গুটি থেকে করোনা, গত একশত বছরে সাত মহামারী
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভয়াবহ সংকটের মুখে মানব সভ্যতা।তাঁর অস্তিত্ব মূহুর্তে ই উবে যেতে বসেছে। হাজার হাজার লোকের প্রান চলে যাচ্ছে।অথচ নেই যুদ্ধ,মহাযুদ্ধ,প্রলয়,সুনামী।আছে শুধু মহামারী তাও আবার প্লেগ,কলেরা,ম্যালেরিয়া নয়,এ করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যে প্রান গেছে প্রায় তের হাজার আর আক্রান্ত তিন লাখের মত।ভারতে এই মারনব্যাধি পাঁচ জনকে ছিনিয়ে নিয়েছে। ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে তিনশ'জনের
দেহে।আরো যে কতজনের দেহে পাওয়া যাবে এই মারন ভাইরাস তা বলাই যাচ্ছে না।নুতন করে সংক্রমণ রোধে যুদ্ধ কালীন ভাবে ব্যবস্হা গৃহীত হচ্ছে ,আরো প্রক্রিয়া জারী রয়েছে।
এই মারনব্যাধি নিয়ে আগে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ধারণা ই ছিল না।সাধারন সর্দী,কাশি,গায়ে গায়ে জ্বর, অল্পবিস্তর কফ, মাঝেমধ্যে শ্বাসের হালকা কষ্ট হয়েই থাকে।এই সময়ে এই সব রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু এই উপসর্গ মানেই যে করোনা ভাইরাস মারন ব্যাধি তাতো বিজ্ঞানীদের ও জানা ছিল না বা কল্পনার মধ্যে ও ছিল না।এখন করোনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মহামারী।
ইতিমধ্যে করোনা বিশ্বের ১৪০ টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। আরো নতুন নতুন দেশে স্হল,জল,আকাশ পথে বিস্তৃত হচ্ছে। মহাকাশে, চাঁদে ও বিস্তৃত হবে কিনা তা বলবে ভবিষ্যৎ।অবশ্য কপাল ভালো সেখানে মনুষ্য প্রজাপতি নেই।
এই বিশ্ব দেখেছে দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধ,আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ,ইরাক-ইরান যুদ্ধ,ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ,ভারত-চীনের লড়াই,একাওরের বাংলাদেশ যুদ্ধ।আরো বেশ কিছু যুদ্ধ দেখেছে মানব সভ্যতা।বিশ্ব চাক্ষুষ করেছে অগুন্তি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ভয়াবহ বন্যা,সুনামীতে হাজার হাজার লোকের প্রান হানি।
বিশ্ব দেখেছে দূ্ভিক্ষ, মহামারী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্তু করোনারি মত মহামারী বিশ্ব দেখেনি। আজকের এই প্রতিবেদনে বিশ্ব যে সব মহামারী দেখেছে তার কিছু ফিরে দেখা।
শুরুতেই বলে রাখা প্রয়োজন যে এবার করোনা ভাইরাস মারাত্মক ভাবে আক্রমন শুরু করেছে তেমন মারাত্মক গত দুশ বছরে হয়নি।এবার মারাত্মক ভাবে আক্রমন করতে শুরু করেছে করোনা।এর শুরু হয়েছিল কমিউনিষ্ট শাসিত চীন থেকে।তা এখন বিশ্বের ১৪০ র বেশি দেশে।চীন থেকে ও বেশী ভয়ন্কর অবস্থা ইতালির। বহু লোক মারা গেছে ইতালির।এমনকি চীন থেকে বেশী।চী্নে দাপট অনেক কমেছে।করুনা দাপট দেখাচ্ছে এখন ইতালী ও অন্যান্য দেশে।ভ্যাকসিন বের হয়নি তা দিয়ে করুনার সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র মতে অনেক ধরনের ভাইরাসের ভয়ঙ্কর গ্রুপ করোনাভাইরাস।
১৯০০ তে আমরা দেখেছি গুটি। বহুদিন দাপট বজায় রেখেছিল গুটি।উওর আমেরিকা থেকে শুরু হওয়া গুটি বসন্তে প্রায় ৬৩ মিলিয়ন লোকের প্রানহানি হয়েছিলো। উদ্বেগের বিষয় ছিল আক্রান্ত দের মধ্যে ৩০শতাংশের মৃত্যু হয়েছিল।এখন গুটি বসন্ত আর নেই।এটা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ।
১৯১৮ থেকে ১৯২০ স্পানিশ ফ্লু তে৫০০ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হয়েছিল এবং এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন র প্রানহানি হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত প্রানহানি হয়েছিলো তার দ্বিগুণ প্রানহানি হয় স্পানিশ ফ্লুতে।
এর পর থাবা বসাল এশিয়ান ফ্লু।এর সংক্রমণ শুরু হয় ১৯৫৬ তে ।এটা ছিল এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা।চীনেই এর প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ শুরু।চীন থেকে সিঙ্গাপুর।তারপর এদেশ ওদেশে।প্রায় এক মিলিয়নের বেশি প্রান ছিনিয়ে নিয়ে যায় এই এশিয়ান ফ্লু।
এরপর এল ভয়াবহ এইডস।এটা অনেকের জানা আবার নাও জানা থাকতে পারে এইডস প্রথম ধরা পরে ১৮৮১ সালে।এই মারনব্যাধি বিশ্বজুড়ে এমন তান্ডব শুরু করে তা রোধ করা দূস্কর হয়ে পড়ে বিজ্ঞানীদের কাছে।২০১৭ সালেই প্রায় দেড় লক্ষ লোক মারা যায় এইডসের তান্ডবে। আনুমানিক ২৫ মিলিয়ন লোকের জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এইডস। উদ্বেগের বিষয় ছিল শুধু ২০০৪/২০০৫ এ ৩৭ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
এল এবার সোয়াইন ফ্লু ২০০৯ সালে। গবেষণায় দেখা যায় এই ভাইরাস শুকর থেকে মানব দেহে সংক্রামিত হয়। ক্রমশঃ এটি পশু চিকিৎসকদের মধ্যে, কৃষকদের মধ্যে সংক্রামিত হয়।২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এটি মহামারী আকারে প্রকাশ পায়।প্রায় ২০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় সোয়াইন ফ্লু তে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
২০১৪ সালে আবির্ভাব ইবোলার।পশ্চিম আফ্রিকা তে এর ভাইরাস প্রথম দেখা যায়।ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা রং কয়েকটি প্রতিবেশী দেশে।দেখতে না দেখতে প্রায় বার হাজার লোকের প্রান কেড়ে নেয় ভয়ন্কর ইবোলা।
গুটি থেকে শুরু করে এইডস, ইবোলা, এশিয়ান ফ্লু,স্পানিশ ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু গত একশত বছরের বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।এবার বিশ্ব কাঁপছে করোনা ভাইরাসে।
এর সংক্রমণ রোধে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা দিনরাত গবেষণায়। কিন্তু এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, অনিশ্চয়তা র দোলাচলে বিশ্ববাসী।তবে আবিস্কার হবে কোন একদিন , ততদিনে বহু প্রান হয়তো ঝড়ে যেতে পারে।
তবে চীনে সম্ভবত এখন প্রকোপ অনেকটা কম।তবে চীন করোনার বিষয়টি প্রথমদিন থেকেই গোপন রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চীনের প্রতিবেশী তাইওয়ান। ছোট্ট দেশ হয়েও তাইওয়ান প্রথমদিকেই করোনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। শুধু সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যদিয়েই তাইওয়ান এই সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।