কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ত্রিপুরার দুর্বল লজিস্টিক্স ম্যানেজম্যান্টে উদ্বেগে খোদ চিকিৎসা মহল, সতর্কতাই আমাদের রক্ষা করতে পারে

জয়ন্ত দেবনাথ

করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে রাজ্যে শুধু মুখে মুখে সব প্রস্তুতি চলছে। মফস্বলের হাসপাতাল গুলি দুরের কথা খোদ রাজ্যের প্রধান র্যােফারেল হাসপাতাল জিবি, আই জি এম, টি এম সি এবং আই এল এস হাসপাতালে পর্যন্ত কোভিড-১৯ লজিস্টিক্স ম্যানেজম্যান্ট বলে কিছু নেই। করোনা ভয়ে জবুথবু হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীরাই এক্ষণে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর তরফে হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মচারীদের যতটা সম্ভব ঘরে বসে কাজ করার আর্জির কারনে রাজ্যে মেডিক্যাল প্রশাসন কর্তাদের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। কেননা, এমনিতেই গত ক’দিন ধরে করোনা ভাইরাসের ভয়ে হাসপাতাল গুলিতে স্বাস্থ্য কর্মীদের উপস্থিতি কমে গেছে।

জানা গেছে, রাজধানীর জিবি, আই জি এম, টি এম সি সহ আই এল এস হাসপাতালে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চিকিৎসা সমগ্রী অপ্রতুল। কোথায় কতটা চিকিৎসা পরিকাঠামো রয়েছে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনের কেউই গিয়ে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এমনিতেই হাসপাতাল গুলিতে এক্ষণে পরিকাঠামোর বেহাল অবস্থা। কর্মীবল থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সামগ্রির ব্যাপক সঙ্কট। তার মধ্যে হঠাৎ করে প্রাদুর্ভাব এই করোনা সমস্যার কারনে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতিটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিবি, আই জি এম, টি এম সি এবং আই এল এস-এ করোনা মোকাবেলার নুন্যতম যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এন-৯৫ মাস্ক, ২ প্লাই এবং ৩ প্লাই সার্জিক্যাল মাস্ক এসব কিছুই নেই। গত ১২ই ফেব্রুয়ারী প্রথম করোনা এডভাইজারী জারীর পর থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব উপকরন গুলি রিক্যুইজিশন দিয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তরে। কিন্তু জোগার করা যায়নি। এসব কোন সামগ্রীই এরাজ্যে পাওয়া যায় না, বহিঃরাজ্য থেকে নিয়ে আসতে সময় লাগছে।

তাছাড়া খোলা বাজার থেকে হঠাৎ উদাও হয়ে গেছে সেনিটাইজার সহ সব রকমের মাস্ক। গোটা রাজ্য জুড়েই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে এমর্মে প্রচার চলছে কেউ যেন মাস্ক না পড়ে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হন। স্বাস্থ্য দপ্তর নাকি ৫ লাখ সতর্কতামূলক লিফলেট ছেপেছে। কিন্তু লিফলেটে যা লিখা রয়েছে তা কেউ ই মেনে চলতে পারছেনা। কেননা, লিফলেটের প্রথম আলোচ্য বিষয় হ্যান্ড সেনিটাইজার বা মাস্কই কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। চলছে কালোবাজারি। সাধারন মানুষ তো দুরের কথা হাসপাতালের সব স্বাস্থ্য কর্মী, পুরসভার সাফাই কর্মী এমনকি যানবাহনের কর্মীদের মুখে পর্যন্ত মাস্ক নেই। এই অবস্থায় কোন কারনে সত্যি সত্যিই এরাজ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দিলে কি ভাবে তার মোকাবেলা করা হবে খোদ চিকিৎসক মহলেই এনিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য তথা মুখ্যমন্ত্রীও কোন হাসপাতাল পরিদর্শনে কোথায় কি ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তা পরিদর্শন করেননি।

প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্যে এই মুহুর্তে ৮৪ জন সন্দেহ ভাজনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২৪ জনকে ১৪ দিনের কোয়ারেইনটেন্ড সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদেরকে বিপদ মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ত্রিপুরাতে সন্দেহ ভাজনদের অধিকাংশই ভিন্ন দেশ থেকে আগত। সারা দেশে এপর্যন্ত ১৭৩ জনের দেহে কোভিড-১৯ মরণ ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে দিল্লী, পাঞ্জাব, কর্নাটক ও মুম্বাই-এ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ত্রিপুরার পার্শ্ববর্তী রাজ্য বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। এই অবস্থার বিচারে ত্রিপুরার কোভিড-১৯ লজিস্টিক্স ম্যানেজম্যান্টকে দ্রুত আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো রাজ্যের মফস্বলের হাসপাতাল গুলিতে তো বটেই খোদ রাজধানীর র্যা ফারেল হাসপাতাল গুলিতে পর্যন্ত এলক্ষ্যে নুন্যতম পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। রোগ বিশ্ব জুড়ে মহামারীর আকার ধারন করলেও রাজ্যে অর্থের অভাবে স্বাস্থ্য দপ্তর স্বাস্থ্য কর্মীদের সবাইকে একটা মাস্ক পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারছে না। এই অবস্থায় করোনার মরণ ব্যাধি থেকে পরিত্রান পেতে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে বসে থাকার ধাওয়াই হচ্ছে এরাজ্যের মানুষের একমাত্র উপায়। কিন্তু এক্ষেত্রে দিন আনি দিন খাই- সাধারন শ্রমিক, দিন হাজিরার কর্মীদের জন্যে মহাবিপদ। আগামী ২২ মার্চ, রবিবার একদিনের জন্যে জনতা কার্ফূ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা যদি পরবর্ত্তীকালে আরও বৃদ্ধি পায় তখন কি হবে এই উদ্বেগ ছড়িয়েছে সর্বস্তরে। কিন্তু এই উদ্বেগ স্বাভাবিক হলেও এই আপাতকালীন পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে যাবতীয় সতর্কতামূলক বিধিনিষেধ মেনে চলাই হতে পারে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায়।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.