আলোর দিশারী

অঞ্জন সেনগুপ্ত

June 27, 2025

[এই লেখাটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের নিরলস বিজ্ঞান চর্চার কাহিনী। ওনার নাম ড: সত্যেশ রায়, বয়স ৮২ বছর। বিজ্ঞানের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ঘাটতে গিয়ে একটি আকর্ষণীয় লেখা দেখে, লেখকের সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছা হল। লেখকের বয়স ৮২ বছর হওয়া সত্বেও বিজ্ঞান চর্চার নিরলস অনুশীলন,ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় এবং অনুকরণযোগ্য। বর্তমানেও উনি বিরামহীন অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেকে সপ্রতিভ রেখেছেন]

অবসাদ, ক্লান্তি, অনিচ্ছা নামক নেতিবাচক শব্দগুলো যখন আমাদের বর্তমান সমাজের নিত্যসঙ্গী তখন কোথাও যদি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় যার জীবনশৈলী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আনপ্রেরণাদায়ক হয় তবে সেই ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিত্য এই কাহিনীর মধ্যমণি হবে এটাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞান ও জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ক কিছু তথ্য সংগ্রহ করার তাগিদে ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করাটা এক নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাস। সেই কাজ করতে গিয়ে Researchgate এবং Academia নামক দুটো ওয়েবঠিকানা দিয়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া এবং কোষের মধ্যে থাকা জিনের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি দেখতে দেখতে চোখ পড়ল একটা লেখার দিকে। লেখাটি 2025 সালের মে মাসের মানে বেশ টাটকা লেখা। লেখাটা জিনোমিক্স সংক্রান্ত যা কোন জীবের ডি.এন. এ সিকোনসিং বৃত্তান্ত। জিনোমিক্ গবেষণার অগ্রগতির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের ওমিক্স যুক্ত হয়েছে। যেমন জিনোমিক্স, প্রোটিওমিক্স, ট্রান্সক্রিপটোমিক্স ইত্যাদি। এগুলি জটিল জৈবিক প্রক্রিয়াগুলো বোঝানোর জন্য এবং জীবের বৃদ্ধি, বিকাশ, চাপ, এবং সমস্যা সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। কোন একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জীবদেহে কোন একটি নির্দিষ্ট জিন তার কাজ চালু করে আবার কখনও বন্ধ করে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে খরা, লবণাক্ততা ইত্যাদি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ধরণের বিভিন্ন চাপ সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া ও গুরুত্ত্ব নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যা একটি নিৰ্দিষ্ট উদ্ভিদের রেসপন্সিভ (চাপের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া) এবং টলারেন্স (চাপ নেওয়ার সক্ষমতা) জিন সনাক্তকরণে ভবিষ্যত গবেষকদের সাহায্য করবে। এই গবেষণাটি হয়ত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবেশগত বাস্তুতন্ত্রে ভিন্নভাবে প্রকাশিত জিনগুলির বোঝার জন্য প্রয়োগ করা যেত পারে। লেখাটি বেশ আকর্ষণীয় মনে হওয়ায় লেখকের সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা হল। দেখা গেল লেখক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। অবসরের পরেও এত গভীর গবেষণা করছেন, দেখে উৎসাহটা আরো খানিকটা বাড়ল। এবারে আরো তথ্য ঘেটে দেখাগেল ওনার প্রায় 70 টি এরকম পাবলিকেশন আছে এবং ওনার কাছে 15 থেকে 20 জন পি.এইচ.ডি করছেন। সে না হয় হল কিন্তু এই বিজ্ঞান নিয়ে অনুসন্ধানের নেশা বয়সের সাথে বৃদ্ধির গ্রাফ দেখে বেশ অবাক হতে হল। যে বয়সে মানুষের নিত্য সঙ্গী হয় ওষুধ, একাকিত্ব আর অবসাদ সে বয়সে এই অধ্যাপকের অধ্যাবসায় সমাজকে যেন এক অন্য বার্তা দিচ্ছে। মেটেরিযালিস্টিক এই পৃথিবীতে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন ক্ষণস্থায়ী তার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হল প্রাপ্তিস্বীকার না হওয়ার দুঃখ যার শেষ পরিনাম অবসাদ। কিন্তু ইনি যেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নিরন্তর অধ্যয়নের মাধমে প্রত্যেকদিন নতুন ডোপামিন (হ্যাপি হরমোন) খুঁজে বের করেন। আর তা দিয়ে নিত্য রোগভোগ, দুঃখবেদনার রোজনামচা কে কয়েক মাইল দূরে সরিয়ে রাখেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার এই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের নাম ড: সত্যেশ রায়, বয়স মাত্র ৮২(বিরাশি বছর), হ্যা এই বয়সেও বিজ্ঞান চর্চায় তার উৎসাহ বোধ হয় ২৮(আঠাশ বছর) এর যুবকেও হার মানাবে। তার চাইতেও বড় ব্যাপার হল বর্তমান প্রজন্মের জন্য এ যেন এক অন্য বার্তা দিতে চাইছেন ড: সত্যেশ রায়। প্রতিযোগিতার এই সমাজ ব্যবস্থায় বর্তমান প্রজন্ম যখন চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হারাচ্ছে সেই সময় ওনার প্রতিরোধী জিন তত্ত্ব এই কথাই বলছে যে ধৈর্য্য, প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে মানুষের শরীরেও চাপ প্রতিহত করা ও চাপ সহ্য করার জিন পরিবেশের নিয়মে সপ্রতিভ হয়, শুধু সেই জিনকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে নচেৎ অবসাদ বহনকারী জিনগুলি সহজেই জয়ের আনন্দ প্রকাশ করার সুযোগ পাবে। ড: সত্যেশ রায় সম্পর্কে আরো একটু খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে উনি প্রত্যেকদিন নিয়মকরে কম্পিউটারের সামনে বসে বিজ্ঞানের নতুন ঘটনা প্রবাহের প্রতি নজর রাখেন। নিজেই কিবোর্ডে টাইপ করেন আবার অবসরের বাকি সময়ে বাড়ির কাজের বাইরে জনসংযোগ রাখার কাজটিও করেন। তবে ওষুধ খেয়ে জীবন অতিবাহিত না করে বিজ্ঞান সাধনায় ব্রত থাকতে বেশী পছন্দ করেন। ওনার দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বাইরে Settled। কলকাতায় উনি এবং উনার সহধর্মীনি একসাথে থাকেন। ৮২(বিরাশি বছর) বছর বয়সে এই ধৈর্য্য, জানার ইচ্ছা, অধ্যাবসযকে, কুর্নিশ জানালেও কম হবে।

কারণ ওনার কাছে এই মুহূর্তে প্রাপ্তি বলে কোন শব্দ তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয় যতটা অধ্যয়ন ওনাকে শান্তি দেয়। ড: সত্যেশ রাযের মত আরো অনেক ব্যাক্তি অগোচরে বিজ্ঞানের আরাধনায় নীরবে ব্রতী রযেছেন তা এইরকম অনুসন্ধান না করলে হয়ত জানা যাবে না। এই রকম গুণী মানুষদের দেখলে, জানলে একটা কথা মনে হয় "বিজ্ঞান কথা বলে না বিজ্ঞান প্রমান করে" আর এই প্রমান করার জন্য প্রয়োজন অধ্যয়ন, ধৈর্য্য, যুক্তি, ও চেতনা। ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য এই বার্তা হয়ত অনুপ্রেরণার স্ফুলিঙ্গ হতে পারে।সম্প্রতি Podcast এ ড: সত্যেশ রাযের বিজ্ঞান চর্চার সংলাপ শুনে ধারণাটা আরো সূদৃড হল।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.