ত্রিপুরা পুলিশের দেড়শ’ বছরের ইতিহাস

প্রদ্যোত ভৌমিক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক।

ত্রিপুরা পুলিশের দেড়শ বছরপূর্তি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। যে কোন সংগঠনের পক্ষে এত দীর্ঘ পথ সাফল্যেরর সঙ্গে অতিক্রমণ ঐতিহাসিক ভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্রিপুরা পুলিশের সৃষ্টির ভিত্তিবছর হিসেবে ধরা হয়েছে ১৮৭৩ সালকে। এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যে বৃটিশ কর্তৃক নিয়োজিত প্রথম পলিটিকেল এজেন্ট মিঃ এ, ডব্লিও, বি, পাওয়ারের ১৮৭৩ সালের ৩১শে অক্টোবর তারিখে গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গলের সেক্রেটারিকে লেখা এনুয়েল এডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্ট । সেই হিসেবে এই দেড়শ বছরের মধ্যে রয়েছে রাজন্য আমলের ৭৬ বছরের (১৮৭৩ থেকে ১৯৪৯ ইং) এবং ত্রিপুরার ভারত ভুক্তির পরবর্তী ৭৪ বছরের পুলিশের ইতিহাস। ঊল্লেখ্য, গত ৮ই আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখে প্রজ্ঞা ভবনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাক্তার মানিক সাহা কর্তৃক দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ “লোগো” প্রকাশের মধ্য দিয়ে বর্ষব্যাপি এই উদযাপনের শুভারম্ভ হয় ।

এখন প্রশ্ন হল - ১৮৭৩ সালের আগে কি ত্রিপুরায় কোন পুলিশি ব্যবস্থা ছিলনা ? অবশ্যই ছিল – তবে তা ছিল অসংগঠিত, অবিন্যস্ত, প্রশিক্ষণবিহীন ও অদক্ষ। পলিটিকেল এজেন্ট মিঃ পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৭২-১৮৭৩ সালের আগে ত্রিপুরায় কোন সুসংহত পুলিশী ব্যবস্থা ছিল না। পুলিশ ও মিলিটারি প্রায় সমার্থক ছিল। রাজাদের ইচ্ছানুসারে অপ্রশিক্ষিত সাধারন নাগরিকদেরকেও পুলিশের কাজে নিয়োগ করা হতো। ঊর্ধ্বতনদের বেশীর ভাগেরই রাজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল । আভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিল পুলিশ ও মিলিটারির যৌথ দায়িত্ব। মধ্যুযুগে মাণিক্য বংশীয় রাজত্ব স্থাপনের পর রাজারা শাসন কার্য পরিচালনা করার জন্য “বিনন্দিয়া“ নামে এক বিশেষ ধরনের বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। রাজার আদেশ ইত্যাদি তামিল করা প্রধানত তাদের কাজ ছিল। এ ব্যাপারে “ তুইতুন” প্রথা অনুযায়ী তাদের কাজের সহায়াতার জন্য প্রজাদেরকে নিয়োজিত করার ক্ষমতা ছিল। অমান্যকারীদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারত এবং আটককৃত পাহাড়ি জনপদের প্রজাদেরকে “আলং” এ আটক রাখা হতো। এই “বিনন্দিয়া“ বাহিনীর প্রধান ছিলেন “নাজীর“। কাল ক্রমে প্রাচীন প্রথাগত শাসন পদ্ধ্বতি, হিন্দু শাসন পদ্ধ্বতি এবং বাংলার মুসলিম শাসন ব্যবস্থার সংমিশ্রনে ত্রিপুরায় এক মিশ্র শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বলাবাহুল্য প্রাকমাণিক্য যুগেও ত্রিপুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব প্রথানুযায়ী নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা সহ সামাজিক ন্যায় বিচারের বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা ছিল।

প্রকৃত অর্থে , ১৮৭৩ সাল থেকে বৃটিশ শাসিত বাঙ্গলায় প্রবর্তিত ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন অনুসারে রাজন্য ত্রিপুরায় আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং এই উদ্যোগকেই ত্রিপুরা পুলিশের সৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়েছে। পলিটিক্যাল এজেন্ট মিঃ পাওয়ারের ১৮৭৩ সালের ৩১শে অক্টোবর তারিখে গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গলের সেক্রেটারিকে লেখা এনুয়েল এডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্ট এবং অন্যান্য দলিল দস্তাবেজ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ১৮৭১ সালের ১৪ই অক্টোবর মাসে গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গলের সঙ্গে ত্রিপুরার মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্যের এক গৃহীত রেজোলিউশন ( সিদ্ধান্ত) অনুসারে রাজন্য ত্রিপুরার শাসন ব্যবস্থার আধুনিকরণের জন্য বৃটিশ শাসিত বাঙ্গলার অভিজ্ঞ অফিসারদেরকে এই রাজ্যে নিয়োগ সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৮৭১ সালের শেষের দিকে দুর্গা প্রসাদ গুপ্তকে রাজ্যের উত্তর পূর্বাঞ্চল বিভাগের সদর কৈলাশহরের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ‘সিভিলকোর্টআমীন’ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে তিনি ব্রিটিশ ভারতের ডেপুটি কমিশনারদের মতো পুলিশ, সাধারণ প্রশাসন, বিচারবিভাগ সহ সমস্ত কিছুর দায়িত্বে ছিলেন । পরের বছর ১৮৭৩ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লার সাব রেজিস্ট্রার নীলমণি দাশ রাজ্যের “ দেওয়ান” হিসেবে আগরতলায় নিযুক্ত হন । শ্রী দাশের উদ্যোগে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য উদয়পুর বিভাগ সৃষ্টি হয় । তবে বিভাগের সদর দপ্তর ছিল সোনামুড়াতে । নীলমণি দাস এবং দুর্গা প্রসাদ গুপ্তর নিযুক্তির পর থেকেই বৃটিশ শাসিত বাঙ্গলায় প্রবর্তিত ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন অনুসারে রাজন্য ত্রিপুরায় আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা ১৮৭৩ সাল থেকে পর্যায় ক্রমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৭৬১ সালে ত্রিপুরার সমতল অঞ্চল চাকলা রোশনাবাদ ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়ার অধিকারে চলে যাওয়ার পর প্রায় একশো বছর অর্থাৎ বীরচন্দ্র মাণিক্যের শাসন ভার গ্রহণ পর্যন্ত (১৮৭০) রাজন্য পুলিশি ব্যবস্থার তেমন বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ১৮২২ সালে ত্রিপুরা-সিলেট সীমান্ত নির্ধারিত হবার পর ধর্মনগর, কৈলাশহর, কমলপুর, আগরতলা, ঋষ্যমুখ ইত্যাদি সীমান্তে পাঁচটি পুলিশ থানা বিদ্রোহী কুকি ও অন্যান্য উপজাতিদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল। সেই থানাগুলোতে প্রধানত সৈন্য এবং বরকান্দাজ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। ১৮৭২ সালে মোট আটটি থানা এবং দশটি ফাঁড়ী ছিল। মোট পুলিশের সংখ্যা ছিল দু’শ জন। এদের মধ্যে ছিল চারজন দারোগা, সাতত্রিশ জন জমাদার, আর বাকীরা ছিল বরকান্দাজ। পুলিশ থানা, ফাঁড়ী গুলোর এবং মোট পুলিশের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিলনা। ১৮৭৩ এবং ১৮৭৪ সালে থানার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় পাঁচে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই সংখ্যার পরিবর্তন করা হতো। রাজন্য পুলিশে দারোগা, নায়েব দারোগা, হাজারি, মুহুরি, দফাদার, বিনন্দিয়া এবং ত্রিপুরা বরকান্দাজ পদভুক্ত কর্মচারীরা ছিল। তাদের মাস মাহিনা ইত্যাদির জন্য কোন সরকারী বরাদ্দ ছিল না। বিভিন্ন খাত থেকে খাজনা আদায় করে নিজেদের মাস মাহিনা নিতে হতো।। রেকর্ড রেজিষ্টার দলিল দস্তাবেজ ইত্যাদির তেমন প্রচলন ছিল না। মহারাজা বীর চন্দ্রের রাজত্বকালেই ( ১৮৬২-১৮৯৬) ত্রিপুরায় আধুনিক কালের সূচনা হয়। সাধারন ও পুলিশ প্রশাসন, আইন, শিক্ষা এবং অন্যান্য সকল বিষয়েই আধুনিকীরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল । ১২৮৩ ত্রিপুরাব্দে ( ১৮৭৩-৭৪ ইং ) নয়টি আইন প্রবর্তিত হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ভারতীয় ফৌজদারি আইন ( ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড ), আবগারি আইন, গবাদি পশু পাচার আইন্‌ ইত্যাদি। ভারতীয় দন্ড বিধি আইন ( ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ) চালুর ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছিল। তাছাড়া ১২৯৬ ত্রিপুরাব্দে ( ১৮৮৬-৮৭ ইং ) সালে স্বাধীন ত্রিপুরা, ১২৯৬ ত্রিপুরাব্দের পুলিশ বিধি প্রণয়ন করা হয়েছিল । আধুনিকীরণের এই প্রক্রিয়া পরবর্তী কালে মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য (১৮৯৬-১৯০৯), বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য ( ১৯০৯-১৯২৩) এবং বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যর মৃত্যু পর্যন্ত (১৯২৩- ১৭ই মে ১৯৪৭) অব্যাহত থাকে। বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের মৃত্যুতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ।

১৮৭৩ সাল থেকে ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার ভারতভুক্তি পর্যন্ত মোট ৭৬ বছর জুড়ে রয়েছে রাজন্য পুলিশের উত্তরণের পর্যায় ক্রমিক নানা ইতিহাস। ১৮৭৩ সাল থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত পুলিশী ব্যবস্থা রাজ্যের ডিভিশনেল অফিসার এবং সাধারন প্রশাসনের অফিসারদের অধীন্যস্ত ও তত্বাবধানে ছিল। ১২৯৪ ত্রিপুরাব্দে (১৮৮৪-৮৫) প্রথম তিন ডিভিশনের সদরে অর্থাৎ কৈলাশহর, আগরতলা এবং সোনামুড়ায় তিন জন পুলিশ ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা হয়। পরে সুপারিন্টেনডেন্ট নামে পদ সৃষ্টি করা হয় এবং নতুন ডিভিশন বিলোনীয়া সহ চার ডিভিশনের সদরে ডিভিশনেল অফিসারদের অধীনে তাদের নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসনাধীন বেঙ্গল থেকে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার রাজ্যে আনার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ১৩১১ ত্রিপুরাব্দে (১৯০১-০২) পুলিশ ও রেভেনিউ দপ্তরের যৌথ দায়িত্ব দিয়ে “রেভেনিউ পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট “ নামে পদ সৃষ্টি করে প্রশাসক পূর্ণ চন্দ্র রায়কে নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৩১৩ ত্রিপুরাব্দে (১৯০৩-০৪) পুলিশ ও রেভেনিউ দপ্তরের পৃথকীকরণ করে পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে সাধারন প্রশাসনের অফিসার অসিত চন্দ্র চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ঐপদে বছর খানেক আসীন ছিলেন। ১৯০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রী চৌধুরীর পরিবর্তে বেঙ্গল পুলিশের শ্রী আনন্দ মোহন গুহর পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে নিযুক্তির মাধ্যমে রাজন্য ত্রিপুরা পুলিশের আমূল পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সূত্রপাত ঘটে। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ পুলিশী ব্যবস্থার অনুকরণে আধুনিক পুলিশী ব্যবস্থা প্রচলনের ঐকান্তিক প্রয়াস নেন।শ্রী গুহ ছিলেন বেঙ্গল পুলিশের একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। তিনি ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও পারদর্শী অফিসার। তিনি দুইবার এরাজ্যের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে ( ১৯০৪-১৯০৭ এবং ১৯০৯-১৯১৫) বৃত হয়েছিলেন । তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্যোগে অবিন্যস্ত ও অসংগঠিত রাজন্য পুলিশের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। এই অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে “আধুনিক ত্রিপুরা পুলিশের জনক” হিসেবে আখ্যায়িত করলে অত্যুক্তি হবেনা। সেই থেকে ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার ভারতভুক্তি পর্যন্ত রুহিনী কুমার বোস, যোগেশ চন্দ্র দত্ত, ঠাকুর কামিনী কুমার সিংহ, যোগেশ চন্দ্র দত্ত(২), রায় সাহেব অক্ষয় কুমার দত্ত, রায় বাহাদুর গিরিজা রঞ্জন দত্ত এবং ঠাকুর হৃষীকেশ দেববর্মণ পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে ত্রিপুরা পুলিশের আধুনীকরণে তাঁদের বলিষ্ঠ ও কার্যকরী ভুমিকার প্রশংসার দাবী রাখে। এঁদের মধ্যে রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ঠাকুর কামিনী কুমার সিংহ ( ১৯১৫-১৯২০) ছাড়া ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল পুলিশের ইন্সপেক্টররাই বিশেষত এই রাজ্যের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে আসীন ছিলেন। তবে , প্রখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্তের পিতা রায় বাহাদুর গিরিজা রঞ্জন দত্ত ছিলেন ব্রিটিশ বেঙ্গল পুলিশের অবসর প্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট। ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট এবং ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদ দুটিকে যথাক্রমে পুলিশ কমিশনার এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদে উন্নীত করে শ্রী দত্ত এবং নরেশ কুমার ভট্টাচার্যকে নিযুক্ত করা হয়। পরে ১৯৪৫ সালে পুলিশ কমিশনার পদের পরিবর্তে পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদটি পুনরায় চালু এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদটির অবলুপ্তি করা হয়। উল্লেখ্য, ঠাকুর কামিনী কুমার সিংহ পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট (এস, পি ) পদ থেকে নিবৃত্তি নিয়ে সাধারণ প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন দপ্তরের নায়েব দেওয়ান পদে এবং পরবর্তী কালে রাজমন্ত্রী সভায় দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান মন্ত্রী পদ অলংকৃত করেছিলেন। রাজ্যরাজধানী আগরতলার ধলেশ্বরস্থিত কামিনী কুমার সিংহ মেমোরিয়েল উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি তাঁরই নামাঙ্কিত। একই ভাবে শ্রী নরেশ কুমার ভট্টাচার্য সাধারণ প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং যথাসময়ে উচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন।

বিশেষ ভাবে উল্লেখনীয় যে , পুলিশ ও রেভেনিউ দপ্তরের পৃথকীকরণ সম্পুর্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিশি কাজকর্ম ছাড়াও পুলিশকে নানাবিধ রাজস্ব মহালের দায়িত্ব পালন করতে হতো , যথা জল ও স্থল মাধ্যমে কাঠ, বাঁশ, ছন ইত্যাদি বনজ সম্পদ, কার্পাশ তুলা, তৈল বীজ ইত্যাদি রপ্তানী সংক্রান্ত কর আদায়, সীমান্তে বনজ সম্পদ পাচার রোধ ও তল্লাসী করা, গো-পালন সহ পরিত্যক্ত কৃষিযোগ্য জমি আবাদে লাঙ্গল চাষে জুমিয়াদের উৎসাহিত ও সহায়তা করা, জুমের ফসল নষ্টকারী ইঁদুর মারার পদ্ধতি শেখানো , ইঁদুর মারার জন্য পুরস্কৃত করা, শিক্ষাগ্রহণ ও প্রসারে উৎসাহিত করা, শিশু কিশোরদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদেরকে বুঝানো এবং প্রয়োজনে বাধ্য করা, রোগপ্রতিরোধে টিকাদান এবং জনগননায় সহায়তা করা, এমনকি কেজাই মহাল অর্থাৎ মুসলমান কাজীদের থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কর আদায় সহ বিভিন্ন সামাজিক নিয়মকানুন প্রচলনে সক্রিয় ভাবে সহায়তা করা ইত্যাদি।

সংগৃহীত কিছু পুরনো দলিল দস্তাবেজে ১৮০০ সালের শেষের দিক থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত নায়েব দারোগা, দারোগা, সাব ইন্সপেক্টর এবং ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত কয়েক জন পুলিশ অফিসারদের অসামান্য কর্ম কুশলতা এবং নৈপুণ্যের কথা জানা যায়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইন্সপেক্টর মুকুন্দ লাল গুণ ( যিনি ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে ঢাকাতে ১৯২১ সালে সন্দিগ্ধ বিপ্লবীদের হাতে খুন হয়েছিলেন), ইন্সপেক্টর নরেন্দ্রনাথ বোস (পরবর্তী সময়ে ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ), রিয়াং দারোগা ঈশ্বর প্রসাদ চৌধুরী (অমরপুরের অমরসাগর দিঘীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মা চণ্ডীর বিগ্রহ উদ্ধার করে বর্তমান মন্দিরে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন বলে কথিত), সুরেন্দ্র কুমার মজুমদার (১৯১৯-২০ সালে উদয়পুরে টাউন হল স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা), অমরেন্দ্র দেববর্মা ওরফে বংশী ঠাকুর ( ১৯৩০ থেকে ৩২ সাল থেকে দুবছর পুলিশে সাব ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল সামাজিক ও রাজ নৈতিক কর্ম কান্ডে সক্রিয় ভাবে মনোনিবেশ করেন এবং ১৯৫০ সালে কংগ্রেস দলের লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন), দেবেন্দ্র লাল বন্দোপাধ্যায়, রুহিনী কুমার ভট্টাচার্য, কাশীনাথ ভৌমিক, জানকীনাথ ঘোষ, অমূল্য কেশব সেন, সত্য ভূষণ দাশগুপ্ত, শৈলেন্দ্র ভূষণ রক্ষিত, এস, ভট্টাচার্য, সুরেন্দ্র কুমার চ্যাটার্জী, আব্দুল খালেক মজুমদার, দক্ষিনা রঞ্জন ভট্টাচার্য, এ, সি, তালুকদার, এ,ব্যানার্জী, বিজয় প্রসাদ চৌধুরী (রিয়াং), অঘোর চন্দ্র ঘোষ, অমৃত লাল দাশগুপ্ত , এল, দত্ত, প্রফুল্ল চন্দ্র মজুমদার, রমেশ চন্দ্র নাগ , ভুপেন্দ্র চন্দ্র রক্ষিত, গিরিজা ভুষণ হালদার, খগেন্দ্র মোহন গোপ, সত্যেন্দ্র বর্ধন , হীরালাল দাশ, নীরেন্দ্র কুমার চৌধুরী, অরুণ চন্দ্র ভট্টাচার্য, অমৃত লাল দেববর্মা, উষা রঞ্জন দেববর্মা, গুরুচরণ দাস, মধুমঙ্গল সিংহ, বীরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, ইন্দ্র মোহন গাঙ্গুলী, এন, সিংহ, ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, নিবারণ দত্ত এবং নাম না জানা অনেকেই। পুলিশের চাকুরী করা সত্ত্বেও এঁদের অনেকেই পরোক্ষ ভাবে ব্রিটিশ বেঙ্গল থেকে পালিয়ে আসা এরাজ্যে গোপনে আশ্রয় নেওয়া বিপ্লবীদের এবং তাঁদের স্থানীয় সহযোগীদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। তাছাড়া, রাজ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেককেই গ্রেপ্তার না করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অনেক উদাহরণ রয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে মহারাজা বীর চন্দ্র মাণিক্যের অকাল মৃত্যু, রিজেন্ট শাসন, ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার ভারতভুক্তি এবং পরবর্তী ১৯৫০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত টালমাটাল। সেই উত্তরণ কালীন সময়ে রাজ্যের ভুমিপুত্র পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট ঠাকুর হৃষীকেশ দেববর্মণ, সহকারী পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট শচীন্দ্র কুমার বর্ধন রায়, হাতেগোনা কয়েক জন পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং অন্যান্য পদে কর্মরত অপর্যাপ্ত পুলিশ কর্মীদের ভুমিকার ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরার ভারতভুক্তির সময়ে রিজেন্ট পুলিশে ছিল মাত্র একজন পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট, একজন সহকারী পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট এবং আর পাঁচ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর । তাঁরা হলেন পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট ঠাকুর হৃষীকেশ দেববর্মণ এবং সহকারী পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট শচীন্দ্র কুমার বর্ধন রায়। পুলিশ ইন্সপেক্টররা হলেন আনন্দ চন্দ্র মজুমদার, সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী, সতীশ চন্দ্র সরকার, অনাথ বন্ধু চৌধুরী, আশুতোষ চক্রবর্তী , ভুবন চন্দ্র দেববর্মণ এবং স্পেশাল ট্রেনিং অফিসার ফতেরাম পাণ্ডে। তাছাড়া ছিলেন ১৯৪৩ -১৯৪৫ সালের মধ্যে সরাসরি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর শৈলেন চৌধুরী, জিতেন্দ্র চন্দ্র তলাপাত্র, সুকোমল কান্তি ঘোষ, চন্দ্রোদয় দেব, নিরাপদ গণ চৌধুরী, নিরোদবন্ধু চক্রবর্তী এবং প্রমোশন প্রাপ্ত সিনিয়র সাব ইন্সপেক্টর অশ্বিনী কুমার চন্দ, অতুল চন্দ্র গৌতম, মুক্তা মিঞা, হরিদাশ ব্যানার্জী ,পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, মিহির রঞ্জন চৌধুরী, শান্তিময় বর্ধন, সুধীর চন্দ্র ঘোষ, সুদর্শণ কর, সত্য গুপ্ত, সুধীর চন্দ্র ঘোষ এবং অন্যান্য কয়েকজন। তাঁদেরকে নিয়েই ১৯৪৯ সালের ১৫ই অক্টোবর ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ গঠিত হয়েছিল। নবগঠিত রাজ্য পুলিশে অন্যান্য পদভুক্ত পুলিশ কর্মীদের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। সারা রাজ্যে একটি মাত্র জেলা ছিল। জেলার দায়িত্বে ছিলেন একজন পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট। তাছাড়া ছিলেন সশস্ত্র পুলিশের একজন কমান্ডেন্ট । ১৯৬৫ সালে বি,এস,এফ গঠিত হওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরা- পূর্বপাকিস্তান সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব ছিল সশস্ত্র ত্রিপুরা পুলিশের । শ্রী হৃষীকেশ দেববর্মণ দীর্ঘ দিন এই বাহিনীর কমান্ডেন্ট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ্বে মিত্রশক্তি ব্রিটিশ সৈন্যের সহযোগী রয়্যাল আর্মির ক্যাপটেন হিসেবে বার্মা সীমান্তে তিনি যুদ্ধ্বে অংশগ্রহণ করে ছিলেন। মেজর পদে পদোন্নতির পর তিনি পুলিশের এস, পি পদে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ই আগষ্ট মাসে সিধাই থানাধীন লক্ষ্মীপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তিনি দুজন পুলিশ কর্মী সহ পাক হানাদার আর্মি কর্তৃক অপহৃত হয়ে বন্দি দশায় অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। পরের মাসে নয় তারিখ পাক বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে রাজ্যে ফিরে এলে বিপুল ভাবে সম্বর্ধিত হন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগরতলায় আগমন সংক্রান্ত তথাকথিত “ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার” সঙ্গে শ্রী দেববর্মণের নাম জড়িয়ে আছে।

সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল রাজ্য পুলিশ গঠনের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শ্রী গৌরিপ্রসাদ ঘোষকে ১৯৫০ সালের ২রা নভেম্বর ত্রিপুরায় প্রথম এস, পি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় । শ্রী ঘোষের পর ১৯৫৩ সালের ৩০ শে এপ্রিল পি, এন, ব্যানার্জী এই পদে যোগ দেন । তিনিই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আই, পি, এস অফিসার এবং তখন থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই রাজ্যের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আই, পি , এস অফিসাররাই নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তী এস, পিরা হলেন হরনাথ সরকার, নীহার রঞ্জন বোস এবং পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্য। ত্রিপুরা পুলিশের পুনর্গঠনে তাঁদের প্রত্যেকের অবদান ছিল অসামান্য। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাস্তুচ্যুত হিন্দু রিফিউজিদের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পুরাণ রাজবাড়ী থানা এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া হয়। তাদের সুরক্ষা ও পুনর্বাসন ইত্যাদি ব্যাপারে সেই সময়কার এস, পি নীহার রঞ্জন বোসের অসামান্য তৎপরতা ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ওই রিফিউজি কলোনীর নাম রাখা হয় “নীহার নগর কলোনী”। তাছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্য এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে ডেপুটেশনে আসা অফিসার ও পুলিশ কর্মীদের অবদান অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। ১৯৫০ সালের মে মাসের শেষের দিকে কোলকাতা পুলিশের আই, বি শাখার দুঁদে অফিসার মোহিনী কুমার সান্ন্যালকে ডি,এস,পি পদে নিযুক্ত করা হয় এবং তাঁর হাত ধরেই কার্যত ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ভিত্তি গড়ে উঠে। তাছাড়া চলমান জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য পশ্চিম বঙ্গ, কোলকাতা, আসাম এবং বিহার পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের বেশ কয়েক জন অফিসারকে ডেপুটেশনে এনে ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে শক্তিশালী কয়া হয়।

রাজ্য পুলিশের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৫ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর এরাজ্যের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ ( আই জি পি} হিসেবে শ্রী রাজেন্দ্র নাথ শিওপুরিকে ( আর এন শিওপুরি) নিযুক্ত করা হয়।। পরবর্তী আই, জি, পিরা ছিলেন গোলক বন্ধু মজুমদার, ও, পি, ভুটানী, ভি, কে, কালিয়া, বি, কে, মুখার্জী, বলজিৎ রায়সুর, এস, দত্তচৌধুরী, সত্যব্রত বসু, আর, কে, ভট্টাচার্য, সি, জেড, গফুর,এবং এইচ সি যাতব । ডি জি পি পদ সৃষ্টি হলে তৎকালীন আই জি পি শ্রী যাতব প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ ( ডি জি পি} হিসেবে ১৯৮৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী কার্যভার গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রাজ্যে তিনটি জেলা স্থাপিত হলে ইউনিয়ন ক্যাডারভুক্ত তিনজন আই,পি,এস অফিসার পি, এস, বাওয়া, ইয়াদ রাম ধুরিয়া,এবং লস্করি রাম যথাক্রমে পশ্চিম, উত্তর এবং দক্ষিন জেলার এস,পি হিসেবে নিযুক্ত হন। এদিকে নর্থ ইষ্টার্ণ এরিয়া (রি- অরগেনাইজেশন) এক্ট ১৯৭১ অনুযায়ী জয়েন্ট মণিপুর-ত্রিপুরা ( এম টি) ক্যাডার গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ২১ শে জানুয়ারিতে পূর্ণ রাজ্য গঠিত হবার পর ত্রিপুরার জন্য আটটি আই পি এস পোষ্ট ধার্য হয়। শ্রী বি, এল ভোরা ( ১৯৬৭)এবং শ্রী ম্যাথু জন (১৯৬৯) এই ক্যাডার ভুক্ত ছিলেন । ১৯৭৪ সালে কে, টি, ডি সিং এর আই পি, এস (এম, টি ) ক্যাডারে নিযুক্তির পর থেকে প্রায় প্রতি বছর এই পদে নিযুক্তি চলতে থাকে। শ্রী সিং পুলিশ মহা নির্দেশক (ডি জি পি ) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০০৮ সালের ২রা মে মারা যান। তাঁর স্মৃতিতে ২০০৯ সালে নরসিংগড়ে অবস্থিত পুলিশ একাডেমীর নামকরণ করা হয় “কে, টি, ডি সিং পুলিশ একাডেমী”। তাছাড়া, কর্মরত অবস্থায় মৃত অতিরিক্ত পুলিশ মহা নির্দেশক শ্রী এ, সি, এইচ, রামা রাওয়ের নামে আর, কে, নগরস্থিত টি, এস, আর ট্রেনীং সেন্টারের নাম একই বছরে রাখা হয় “এ, সি, এইচ, রামা রাও ট্রেনীং সেন্টার” হিসেবে। ২০১২ সালে এম টি ক্যাডার বিভাজিত হয়ে পৃথক ত্রিপুরা ক্যাডারের ( টি আর) সৃষ্টি হয়েছে। এখন এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫টিতে। শ্রী অমিতাভ রঞ্জন ( টি আর -১৯৮৮) বর্তমানে ডি জি পি পদে বৃত রয়েছেন।

প্রকৃত অর্থে, ১৯৫১ সাল থেকে ত্রিপুরা পুলিশের ক্রমশ সম্প্রসারণ শুরু হয়। ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট, সহকারী কমান্ডেন্ট, সাব ইন্সপেক্টর সহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি এবং সরাসরি নিয়োগ করা শুরু হয়েছিল। দুজন ইন্সপেক্টর সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী এবং আশুতোষ চক্রবর্তীর ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাছাড়া, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে জগদীশ লাল কাপুর এবং বিভূতি ভুষণ চক্রবর্তী প্রথম ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে ত্রিপুরা পুলিশে যোগদান করেছিলেন। পরে শ্রী চক্রবর্তী অন্য চাকরিতে চলে যান। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইউ, পি এস সির মাধ্যমে এই নিয়োগ হয়েছিল । এদের মধ্যে রয়েছেন প্রেম নারায়ন সিং, চিত্তেশ দাশগুপ্ত, আর , চি, কোঁচার, রমেন দাশ, এস, কে, চ্যাটার্জী, আর, এন, ব্যানার্জী, কে,কে, ঝা, আর, এস, বাজাজ এবং এন, রজেন্দ্রন প্রমুখ। ভারতভুক্তির পর প্রথম সরাসরি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর অমরেন্দ্র বিহারী বোস, রথীন্দ্র রক্ষিত, রামানুজ ভট্টাচার্য , নির্মল বালো মজুমদার, হরিপদ মজুমদার, কৃশানু চক্রবর্তী, সুনিল কণ্ঠ মুখার্জি এবং অন্যান্যরা পশ্চিম বঙ্গে ট্রেনিং শেষে ১৯৫২ সালে রাজ্য পুলিশে যোগদান করেন। পুলিশ প্রশাসনে প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তাঁরা “বার ভূইয়া” হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৫২ সালের পর থেকে পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন পদে সরাসরি নিয়োগ, পদোন্নতি শুরু হয়। তাঁদের মধ্যে অমরেন্দ্র বিহারী বোস, রথীন্দ্র রক্ষিত, রামানুজ ভট্টাচার্য , অপর্ণা রঞ্জন ভট্টাচার্য, অমল কুমার ভট্টাচার্য, আই, পি, এস পদে উন্নীত হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে অনেকেই এস পি , অতিরিক্ত এস পি এবং ডি এস পি পদে উন্নীত হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে রাজ্য পুলিশে কাজ করেছেন । উল্লেখ্য ১৯৬১ সালের জুলাই মাসে ত্রিপুরা পুলিশে এক সাব ইন্সপেক্টর , চার এসিস্ট্যেন্ট সাব ইন্সপেক্টর এবং চৌদ্দ জন কনস্টেবল মোট ঊনিশ জন মহিলা পুলিশে যোগদান করেছিল। শ্রীমতি সুজলা গাঙ্গুলি ছিলেন প্রথম মহিলা সাব ইন্সপেক্টর। তিনি পরে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এসিস্ট্যেন্ট সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশে যোগ দিয়ে শ্রীমতি হেলা দত্ত ডি এস পি পদে উন্নীত হয়ে অবসর গ্রহণ করেন। তাছাড়া মহিলা হোমগার্ড পদেও নিয়োগ হয়েছিল।

১৯৭২ সালে পূর্ণ রাজ্য হওয়ার পর থেকে পরিকাঠামো সহ রাজ্য পুলিশের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক টি পি এস ক্যাডারে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং তা এখনো অব্যাহত। ১৯৭৬ সালে প্রথম নিয়োগ প্রাপ্তরা হলেন তড়িৎ কুমার সান্ন্যাল, অমিতাভ কর, দেব শঙ্কর দেবচৌধুরী, ধূর্জটি গৌতম, অমল কান্তি রায়, দিলীপজিৎ দেববর্মা, বিষ্ণু কিশোর দেববর্মা, মনীন্দ্র চন্দ্র দাশ, পার্শ্বনাথ রায় এবং বিভূতি ভুষণ চৌধুরী। কাল ক্রমে এইসব ক্যাডার ভুক্ত অফিসারদের অনেকেই আই, পি, এস পদে তথা অন্য উচ্চপদে উন্নীত হয়েছেন। তাছাড়া, ১৯৭৭ সাল থেকে টি, পি, এস, সি র মাধ্যমে এস,আই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমানে ২টি পুলিশ রেঞ্জ, ৮টি পুলিশ জেলা, ২৭টি পুলিশ সাবডিভিশন , ৮৭টি সাধারণ থানা, ৯টি মহিলা থানা এবং ২৪টি ফাঁড়ি থানা রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি ফাঁড়ি থানা শীঘ্র ই থানাতে উন্নীত হবে। ১৪ টি ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস বাহিনী ( টি এস আর) বাহিনী সহ রাজ্য পুলিশের মোট সংখ্যা ২১,২০৮। বরাদ্দ মোট সংখ্যার নিরিখে খালি পদের সংখ্যা ৬৩২২। রাজ্য পুলিশে ৬ জন আই পি এস সহ বিভিন্ন পদে নিযুক্ত মহিলা পুলিশের সংখ্যা ১১৩০। তাছাড়া টি এস আর বাহিনীতে ১৩৯ মহিলাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে রয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, কমিনিকিউশন, কে টি ডি এস পুলিশ একাডেমি, সেন্ট্রাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট , হোমগার্ড, বর্ডার উইং হোমগার্ড, স্পেসাল আর্মড ফোর্স, মোবাইল টাস্ক ফোর্স, প্রকিউরম্যান্ট , ট্রাফিক , সিকিউরিটি, ভিজিলেন্স, রেলওয়ে, স্টেট ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো, ফরেন্সিক সাইন্স ল্যাবরটরি এবং ডিসট্রিক্ট আর্মড রিজার্ভ বাহিনী ইত্যাদি।

পুলিশি কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা , ঔৎকর্ষ এবং পারদর্শিতার জন্য রাজ্য পুলিশের রাজ্যে এবং রাজ্যান্তরে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সুনাম অর্জনকারী বহু অফিসার ও কর্মীদের কথা এখনো লোকমুখে শোনা যায়। “বার ভূইয়া” হিসেবে পরিচিত অফিসারদের ছাড়া অন্যতমদের মধ্যে রয়েছেন অপর্ণা রঞ্জন ভট্টাচার্য, পরাগ দত্ত, প্রমোদ ভূষণ রায়, দেবব্রত মজুমদার, নরেশ দত্ত, কমলা রঞ্জন দত্ত ( বাদল দত্ত), অজিত কুমার দাশ, সমরেন্দ্র ভৌমিক (গতু ভৌমিক ), কমলা রঞ্জন দাশগুপ্ত, বিজয় বিহারী বর্ধন ( কচি বর্ধন), যুবরাজ নন্দী, কিরণময় ঘোষ , পল্টু রায়, মানিক লাল চক্রবর্তী, বিভুতি রঞ্জন চক্রবর্তী, মাণিক মজুমদার, সুশান্ত চক্রবর্তী, বিমলবিকাশ চক্রবর্তী, জনার্দন চক্রবর্তী, বিমলেন্দু দত্ত চৌধুরী, দেব প্রসাদ রায়, জয়দেব দাস, গোপাল সরকার, রঞ্জন পুরকায়স্থ, প্র্দীপ দাস (পদু দারোগা নামে বিশেষ ভাবে পরিচিত ), তপন গোস্বামী, মুকুল ঘোষ, ভোলানাথ ভট্টাচার্য, পার্থ সারথী গুপ্ত, হরেন্দ্র রায় বর্মণ, জনার্দন জমাতিয়া, চুনিলাল বর্ধন রায়, রামনারায়ণ চক্রবর্তী, যদুগোপাল চ্যাটার্জী, জ্যোতির্ময় দেবরায়, সমীরণ চৌধুরী, বি, পি, নাইথানি, প্রণব কান্তি বোস, সতীশ ভট্টাচার্য, চিত্ত রঞ্জন ভট্টাচার্য, সুনীল ভট্টাচার্য, মণি সেনগুপ্ত, রবীন্দ্র সোম, সলিল গাঙ্গুলী, এবং সাম্প্রতিক সময়ের আরো অনেক। সততা ও স্বচ্ছতার জন্য রঞ্জন পুরকায়স্থ, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, সুজিত গুপ্ত এবং রঙ্গলাল রায়রা বহু চর্চিত নাম। সশস্ত্র বিভাগে এম, এস, চৌহান, গোবিন্দ চন্দ্র রায়, ফতে রাম পান্ডে, আর, ডি, ধ্যানি, সুকুমার প্রসাদ চ্যাটার্জী, প্রতুল রঞ্জন চৌধুরী, সুনিল চন্দ্র দেব, প্রতাপ সিনহা সহ আরো অনেকেই বিশেষ কৃতিত্বের দাবী রাখে।

বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে ১৯৩৯ সালে পুলিশ এথলেটিক ক্লাব গঠন করার পর থেকে ত্রিপুরা পুলিশের নজরকারা সফলতা রয়েছে। মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্য বাহাদুরের উৎসাহে ক্রিড়ানুরাগী তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার রায়বাহাদুর গিরিজা রঞ্জন দত্ত কলিকাতা, ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট সহ বিভিন্ন স্থান থেকে নামীদামী ফুটবল প্লেয়ারদেরকে পুলিশের চাকুরী দিয়ে শক্তিশালী ফুটবল টিম গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৪৩ এবং ১৯৪৬ সালে আই,এফ, এ শীল্ড সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ফুটবলে ত্রিপুরা পুলিশের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। কৃতী খেলোয়াড়দের মধ্যে ত্রিপুরেন্দ্র গাঙ্গুলী ( আবু গাঙ্গুলী), মন্টু মুখার্জী, , আশু চৌধুরী, আবু বর্ধন, শান্তিময় বর্ধন, সত্য গুপ্ত , সুকোমল ঘোষ, হরিদাশ মুখার্জী, সুশীল রায়, সমরেন্দ্র ভৌমিক, সুদর্শন কর, হরিদাশ রায়, উৎপল দেববর্মা, হীরণ দাস, জনার্দন দেববর্মা, চিন্তা বাহাদূর, সুধীর দাশগুপ্ত, নেপাল রায়, যদু দত্ত, হরিদাস রায়, পরেশ চন্দ্র রায়, ইন্দু ভূষণ সোম, ধীরেন্দ্র ছেত্রী, রবি দাস, সুধীর ঘোষ, দিলীপ ঘোষ, রবি আচার্যী, চিত্ত দাস, প্রদ্যোত দত্ত, দুর্গা ভূষণ ভট্টাচার্য, ভূপেশ দেব গুপ্ত, দুলাল ঘোষ, রণজিৎ দাস, মাণিক দে, সত্যেন্দ্র দেবনাথ, বিন্দুলাল বৈদ্য , রণজিৎ দেব, অর্জুন দেববর্মা, মিল্টন ঘোষ, রঙ্গলাল দাস এবং নামকরা আরো অনেক । ক্রিকেটে সৌরভ দাশগুপ্ত শুধু ত্রিপুরা পুলিশের নয়, রাজ্যের গর্ব। তিনি রণজি সহ বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কাউন্টিতে খেলা ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন। সাঁতারে জিতেন্দ্র চক্রবর্তী, সুকুমার চ্যাটার্জী, খলিলুর রহমান, ভক্ত দেব, সাধন বৈদ্য ,জগন্নাথ সাহা, অমর বসাক, শঙ্কর দাশ, পদ্ম জমাতিয়া, ধর্মবীর জমাতিয়া সহ অনেক কৃতী সাঁতারু রয়েছে। এথলেটিক সহ বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে ও ত্রিপুরা পুলিশের অসামান্য সফলতা রয়েছে। বর্তমানে, মহিলা ফুটবলে গুল্টি চৌধুরী এবং ক্রিকেটে মৌচেতি দেবনাথ এবং সুলক্ষণা রায়দের নাম সবিশেষ ভাবে উল্ল্যেখ করতে হয়। যাত্রা, নাটক এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মুখ্যভূমিকায় ছিলেন ঠাকুর হৃষীকেশ দেববর্মণ, তদানীন্তন এস, পি, জি, পি, ঘোষ, অমলেন্দু বর্ধন রায় এবং কমল রঞ্জন দাশগুপ্ত (ছবি দাশগুপ্ত)। তাছাড়া,অন্যান্য কৃতী শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন গোপাল মজুমদার, রতন লাল দাস, কামনা নাথ, রতন দেব, শঙ্কর দাস, নির্মল দাস, কেশব চক্রবর্তী, তপন চক্রবর্তী, দেবাশিস চৌধুরী, বাবলী ছেত্রী, সুরেখা পুরকায়স্থ, টগর চক্রবর্তী, ক্ষমা চক্রবর্তী (দে), অর্চনা ভট্টাচার্য, নিলীমা চক্রবর্তী সহ আরো অনেক।

বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ত্রিপুরা পুলিশের ঈর্ষনীয় সাফল্য রয়েছে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে শরণার্থী সমস্যা, ত্রিপুরা সীমান্তে পাক- হানাদারি, নকশাল আন্দোলন, রাজ্যে অর্থনৈতিক- রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৮০ সালের জুন দাঙ্গা, তিন দশকের সশস্ত্র উগ্রপন্থী সমস্যা সহ বিভিন্ন জটিল এবং স্পর্শকাতর সমস্যাগুলো অত্যন্ত বিচক্ষনতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। তিন দশকের সহিংস উগ্রপন্থী সমস্যা দমন এবং রাজ্যের বিশেষ করে উপদ্রুত অঞ্চলে উন্নয়নের কর্ম কাণ্ডে পুলিশ- টি এস আর এর সক্রিয় ও সফল ভুমিকা সারা ভারত বর্ষে ”রোল মডেল” হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারিতে ভারতের মাননীয় উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি “ প্রেসিডেন্টস পুলিশ কালার ” সন্মাননা প্রদান করেন। সারা দেশে এর আগে মাত্র তিনটি রাজ্য এই বিরল সন্মানে ভূষিত হয়েছিল। সাইবার ক্রাইম, সংগঠিত অপরাধ, মাদক পাচার, মাদকাশক্তি সহ অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের চলমান আধুনিক অপরাধ দমনে দৃঢ প্রত্যয়ই হবে দেড়শ বছর পূর্তিতে জনগনের প্রতি ত্রিপুরা পুলিশের দায়বদ্ধতার প্রকৃষ্ট অঙ্গীকার।

উৎস ঃ- ১) দীপক কুমার চৌধুরী সম্পাদিত “এডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টস অবপলিটিক্যাল এজেন্সী, হিল ত্রিপুরা “ ভলিউম ১ এবং ২, ২) মহাদেব চক্রবর্তী সম্পাদিত “ ত্রিপুরা এডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টস , ভলিউম ১ থেকে ৪, ৩) শ্রী দ্বিজেন্দ্রচন্দ্র দত্ত , শ্রী সুপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “রাজগী ত্রিপুরার সরকারী বাংলা” ৪) শ্রী সুপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক সঙ্কলিত ও সম্পাদিত “ ত্রিপুরা ষ্টেট গেজেট সঙ্কলন ( ১৯০৩-১৯৪৯) ৫) বিভিন্ন সরকারী আদেশ এবং তথ্যাদি সংক্রান্ত দলিল দস্তাবেজ সহ অন্যান্য প্রামান্য গ্রন্থাদি। ৫) বিভিন্ন তথ্যাদি সম্বলিত ত্রিপুরার পুলিশের উৎপত্তি, বিকাশ এবং অন্যান্য ইতিহাস ভিত্তিক লেখকের প্রকাশিতব্য বই “ দি ত্রিপুরা পুলিশ থ্রো এজেজ”


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.