মুখ্যমন্ত্রীর তিন রাতের পায়ে হাটা সফরে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে রাজধানী আগরতলার পুলিশ
প্রদীপ চক্রবর্তী
পরপর তিনদিন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব রাতের রাজধানীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই তিন রাতে রাতের আগরতলার হালফিল দেখে মুখ্যমন্ত্রী অনেকটাই বিষ্মিত। ক্ষুব্ধও হয়েছেন তিনি। তারপর প্রকাশ্যেই তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিট কনষ্টেবলদের ভুমিকা মুখ্যমন্ত্রী কে বিষ্মিত করেছে। যদিও তিনি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক কেননা, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর অঞ্চল রাতে অরক্ষিত থাকছে। অন্যথায় কিভাবে রাত এগারোটা নাগাদ ৫জন যুবক বিধানসভা ও সচিবালয় এলাকায় গাড়ীতে বসে অসামাজিক কার্যকলাপ এ লিপ্ত থাকে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসা মাএ পুলিশ ব্যবস্হা গ্রহনে বাধ্য হয়। ওই সময় কোন বিট কনষ্টেবলদের দেখা যায়নি অন্তত মুখ্যমন্ত্রী দেখতে পাননি।
বিট কনষ্টেবলদের ভুমিকা যে সিম্বলিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনি যেদিকেই যাবেন সেদিকে ওদের পাবেন না। তবে মাঝে মধ্যে এদের পাওয়া যায় মহারাজগন্জ, গাঙাইল, বাঁধ, বটতলার সংযোগ স্হলে। ভোরে এরা ঘাপটি মেরে এদিক ওদিক বসে থাকে। দেখা যায় ভোরে এদের মোবাইলে কথা বলতে। চলার পথে, হাঁটতে হাঁটতে শোনা যায় মোবাইলে রফা করতে। রফার পরই এরা চলে যায়। এরপর? একের পর এক মিনি ট্রাক দ্রূত গতিতে ছুটতে থাকে বটতলার ফ্লাইওভারের দিকে। রাতের রাজধানীর হালফিল চিত্র সিরিয়ালে এই প্রতিবেদক সবিস্তারে তুলে ধরেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো স্মার্ট সিটির শত শত সিসি ক্যামেরার সামনে দিয়েই রাতের আধারে রাজধানীর সচিবালয় থেকে এক কিমি ব্যাসার্ধের এলাকা লিচুবাগান, দুর্জয়নগর, গান্ধীগ্রাম, শালবাগান, নতুন নগর প্রভৃতি এলাকায় গত ক’মাসে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। খোদ ত্রিপুরাইনফর লিচুবাগান অফিসের সামনে থেকে সিসি ক্যামেরার সামনে থেকে চোরের দল আড়াই লক্ষাধিক টাকার লোহার রড নিয়ে চলে গেছে। পুলিশ এখনো চোরদের ধরতে পারেনি। শুধু তাই নয়, দুর্জয়নগর ও গান্ধীগ্রাম এলাকা থেকে রাতের আঁধারে চোরেরা ক্যান্টার ট্রাকে করে গরু পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তখন কোথায় থাকে শহরের নাকার পুলিশ কিংবা বিট প্যাট্রলিং পার্টি- স্বভাবতই এই প্রশ্ন উঠেছে।
অথচ প্রচুর টাকা খরচ করে শতাধিক বাইক কেনা হল, আনুষ্ঠানিক ভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হল। তারপর পুলিশের একাংশ,যারা বিট কনষ্টেবলদের দায়িত্বে তাঁরা তো নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে, আর হপ্তা তুলছে। পদে পদে মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে। এই যে রাঙাছড়ায় এক যুবতীকে তুলে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তখন বিট পুলিশের কি ভূমিকা ছিল? এরা সক্রিয় থাকলে তো এমন নৃশংসতা হত না। যদিও সিধাই থানার ভূমিকা ছিল আরো অবাক করার মতো। এরা সক্রিয় থাকলে,বা মোবাইল ট্র্যাকিং করে অকুস্হলে পৌঁছতে পারত। তাহলে এমন বিভৎস ঘটনা ঘটতেই পারত না। এক যুবককে এরা গ্রেপ্তার করেছে, এটাই সিধাই পুলিশের তথাকথিত সাফল্য।
এই যে বিট কনষ্টেবল এদের শুধু মাস মাইনে দেয়া হচ্ছে আর তেলের টাকা দেয়া হচ্ছে। ফলাফল শুন্য। এরা ডিম্ব প্রসব করছে। সন্ধার দিকে এদের বিট কনষ্টেবলদের বটতলা, অভয়নগর, গোলবাজার, লেইক চৌমুহনী এলাকায় মদের আড্ডার আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো শুধু একটি অংশ সফর করেছেন, দেখেছেন রাতের আগরতলা, আর তাতেই উনার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার অবস্থা। বাকী অংশ যদি তিনি দেখেন, যেমনটা করতেন রাজ্যের পূর্বতন প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্তা। এতে অনেক উপকৃত হয়েছেন রাজধানীবাসী। মুখ্যমন্ত্রীর তিন রাতের সফরে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে পুলিশ।