॥ আ্যসিডিটির ( জি ই আর ডি ) উপশমেঃ ওমি থেকে ভোনোর যাত্রা ॥
ডঃ অমিতাভ রায়
তুলতুল পিসির সক্কাল বেলার পথ্য পেন ৪০ র কথা জগত বিদিত। তবে এই জাতীয় গ্যাসের ওষুধের দোষ ও গুন পাঠক বর্গের কাছে বহুচর্চিত। ১৯৯০ সালের ওমেপ্রজোল আ্যসিডিটি চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটায়। আজ ও তিন দশকের ওপর আধিপত্য দখল করে রাখার কৃতিত্ব
খাঁটো করে দেখলে হবে না। পূর্বসূরির রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন এর যবনিকা পতনের কারক এই (পি পি আই) প্রোটন পাম্প নিরোধক গ্রুপের ওষুধের কাহিনি ও কিছু কম চমকপ্রদ নয়। "লোসেক" নামে মার্কেটে লঞ্চ করার এক দশকে মুনাফা অর্জনের শীর্ষে পৌছুতে বিন্দু মাত্র
বেগ পেতে হয়নি। এই লোকপ্রিয়তা দীর্ঘস্থায়ী হলেও দাগহীন নয়। কিডনি রোগীদের সতর্কতা ছাড়া ও কিছু ত্রুটি তো রয়েছে ই।
এশিয়া মহাদেশিয় দেশ সমুহে আ্যসিডিটি রোগের ( জি ই আর ডি ) প্রাদুর্ভাব ক্রমশ বাড়ছে। রিসার্চে ক্রমবর্ধমান এসিডিটির মূলে দেহের স্থুলতা,
পাশ্চাত্তকরন ও বংশানুক্রমিকতার মূল ভুমিকা পাওয়া যায়। ধূমপান, শরিরচর্চার অভাব ও এইচ পাইলরি র সংক্রমন আংশিক ভাবে আ্যসিডিটির বৃদ্ধির কারন। সারা বিশ্বে ৮-৩৩% মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন।
সমস্যার মুল কারন হল অম্বলের বিপরীত প্রবাহ। স্বভাবতই
পাকস্থলিতে খাবার ( ও বহু নিসৃতঃ পদার্থ) পৌঁছতে গেলে খাদ্যনালীর শেষ প্রান্তে অবস্থিত ভাল্ব অতিক্রম করতে হয়। এই ভাল্ব উর্ধ্বগামী পাকস্থলির অম্বলকে খাদ্যনালীতে আসতে বাধা দেয়। এই ভাল্ব বিকল হয়ে পরলে দেখা দেয় 'হার্টবার্ন' ও নানা লক্ষণ। দীর্ঘমেয়াদি অম্বলের ছোয়ায়
খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুরুতে হাল্কা ঘাঁ থেকে পরবর্তি ক্যান্সার রূপী ভয়াবহ রোগের সুচনা হতে পারে। রীনা বৌদির সেদিনের রক্ত বমির পর ইমারজেন্সি এন্ডোস্কোপির ফলাফল কিন্তু মোটেও আশাপ্রদ নয়। নবম ক্লাসের সৌমির মার জন্য মন খারাপ করে থাকাটা মেনে নিতে পারছি না।
কেন এক বার ও বলে নি? বায়োপ্সি টা যদিও এখন ও বিচারাধীন। সেই টপাটপ গ্যসের ওষুধ গিলে আপনি ও নিজের চোখে ধুলো দিচ্ছেন না তো ?
এক আধটু আ্যসিডিটি স্বাভাবিক। ৬ সপ্তাহের বেশী আ্যসিডিটি তে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। খাবার গিলতে অসুবিধা হলে অবহেলা করবেন না। খাদ্যনালীর অভ্যন্তরিন পরীক্ষার জন্য এন্ডোস্কোপির ভূমিকা অনবদ্য। অত্যাধুনিক মেনোমেট্রি ও পি এইচ মাপার নব্য পরীক্ষায় সোজা সাপ্টা হিসেবে মাপা যাবে এসিডিটির তিব্রতা ও সক্রিয়তা। ভয় কাটিয়ে চিকিৎসকের সাথে সরাসরি কথা বলুন। খাদ্যাভাসে , দিনচর্চায় পরিবর্তন আনুন ও আঁটোসাটো পরিধান থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত জল পান করুন। মনে থাকে যেন , খাবার জাস্ট পরেই শুয়ে পরবেন না। পেটে কুড়ি শতাংশ রিক্ত রেখে খাওয়ার খাবার অভ্যাস করুন।
৪০% আ্যসিডিটি প্রাথমিক চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। প্রায় সম পরিমান রোগীদের দৈনিক একাধিক ডোজের প্রয়োজন হয়। জি ই আর ডি রোধে প্রোটন পাম্প রোধী গোষ্ঠির ওষুধের আধিপত্য থাকলে ও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিফলতা ও অনস্বিকার্য। তবে কি বিখ্যাত ওমি, পেন , সোমপ্রাজ ও রেজোর যবনিকা পতন ঘটবে ? না আপাতত তো নয়। মার্কেটে ভোনো ( ভোনোপ্রাজান ) কিন্তু এখন 'টারজান'। সদ্য বাজারজাত এই ওষুধের গ্রহনযোগ্যতায় বাকী অনেক পরীক্ষা। প্রমান করতে হবে একাধিক উপযোগিতা। উগ্র আ্যসিডিটিতে, বেরেট্স ইসোফেগাসে ও খাদ্যনালীর আল্সারে ১০-২০ মিঃলি গ্রাম এই টেবলেট আ্যসিডের দমকল ( প্রোটন পাম্প রোধ করে ,পোটাসিমের যুক্ত হওয়ার স্থানকে দখল করে ) কে কাবু করে দিতে পারে কয়েক মিনিটে এবং ৪-৫ গুন বেশীক্ষন শরীরে এক্টিভ থাকার ক্ষমতা একে বানায় অতুলনিয়। প্রোটন পাম্প রোধে আরো একটি তীরের ( ভোনোপ্রাজান ) জন্মস্থল হচ্ছে সূর্যোদয়ের দেশ নিপ্পনে। এই জাপানী ওষুধটির উপকারীতা আল্সার রোধে ও রয়েছে, পাকস্থলির সংক্রমনের উন্মুলনের ক্ষেত্রে পূর্বসুরির ওষুধের তুলনায় এক কদম এগিয়ে।
কিন্তু তা বলে নতুন ওষুধ, উপমহাদেশিয় আবহাওয়ায় ও ভারতীয় দেহে উপযোগিতা প্রমান করতে হবে না বৈকি ! আর যাই হোক, ওভার দ্য কাওন্টারের দৌলতে এই নতুন ওষুধ যাতে প্রেস্ক্রিপশান ছাড়া বিক্রি না হয়। বিশেষ নির্বাচিত কিছু উপযোগিতা ছাড়া মুড়ি মুড়কির মত অপব্যবহারে হ্রাস পেতে পারে উপযোগিতা।