পুতুল নাটক 'ছাত্রের পরীক্ষা' ও 'একটি মোরগের কাহিনী'------
নারায়ণ দেব
আগষ্ট মাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ান ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিন। গত ২৭ আগষ্ট, ২০২৩ ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের ক্ষুদে শিল্পীরা আমাদের হৃদয়ের এই দুই কবিকে শ্রদ্ধা জানালো দু'টি পুতুল নাটকের মাধ্যমে। প্রথমটি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' ছাত্রের পরীক্ষা' এবং দ্বিতীয়টি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ' একটি মোরগের কাহিনী'।
পুতুল নাচ হ'ল থিয়েটার বা পারফরম্যান্সের একটি রূপ যেখানে পুতুলের মাধ্যমে কাহিনী বলা হয়। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় পাপেট শো বা পাপেট থিয়েটার। এটি লোক নাট্যের একটি প্রাচীন মাধ্যম। এক সময় আবাল বৃদ্ধ বনিতার বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনে পুতুল নাচের একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল। বর্তমানে এই শিল্পটি লুপ্ত প্রায়। ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটার বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে এই শিল্পটিকে পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিরলস ভাবে। শুধু তাই নয় পুতুল নাটককে নিয়ে করে চলেছে পরীক্ষা নিরিক্ষা। কিভাবে এই মাধ্যমকে আরও উন্নত আরও সুন্দর ভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা যায়। পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে জানুয়ারি মাসের চতুর্থ রবিবার থেকে প্রতি মাসের চতুর্থ রবিবার নেতাজী চৌমুহুনিস্থিত হরিপদ দাস স্পেস থিয়েটার (রূফ টপ) এর মঞ্চে সংস্থার ক্ষুদে শিল্পীরা পরিবেশন করে চলেছে একের পর এক মন ভালো করা পুতুল নাটক। ছোটদের মাধ্যমে পুতুল নাটক পরিবেশন করার এই প্রথাটি প্রথম চালু করল ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারই। এর আগে সমস্ত পুতুল নাটকই উপস্থাপন করত বড়রা। এ এক অভিনব প্রচেষ্টা।
এ দিন প্রথম পুতুল নাটক ছাত্রের পরীক্ষাতেও ছিল নতুনত্বের ছাপ। পুতুল নাচিয়েরা গলায় ঝুলিয়ে নিল পুতুল গুলো, অর্থাৎ শরীরটা পুতুলের আর মাথাটা মানুষের। কথা বলছে মানুষ, হাত পা নারছে পুতুল। অসম্ভব সুন্দর পরিবেশনা। আর তাছাড়া বিষয় বস্তুও প্রাসঙ্গিক। যেখানে ছাত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে অভিভাবক। উল্টাে পাল্টা উত্তর দিচ্ছে ছাত্র। এ যেন বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ব্যঙ্গ করছে।
দ্বিতীয় নাটক 'একটি মোরগের কাহিনী'। একটি মোরগের কাহিনী প্রতিদিন আরেকটু ভালো ভাবে গরীব মানুষের বেঁচে থাকার প্রবল আকঙ্খা, এবং শেষ পর্যন্ত এই সমাজের নোংরা নিয়মে পিষ্ট হয়ে করুন পরিণতি বরণ কর। খাবারের খোঁজে এসে নিজেই খাবার হয়ে যায় মোরগটি। এ যেন প্রত্যেক শোষিত মানুষের কথা। অসম্ভব সুন্দর পুতুল চালনা। পুরু নাটকটি শুধুমাত্র লো ভলিউমে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, আর মোরগের ডাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুতুলের মুখে কোন সংলাপ ছিল না। তবু পুরো কাহিনীটা বুঝতে এতটুকুও অসুবিধা হয় নি। ছোট্ট কচি- কাচাদেরে পাশাপাশি বড়রাও প্রান ভড়ে উপভোগ করে পুতুল নাটক দু'টি। পুতুল নাটক দেখতে দেখতে টি,ভি ও মোবাইলের মোহ জাল কেটে ছোট্টরা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। এদিনের শো দেখতে প্রচুর ভীড় হয়েছিল। বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তরা দ্বিতীয় শো'র ব্যবস্থা করেছিল। পাপেট নিঁখুত ভাবে পরিচালনা থেকে শুরু করে পাপেট তৈরী এবং সঙ্গীত সবটাই করেছে ক্ষুদে শিল্পী সুহানা গোস্বামী, অর্কদ্যুতি দেবরায়,অদ্রিজা দে, কিঞ্জল ভট্টাচার্য, তৎসম সরকার ও আভেরী দাম। আলোক সম্পাতে ছিলেন বিশিষ্ট আলোক শিল্পী প্রদীপ দাস। এমন একটি মনোরম সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের প্রতি রইল এক আকাশ শুভেচ্ছা।