়েছে সেখানে শুক্রবার থেকেই গামছা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে নুতন উদ্যমে। নুতননগর, তাঁতিপাড়া, পটুনগর, বেলাবর, পহড়মুড়া, তাঁত চৌমুহনী, জাম্বুরা সহ অন্যান্য অঞ্চলের তাঁতীরা বুননের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এতে মৃতপ্রায় হস্তশিল্প যেমন পুনরুজ্জীবিত হবে, ঘরে বসে যাওয়া তাঁতীদের হাতে অর্থ আসবে। অন্যদিকে পূর্বাশাও একটু তৎপর হবে। তাঁতীরা তাদের উৎপাদিত গামছা এখানে বিক্রি করতে পারবেন। পূর্বাশা গামছা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজার জাত করবে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে রাজ্যের বাজারে মাক্সের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে একশ্রেনীর ওষুধ ব্যবসায়ী। ৫০টাকার মাক্স ৪০০/ টাকা দামে বিক্রি করতে থাকে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। সাধারন মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। অন্যদের কথা তো বাদ দিলাম। সরকারী/ বেসরকারি কর্মচারী তাদের একটি অংশ চড়া দামে ক্রয় করে মজুমদার ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিয়েছে। এদের কালোবাজারীর উপর কোপ ও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিহারী শ্রমিকদের বড় অংশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ক'দিন আগে থেকেই গামছা দিয়ে নাক মুখ ঢেকে চলাচল করছে,কাজ করছেন। এটা খুবই বাস্তব।
সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্হা সোসাল ডিসটেন্স অর্থাৎ দেড় মিটারের মত দূরত্ব বজায় রাখা। এটা করতে পারলে সংক্রমণের আশংকা নেই। কিন্তু বাজার হাটে তো সম্ভব নয়। একজন দূরত্ব বজায় রাখলে আরেকজন ধাক্কা মেরে গাদাগাদি করে বাজারে ব্যস্ত হয়ে উঠে। ওরা ভুলেই যায় গোটা বিশ্ব যে ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন।
এটা যাতে না হতে পারে কিংবা বন্ধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ভেন্ডারিং ব্যবস্থার ঘোষণা করেছেন শুক্রবার। তাঁর ভাষায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, এরা শাক সবজি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় যাবে, এদের কাছ থেকেই সব কেনা যাবে। ভাল উদ্যোগ। কার্যকরী হলে সবাই ঘরে বসেই শাকসবজি,মাছ পেয়ে যাবেন। সাধারণ মানুষের সময় যেমন বাঁচবে তেমনি বাড়ীর সামনেই পেয়ে যাবেন সব কিছু। এর ফলশ্রুতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে, তেমনি নিশ্চিত হবে সংক্রমনের বিস্তার রোধ।
এই শহরের পথে ঘাটে আশ্রয় রয়েছে বেশ কিছু ভবঘুরে এবং সব হারানোদের। এদের বার মাস দিন রাত কাটাতে হয় খোলা আকাশের নিচে, রোদ বৃষ্টি এঁদের বারমাস্যা। এদের নানাজনের কাছে হাত পেতে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। কখনো হোটেলের সামনে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। কারো অসুবিধা করে না এরা। লকডাউনে এরা সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় পড়ে গেছেন। খাবার জুটছে না এদের। এদের খাদ্য সংকট রং বিষয়টি কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায় নি। তিনি পুলিশকে বলেছেন দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার ব্যবস্হা যেন এরা করে দেয়। গতকাল থেকেই পুলিশ ভবঘুরেদের হাতে প্যাকেট তুলে দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদক সন্ধ্যায় মোটরষ্টেন্ড যাওয়ার পথে পুলিশকে প্যাকেট তুলে দিতে দেখে। প্যাকেট পেয়ে তপন, সমর বেজায় খুশি। বয়স দুজনের ৫৫ র উপর। এদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি পুলিশের ডান্ডা পড়ার আশঙ্কায়। কিন্তু তবু বলব বিপ্লব কুমার দেব "শিবজ্ঞানে জীবসেবার" স্বামিজীর পরামর্শ পাথেয় করেছেন।
শুধু কি তাই? ওই যে জিবি, আইজিএম, টিএমসি সহ রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আত্নীয় জনকে দুবেলা খাবার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ধর্মনগরে গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে জিবি, আইজিএম, টিএমসিতে। এসব ভাবনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ধন্যবাদ পেতেই পারেন। উনি এসব না ভাবলেও পারতেন। কিন্তু ভেবেছেন তো। এ সব চিন্তা ভাবনা কটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ভাবেন?
এরাজ্যে বিপ্লব কুমার দেব প্রথম লক ডাউনের ঘোষণা করেন পরে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন দেশজুড়ে। বলতেই হয় উনার চিন্তা চেতনার মান অনেক উন্নত।
ত্রিপুরা ছোট রাজ্য। এর সহায় সম্পদ সীমিত। আয় প্রায় নেই বললেই চলে। সীমিত সামর্থ্যর উপর নির্ভর রাজ্যে শতাব্দীর ভয়াবহ মারনব্যাধি মোকাবেলা খুব কঠিন ও দূরহ। অর্থনৈতিক দূর্বলতা রং জন্যই এই বাধা বিপত্তি। এর পর দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়্ং। তিনি তার এক মাসের বেতনের পুরোটাই দান করে দিয়েছেন। এরপর সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক সাংসদ তহবিল থেকে দিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। বিশাল ব্যাপার। ধন্যবাদ জানাতেই হয় উনাকে।এরপর উপ-মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়ক দিলীপ দাস, সুশান্ত চৌধুরী, সুরজিৎ দত্ত দিয়েসান্ত ৫০ লক্ষ টাকা। আরো অনেকই দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। ধলেশ্বরের শান্তিনিকেতনী সংস্থা তাদের সীমিত সামর্থ্যর মধ্যে ও পঁচিশ হাজার টাকা দান করেছেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডে এদের সুনাম রয়েছে। সিপিএম দলের তরফ থেকেও তাদের উন্নয়ন তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এবার আসব রাজ্য আরক্ষা দপ্তরের তৎপরতা প্রসঙ্গে। এরা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয় সামাজিক দায়িত্ববোধ ও রয়েছে। এদের তরফে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ তুলে দেয়া হয়েছে ত্রান তহবিলে।
শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে টিপিএস গ্রেড ওয়ান এসপি এডিজিপি ২৫০০/ ডেপুটি সুপার ১৫০০/ এক্সিউটিভ ইন্জিনিয়ার ১৫০০/ ইন্সপেক্টর, টিএস আর সুবেদার ১২০০/ এসআই থেকে এএসআই ১০০০/ কনষ্টেবল, হাবিলদার দেবেন ৮০০/ ইউডিসি ৭৫০ কনষ্টেবলদের ৫০০/ এলডিসি ৫০০/ ফিক্সড পে ২৫০/।
এরা আগামী দিনের মধ্যেই এই অর্থ এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে দেবেন। আরো অনেকেই এগিয়ে আসছে। চলছে তৎপরতা। এতো মানবিকতার জন্য।মানবসভ্যতার জন্যেই প্রয়োজন। পুরো রাজ্যবাসীই সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ তুলে দেবেন ত্রান তহবিলে। সব প্রিনট মিডিয়া বন্ধ হয়ে গেলেও অনেকই অনলাইন এডিশন চালু রেখেছেন।
ত্রিপুরাইনফো ডটকমও চালু রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত আবেদন জানাচ্ছে করোনা মোকাবেলায় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। এরাও ইতিমধ্যেই অনেককেই ছুটিতে পাঠিয়েছে। তাদের কল সেন্ট্রারে রোষ্টার ডিউটি প্রথা চালু করেছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো কিছু পদক্ষেপ এরা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং এডিটর জয়ন্ত দেবনাথ ও প্রধান সম্পাদক শেখর দত্ত।
দৈনিক সংবাদ ইতিমধ্যেই কর্মরত পুলিশ কর্মীদের মধ্যে জল ও বিস্কুট দিয়েছে রাজধানীতে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলির ছেলেরাও জীবন বাজী রেখে মানুষকে খবর ঘরে পৌছে দিচ্ছে। আকাশবাণী আগরতলা ও দুরদর্শন আগরতলা তাদের খবর প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বা মোকাবেলায় রাজ্য সরকারের পাশাপাশি মিডিয়াগুলিও বজ্রকঠোর প্রাচীর গড়ে তুলতে সবার এগিয়ে আসা অতি প্রয়োজন বলে আহ্বান জানাচ্ছে।
(প্রতিবেদক প্রবীন সাংবাদিক)