বঙ্গ বন্ধুর "সোনার বাংলা আজ চক্রান্তকারীদের দখলে"
সুশান্ত চৌধুরী
বাংলাদেশের "মুক্তিযুদ্ধ আমি নিজ চোখে চাক্ষুষ করিনি। ঠাকুরদা, বাবা এবং অন্যান্য গুরুজনদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথা শুনেছি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে কীভাবে তৈরি হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, তা ইতিহাসে পড়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির কারিগর সে দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে গণ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা কখনোই ভোলার মত নয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছিল। তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে স্বাধীনতাকামী বাঙালি প্রথমে দেশের ভেতরেই প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সেনারা যখন প্রতিটি শহরে ও গ্রামে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে, তখন দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধা হয়। বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে সেদিন ত্রিপুরাবাসীও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজী পূর্বাঞ্চলে নিয়োজিত ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর যৌথ কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। গঠিত হয়েছিল "স্বাধীন_বাংলাদেশ। কিন্তু যে মানুষটি নিজের জীবনকে বাজি রেখে একটি স্বাধীন দেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, সেই মানুষটি বিনিময়ে কি পেয়েছিলেন? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। সেদিন ঘাতকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে চিরতরে মুছে ফেলা। তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুর কোনও বংশধর যেন বাংলার মাটিতে বেঁচে না থাকে। আর এই জন্যই খুমিরা ছোট্ট রাসেলকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি কারণ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে অবস্থান করায় বেঁচে যান। বিগত কয়েকদিন ধরে, সারা পৃথিবী বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে যে উন্মত্ততা, বর্বরতা দেখতে পাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের কিছু অংশের এই ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকালের হানাদার বাহিনীর দোসরদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের। বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের নামে যা চলছে তা সত্যিই নিন্দনীয় এবং লজ্জাস্কর। আন্দোলনকারীদের একটা অংশ #আদর্শহীন, #অধঃপতিত এবং গণবিরোধী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি মহল সেদেশে অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল ও আত্মমর্যাদাশীল_জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঠিক তখনই এই ধরনের আন্দোলন বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরো কয়েক দশক পিছিয়ে দেবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আধ ঘন্টার মধ্যেই গণভবনে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ব্যবহৃত জিনিষপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে তথাকথিত আন্দোলনকারীদের, গণভবনে ঢুকে উল্লাস চলছে, শেখ হাসিনার শোবার ঘরে বিছানায় শুয়ে ছবি তোলা হচ্ছে, সংসদ ভবনে ঢুকে উন্মত্ততা করা হচ্ছে। ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদন আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলছে। সংসদ ভবনের ভেতর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাওঁচুর চালানো হচ্ছে।
আগুন লাগানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসে, পুলিশ হেড-কোয়ার্টারে।
বঙ্গবন্ধুর মূর্তিতেও হাতুড়ির ঘা। ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিশাল মূর্তির মাথায় উঠে সর্বশক্তি দিয়ে তার মুখে হাতুড়ি মারছে কিছু মানুষ। এরই নাম আন্দোলন?
সেই দিনের মুক্তিযোদ্ধারা যদি আজ জীবিত থাকতেন তারা হয়তো লজ্জায় আজ মুখ লুকোতেন। এমন স্বাধীন বাংলাদেশের কল্পনা হয়তোবা তারা স্বপ্নেও করেননি।
নিজেদের জীবন এর বিনিময় যে স্বাধীন দেশ তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন এই দেশের বর্তমান অবস্থা দেখলে হয়তো আজ আফসোস ও অনুশোচনা করতেন। যেহেতু বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাই বাংলাদেশ চলমান এই অস্থিরতাকে সে দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। শুধু এতোটুকুই বলতে পারি নিজের চোখের সামনে একটি স্বাধীন জাতি একটি স্বাধীন সত্ত্বা একটি স্বাধীন দেশকে পুনরায় পরাধীন হতে দেখে খুবই খারাপ লাগছে। বাংলাদেশের স্বাধীন সত্ত্বা আজ হুমকির মুখে। এই চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও কয়েক দশক পিছিয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ্মাপাড়ের শাসন ব্যবস্থা কাদের হাতে যাবে সেটা সময়ই বলবে। চলমান বিশৃঙ্খলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারত শঙ্কিত হতে বাধ্য। কারণ ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী হল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের আন্দোলনে ভারত বিরোধী শ্লোগান অনেক বেশি শোনা গিয়েছে। এর পেছনে কোন বিদেশি শক্তি কাজ করছে তা সবাই জানে। পরিশেষে একটা কথাই বলবো,
বাংলাদেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ার পর থেকে সে দেশে যারা এই সর্বনাশা আগুন নিয়ে খেলায় নেমেছেন, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক..... নতুবা নিকট ভবিষ্যতে তাদের পরিণতি খুবই ভয়ংকর হবে ......অতএব সাধু সাবধান।
ভারতীয় প্রেক্ষাপট, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'ও আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি..... বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। সেখানকার উন্মত্ত মৌলবাদী শক্তির উন্মাদনা ও ক্লেদাক্ত চেহারা কোনো অবস্থাতেই দেশের প্রতি ভালবাসার সাক্ষ্য বাহন করেনা। পার্লামেন্ট ভবন আক্রমণ, লুটপাট প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাসে ঠুকে তালিবানি কায়দায় মিডিয়ার সামনে নিজেকে তুলেধরার প্রয়াস এবং ক্রমাগত বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ভেঙে দেওয়া ও বাড়িঘরে আক্রমণ ও লুটপাট চালিয়ে প্রতিবেশী ভারতকে হুমকি প্রদান করা ইত্যাদি ঘটনা বিদেশী শক্তি চীন এবং পাকিস্তানের প্রকাশ্য মদতে সংঘটিত। উদ্দেশ্যে একটাই বাংলাদেশে নিজেদের কাঠপুতলি সরকার প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বিদ্বেষী চক্রান্তকে আরও শক্তিশালী করা। আমরা জানি যে পশ্চিম বাংলা সহ উত্তর পূর্বঅঞ্চলের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ইত্যাদি রাজ্যের বিশাল একটা সীমানা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারত বিদ্বেষী চক্রান্তকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভারত দেশকে দুর্বল করা চীন এবং পাকিস্তানের প্রয়াস স্বাভাবিক ভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। ইতিমধ্যে চীন তার সম্পূর্ণ প্রভাব পার্শ্ববর্তী শ্রীলংকা, নেপাল, মায়ানমারের মত ভারতের প্রতিবেশি দেশে বিস্তার করেছে যা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাচুত গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে সফল হচ্ছিল না। তাই পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার মত আন্দোলনের নামে অরাজগতার পরিবেশ সৃষ্টি করে চক্রান্তকারীরা সফলতা লাভ করে। তবে চক্রান্তকারীদের মনে রাখতে হবে যে এটা ৭০ সালের ভারত নয়। এই ভারত বন্ধুত্বের হাত যেমন বাড়াতে জানে প্রয়োজনে দেশকে রক্ষা করার জন্য এবং দেশে কোনোধরনের অরাজগতা সৃষ্টিকারি শক্তির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে রুখে দাঁড়াতেও জানে।
পরিশেষে বাংলাদেশের সকল শান্তিপ্রিয় জনগনের সুরক্ষা কামনা করি, ভগবান চক্রান্তকারীদের শুভবুদ্ধি প্রদান করুক, গণতন্ত্রের জয় হউক। নতুন করে আবার পথচলা শুরু হউক "সোনার বাংলার"।