দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সফল
বাপী দেবনাথ
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সফল।এর আগেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন সাইকেলে। অনেকেই পাড়ি দেয় বিশেষত্ব হলো তিনি আগরতলার। উমাকান্ত স্কুলের প্রাক্তনী। বর্তমানে কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকেন।প্রতি মূহুর্তে লড়াই।কিভাবে সফল হলেন ? নীল ওরফে বাপি দেবনাথের সাথে বেসক্যাম্পে পৌঁছানোর পর ই টেলিফোনে জানান লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন।নীল ওরফে বাপি দেবনাথের সাথে আলাপচারিতায় নন্দিতা দত্ত।
লক্ষ্যে পৌঁছে প্রথম অনুভূতি কি?কেমন লাগছে?
ফালতু' 'আমি ফালতু' এটাই মুখ থেকে সবার আগে বেরিয়েছে। কারণ এই কথাগুলি শুনেছিলাম বহুবার বহুমাস বিভিন্ন দপ্তর থেকে আর বিশেষ করে আমাদের রাজ্যের মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে। এটাই ...
প্রশ্ন: প্রথমে কার কথা মনে হলো,কাকে উৎসর্গ করলেন
বাবার কথাই আগে মনে হলো, সব সময় তো বাবার মুখ থেকে শুনেছিলাম ধৈর্য নেই স্থিরতা নেই একাগ্রতা নেই । আসলে নেই ? তাই সেটারই প্রমান দিলাম। হয়তো আগামী দিনে কেউ সেটার প্রমান দিলে ২য় হবে ১ম আমিই থাকবো। এটা আমার থেকে কেউ কেরে নিতে পারবেনা যতদিন পৃথিবী থাকবে আর বাবাও বলতে পারবেনা আমার বন্ধুর ছেলে ঐ করে মেয়ে ঐ করে ।আমি পেরেছি।সমগ্র বাঙালী জাতিকে, সমগ্র ভারতবাসীকে এই যাত্রা উৎসর্গ করলাম।
প্রশ্ন: এই সাইকেলটার দাম কত? কতদিনের পুরানো? বিগড়ৈ
উঃ আমার সাইকেলটা আমার ২য় সাইকেল, অন্য এক বন্ধুর থেকে কেনা ২৪০০/-, রোজ চালাবো বলেই কেনা। নিজেই সব সারাই করি, কোনোদিন দোকানে দিয়ে সারাই করিনা। নিজের মতো বানিয়েছি। মানুষ চলার পথে এপিট ওপিট হবে কিন্তু সাইকেল সে কোনোদিন হবেনা, হয়তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাবে তাও সঙ্গ ছাড়বেনা।এর পেছনের চাকা পুরো ছিঁড়ে গেছে কিন্তু সে বেস ক্যাম্প অবধি আমার সঙ্গ দিয়ে গেছে, আমি বুঝি ওর অনেক ধকল গেছে। এবার বাড়ি গিয়ে একে রেখে দেব, বিশ্রাম নিক।
প্রশ্ন: আপনার জার্ণির রুট টা কি ছিল?
উঃ হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন - বেনারস - অযোধ্যা - সনলি বর্ডার - কাঠমুন্ডু - গুড়মি- সাল্লেরি - নামচে বাজার - এভারেষ্ট বেস ক্যাম্প।
প্রশ্ন: আপনি খাওয়া দাওয়া কিভাবে করতেন? ঘুমোতেন কত ঘন্টা?
উঃ ভারতে থাকাকালীন হোটেলে বা নিজে রান্না করে খেয়েছি, নেপালে প্রবেশ করার পর থেকে নিজে রান্না করে আর সাল্লেরির পর থেকে শুধু শুকনো খাবারের উপর চলছে।
নামচে বাজারের পর থেকে ডাল ভাত এর দাম ৭০০-১২০০/-। তাই নিচের থেকেই বেশি করে শুকনো খাবার নিয়ে গেছি। নিজের ট্যান্ট লাগিয়ে থেকেছি, ২-৩ জায়গায়। সাল্লেরির পরে বুদ্ধ মনেস্ট্রিতে থেকেছি।
প্রশ্ন: সাইকেলে যাওয়ার সাহস কিভাবে পেলেন? অনুপ্রেরণা কে?
অনুপ্রেরণা বলতে হেরে যাওয়া, প্রতিনিয়ত হেরে যাওয়া ।সেটাই আমার প্রেরণা বলা যায়, হারতে চাই রোজ কারন সবাই জিততে চায়। ছোট থেকেই শুনেছি জিততে হবে, কেউ শেখায়না কিভাবে হারতে হয়, কিভাবে হেরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, কেউ শেখায়না হেরে গিয়ে সেই হারকে কি করে উপভোগ করতে হয়। আমার কাছে এই হেরে যাওয়া সেটাই অনুপ্রেরণা।
সাহস নেই আমার, আমি অনেক ভীতু। তবে মৃত্যুকে দেখা যায়না অনুভবও কি করতে পারি?।কারণ মৃত্যু মানেই তো নতুনের শুরু। তাই হয়তো ঐ ভাবে আমার ভীতু দিকটা ঢেকে যায় ।
প্রশ্ন: সাইকেল নিয়ে এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে যাওয়ার পরিকল্পনা কেন?
উঃ আমার ২টি রেকর্ড ভাঙ্গার স্বপ্ন ছিলো যা হয়নি রাজ্য সরকারের অবহেলার জন্যে। রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের জন্যে। কিছু একটা রেকর্ড করবো সেই ভাবনাতেই আমার দিন যেতো, অনেক পড়াশুনোর পর দেখলাম আজ অবধি কোনো বাঙালী সাইকেল নিয়ে মাউন্ট এভারেষ্টের বেস ক্যাম্প পৌঁছায়নি। সেদিন থেকে এক ভাবে নিজেকে তৈরী করতে শুরু করি। অনেক জায়গায় ঘুরেও যখন "হবেনা পারবিনা" শুনতে হলো তখন নিজেই আধ ভাঙা সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরি। জানতাম না রাস্তা এতো ভয়ঙ্কর কিন্তু মনে ছিলো পুরো করতে হবে, কারোর জন্যে না হোক বাবার জন্যে, বাঙালির জন্যে, দেশের জন্যে।
আর বিশেষ করে যারা মানুষকে আজকে কালকে করে দিচ্ছি বলে ঘোরায় তাদের মুখে নিশ্চুপ একটা উত্তর দেবার জন্যে।
১ম বাঙালি হবো সেটা ভাবিনি আমি পৌঁছাবো এটাই ভেবেছিলাম আর এটা ভেবেই এগিয়েছি।
প্রশ্ন: এর আগের জার্ণিটা কোথায় করেছিলেন?
উঃ ২০২১ সালে কোভিডের পর পরই কোলকাতা থেকে কন্যাকুমারী।এরপর লাদাখ সিঙ্গেল গিয়ার্ সাইকেল নিয়ে পুরো করি।নেভার গিভ আপ, সেভ ফরেস্ট সেভ ফিউচার বার্তা নিয়ে জার্ণিটা ছিল।
প্রশ্ন: এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য?
রেড লাইট চেনেন? সেখানকার বাচ্চাদের সাথে আমার অনেক সময় কাটে, আমি তাদের জন্যেও করছি, মিডিয়াতে দেখানোর জন্যে নয় শুধু নিজে খুশি হই তাই
ওরাও বড় কিছু হতে চায়, আমি তাদের জন্যে যদি কিছু করতে পারি এটাই আনন্দ। এই যে যাত্রাটা শেষ হলো আমি ওদের জন্যেও কিছু নিয়ে যাবো কি নেবো জানিনা কিন্তু নেবো।
আর সবসময় মাথায় থাকে নেভার গিভ আপ এটা শুধু মাত্র একটা বাক্য নয়।এটা একটা বড় শক্তি নিজের একাগ্রতা, মনোযোগ, স্থিরতা, দৃঢ়তা, সংকল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবার একটা জ্বালানি বলা যায় । এটা আমার মধ্যে জ্বলছে তাই এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার এই জার্ণি র স্পনসর কে করে?
উঃ ২০২২ সাল থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বহুবার আমার প্রজেক্ট জমা দিয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। ২০২৩ এর শেষের দিকে একজন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে সরাসরি জমা দি উনিও আজকে কালকে করে ৩-৪দিন পার করেন। তারপর কোনো উত্তর দেন না, স্বর্ণকমল, লায়ন্স ক্লাব, লং তরাই আরো অনেক জায়গায় কথা হয় সবাই এড়িয়ে যান, তারপর একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা হবে দেখা যাবে। প্রথমত যারা সঙ্গ দেয় সাউথ ত্রিপুরা ইয়ুথ যারা আর্থিক এবং মানসিক দুভাবেই সহযোগিতা করেন। ত্রিপুরার ব্লগার কয়েকজনের সাথেই যোগাযোগ করি কিন্তু তাদের সেখানে লাভ নেই তাই ওরা এগিয়ে আসেনি, নানু শুধুমাত্র এগিয়ে আসে এবং তার কারণে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পাই অনেকের কাছ থেকে, মাঝে কিছুই নেই। কিন্তু শেষের দিকে যখন আটকে যাই তখন রাইডার্স কমিউনিটি অফ বেঙ্গলের সদস্যরা মেরুদন্ড হয়ে আমার পাশে দাঁড়ায়, সঞ্জয় সিনহা স্যার বরাবরই পাশে ছিলেন, আমার স্কুলের সহপাঠী বন্ধুরা, এবং আরো অনেকেই,
তবে এখানে বিশেষ ধন্যবাদ জানাবো সামিট ফোর্স (নেপাল) তেঞ্জি শেরপা যিনি না থাকলে এই যাত্রা পুরো অসম্ভব ছিল।হাইয়ার অথরিটি থেকে স্পেশিয়াল পারমিশান আর পার্মিট বার করে দিয়েছেন সাইকেল নিয়ে এভারেষ্ট যাবার জন্যে।
আপনি ফটোগ্রাফি করেন,চাকরি করে নাটকের টিমের সাথে কাজ করেন - সাইকেল রাইডে যেতে অনেকদিন লাগে কি করে ছুটি ম্যানেজ করেন?
উঃ সব কিছু ছেড়ে দিয়েছি কিছুদিনের জন্যে।
আগে যেটা উদ্দেশ্য সেটা পূরণ করবো।তারপর আমার জব, অফিসিয়ালি ৯০দিনের জন্যে কাজের থেকে বিরতি নিয়েছি।
প্রশ্ন:কবে শুরু করেছিলেন কলকাতা ফিরতে কতদিন লাগবে?
২১শে মে,২০২৪ কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করি।এখন ফিরছি রাস্তায় ল্যান্ডস্লাইড হয়েছে তাই আমায় পাহাড়ের ভেতর দিয়ে আসতে হবে ।
সময় লাগবে প্রায় ১৩-১৫দিন ভারতে আসতে । জিরির রাস্তা খোঁজ নেবো সেটা ভাল থাকলে ঐ রাস্তা ধরবো ১৯৫৪ সালে টেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি ঐ রাস্তা দিয়েই এভারেষ্ট গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: স্বপ্ন কি দেখেন?
এরপর স্বপ্ন তো অনেক আছে। কিন্তু এখন আমার কাছে বলতে গেলে ১টাকাও নেই। আমার যা জমানো ছিলো তা পারমিশান পার্মিট আরো অনেক কিছুতে শেষ। তাই রাতদিন কাজকরে আবার কিছু জমাবো আর বেরিয়ে যাবো নতুন কোনো রেকর্ড তৈরী করতে, তবে এবার আর রাজ্য সরকারের কাছে যাবোনা ওখানে যাওয়া মানেই নিজের সময় নষ্ট করা, সামনে বলবে আমি আছি কিন্তু পরক্ষনেই রূপ পাল্টাবে।
জানিয়ে রাখি আগামীতে যেটা করবো সেটা আমাদের ভারতীয় সেনাদের জন্যে করবো।