ক্যুইজ জ্ঞান অর্জনের উপায় হলেও, এটা স্ব-উন্নতির একটি হাতিয়ারও
সুদীপ নাথ
অনুসন্ধিৎসা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। অনুসন্ধিৎসার উপর ভর করেই মানব সমাজ এতদূর এগিয়ে এসেছে। এই অনুসন্ধানী মনোবৃত্তিই মানুষকে জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এই অনুপ্রেরণা থেকেই সৃষ্ট হয়েছে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে বিগত আঠার বছর ধরে ত্রিপুরাইনফো ডটকমের কুইজের আসর বসছে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাতে। করোনা সময়ে সামান্য অসুবিধার সম্মুখীন হলেও, তা থেমে নেই। এবারও পুনরোদ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রিপুরার সর্বজনবিদিত এই ক্যুইজ উৎসব।
ক্যুইজ অনুষ্ঠান মজা করার একটি দুর্দান্ত উপায় হলেও, এটা স্ব-উন্নতির জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যুইজ থেকে নিজের সম্পর্কে আরও বিষদ জানতে এবং অন্যরা আপনাকে কীভাবে দেখে তা জানতে সাহায্য করতে পারে। একদিকে ক্যুইজ স্পোর্টিং স্পিরিট সৃষ্টির হিসাবেও অনবদ্য। অংশগ্রহণকারীরা পৃথকভাবে বা দলে সঠিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রতিযোগিতার চর্চা তথা প্র্যাকটিস একটি চমৎকার উপায়। দ্রুত মাথা খেলানোর সবচাইতে উৎকৃষ্ট মানের উপায় হচ্ছে ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ। দ্রুত মাথা খেলানো হচ্ছে, বুদ্ধিমত্তা বিকাশের অন্যতম প্রধান একটি শর্ত। পরীক্ষার হলে ছাত্র-ছাত্রীরা এটা হাড়ে হাড়ে টের পায়। তাছাড়া, তাদের কুইজের জন্য দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়, যাতে তারা তাদের দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা বিকাশ করতে পারে, একতার মহামূল্যবান দিকটির প্রয়োজন উন্মোচিত হয়। এখানেও শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে, শ্রেণীকক্ষের বাইরে সফল হওয়ার সম্ভাবনার সন্ধান করতে পারে এবং নগদ পুরস্কার বা রাতারাতি খ্যাতির জন্য প্রতিযোগিতা করার পরিবর্তে তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারে, যার কোনো তুলনা নেই।
ক্যুইজে অংশগ্রহণ, দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কারণ এই পরীক্ষাগুলি ইতিমধ্যে অর্জিত জ্ঞান স্মরণ করতে সাহায্য করে৷ এইভাবে কুইজ ছাত্রদের তাদের স্মৃতি শক্তির দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। সময়ের সাথে সাথে প্রায়ই প্রাপ্ত তথ্য ভবিষ্যতে পুনরুদ্ধার করা সহজ হয়। এই কারণে কুইজ জ্ঞান ধারণ করার জন্য প্রচুর সম্ভাবনার সুযোগ সম্প্রসারিত করে।
ত্রিপুরাইনফো ডটকম আয়োজিত ১৮তম অল ত্রিপুরা মেগা ক্যুইজ অনুষ্ঠান এবছর ১২ই নভেম্বর রবিবার রাজধানী আগরতলার টাউন হলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠান হবে অবাধ ও প্রতি টিমে দুই জন করে এবছর তিনশত প্রতিযোগী টিম অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু উদ্দোগতাদের মতে এবার প্রতিজোগী টিমের সংখ্যাটা বাড়তে পারে। তবে রেজিস্ট্রেশান হবে "আগে আসলে আগে পাবেন” নিয়মের এর ভিত্তিতে। নাম নথিভুক্ত করতে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসাবে প্রতি টিমকে কুড়ি টাকা করে দিতে হবে। ১০ই নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অনলাইনে ত্রিপুরাইনফো-র ওয়েবসাইটে ভিজিট করে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। অফলাইনে রেজিস্ট্রেশানের জন্যে প্রতিযোগীদের ত্রিপুরাইনফো-র রাজধানীর লিচুবাগান কিংবা অফিস টাইমে সংস্থার পোস্ট অফিস চৌমুহনি অফিসে আসতে হবে। ১২ই নভেম্বর সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর টাউন হলে স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
এবছর প্রথম পুরস্কার হিসাবে থাকছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার ও তৃতীয় পুরস্কার হিসাবে নগদ ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক আকর্ষণীয় বিভিন্ন পুরস্কার। এবারও কুইজের মূল আকর্ষণ হিসাবে স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ দর্শকদের জন্য থাকছে কুইজের একাধিক বিশেষ অডিয়েন্স রাউন্ড। সেরা অডিয়েন্সের জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। দর্শক আসনে বসে ছাত্রছাত্রীসহ যে কেউ দিনভর অডিয়েন্স রাউন্ডে অংশ নিতে পারবেন। অডিয়েন্স রাউন্ডে যারা অংশ নিতে চান তাদের কোন রকম রেজিস্ট্রেশানের প্রয়োজন নেই। যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন তাদেরকে সকাল দশটার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। আর যারা অডিয়েন্স রাউন্ডে অংশ নিতে চান তাদের সাড়ে দশটার পর স্ক্রিনিং টেস্ট শেষ হয়ে গেলে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
মূল প্রতিযোগিতার জন্য যারাই বাছাই হবেন তাদের দুপুরের খাবার টাউন হলে উদ্যোক্তাদের তরফে প্রদান করা হবে। অন্যদের চা, কফি ও স্নেকস প্রদান করা হবে। যারা মূল প্রতিযোগিতার জন্য বাছাই হবেন না তারা অডিয়েন্স রাউন্ডে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। অডিয়েন্স রাউন্ডে দুইশতাধিক আকর্ষণীয় বিভিন্ন পুরস্কার থাকবে। বিভিন্ন ক্লাস ও বয়সের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একাধিক বিশেষ অডিয়েন্স রাউন্ড থাকবে। অডিয়েন্স রাউন্ডে সবচেয়ে বেশী পুরস্কার বিজেতাকে নগদ পাচ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। তাছাড়া অডিয়েন্স রাউন্ডে যেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে বেশী পুরস্কার জিতবে সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নগদ দশ হাজার টাকা বিশেষ পুরস্কার পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা এবছর প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
মৃদুভাষী ভদ্রলোক, অভিজিৎ ভট্টাচার্য যিনি বেশিরভাগ মানুষের কাছে 'অভিজিৎ স্যার' নামে পরিচিত, এই বছরও তাকে অন্যান্য কুইজমাস্টারদের সাথে ত্রিপুরাইনফো-র মেগা কুইজের আসরে দেখা যাবে যিনি ২০০৬ সাল থেকে ত্রিপুরাইনফো মেগা কুইজে একজন কুইজমাস্টার হিসেবে যুক্ত আছেন। একই রকম ভাবে প্রতি বছরের মত এই বছরের ত্রিপুরাইনফো-র মেগা কুইজের আসরে কুইজ মাস্টার হিসাবে দেখা যাবে নন্দু কুমার পানিকারকে, যিনি ত্রিপুরা সরকারের পরিকল্পনা দপ্তরের একজন দক্ষ অফিসার। এবং ২০১০ সাল থেকে ত্রিপুরাইনফো মেগা কুইজে একজন কুইজমাস্টার হিসেবে যুক্ত আছেন।
মাত্র ১১ বছর বয়সী কুইজ মাস্টার মধুজা দেবনাথ, যিনি আগরতলার অক্সিলিয়াম গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, এবছরও মেগা কুইজ প্রোগ্রামের তিনজন কুইজ মাস্টারের একজন হবেন। ত্রিপুরাইনফো মেগা কুইজ টিমের কনিষ্ঠতম একজন গর্বিত সদস্য, মধুজা জনপ্রিয়ভাবে 'মাহি' নামে পরিচিত, যিনি গত ৩ বছর ধরে ত্রিপুরাইনফো মেগা কুইজের আসরে ছোট হয়েও বড়দের জন্যও নানারকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আসছেন।
আগরতলার সৌরমিতা ভৌমিক, বর্তমানে এনআইটি আগরতলা থেকে এম টেক সিএসই-এর ছাত্রী এবং একজন পেশাদার অ্যাঙ্কর ত্রিপুরাইনফো-এর ১৮ তম ওপেন মেগা কুইজ প্রোগ্রামের দুই উপস্থাপক বা অ্যাঙ্করের একজন হবেন৷ সৌরমিতা সম্প্রতি প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ল্যান্স ক্লুজেনারের উপস্থিতিতে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর একটি ইভেন্টে উপস্থাপক বা অ্যাঙ্করের দায়িত্ত পালন করেছেন। আগরতলার আরেক উপস্থাপক সুভাশিস কর এবছর ত্রিপুরাইনফো-র মেগা কুইজের আসরে উপস্থাপক বা অ্যাঙ্কর হিসেবে থাকবেন। (লেখক একজন ফ্রিলেন্স সাংবাদিক)