বিশ্বসেবাধারী ব্রহ্মাকুমারী রাজযোগিনী কবিতা দিদিজীর মহাপ্রয়াণ

দীপক চক্রবর্তী

বিশ্ব নবনির্মাণের স্থপতি, সর্বশক্তিমান পরমপিতা পরমাত্মার সর্ব-পরিকল্পনায় সহযোগী, সবার অতি প্রিয়, প্রভুপ্রিয় ব্রহ্মাকুমারী রাজযোগিনী কবিতা দিদিজী আজ ২২.০৯.২০২৩ ইং রোজ শুক্রবার সকাল ৭.০০টায় এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করে সর্বশক্তিমান সর্বকল্যাণকারী ঈশ্বরের কোলে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

ব্রহ্মাকুমারী কবিতা দিদিজী ১৯৬৮ সালে ২২শে মার্চ আসামের তেজপুর শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতা উভয়েই ছিলেন শিক্ষক। কবিতা দিদি ছিলেন তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। লেখাপড়ায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ভূগোল বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পাশাপাশি তিনি মূল্যবোধ শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর এক ভাই মাউন্ট আবুস্থিত ব্রহ্মাকুমারীজ সংস্থা দ্বারা পরিচালিত গ্লোবাল হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সবার ছোট ভাই ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে কর্মরত।

১৯৭৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তেজপুরেই ঈশ্বরীয় জ্ঞানে আলোকিত হন কবিতা দিদিজী। উনি তাঁর লৌকিক মাতা তিলোত্তমা দেবীর প্রেরণায় প্রথাগত পড়াশুনার সাথে সাথে আধ্যাত্মিক পড়াশুনা ও ঈশ্বরীয় সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি সর্বক্ষণের সেবাধারী হিসাবে বিশ্বসেবার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ত্রিপুরায় উনার পদার্পণ হয় ১৯৯৫ সালের প্রথম দিকে। ঐ বছর থেকেই ত্রিপুরায় স্থায়ীভাবে ঈশ্বরীয় সেবা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে ১৪ই মে কবিতা দিদিজী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরীয় সেবাযজ্ঞে সমর্পণ করেন। প্রথম প্রথম নেশামুক্তি, স্বাস্থ্যশিবির, স্বচ্ছতা অভিযান ইত্যাদির মাধ্যমে সেবা শুরু করে চরিত্রগঠন, আধ্যাত্মিক মানোন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে মানবমনের পরিপূর্ণ বিকাশে প্রয়াসী হন। তাঁর প্রেরণায় এই সেবার কাজ ত্রিপুরার প্রায় সর্বত্র প্রসারিত হয়। এই প্রয়াস ত্রিপুরার সাথে সাথে বাংলাদেশেও উনার সফল পরিচালনায় বিস্তার লাভ করে। আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আলোকে নিজেদের আলোকিত করে সুন্দর, সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে সমাজকে কলুষতামুক্ত করে চলেছেন। ব্যক্তিজীবনে ব্রহ্মাকুমারী কবিতা দিদিজী ছিলেন অমায়িক, মিষ্টভাষী, স্নেহপ্রবণ এবং সকলের কল্যাণ কামনায় ব্রতী। দিদিজীর সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন সকলেই উনার মধ্যে অলৌকিকতার অনুভব করতেন। উনার উপস্থিতিতে শান্তির বাতাবরণ অনুভূত হতো। সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের সাথে খুব ভালো যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অভিমানশূন্য, দরদী এবং দাম্ভিকতা-বর্জিত। তাঁর মধুর বাক্য ছোট-বড় সবাইকে এক অলৌকিক সম্বন্ধের বন্ধনে আবদ্ধ করতো। তিনি ছিলেন সত্যিকারের পবিত্রতার প্রতিমূর্তি। মন, বচন, কর্ম এবং সম্বন্ধ-সম্পর্কে তাঁর পবিত্রতা ছিল প্রশ্নাতীত। ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ ছাড়াও আসাম, মণিপুর এবং মায়ানমারেও তিনি ঈশ্বরীয় সেবা প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্বের ১৭টি দেশেও এই সেবা বিস্তারের কাজে যুক্ত ছিলেন। উনার মাতৃভাষা ‘নেপালী' ছাড়া তিনি আরও ৬টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। আজকের এই অবক্ষয়ের যুগে তাঁর প্রেরণায় হাজার হাজার যুবক-যুবতী শ্রেষ্ঠ জীবন-নির্মাণে নিজেদের নিয়োজিত করে সুস্থ সমাজ গঠনে ব্রতী হয়েছেন।

শ্রদ্ধেয়া দিদিজী তাঁর জীবনকে ঈশ্বরীয় গুণে আলোকিত করেছেন ব্রহ্মাকুমারীজ সংস্থার সান্নিধ্যে এসে। তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশ হয়েছে এই সংস্থার সংস্পর্শে এসে, যেখানে জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নীচু, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার আত্মিক পরিচয়ই শুধু বিচার্য। এই সংস্থা সমাজের সর্বস্তরের মানোন্নয়নে সদা সচেষ্ট রয়েছে।

আজ ব্রহ্মাকুমারী রাজযোগিনী কবিতা দিদিজী আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর আরব্ধ কাজ সমাপণের জন্য তিনি রেখে গেছেন অগণিত গুণমুগ্ধ ভাইবোনদের। তাঁর অফুরন্ত শুভভাবনা, শুভ কামনা আজ লক্ষ লক্ষ লোকের প্রেরণাস্রোত।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.