মুছে গেল ব্রিটিশ আমলের ‘ভারতীয় দণ্ডবিধি’, চালু ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা'
জয়ন্ত দেবনাথ
'ভারতীয় ন্যায় সংহিতা', ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ‘ভারতীয় সাক্ষ্য আইন’ কার্যকর হল ১ জুলাই ২০২৪ থেকে। সেই সঙ্গে বাতিল হয়ে গেল ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি (ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বা আইপিসি), কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (সিআরপিসি) এবং ১৮৫৭ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট। নয়া তিনটি ফৌজদারি আইনের সঙ্গে যাতে রাজ্যের সব আদালত, আইনজীবী এবং থানা পুলিশ খাপ খাইয়ে নিতে পারে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ চলছে।কারণ তিনটি আইনেই প্রযুক্তি ও ফরেন্সিকের উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। সেই রেশ ধরে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জয়পুরে পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলদের বার্ষিক সম্মেলন থেকেও পুলিশ অফিসারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যাতে পুলিস সহ এই আইনের সব স্টেক-হোল্ডাররা নয়া তিনটি ফৌজদারি আইনের সঙ্গে দ্রুত একাত্ব হয়ে ওঠেন। সেইসঙ্গে নয়া তিনটি ফৌজদারি আইনে যেহেতু প্রযুক্তির উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে, তাই থানা থেকে শুরু করে পুলিশের সদর দফতর পর্যন্ত প্রযুক্তি উন্নত করার নির্দেশও দেয়া আছে।
ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, যা সিআরপিসি- কে প্রতিস্থাপন করবে, এতে এখন ৫৩৩টি ধারা রয়েছে, ১৬০টি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, ৯টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, যা আইপিসিকে প্রতিস্থাপন করবে, এতে আগের ৫১১টি ধারার পরিবর্তে ৩৫৬টি ধারা থাকবে, ১৭৫টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, ৮টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ২২টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় সাক্ষ্য বিধেয়ক, যা এভিডেন্স অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপন করবে, এতে আগের ১৬৭টির পরিবর্তে ১৭০টি ধারা থাকবে, ২৩টি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, ১টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৫টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। এই আইনে ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল রেকর্ড, ই-মেইল, সার্ভার লগস, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, এসএমএস, ওয়াটসাপ, ওয়েবসাইট, অবস্থানগত প্রমাণ, মেইল, ডিভাইসে প্রাপ্ত বার্তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নথির সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই আইনে এফআইআর থেকে কেস ডায়েরি, কেস ডায়েরি থেকে চার্জশিট এবং চার্জশিট থেকে রায় প্রদান পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে ডিজিটালাইজ করার বিধান রয়েছে। তল্লাশি ও কোন কিছু বাজেয়াপ্ত করার সময় ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা মামলার অংশ হবে এবং নিরপরাধ নাগরিকদের সমস্যায় ফেলতে পারবে না, এই ধরনের রেকর্ডিং ছাড়া পুলিশের কোনও চার্জশিট বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।
নতুন আইনে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সম্পূর্ণ অবসান ঘটাতে চলেছে কারণ ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার রয়েছে। আগে সন্ত্রাসবাদের কোনো সংজ্ঞা ছিল না, এখন সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভারতের একতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অপরাধ প্রথম এই আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অপরাধীর অনুপস্থিতিতে বিচারের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দায়রা আদালতের বিচারক কর্তৃক পলাতক ঘোষিত ব্যক্তির বিচার করা যাবে এবং অনুপস্থিতিতে সাজা দেওয়া যাবে। অপরাধী বিশ্বের যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করতে ভারতীয় আইন ও আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।পুরানো আইনে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে এবং প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে বিচার পেতে সক্ষম হবেন। নতুন আইনে নারী ও শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় এবং পুলিশ যেন তাঁদের অধিকারের অপব্যবহার করতে না পারে, সেরকম ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নয়া আইনে একদিকে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো আইন বাতিল করা হয়েছে, অন্যদিকে নারী শোষণ ও গণ পিটুনির মতো জঘন্য অপরাধের জন্য দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা এবং সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদকে কঠোরভাবে দমন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নয়া যে তিনটি আইন আনা হয়েছে, তাতে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। নয়া আইনে আই পি সি এবং সি আর পি সি-এর সব ধারাই বদলে গেছে। নয়া আইনে ৩০২ খুন নয়, ৪২০ প্রতারনা নয়! নয়া আইনে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, প্রতারনার আইপিসি (IPC)-র পরিচিত ধারা গুলির অদলবদল হয়েছে। কোনও ব্যক্তিকে অসাধু ভাবে প্রতারনা এবং প্ররোচিত করা আইপিসি (IPC)-এর ৪২০ প্রতারনা- ধারা অনুযায়ী অপরাধযোগ্য। এতে সাত বছরের কারাবাস হত, সঙ্গে মোটা টাকা জরিমানাও। তবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী, ৪২০ নামে কোনও ধারা থাকছে না। বদলে প্রতারনার অপরাধ আনা হয়েছে ৩১৬ ধারার আওতায়। এই নয়া আইন চালুর ফলে ৩১৬ ধারার ২, ৩ এবং ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী প্রতারকের তিন, পাঁচ কিংবা সাত বছরের সাজা হবে। দোষীর হতে পারে মোটা জরিমানাও। আইপিসি (IPC) ১২৪ (এ)- কথিত বা লিখিত শব্দ, চিহ্নের মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো, অবমাননার অপরাধে আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হত। হত জরিমানাও।এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী, ১২৪ ধারার আওতায় পড়ছে বেআইনি জমায়েতের অপরাধ। আইপিসি (IPC) ৩০২ ধারা অনুযায়ী আগে অপরাধের মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবনের সাজা হত। সে ক্ষেত্রে বিএনএস (BNS) অনুযায়ী, ৩০২(১)-এ পড়ছে ছিনতাই। এদিকে, খুনের অপরাধ এসেছে ধারা ৯৯-এর আওতায়। যদিও হোমিসাইড এবং খুনের সাজা পৃথক করা হয়েছে। নতুন আইনে ১০১ ধারার দু'টি উপধারা রাখা হয়েছে। যেখানে ১০১ (১) অনুযায়ী, খুনের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ১০১ (২)-এ রাখা হয়েছে, একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে কাউকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করলে তাদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। গণপিটুনিও এই ধারার আওতাতেই পড়ছে। নতুন বিএনএস (BNS)-এ ৮৩টি ক্ষেত্রে অপরাধের জন্য ফাইন এর অঙ্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আইপিসি (IPC) ৩০৭ (খুনের চেষ্টা)- ধারা অনুযায়ী অপরাধীর যাবজ্জীবন সাজা হত। বিএনএস (BNS) অনুযায়ী, এই ধারা বদলে হয়ে গেছে ডাকাতির অপরাধ। খুনের চেষ্টা পড়বে ১০৭ ধারার আওতায়। IPC ৩৭৫ এবং ৩৭৬ (ধর্ষণ)- ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় এই দুই ধারার কোনও অস্তিত্ব নেই। বদলে ধর্ষণের সাজা হবে ৬৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী। IPC ১২০(বি)- ভারতীয় দণ্ডবিধির অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের এই ধারা বদলে গেছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়। সেখানে ১২০ ধারার আওতায় পড়বে উস্কানির জেরে গুরুতর আঘাতের মতো অপরাধ। IPC ৪৯৯ (মানহানি)- ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী, মানহানি পড়বে ৩৫৪ (১) ধারার আওতায়। নতুন বিএনএস (BNS)-এ ১৭৩(২) ধারা অনুযায়ী দোষী এফআইআর (FIR) এর কপি পেতে পারে। নতুন বিএনএস (BNS) এ ম্যাজিস্ট্রেটদের জরিমানা আরোপ করার সীমা আগের সিআরপিএল (CRPL) থেকে বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন বিএনএস (BNS)-এ ধারা ২০ অনুযায়ী প্রসিকিউশন অধিদপ্তর' ( directorate of prosecution) চালু করার কথা বলা হয়েছে।
মহিলাদের ওপর মানসিক অত্যাচার
নতুন আইনে মহিলাদের ওপর মানসিক অত্যাচারকে ‘নির্মমতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে সেকশন ৮৬। সেখানে মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করাকে ‘নির্মমতা’বা ‘নিষ্ঠুরতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের সামাজিক কাঠামোতে একজন মহিলা সাধারণত বিয়ের পর তাঁর স্বামীর সঙ্গে, স্বামীর পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শারীরিক অত্যাচার নয়, মানসিক অত্যাচারকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং মানসিক অত্যাচারকে অপরাধ মানা হয়েছে। নতুন আইনে যৌন হেনস্থার মামলায় নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। আদালতের অনুমতি ছাড়া নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা হলে ২ বছরের জেলের শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে নয়া আইনে।
যৌন মিলন /গণধর্ষণ
বিএনএস-এর ধারা ৬৩-এর ২-এর উপ ধারাটি ব্যতিক্রম এই কারনে যে, যে কোনও পুরুষের দ্বারা তার নিজের স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন বা যৌন ক্রিয়াকলাপ ধর্ষণ নয়। তবে স্ত্রীর বয়স ১৮ বছরের কম হতে পারবে না। বিএনএস-এর ৬৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে কেউ প্রতারণামূলক উপায়ে মহিলাকে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করার কোনও অভিপ্রায় ছাড়াই তার সাথে যৌন মিলন করলে, এই ধরনের যৌন মিলন ধর্ষণের সামিল হবে। এবং এধরনের ধর্ষণের অপরাধে সে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে দশ বছর পর্যন্ত। হতে পারে জরিমানাও। ১২ বছরের কম বয়সী মহিলাকে গণধর্ষণের জন্য IPC-এর ৩৭৬DB ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ৩৭৬DA ধারায় ১৬ বছরের কম বয়সী কিন্তু ১২ বছরের বেশি বয়সী মহিলার গণধর্ষণের জন্য কোনও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। এখন, বিএনএস (BNS) এর ৭০ (২) ধারায় ১৮ বছরের কম বয়সী মহিলাকে গণধর্ষণ করার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিয়ে বা চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অপরাধ রুখতে নতুন আইনে এক্ষেত্রে ১০ বছর জেলের সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাজার বন্দোবস্ত রয়েছে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বিয়ের ক্ষেত্রেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রচারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই পদক্ষেপ। নয়া আইনে ১৮ বছরের কম বয়সি মহিলাকে ধর্ষণের সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড অথবা আজীবন কারাদণ্ড। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ২০ বছর থেকে আজীবন জেলের সাজার কথা বলা হয়েছে। এমনকি, মহিলাদের হার বা মোবাইল ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বিচারের জন্য রয়েছে নয়া আইন। যৌন হিংসার মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিত মহিলার বয়ান তাঁরই বাড়িতে এক জন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নথিবদ্ধ করার কথাও জানাচ্ছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা।
সিজার (বাজেয়াপ্ত-পর্ব) ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করতে হবে
‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ আইনে বলা হয়েছে, কারোর কাছ থেকে কোন কিছু সিজ (বাজেয়াপ্ত-পর্ব) করলে তা ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করতে হবে। ক্যামেরা না থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার নিজের মোবাইল ফোনে পুরো প্রক্রিয়া রেকর্ড করতে পারবেন। তবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ডিং স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ মহলে প্রশ্ন, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিদিন একাধিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে কি তাঁদের একাধিক ফোন রাখতে হবে, না কি সরকারের তরফে মোবাইল দেওয়া হবে? রাজ্যের এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানান, বাজেয়াপ্ত হওয়া ফুটেজ তদন্তের স্বার্থে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু, তা কোথায় কিভাবে রাখতে হবে, সে ব্যাপারে আইনে কিছুই বলা হয়নি।
অপরাধস্থলে ফরেনসিক দলের পরিদর্শন বাধ্যতামূলক
নতুন আইনে ৭ বছর বা তার বেশি সাজাযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দলের পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুলিশের হাতে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আসবে। এরফলে প্রকৃত আসামীদের আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো ত্রিপুরার মতো ছোট্ট রাজ্যে একটি মাত্র ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে। তাই দূরবর্তী মহকুমাতে কোন অপরাধের ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে কিভাবে ঘটনাস্থলে ফরেনসিক টিম পৌঁছাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জিরো এফআইআর চালু
নয়া আইনে নাগরিকদের সুবিধা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর প্রথমবার সরকার জিরো এফআইআর চালু করতে চলেছে। অপরাধ যেখানেই হোক না কেন সেই এলাকার থানার বাইরেও দেশের যেকোন থানায় অভিযোগ নথিভুক্ত করা যাবে। প্রথমবারের মতো ই-এফআইআর-এর ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে। নয়া আইনে প্রতিটি থানা একজন করে পুলিশ অফিসারকে মনোনীত করবে যিনি গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে অনলাইনে এবং ব্যক্তিগত ভাবে তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে পরিবারকে অবহিত করবেন। তাছাড়াও নতুন আইনে ই-মেলেও এফ আই আর করা যাবে। তেলিয়ামুড়ার কোন ব্যক্তি চাইলে আগরতলার পশ্চিম থানাতেও এফ আই আর করতে পারবেন।
যৌন হয়রানির বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক
নয়া আইনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা- যৌন হিংস্রতার ক্ষেত্রে আক্রান্তদের জবানবন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিংও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশকে অভিযোগের তদন্তের স্ট্যাটাস দেওয়া আর তারপর প্রতি ১৫ দিনে অভিযোগকারীকে তদন্তের অগ্রগতির স্ট্যাটাস দেওয়া নয়া আইনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর কথা না শুনে কোনও সরকার ৭ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডের মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না। এতে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা হবে। নয়া আইনে ছোট ছোট মামলায়ও সামারি ট্রায়ালের ব্যপ্তি বাড়ানো হয়েছে। এখন ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সামারি ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত হবে। আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এই একটি বিধান যুক্ত করে দেওয়ার কারনে দায়রা আদালতেই ৪০ শতাংশের বেশি মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।
চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা
বিএনএস (BNS)-এ চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর পরিস্থিতি দেখে আদালত তদন্তের জন্য আরও ৯০ দিনের অনুমতি দিতে পারবেন। এভাবে ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মামলা বিচারের জন্য আদালতে পাঠাতে হবে। আদালত এখন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চার্জ গঠনের নোটিশ দিতে বাধ্য থাকবে, শুনানির যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে মাননীয় বিচারককে মামলার সিদ্ধান্ত দিতে হবে, এতে বছরের পর বছর সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকবে না। তছাড়াও নতুন আইনে আদালতে মামলার শুনানী শেষের ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত অনলাইনে আপলোড করতে হবে। সরকারি কর্মচারী বা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মামলার বিচারের জন্য ১২০ দিনের মধ্যে অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় এটিকে ‘বিবেচিত অনুমতি’ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
ভারতের বাইরে প্ররোচনা
বিএনএস (BNS)-এর ধারা ৪৮ ক্ষমতা প্রদান করে যে একজন ব্যক্তি ভারত এবং ভারতের বাইরে, এমন কোনও কাজ করবেন না বা করতে কারোকে সহায়তা করতে পারবেনা যা ভারতে সংঘটিত হলে একটি অপরাধ হতো। ভারতের বাইরের একজন ব্যক্তির দ্বারা প্ররোচনাকে ধারা ৪৮ এর অধীনে একটি অপরাধ ধরা হয়েছে যাতে বিদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচারের অনুমতি দেওয়া জেতে পারে। এবং অপরাধ বিদেশের মাটিতে সংগঠিত হলেও নতুন আইনে ভারতের মাটিতে তার বিচার হবে।
আঘাত করে পালানো ( হিট অ্যান্ড রান)
দেশ জুড়েই আঘাত করে পালানো ( হিট অ্যান্ড রান) মামলার ঘটনা বাড়ছে। বিএনএস-এর ধারা ১০৬(২) এর অধীনে একটি নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বেপরোয়া এবং অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে মৃত্যু ঘটলে হিট অ্যান্ড রানের মামলা গুলি IPC-এর ৩০৪A-এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়, যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড। নতুন আইনে শাস্তি পাঁচ বছর কারাদন্ড। যানবাহন দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আইনের অপ্রতুলতা পর্যবেক্ষণ করেছে। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য, বিএনএস (BNS)-এর ১০৬(২) ধারার অধীনে নতুন বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, যেটি দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে কার্যকর ছিলনা। তাই বিএনএস-এর ১০৬(২) ধারা প্রবর্তন করা হয়েছে আঘাত করে পালানো ( হিট অ্যান্ড রান) এক্সিডেন্ট কভার করার জন্য এবং দুর্ঘটনার রিপোর্ট অবিলম্বে নিশ্চিত করার জন্য। ২০১৯ সালে মোটর যান আইন, ১৯৮৮-এ প্রবর্তিত 'গোল্ডেন আওয়ার'-এর মধ্যে ভুক্তভোগীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এটি চালু করা হয়েছে।অনেক সময় যান চালক গন প্রহারের ভয়ে পালিয়ে যান।এক্ষেত্রে ধারা ১০৬(২) এর অধীনে দুর্ঘটনাটি ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রিপোর্ট না করলেই ঘটনাটিকে অপরাধ বিবেচনা করা হবে। এবং দুর্ঘটনাগ্রস্থকে সাহায্য না করে পালিয়ে যাওয়াটাকে নতুন আইনে অপরাধ মানা হয়েছে, যার জন্য ঊর্ধ্বতম দশবছরের কারাদন্ডের সাজা হতে পারে। তাছাড়া, তাড়াহুড়া এবং চালকের অবহেলার কারণে কারোর মৃত্যু ঘটলে (Causing death by rash driving and negligent) শাস্তির পরিমান বাড়িয়ে ২ বছর থেকে ৫ বছর করা হয়েছে।
অবহেলামূলক চিকিৎসা শাস্তিমূলক অপরাধ
বিএনএস (BNS) ধারা ১০৬(১) অনুযায়ী চিকিৎসকদেরও জন্যও অবহেলামূলক চিকিৎসার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা- ধারা ১০৬ মেডিকেল পেশাদারদের কভার করে যারা তাদের তাড়াহুড়ো বা বেপরোয়া কর্মের কারণে একটি চিকিৎসা অপারেশন করার সময় রোগী মারা যায়। নয়া আইনে নিবন্ধিত মেডিকেল প্র্যাকটিশনারের ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পাদনের সময় একজন নিবন্ধিত চিকিত্সক দ্বারা অবহেলামূলক কাজ করা হয়, তবে তিনি দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং জরিমানার জন্যও দায়বদ্ধ হবেন। আগে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-র ৩০৪এ ধারায় গ্রেপ্তার করা হতো চিকিৎসকদের। নতুন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সেই সংস্থান রাখা হয়েছে ১০৬ ধারায়। কিন্তু এর ভালো ও মন্দ দিক দুটোই আছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ, পুরোনো আইনে যেখানে গাফিলতিকে ধর্তব্য অপরাধ (কগনিজ়েবল অফেন্স) হিসেবে চিহ্নিত করে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার (নন-বেলেবল ওয়ারেন্ট) সংস্থান ছিল পুরোপুরি, সেখানে নতুন আইনে এই ধারাটিকে জামিনযোগ্য রাখা হয়েছে।
গন প্রহারে মৃত্যু (মব লিঞ্চিং)
দেশে গন প্রহারে মৃত্যু (মব-লিঞ্চিং) এবং ঘৃণামূলক অপরাধের ক্রমবর্ধমান মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনএস এখন বিশেষভাবে গন প্রহারে মৃত্যু (মব লিঞ্চিং)-এর ক্ষেত্রে হত্যার শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। বিধানে বলা হয়েছে যে, যেখানে পাঁচ বা ততোধিক জনের একটি দল জাতি, বর্ণ বা সম্প্রদায়, লিঙ্গ, জন্মস্থান, ভাষা, ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্য কোনো অনুরূপ ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে, তাহলে সেই দলের প্রত্যেক সদস্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং জরিমানাও দিতে হবে।
সমকামিতা–আত্মহত্যা আর অপরাধ নয়
নতুন বিএনএস (BNS)-এর আইনে সম্মতিক্রমে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, সমকামিতা এবং আত্মহত্যার চেষ্টাকে আর অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে না। নতুন আইনে ব্যভিচার এবং সমকামী যৌনতাকে অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি বিলে আপাতদৃষ্টিতে ধারাটিকে সরানো হয়েছে। কিন্তু, এটি আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে সম্পূর্ণরূপে অপরাধমুক্ত করেনি। প্রস্তাবিত বিএনএসের ২২৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি কোনও সরকারি কর্মচারীকে তাঁর সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার জন্য বা বাধা দেওয়ার অভিপ্রায়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে, তাঁকে এক বছরের জন্য সাধারণ কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়ের সঙ্গে সমাজের সেবার সাজা দেওয়া যাবে।’ এইভাবে আত্মহত্যার চেষ্টাকে নতুন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একজন প্রতিবাদকারী যদি অন্য বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা থেকে পুলিশকে বিরত রাখতে আত্মহননের চেষ্টা করেন, তবে তা সাজা হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়াও প্রস্তাবিত বিএনএসের ধারা ২২৪ শাস্তি হিসেবে সমাজসেবার কথা বলেছে, যা আইপিসি ৩০৯ ধারায় ছিলনা। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) অনুযায়ী আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুর চেষ্টাকে এখন এই অর্থে অপরাধ মানা হবে। তবে আত্মহত্যার জন্যে কেউ কাউকে প্ররোচিত করলে সে ক্ষেত্রে নয়া আইনের ২২৬ নং ধারায় সেই ব্যাক্তি/সরকারী কর্মচারি শাস্তি পেতে হবে।
চুরির জন্য শাস্তি হিসেবে ‘কমিউনিটি সার্ভিস’
বিএনএস (BNS)-এর ধারা ৪(f) একটি নতুন ৬ তম ধরণের শাস্তি চালু করেছে - সম্প্রদায় পরিষেবা। জেলের বোঝা কমাতে প্রথমবারের মতো শাস্তি হিসেবে কমিউনিটি সার্ভিসকে বিএনএস-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটিকে আইনি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সরকার ৫০০০ টাকার কম চুরি এবং অন্যান্য পাঁচটি ছোট অপরাধের শাস্তি হিসাবে 'কমিউনিটি সার্ভিস' অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারী কর্মচারীর আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করা বা সংযত করা, চুরির অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র চুরি, মাতাল দ্বারা জনসাধারণের মধ্যে অসদাচরণের মতো ছোটখাটো অপরাধের জন্য শাস্তি হিসাবে কমিউনিটি সার্ভিসকে নির্দেশ করে রাখা হয়েছে। যাইহোক, এটি বিএনএস (BNS)-এর ধারা ২৩-এর ব্যাখ্যা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে কাজটির অর্থ আদালত একজন অপরাধীকে শাস্তির একটি ফর্ম হিসাবে‘কমিউনিটি সার্ভিস’ সম্পাদন করার আদেশ দিতে পারে যা সমাজ/সম্প্রদায়ের উপকারে আসবে। অবশ্য এর জন্য অপরাধি কোনও পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারী হবেন না। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটরাও এখন অপরাধীদের সাজা দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন মাজ/সম্প্রদায়ের পরিষেবাতে৷
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কারাদণ্ড হিসেবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আইপিসি এর ৫৩ ধারায় ৫ ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল যেমন। (১) মৃত্যু; (২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; (৩) কারাবাস যা দুটি প্রকার- কঠোর এবং সহজ; (৪) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং (৫) জরিমানা।নয়া আইনে এই সব গুলি শাস্তির বিধান রয়েছে। একটি নতুন ৬ তম ধরণের শাস্তি (বিএনএস-এর ধারা ৪(f)) চালু করআ হল - সামাজিক/সম্প্রদায় পরিষেবা। জেলের বোঝা কমাতে প্রথমবারের মতো শাস্তি হিসেবে কমিউনিটি সার্ভিসকে বিএনএস-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটিকে আইনি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন
বিএনএস-এর নয়া আইনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল রেকর্ড, ই-মেইল, সার্ভার লগ, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, এসএমএস, ওয়েবসাইট, লোকেশনাল এভিডেন্স, মেল এবং ডিভাইসে থাকা বার্তাগুলিকে যাতে আদালতে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেজন্য অন্তর্ভুক্ত করার স্বার্থে নথির সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ফলে আদালত গুলি অনেক কাগজপত্রের স্তূপ থেকে মুক্তি পাবে।নয়া আইনে এফআইআর থেকে কেস ডায়েরি, কেস ডায়েরি থেকে চার্জশিট এবং চার্জশিট থেকে রায় পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসামিদের হাজির করা গেলেও এখন সাক্ষ্য শুনানী সহ পুরো বিচার করা যাবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের সওয়াল জবাব, বিচার ও হাইকোর্টের বিচারে তদন্ত ও সাক্ষ্য রেকর্ডিং এবং আপিলের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা যাবে। এ বিষয়ে ন্যাশানাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি এবং সারাদেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের এই নয়া আইনে সংপৃক্ত করা হয়েছে। এখন তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত করার সময় ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেটি মামলার অংশ হবে এবং নিরপরাধ নাগরিকদের জড়ানো হবে না। এ ধরনের রেকর্ডিং ছাড়া পুলিশের কোনো চার্জশিট বৈধ হবে না। বিএনএস (BNS)-এর ৪১ ধারায় 'সূর্যাস্তের পরে এবং সূর্যোদয়ের আগে ঘর ভাঙার' বিধান রয়েছে। তাছাড়াও সাত বছরের উপরে শাস্তি হবে এমন সব মামলার ক্ষেত্রে প্রোয়োজনে ফরেনসিক রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। (লেখক একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও ত্রিপুরাইনফো-র সম্পাদক)