ড্রাগস রুখতে সরকারি হঠকারিতায় সিরিঞ্জের হাহাকার, ইনস্যুলিন-নির্ভর ডায়াবিটিস রোগীরা ঘোর বিপাকে !

সমীর ধর

এ যেন রবিঠাকুরের জুতা-আবিষ্কারের কাহিনি! পায়ে ধুলো লাগা বন্ধ করতে মন্ত্রী-মোসায়েবদের বুদ্ধিতে ঝাঁটা মেরে গোটা রাজ্য ধুলোতে অন্ধকার করা, অথবা চামড়া দিয়ে খেত-মাটি ঢেকে দিয়ে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনা ! ড্রাগাসক্তি রুখতে ত্রিপুরা সরকার সিরিঞ্জ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ফল হয়েছে উল্টো। সিরিঞ্জ বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছে ওষুধের সব রিটেল সপ। গুরুতর সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছেন ইনস্যুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিস রোগীরা।

কনভেনশনাল ভায়াল থেকে হিউম্যান মিক্সটার্ড বা হিউম্যান অ্যাকট্রাপিড জাতীয় ইনস্যুলিন প্রতি বেলায় খাওয়ার আগে ইনজেকশনের মাধ্যমে যাঁদের নিতে হয়, তাঁরা কী করবেন,কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। বিক্রেতারা জানালেন, ড্রাগ ইনসপেক্টরের অফিস থেকে প্রতিটি দোকানে একটা করে খাতা দিয়ে বলা হয়েছে, কার কাছে সিরিঞ্জ বিক্রি করা হচ্ছে, তার নাম ধাম ফোন নম্বর, ক্রেতাটি কেন সিরিঞ্জ কিনছে, কোন্ ধরনের সিরিঞ্জ কিনছে ইত্যাদি সমস্ত কিছু লিখে রাখতে হবে। ড্রাগ ইনসপেক্টর অফিসে এই খাতা নিয়ে নিয়মিত চেক করিয়ে আনতে হবে! এই অতিরিক্ত কাজের বোঝা এড়াতে রাজধানী শহরের ওষুধের দোকানের মালিকরা কোনো ধরনের সিরিঞ্জ রাখাই বন্ধ করে দিয়েছেন। বটতলার বড় ফার্মেসি জানালো, ঝামেলা এড়াতে মজুত থাকা প্রচুর সিরিঞ্জ তারা নষ্ট করে ফেলেছেন। কামান চৌমুহনির এক বড় দোকানের মালিকের সাফ কথা, দেখছেন তো ভিড় সামাল দিয়ে ওষুধ দিতেই এতোজন কর্মচারী হিমসিম খাচ্ছে। খাতা লিখবে কখন ! তার চেয়ে সিরিঞ্জ বিক্রিই বন্ধ। মালই তুলছি না। আরএমএস চৌমুহনির এক দোকানদার সোজা হাসপাতাল দেখিয়ে দিলেন। বললেন, ওখানেই ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হবে। তার মানে দোকানে গিয়ে আর কোনও ইনজেকশন নেওয়া যাবে না। টক্সাইড বা টিটেনাসের ডোজও নয় ! খয়েরপুরের এক বিক্রেতা যা বললেন, তাতে 'সহায়িকা (অর্থ বই) কিনলেই পাঠ্যবই মিলবে'-র অতীত ইতিহাস মনে পড়ে গেল ! তাঁর কথায়, ইনস্যুলিন কিনলেই সিরিঞ্জ কিনতে পারবেন। নইলে হবে না।

এবারে শুনুন বাধারঘাটের এক ডায়াবেটিস রোগীর অভিজ্ঞতা। তিনি দিনে ৪ বার ইনস্যুলিন নেন। তিন বার সিরিঞ্জের, আর রাতে খাওয়ার পর পেন-এ ল্যান্টাসের ডোজ। ২০% ছাড় পান বলে ইনস্যুলিন-সহ সব ওষুধ আনেন অন-লাইনে। সিরিঞ্জ স্থানীয়ভাবে কিনতে হয়। ফুরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সিরিঞ্জ কিনতে সারা শহর চষে ফেলেন। কোথাও কোনো দোকানে সিরিঞ্জ নেই ! নেই তো নেই ,কোথায় মিলবে তা-ও কেউ বলছে না। জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। ড্রাগ পাচার বন্ধ হোক, ড্রাগের কবল থেকে নতুন প্রজন্ম রক্ষা পাক তিনিও সর্বান্তকরণে চান। কিন্তু সেটা কি ইনস্যুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের মেরে ফেলার বিনিময়ে ? চিকিত্সক মুখ্যমন্ত্রীর সরকার এমন একটা অপরিণামদর্শী হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ৬৫-ঊর্দ্ধ ওই ভদ্রলোক। বিশেষত,

এই অবস্থা সম্পর্কে আগে কিছুই জানা না থাকায় তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। ইনজেকশন ছাড়া রাতে খাবেন কী করে ? না খেলে শুগার ফল্ করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে। উপায়ান্তর না দেখে আত্মীয় বন্ধু দের ফোন করতে লাগলেন। শেষে এক আত্মীয় খয়েরপুর থেকে দুটি সিরিঞ্জ জোগাড় করে বাধারঘাট দিয়ে এলেন। অবিলম্বে এই সমস্যা সমাধানে সরকার বিশেষ করে মাননীয় চিকিত্সক মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ( লেখক একজন প্রবীণ সাংবাদিক )


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.