করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনাবলী প্রকৃতই সত্যি, না কি সবই মায়া?

বিজন ধর

যাঁরা আকাশ-বাতাস-প্রকৃতি-মানুষ- ঘটনা ইত্যাদিকে মায়া বলে প্রচার করেন, বলেন ওসব সত্যি নয়, ওসব জানার চেষ্টা আসল জ্ঞান নয়, প্রকৃত সত্য নয়। সত্য জানার অর্থ হলো সেই তাঁকে জানা যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা করোনার সংক্রমণ ও তার প্রতিকার কিংবা চিকিৎসা বা টিকা তৈরির জন্য গবেষণা, একেও কি তাঁরা মায়া বলবেন? যিনি মানুষকে পাপের শাস্তি দিতে চান বলে মনে করেন,এখনও কি তাঁরা বলবেন সেই সৃষ্টিকর্তারই শরণাপন্ন হতে হবে? তাহলে লকডাউন না করে কিংবা ঘন ঘন সেনিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না করে নিজ নিজ উপাসনার জায়গায় গিয়ে উপাসনা করলেই হয়? ডাক্তার- নার্স- হাসপাতাল- ঘরবন্দি থাকা, ইত্যাদির কোনও দরকারই হতো না।

আসল ঘটনা আমাদের চোখের সামনে আমরা দেখছি, মৃত্যু, মৃত্যুভয়, আতঙ্ক, না, এগুলো মায়া নয়, সত্যি, কঠোর সত্যি।

আমরা বাঁচতে চাই। তার জন্য অন্তত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা চাই। প্রকৃতির নানা বস্তুর পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ভোগের, বাঁচার, বংশ -রক্ষার ব্যবস্থা করতে প্রয়াস চালাই। এবং এটা করতে হয় শ্রম দিয়েই। এগুলো সবই মায়া?

না, আমি রাজনীতি করছি না। আমি শুধু দার্শনিক কিছু প্রশ্ন তুলছি। দর্শনের মূল কথা বস্তু ও ভাবের সম্পর্ক ও অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা।

কে আগে? বস্তু, না ভাব? যাঁরা মনে করেন বস্তু আগে, তাঁরা হলেন বস্তুবাদী। যাঁরা মনে করেন ভাব বা চিন্তাশক্তি বা অলৌকিক শক্তিই প্রকৃতি, মানুষ, জীব, জড় সবই সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের বলা হয় ভাববাদী।

বস্তুবাদীরা মনে করেন বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সব জানা সম্ভব, তবে এখনও অনেক কিছু জানা যায়নি। বস্তু নিয়ে গবেষণা করতে হবে প্রকৃত সত্য জানার জন্য। ভাববাদীরা মনে করেন সব জানা অসম্ভব। জানতে হলে সেই অলৌকিক শক্তিকেই জানতে হবে। এর থেকে জন্ম নিয়েছে ভূত- পেত্নি, ইহকাল- পরকাল, জন্মান্তরবাদ, পাপ- পূণ্য, স্বর্গ- নরক, কপালের লিখন, ইত্যাদি সব আজগুবি কথাবার্তা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের প্রাধান্য।

গবেষণালব্ধ সত্য প্রকাশের দায়ে বিশ্বের নানা দেশে অনেক বিজ্ঞানী-যুক্তিবাদীকে যেমন খুন হতে হয়েছে, তেমনি ভারতেও অতীতে যেমন ঘটেছে, তেমনি এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল ধারা পি- পি- পি মডেলে আজও আমাদের দেশে ক্রিয়াশীল রয়েছে।

এখান থেকেই রাজনীতিটা চলে আসে। মানব সমাজের বিবর্তনের ধারায় অজ্ঞতার জন্য ভাববাদ এবং নানা অভিজ্ঞতা, বাঁচার সংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক নানা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বস্তুবাদী ধারা একই সঙ্গে চলছিল, চলছিল আমাদের ভারতেও। একসময় বাড়তি উৎপাদন লুট করা শুরু হলো। শোষক আর শোষিত শ্রেণী জন্ম নিল। শোষিতদের মানসিক ও শারীরিকভাবে দমিয়ে রাখতে শাসকরা তৈরি করলো যথাক্রমে ধর্ম ও রাষ্ট্র। কোনওটা মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে, আর কোনওটা শ্রেণীশাসনের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শাসক শ্রেণীগুলোর আক্রমণে বস্তুবাদকে প্রায় ধ্বংস করা হয়েছে, আর ভাববাদকে সবরকম ভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা আজও অব্যাহত। তা না হলে বিজ্ঞানের যত বেশি বিকাশ ঘটেছে বা ঘটবে, ভাববাদের ক্ষয় তত বেশি অবশ্যম্ভাবী ছিলো, বা ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। তা না হলে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পূজার্চনা কিংবা কাঁসি-ঘন্টা বাজিয়ে রাস্তায় মিছিল বেরুত না। বিজ্ঞান- নির্ভর নির্দেশিকা মেনেই মানুষ এ বিপদ মোকাবিলায় সক্রিয় থাকতো, পরিত্রাণের দায়ভার তথাকথিত সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিত না।

তো, রাজনীতিটা আনল শাসকশ্রণীগুলোই। শোষিতদের আত্মরক্ষার জন্যও রাজনীতি করতে হয়, করতে হবে। তাদের এই রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে প্রচলিত শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ- গণতান্ত্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয়, বিজ্ঞানমনস্ক এক আধুনিক জনগণতান্ত্রিক ভারতরাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
24.03.2020Subarna MarakDo I need any permission from Administration to use private vehicles on urgent needs ??
24.03.2020Good remarksGood
24.03.2020Pinaki DattaThe suitable steps are taken by our Hon'ble Chief Minister is unique,remarkable for the people of Tripura State and for this act of kindness we the people of Tripura shall remain ever grateful to our Adarania Chief Minister as well as all high officials of our state who are rendering their cooperation for the safe side of people.