সংক্রমণ মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব মহামন্ত্র
প্রদীপ চক্রবর্তী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র বিশ্বাস ভারত ভয়ন্কর মারনব্যাধি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সফল ভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। শুধু সক্ষম নয় ভারত চীনের সৃষ্ট করোনা রং বিস্তার রোধ করতে পারবে।অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অভিমত ব্যক্ত করে করেছে।এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যকরি অধিকর্তা কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন।হু র বক্তব্য ভারত ১৯১৮ তে ভয়ন্কর স্পানিশ ফ্লুর বিস্তার রোধ শুধু নয় প্রতিকার করেছে সফলভাবে।
ফিরে তাকালে দেখা যায় অত্যন্ত ভয়ংকর ও স্পর্শকাতর স্পানিশ ফ্লু তার কড়াল থাবা বসিয়েছিল ১৯১৮ তে।স্পানিশ ফ্লু অল্প কদিনেই প্রায় ১৮ মিলিয়ন ভারতবাসীর প্রান ছিনিয়ে নিয়েছিল।প্রথম বিশযুদ্ধে যে প্রানহানি হয়েছিলো তার চেয়েও বেশি ছিল ফ্লুতে নিহতদের সংখ্যা। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলে স্পানিশ ফ্লুতে গোটা বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোকের প্রান কেড়ে নিয়েছিল।এটা ছিল ভয়ঙ্কর মহামারী।
এই মারন ফ্লুতে গান্ধীজীও আক্রান্ত হয়েছিলেন।তখন তিনি ছিলেন গুজরাটের সবরমতি আশ্রমে। একটানা চার চার দিন গান্ধী তরল খাবার নিয়েছিলেন। গান্ধীজীর জীবনে এই ছিল তাঁর দীর্ঘ রোগ।রোগযন্ত্রনায় কাতর ও হতাশ গান্ধী তার সহযোগীকে বলেছিলেন বেঁচে থাকার কোন আগ্রহ তাঁর নেই।রোগযন্ত্রনা কত তীব্র হলে গান্ধীজী বেঁচে থাকার অনাগ্রহের কথা বলেছিলেন তা ভাবলে ফ্লুর ভয়াবহতা অনুভব করা যায়।যখন তিনি ফ্লুতে আক্রান্ত হন তখন তাঁর বয়স মাত্র ৪৮। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পরপরই তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন ফ্লুতে।
ইতিহাস বলছে মূলতঃ অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস কারী মহিলারা ই সবচেয়ে বেশি ফ্লুতে প্রান হারান।
মুম্বাইয়ে ও ফ্লু উদ্বেগজনক ভাবে তখন বিস্তার লাভ করে।একের পর এক বস্তীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।বস্তীগুলি পূতিগন্ধময় পরিবেশ, চারিদিকে আবর্জনার স্তূপ,দূ্রগন্ধে টেকা দায়। সঙ্গত ভাবেই ফ্লু উদ্বেগজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক প্রান ছিনিয়ে নেয়। মৃতদেহ বের করে আনার উপায় ছিল না। প্রিয়জনের মৃতদেহ বস্তীর ঘরে রেখেই যে যেদিকে পাড়ছে ছুটছে। আতন্ক,ভয়, সংশয় তাড়া করছে বস্তী বাসীদের। এখনো মুম্বাইয়ে বস্তীর পর বস্তী রয়েছে। পরিবেশ অনেকটা ১৯১৮ র মতই। অল্পবিস্তর পরিবর্তন হয়েছে।উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি বললেই চলে। স্বাস্হ্য পরিকাঠামো নেই বলা চলে।আগেও যেমন ছিল এখনও তেমনটা ই। ইতরবিশেষ পরিবর্তন হয়েছে।ঘিন্জি এলাকায় স্বাস্হ্য পরিসেবা প্রদান খুবই দূরহ। এখনও অনেকটাই একই চিত্র।
মুম্বাই এমন এক শহর যেখানে দুই কোটির উপরে লোক রয়েছে। এদের অধিকাংশই ভিনরাজ্যের। রুটিরুজির আশায় এঁরা মুম্বাইয়ে। তাঁবু খাটিয়ে রাতে শয্যায় মেতে হয়।খুপড়িগুলির অবস্থা উদ্বেগজনক। পরিবার পরিকল্পনা বস্তীতে শিকেতে। ছোট্ট তাঁবু রং নীচে ১৬/১৮ জন কে থাকতে হয়।এক পরিবারের সদস্য এরা।রাতে পালা করে ঘুমাতে হয়। আঠারো বছরের নীচে যারা তাদের ২/৩ ঘন্টার বেশি ঘুমানোর সুযোগ নেই।ঘুম ভাঙিয়ে এদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।এরা ঘুমের চোখে বাইরে বসে থাকে,অন্যরা ঘুমোয় তিন থেকে চার ঘণ্টা।এইতো এদের জীবন।
১৯১৮ র জুন/জুলাই মাসে মহামারীতে মৃত্যু হচ্ছিল প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জনের।
তখনকার পরিস্থিতি কলম কালিতে তুলে ধরেছিলেন উওর ভারতের বিখ্যাত হিন্দি ভাষী কবি নির্মলা। উনি লিখছেন চোখের সামনে একে একে শেষ হয়ে গেছে আমার পরিবার।দাহ করার কাঠ ছিল না। নদীতে মৃতদেহের স্তুপ।এর মধ্যে ই ভাসিয়ে দিতে হয় প্রিয়জনের প্রানহীন দেহগুলো।
তখন একদিকে মহামারী,খরা,দূরভিক্ষ সার্বিক পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছিল। তখন এই ধরনের পরিস্থিতি র জন্য কেউ কিছু ভাবাতো দূরের কথা,কল্পনাও করতে পারেনি।
একটু সময় লাগলেও এরা প্রতিরোধ করতে পেরেছে তখন।যদিও পরিস্থিতি মোকাবেলায় তখন তথাকথিত শিক্ষিত, উচ্চ বিত্ত সমাজের লোকজন এগিয়ে আসেনি।এটা ইতিহাস ও তথ্য পরিসংখ্যান।
কিন্তু এক শতাব্দী র মধ্যে মানব সভ্যতা অভাবিত সংকটের মুখে। ইতিমধ্যে করোনা বিশ্বজুড়ে বহু প্রান ছিনিয়ে নিয়েছে। সংক্রমণ রোধে গোটা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ লক আউটের মধ্যে।সবাই বিধি নিষেধ মানছেন।মানাটা অবশ্যই নিজেদের স্বার্থের জন্য,ঘুরিয়ে বললে বেঁচে থাকার জন্য। একশ বছর আগের পরিস্থিতি এখন নেই।এখন বিংশ শতাব্দী। সাধারণ মানুষ স্ংক্রমন রোধে এগিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ জন,পাড়া,ক্লাব,সোসাইটি, সংবাদ পত্র,বৈদুতিন মাধ্যম মারন ব্যাধির বিস্তার রোধে এগিয়ে এসেছে।
এগিয়ে গেছে ত্রিপুরার নিউজ পোর্টাল "ত্রিপুরাইনফো ডটকম। এদের প্রয়াস সমাজের সার্বিক স্বার্থে ও ভাইরাসের বিস্তার রোধে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
বলে রাখা ভালো যে ভারত সফর যে ভাবে স্পানিশ ফ্লু ও প্লেগের বিস্তার রোধে সক্ষম হয়েছে এবার ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সফল হবে।কারন এখন তো চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত। সামাজিক চেতনার মান উন্মেষিত। সমাজ ও দেশ জুড়ে পরোপকার র মানসিকতা ক্রিয়াশীল।
তিন দিন আগেও রাজধানী আগরতলায় যে চিএ ছিল অনুপস্থিত আজ বলা চলে তা অনেকটাই বদলে গেছে।আজ দিন মজুর থেকে শুরু করে রিকসা শ্রমিক, সবজি ভেন্ডারদের বড় অংশ মাক্স পড়ছে। সেনিটাইজার ব্যবহার হয়তো বা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করছে।আর সেনিটাইজার ,আমরা যারা সাধারণ মানুষ পাবেই বা কি করে? নায্য দামে নেই, কিন্তু কড়ি বেশি ফেললে আছে।এই যে কামান চৌমুহনী র নাথ ফার্মেসি তারা তো একশ টাকার মাক্স গতকাল ও চারশ টাকায় বিক্রি করেছে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ,তদারকী নেই যেখানে, সে রাজ্যে এমন গলা কাটা দাম তো রাখবেই। আরে আমরা যে ১৪ নং র পর্যায়ে পড়ি। সুবিধা ভোগী যারা তাঁরা তো বিনামূল্যে মাক্স পাচ্ছেন,সেনিটাইজার পেয়েছেন বা পেয়ে চলেছেন। এঁরা আরো বেশি করে পাক।
কিন্তু আম জনতা পাবে না কেন? এরা তো পয়সা দিয়ে ই আনবেন,বিনে পয়সায় নয়।
সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক জনদরদী বলে জানতাম। কিন্তু ওনিও ক্লাবে গিয়ে বিনা পয়সায় সেনিটাইজার ও মাক্স দিয়েছেন বলে বদনকিতাবে ছবি পোস্ট হয়েছে। ভাল,ভাল।
ঘরবন্দি গোটা দেশ। নিজেদের স্বার্থে ই,করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে।
বিবিসি বলছে"করোনা র মারাত্মক সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের উদ্যোগ,ব্যবস্হা, পদক্ষেপ, তৎপরতায় জনগন সাড়া দিয়েছে ব্যাপক ভাবে । পরিস্থিতি একশ বছর আগের মত নয়। কেন্দ্র, রাজ্য ই নয় গোটা দেশ ময়দানে করোনা র বিরুদ্ধে পান্জা কষছে।তবে এ লড়াই এ মানবতা জয়ী হবেই,জয়ী হবে ভারত। কিছু প্রান যাবে।যেমনটা গেছে অন্যান্য রাষ্টে।তবে শেষ হাসি হাসবে বিশ্ব মানবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ১৮ দিন লেগেছিল এবার ২১ দিন।একুশ দিন নির্দিষ্ট করে দেয়ার অর্থেই নিহিত রয়েছে সংক্রমণ রোধে বড়জোর একুশ দিন লাগবে।
(প্রতিবেদক প্রবীন সাংবাদিক)