।। বৈরীদের আতুরঘরে ।।
অরিন্দম নাথ
অবিভক্ত দক্ষিণ জেলার অম্পি-তৈদু এলাকা ছিল বলতে গেলে বৈরীদের আতুরঘর ৷ প্রতিনিয়ত ওই এলাকায় উগ্রবাদীদের গতিবিধি লেগে থাকত ৷ অথচ, ওই এলাকার লোকদের একটি কৃষ্টি ছিল । সংস্কৃতির ছিল । তারপরও কেন এই বিচ্যুতি ৷ বিষয়টি আমাকে ভাবাত ৷ এর কারণ হয়তো ওই এলাকার জলবায়ু । উগ্রপন্থার উপযোগী টেরেইন । বড়মুড়া এবং আঠারমুড়া পাহিড়শ্রেণীর সঙ্গে অম্পি - তৈদুর নৈকট্য ৷ অম্পি - তৈদু - তেলিয়ামুড়া সড়কের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে সমান্তরালে এই পাহাড় দুইটির অবস্থিতি ৷ এই পাহাড় দুইটিকে ভিত্তি করে উগ্রবাদীরা সমতলে বৈরী কার্যকলাপ চালাত ৷ বৈরী-বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে এই এলাকা আমি চষে বেড়িয়েছি ৷ তৈদু ও অম্পি থানাধীন সোনাছড়া, নবজয়পাড়া, হামপুইলা, মনথাং, রামসাইসিং পাড়া, থলিবাড়ি, দিলুরাম, সিংলুম, পাড়াকাতাল, তুইচাকমা, ভীমপাড়া, লতাহাম, পলকু, ধনলেখা, মেলচি, বৈশ্যমুনিপাড়া, যন্ত্রণাপাড়া, টিলাবাড়ি, ডক্টরসিংপাড়া, ছেচুয়া, রঞ্জিৎ কলোনি প্রভৃতি গ্রামে বিভিন্ন সময়ে যেতে হয়েছে ৷
৬ ই সেপ্টেম্বর ২০০০ সাল ৷ অম্পি থেকে তেলিয়ামুড়া যাবার পথে তৈদু থানাধীন সাত মাইলে একটি জীপ গাড়ি বৈরী হামলার মুখে পড়ে ৷ দুই তিনজন যাত্রী মারা যান ৷ বেশ কয়েকজন যাত্রী অপহৃত হন ৷ তখন বিকেল বেলা ৷ আমি সেদিন উদয়পুর থেকে নতুন বাজার যাচ্ছিলাম ৷ আমরা অমরপুরের কাছাকাছি পৌঁছেছি ৷ তখনই সেই খবর পাই ৷ সেইসব দিনগুলিতে আমার সরকারী জিপসি ছাড়াও দুইটি এসকর্ট গাড়ি থাকত ৷ সঙ্গে খাবার রাঁধার ইউটেনসিল ৷ অনেক সময়ই কয়েকদিন লাগাতর এক জায়গায় ক্যাম্প করতে হত ৷ সবাই মিলে ম্যাস করে খেতাম ৷ জীপের উপর হামলার খবর শুনে গাড়ি ঘুরিয়ে তৈদুতে চললাম ৷ ওয়ারলেসে কিছু আদেশ দিলাম । নিহত এবং আহতদের মধ্যে কয়েকজন ব্যাংক কর্মচারী ছিলেন । অফিস শেষে রোজ আগরতলা ফিরতেন । ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তৈদু থানায় আসি । সঙ্গে এসডিপিও অম্পি উপেন্দ্র বিশ্বাস । বাকিরা ফোর্স নিয়ে বেরিয়েছে । একটু পরে একটি পার্টি থানায় ফিরে আসে । তারাই উগ্রবাদীদের পেছনে ধাওয়া করেছিল । মোট আটজন উপজাতি যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে নিয়ে এসেছিল । তৈদু থানা তখন একটি সেমিপার্মানেন্ট স্ট্রাকচারে রান করত । কোন লকআপ ছিল না । চিড়িয়াখানার পশুদের খাঁচার মত কাঠের বানানো একটি লকাআপ ছিল । আটককৃত লোকদের প্রাথমিকভাবে রাখা হত । এই লোকগুলি স্থানীয় হওয়ায় ছাড়ানোর জন্য চাপ আসতে পারে । এই বিবেচনায় তাদেরকে অম্পি থানাতে স্থানান্তর করা হয় । অম্পি এবং তৈদুর মধ্যে দূরত্ব আনুমানিক সাত আট কিলোমিটার ।
ধৃত লোকদেরকে অম্পিতে নিয়ে আসার একটু পর থেকে স্থানীয় উপজাতি মহিলারা জড়ো হতে শুরু করে ৷ তারপর তৈদু থানা ঘেরাও করে । দুশো তিনশো মহিলা ৷ টিলার উপরে থানা । একপাশে পুলিশের পাশাপাশি সিআরপিএফ ক্যাম্প । এক কোম্পানি সিআরপিএফ থাকত । থানার বড়বাবু ছিলেন যতীন্দ্র চন্দ্র দাস । রুদালী বা কাদুনে টাইপের অফিসার । মহিলারা ধৃতদের দেখতে চায় । তারা বিশ্বাস করে না, ওদেরকে অম্পিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । একজন স্থানীয় জনজাতি নেতা তাদের প্ররোচিত করছিলেন । যতীন্দ্র ওয়ারলেসে বলতে থাকে যে সে বিপন্ন । মহিলারা কেরোসিনের মশাল নিয়ে এসেছিল । তখন রাত্রি আনুমানিক আটটা ৷ আমি অম্পিতে অবস্থান করছি । এসডিপিওও উপেন্দ্রবাবু ভেবে পাচ্ছেন না কি করা যায় । সিআই মায়াজয় রুপিনী ৷ সিআরপিএফের ডেপুটি সিও ছিলেন টপ্পো সাহেব । তাঁকে ডাকলাম । তিনি সিআরপিএফের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন । বললেন পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয় । ওসিকে সেই কথা বললাম । সে আবার কান্নাকাটি শুরু করল । বললাম তার হেফাজতে সিআরপিএফ আছে । প্রয়োজনে লাঠিচার্জ করার জন্য । সে বলল, আরপিএফ তার কথা শুনে না ।
বাধ্য হয়ে ঠিক করি আমরা অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে যাব । কিছু সিআরপিএফ নিই । সঙ্গে আমার এসকর্ট । পিজি । এসডিপিও উপেন্দ্র বিশ্বাস । সিআই মায়াজয় ৷ মহিলা স্টাফ ৷ সিআরপিএফ ডিসিও টপ্পো । এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আনন্দ জমাতিয়া । সে আবার বিডিও অম্পি ৷ রাত্রি আনুমানিক দশটা ৷ প্রথমে সিআরপিএফের বুলেটপ্রুফ গাড়ি ৷ এর পেছনে আমাদের গাড়ি ৷ এভাবে তৈদু থানার কাছাকাছি পৌঁছাই ৷ আনন্দ মহিলাদের সরে যেতে বলে ৷ তারা ভাবতে পারে না বলপ্রয়োগ হবে ৷ সিআরপিএফ প্রথমেই আনন্দের কাছ থেকে লিখিতভাবে বলপ্রয়োগ করার অনুমতি নিয়ে নেয় । এরপর কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাঁটানো হয় ৷ তারপর লাঠিচার্জ শুরু হয় ৷ মুহূর্তে ভিড় ফাঁকা হয়ে যায় ৷ থাকে শুধু কিছু জুতো ৷ কাপড় - চোপড় ৷ অনেকে আহত হয় ৷ এইরূপ রুদালী অফিসারের কারণে জীবনে কয়েকবার নিজেকে অমানবিক হতে হয়েছে ৷ তবে এরপর এনএলএফটি তৈদুতে আর উগ্রবাদী হানার ঘটনা করেনি ৷
পরবর্তী কয়েকদিন আমার অবস্থান হল অম্পি৷ অম্পি থেকে তৈদুর ৷ অম্পিতে থাকার ব্যবস্থা ভালো ৷ আর অম্পি থেকেই বৈরী - বিরোধী অভিযান চালাতে সুবিধা হয় ৷ আমার এই অবস্থান কালে একটি খবর এলো উগ্রবাদীরা অপহৃতদের মেলচিতে রেখেছে ৷ মেলচিতে দিলীপ কলইয়ের খামার বাড়ি আছে ৷ সে একজন আত্মসমর্পণকারী বৈরী ।সবাই বলে দিলীপ কলইয়ের বান্ধ ৷ এখানে বান্ধ অর্থে বুঝানো হচ্ছে বাঁধ দিয়ে তৈরি জলাধার ৷
সুতরাং যাবার পরিকল্পনা করলাম ৷ অম্পিছড়া পেরিয়ে সাধুপাড়া, ধনলেখা, তারপর মেলচি ৷ সোজা পূব থেকে পশ্চিমে ৷ আমরা হিসাব কষে দেখলাম আমাদের যেতে সময় লাগবে ঘন্টা তিনেক ৷ সেই অনুযায়ী রাত্রি একটাতে বেরুলাম ৷ আমাদের সাথে সিআরপিএফ ৷ যেকোনো অভিযানের আগে আমরা সবাইকে একত্রিত করে একটি ব্রিফিং দিই ৷ এই ব্রিফিং এর সময় আমরা কোথায় যাচ্ছি? কেন যাচ্ছি? কতক্ষণ সময় লাগতে পারে? কি কি বিপদ আসতে পারে ? বৈরী দলে কতজন থাকতে পারে ? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর যতটুকু জানি জওয়ানদের অবগত করাই ৷ আবার অভিযানের শেষে ডি-ব্রিফিং নেওয়া হয় ৷ সেদিন রাত্রিতেও অভিযানের আগে এই ব্রিফিং দিতে ভুল করিনি ৷
সম্ভবত: এই ব্রিফিংই কাল হয়েছিল ৷ যাবার সময় লক্ষ্য করলাম সিআরপিএফ বাহিনীর দল বার বার পিছিয়ে পড়ছে ৷ বার বার আছাড়-বিছাড় খাচ্ছে ৷ শব্দ করছে ৷ প্রতিবারই আমার প্রোটেকশনের ছেলেরা সহ, স্থানীয় থানার বড়বাবু ও আমাদের গাইড কিছুটা সামনে গিয়ে তাদের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ছিল ৷ আমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে লোকগুলি ইচ্ছাকৃত এ`টা করছে ৷ আমাদের খারাপ লাগলেও কিছু করতে পারছিলাম না ৷ কারণ যে জায়গায় যাচ্ছি অভিযানের জন্য সিআরপিএফের সাহায্য দরকার ৷ বিশেষত: তাদের ফায়ার পাওয়ারের ৷ ফলে যখন গন্তব্যে পৌঁছলাম তখন প্রায় সকাল ছটা ৷ শীতের শুরু হয়ে গেছে ৷ হালকা কুয়াশা ৷
দিলীপ কলইয়ের বান্ধ বিশাল এলাকা নিয়ে ৷ কমপক্ষে তিনশ থেকে চারশো একর এলাকা ৷ এই লেইককে ঘিরে মেলচি নদীর উৎস-স্রোত পাথরের মধ্যে চিকন অথচ গভীর খাঁদ সৃষ্টি করে বহে চলেছে ৷ সরু গাছের গুড়ির উপর দিয়ে নদী পেরুতে হয় ৷ নিচের দিকে তাকালে ভয় লাগে ৷ উঁচু টিলার উপরই বিরাট একটি লেক ৷ এক পাশে পাহাড়ের ঢালান ৷ গল্ফগ্রীণ ঘাস সুন্দর লনের সৃষ্টি করেছে ৷ দুই তিনটে বিশালাকারের গাইরিং পেলাম ৷ একজন লোকও পেলাম না ৷ প্রায় শ`খানেক গোরুকে দেখলাম চড়ে বেড়াচ্ছে ৷ নিশ্চিত মনে ৷ এদেরকে নদী অতিক্রম করিয়ে এ`পাশটায় আনলো ? সেটাও জানতে পারলাম না ৷ প্রাকৃতিক বাঁধা অতিক্রম করে গোরুগুলির পক্ষে অন্যদিকে যাওয়াও সম্ভব নয় ৷ সব মিলিয়ে এ`যেন রূপকথার রাজত্ব ৷ কোনো ডাইনী জাদুবলে অপহৃত মানুষদেরকে গোরু বানিয়ে আটকে রেখেছে ৷
এই স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে ৷ কাশ্মীরকে যেমন ভূস্বর্গ বলা হয়, তেমনি মেলচিকে তৈদুর তাজ বলা যায় ৷ সেখানকার গল্ফগ্রীণ ঘাস দেখে কম্পিউটার ডেক্সটপের একটি চিরপরিচিত ছবির কথা মনে আসে ৷ যেন ছবিটি সেখান থেকেই নেওয়া ৷ আমি মেলচিতে সেই একবারই গিয়েছি ৷ নামটি সম্ভবত: কাইপেঙ বা কলইদের দেওয়া ৷ মেলচি স্রোতস্বিনীটির সৃষ্টি বড়মুড়া পাহাড় থেকে ৷ পশ্চিম থেকে পূব দিকে প্রবাহিত ৷ সাথের জনপদের নামও মেলচি ৷ স্থানটি পাহাড়ের মাঝামাঝি উচ্চতায় ৷ এর একটু নিচে আরেকটি নদী ৷ তার নাম ধনলেখা ৷ ধনলেখারও উৎপত্তি বড়মুড়া পাহাড় থেকে ৷ একইভাবে পশ্চিম থেকে পূব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে ৷ সবগুলি জলধারা একত্রে মিলিত হয়ে অম্পিছড়ার সৃষ্টি করেছে ৷ অম্পি জনপদের কাছাকাছি এই নদী অম্পি - তৈদু সড়ককে অতিক্রম করে ৷
এই ঘটনার পর যতীন্দ্র দাসের জায়গায় ওসি করা হয় সজল শর্মাকে ৷ আউটস্ট্যান্ডিং অফিসার ৷ মনপাথার ফাঁড়ি থানার ওসি ছিল ৷ বৈরী বিরোধী কাজে সাফল্য দেখানোর জন্য তাকে আউট-অফ-টার্ন প্রমোশন দেওয়া হয় ৷ সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ৷ এরপর উগ্রপন্থীরা আর কোনো ঘটনা করতে পারেনি ৷ সাফল্য বলতে পুলিশের ৷ ডিটিএফের ৷ ভক্ত জমাতিয়ার ৷ ভক্ত ছিল এনএলএফটি উগ্রবাদী ৷ বাড়ি পূর্ব পিলাকে ৷ দেখতে বেঁটেখাটো ৷ বাংলাদেশে বৈরীদের ঘাটিতে ট্রেনিং করেছে ৷ আত্মসমর্পণের পর আমরা তাকে এসপিও হিসেবে নিয়োগ করি ৷ একসময় সে সজল শর্মার শিষ্য হয়ে যায় ৷ সজল তাকে ভীষণ বিশ্বাস করত ৷ তার নিজের নামে ইসু করা একে-৪৭ রাইফেল ভক্তকে দিয়ে রাখত ৷ এই কম্বিনেশন এলাকায় কমপক্ষে চারটি সাফল্য এনে দিয়েছিল ৷
অমরপুর তেলিয়ামুড়া রাস্তার বীরগঞ্জ থানাধীন বাম্পুর এলাকায় ২৬ শে মার্চ ২০০১ সিআরপিএফ আরওপির উপর অ্যাম্বুশ হয় ৷ এনএলএফটি উগ্রবাদীদের কাজ ৷ এগারজন সিআরপিএফ মারা যায় ৷ এই ঘটনায় যুক্ত এক উগ্রবাদী সাধন জমাতিয়া সজলদের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায় ৷ তৈদুর রুপাংরোয়াতে ৷ একটি এসএলআর উদ্ধার হয় ৷
২৬ শে মে ২০০১ রাধাপুরে এসডিপিও জিরানিয়া মনোরঞ্জন দেববর্মা মারা যান ৷ এটিটিএফ উগ্রবাদীরা জড়িত ছিল ৷ একজন উগ্রপন্থীর বাড়ি ছিল তৈদুর সিংলুঙ বাড়িতে আসবে ৷ সজল ভক্ত এবং দুইজন কন্সটেবল নিয়ে অ্যাম্বুশে বসে ৷ ২৯ শে মে তারিখে ৷ তখন সকাল সোয়া নটা ৷ বেশ কিছুটা দূর থেকে বাইনোকুলারে উগ্রবাদীটিকে দেখতে পায় ৷ কাকড়াছড়ার দিক থেকে আসছিল ৷ তার পিঠে পিট্টু ৷ প্যান্টের নীচের দিক গুটানো ৷ বুঝতে পারে নদী ছড়া পেরিয়ে এসেছে ৷ একটু কাছাকাছি এলে আমাদের দল তার পিছু নেয় ৷ সে যখন বুঝতে পারে পুলিশ পিছু নিয়েছে ৷ গ্রেনেড বের করে চার্জ করতে যায় ৷ ভক্ত তার ভবলীলা সাঙ্গ করে ৷ বৈরীটি রাঙলং সম্প্রদায়ের ৷ এমনিভাবে পল্কুতে ২০০১ এর ডিসেম্বরে গয়ামানিক কলই নিহত হয় ৷ একটি কার্বাইন উদ্ধার হয় ৷ আমি দক্ষিণজেলা ছেড়ে আসার পর জানুয়ারিতে বাতাবাড়ি এলাকায় একটি এনকাউন্টার হয় ৷ একজন উগ্রবাদী মারা যায় ৷ এসএলআর উদ্ধার হয় ৷
সেট-ব্যাকও ছিল ৷ তখন অম্পির ওসি নিত্যানন্দ সরকার ৷ একদিন মেলচি এলাকা থেকে অপস করে ফিরছে ৷ সঙ্গে সিআরপিএফ ৷ ফেরার পথে যথারীতি সিআরপিএফ জওয়ানরা আগে আগে ছুটছে ৷ পুলিশ পিছে পিছে ৷ ধনলেখা পৌঁছে গ্রামের একটি দোকানে চা জল খাবার খাচ্ছে ৷ একটি সুবেশ উপজাতি যুবকের সাথে দেখা হয় ৷ পরনে জিনস এবং টি-শার্ট ৷ নিত্যানন্দের সাথে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে ৷ উগ্রপন্থীদের শাপ-শাপান্ত করে ৷ নাম বলে বিশ্বনাথ কলই ৷ বয়স আনুমানিক পঁয়ত্রিশ ৷ বাড়ি তেলিয়ামুড়া থানাধীন রাঙ্খল পাড়া ৷ এখানে নাকি ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে ৷ কথাবার্তা বলে খুশি হয়ে বড়বাবু তাকে থানায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসে ৷ ওকে চা-বিস্কুটও খাওয়ায় ৷ তারা সবে গ্রাম ছেঁড়ে পাঁচ মিনিটের রাস্তা এসেছে ৷ বাই সাইকেলে একটি ছেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে ৷
‘স্যার এতক্ষণ আপনারা যার সাথে কথা বলছিলেন, সে-ই উগ্রপন্থীদের বড় নেতা ৷’
তৎক্ষণাৎ তারা ধনলেখা গ্রামে ফিরে যায় ৷ নিষিদ্ধ ঘোষিত বৈরীদলের স্বঘোষিত ফিনান্স সেক্রেটারি ততক্ষণে বেমালুম হাওয়া ৷