কিউবার নির্বাসিত কবি ঔপন্যাসিক
শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ
কিউবা, ল্যাতিন অ্যামেরিকা’র স্বনামধন্য কবি ঔপন্যাসিক Rafael Vilches Proenza আমার সুহৃদ। ১০ ডিসেম্বর ছিল তাঁর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে সারা বিশ্বের অগণিত পাঠকের শুভেচ্ছায় তিনি অভিনন্দিত হয়েছেন। জনগণের ভালোবাসায় তিনি ধন্য হলেও কিউবার একনায়কতন্ত্রী শাসকের নিষ্পেষণে দিন কাটছে তাঁর। এখন মাদ্রিদ, স্পেনে কাটছে তাঁর নির্বাসিত দিনগুলি। দেশে ফিরতে পারছেন না। কী তাঁর অপরাধ ? অপরাধ এই যে, তিনি কিউবার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর দেশ এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদে মুখরিত হয়েছেন। সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ কিউবানদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবীতে। কিউবায় রাজনৈতিক ভাবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের UMAP (Military Units to Aid Production) নামে পরিচিত কুখ্যাত শ্রম শিবিরে জবরদস্তি বন্দী করে রাখার বিরুদ্ধে লিখেছেন উপন্যাস ‘’রেড ইনক্যুইজিশন’’ । এতে রুষ্ট হয়েছে কিউবার কম্যুনিস্ট শাসক। প্রতিবাদী এই লেখকের কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রকাশ করেছে Primigenios, Bridge a la Vista Editions এবং Iliada Editions’র মতো খ্যাত বেসরকারি প্রকাশন সংস্থা। মাদ্রিদে আজ প্রায় অন্তরীণ অবস্থায় দিন কাটছে তাঁর। একজন ভারতীয় কবি সাহিত্যিক হিসেবে আমি কিউবার শাসকের এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা করছি। উল্লেখ্য, গত দেড় দশকে লক্ষণীয় ভাবে কবি সাহিত্যিকদের ওপর স্টেট অর্থাৎ রাষ্ট্র আর নন স্টেট অ্যাক্টর মানে মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন সব সংগঠনের নিষ্পেষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়টি প্রত্যেক সৃজনশীল ব্যক্তির অবহিত থাকা উচিত। ঈর্ষা আর দ্বেষ জনিত কারণে অনেক সময় কবি সাহিত্যিকদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব কিম্বা রেষারেষি হয়। ব্যক্তি আক্রমণ অথবা নিন্দিত করার অপচেষ্টা করলেও এতে উদ্দিষ্ট সৃজনশীল ব্যক্তির কোনও ক্ষতি হয় না। এদিকে রাষ্ট্র কিম্বা মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি কবি সাহিত্যিকের মতো সৃজনশীল ব্যক্তিকে নিশানায় বিদ্ধ করে যখন তা তাঁর লেখনীর তীক্ষ্ণতাকেই প্রমাণ করে। রাষ্ট্র কিম্বা মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি বেছে বেছে ওইসব কবি সাহিত্যিকদেরই আঘাত করে যাঁদের তারা হুমকি স্বরূপ মনে করে। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের । সলমান রুশদি’র ওপর, দেখলাম, ভয়ংকর প্রাণঘাতী হামলা হল। তার আগে দেখলাম আমাদের দেশে হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলে নিহত হয়েছেন এম এম কলবুরগি এবং গৌরী লঙ্কেশের মতো লেখক। মুসলিম মৌলবাদীদের প্রবল চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী সরকার তসলিমা নাসরিন’কে আশ্রয় কিম্বা নিরাপত্তা দিতে অপারক ছিল। না পসন্দ এমন ভিন্ন মত প্রকাশ করলেই ডান কিম্বা বাম - সবাই কবি সাহিত্যিকের ওপর রুষ্ট হয়ে উঠে। এই অভিজ্ঞতা আমারও একাধিকবার হয়েছে বলে আমি এর যন্ত্রণা বুঝি। হাসি মুখে হলেও আজ কী অবস্থার মধ্যে Rafael Vilches Proenza দিন কাটাচ্ছেন তা উপলদ্ধি করতে পারি। সুদিন একদিন আসবেই । কবি সাহিত্যিকেরা তো প্রমিথিউস। নিজের রক্ত দিয়েও সোনালী ভোরের আবাহনী বার্তায় সব সময় উন্মুখ থাকেন। Rafael Vilches Proenza‘র প্রতি রইল আমার অশেষ শুভেচ্ছা। পরিশেষে, Rafael Vilches Proenza'কে এই কথাই বলতে চাইছি যে বাংলায় লিখলাম যাতে আপনার কথা বঙ্গভাষী পাঠকেরাও জানতে পারেন। আর আশা করি অনুবাদকের সহায়তায় আপনি আমার এই লেখাটি স্পেনীয় ভাষাতেও পড়তে পারবেন। ভালো থাকবেন সুহৃদ।