বিদ্যুতের বিল দেন না আস্ত গ্রামবাসী তীর্থমুখ- এ

বিশেষ প্রতিবেদন

জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যতটা না বিখ্যাত তীর্থমুখ, তার চেয়ে বেশি নামজশ গায়ে লেগেছে মকর সংক্রান্তি মেলাকে ঘিরে । এখানেই যে হয় পুণ্যস্নান । পুণ্যতোয়া জলে স্নান করেই পূর্বপুরুষের নামে তর্পণ করেন জাতী- উপজাতি অংশের হাজার লক্ষ মানুষ। আর এই তীর্থমুখ ভিলেজ কমিটিতে রিয়াং, ত্রিপুরী, চাকমা সহ প্রায় ১৫৫ পরিবারের বাস। সাধারণত জুম চাষ, মাছ শিকার এবং বনজ শাকসবজি খুঁজে এনে বিক্রি করেই চলে এদের জীবন জীবিকা। অত্যন্ত সহজ সরল গোছের এই মানুষগুলোকে বহু আগে থেকেই নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দিনের পর দিন একই অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে, এ কথা গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায়। যে কারণে তীর্থমুখ একটি পর্যটন ক্ষেত্র হয়েও এই গ্রামের হতশ্রী চেহারা আর গোঁচেনি। কোন এক সময়ে এই গ্রামে কোন এক মুক্তিদাতা নাকি প্রচার করে গিয়েছেন, যেহেতু তীর্থমুখকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, সেহেতু এই গ্রামের কোন মানুষকেই আর দিতে হবে না বিদ্যুতের বিল। এই গ্রামের মানুষ যত বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, সবেরই নাকি বিল মেটাবেন ভগবান । তা শুনে গ্রামের মানুষের বক্তব্য, আমরার জল দিয়াই তো কারেন্ আইয়ে, এই কারেনের আবার বিল কিয়ের ? কেউ কোন বিল পাইত না । নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই গ্রামের মানুষেরাও সরল বিশ্বাসে বুঝে গিয়েছেন, এখানে কারেন্টের কোন পয়সা লাগে না । ফলে ১৫৫ পরিবারের তীর্থমুখ এডিসি ভিলেজের প্রায় ১৫০ পরিবার যেদিন থেকে বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছেন , সেদিন থেকে আর কোনদিন বিল মেটানোর কথা ভাবেননি। ভাববেন ওই বা কেন, মুক্তিদাতা বলে গিয়েছেন ছড়ার জলের মতই ফ্রিতে মিলবে কারেন্ট। মুক্তিদাতার কথা বিশ্বাস করলে, মুফতে বিদ্যুৎ এর চেয়ে বড় সুখের আর কি আছে ? এদিকে যতন বাড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে যতবারই গ্রামে গিয়ে বিদ্যুতের বিল মেটানোর কথা বলা হয়েছে, ততবারই সেই বিদ্যুৎ কর্মীকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন গ্রামের মানুষেরা। তাদের ধারণা ছিল, ঈশ্বর যেখানে তাদের বিল মুকুব করে দিয়েছেন, সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন হয়তোবা চক্রান্ত করেই বিল চাইতে এসেছে। ব্যতিক্রম শুধু চারটি পরিবার। এরা সময়মতো বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে গিয়েছে মাসে মাসে। চার পরিবার বাদে প্রায় আস্ত গ্রামের মানুষই যখন বিদ্যুতের বিল দেননি কোনদিন , সেহেতু জমতে জমতে তীর্থমুখ গ্রামের ১৫০ টি পরিবারের বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। যতনবাড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে বারে বারে বিদ্যুতের লাইন কাটতে গিয়েও কাটা যায়নি, যেহেতু চারটি পরিবার সময়মতো বিল দিয়ে যাচ্ছে । এই পরিস্থিতিতেই গত সাত জুলাই ২০২৩,এই গ্রামের জন্য ব্যবহৃত ২০০ কিলো ভোল্টের বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়ে যায় । বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনরাও চাইছিলেন এই সুযোগে গ্রামের লোকেদের কিছুটা বুঝিয়ে, কিছুটা চাপে ফেলে যদি কিছু বকেয়া বিল আদায় করা যায়। কিন্তু গ্রামের মানুষেরা জানিয়েছেন, যেহেতু তাদের গ্রামে ফ্রিতে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে বলে তারা শুনেছেন ,সেহেতু তারা বিল দেবেন না। উল্টো গ্রামের লোকেরা মিলে রাস্তা অবরোধে বসে গিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তাদের দাবি, বিকল হয়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারটি সারাই করে অবিলম্বে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করতে হবে। খবর পেয়ে বিদ্যুৎ নিগমের কর্মকর্তারা সহ পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকরাও ছুটে যান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই তীর্থমুখ এডিসি ভিলেজে আলো জ্বলে ওঠে। খুশি হয়ে গ্রামে ফিরে যান সকলে । কিন্তু শুধুমাত্র এই গ্রামের বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ ৪৭ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা কে মেটাবে ? প্রশ্ন সেখানেই। স্থানীয় বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা জানিয়েছেন, কে বা কারা গ্রামবাসীদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন তিনি জানেন না । কিন্তু যারাই এমনটা করেছেন , তারা কার্যত পাপ করেছেন । এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি চান, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই বিদ্যুৎ থাকুক । আলো থাকুক । পাখা ঘুরুক । কিন্তু তাই বলে কেউই বিদ্যুতের বিল মেটাবেন না, এটা হতে পারে না । গ্রামবাসীদেরকে সচেতন করে তুলতে বিদ্যুৎ নিগম সহ সাধারণ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি শীঘ্রই গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন। তার বক্তব্য , গ্রামবাসীদেরকে বুঝতে হবে বিদ্যুতের বিল না মেটানো হলে পরিষেবা কোনদিনই ঠিক হবে না । এ গ্রামের উন্নয়নও আর হবে না । কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া এখন সবকিছু অচল। ওষুধ কেনার জন্য যেমন পয়সা দিতে হয়, গাড়িতে চড়লে ভাড়া দিতে হয়, মোবাইলে টকটাইম ঢুকানোর জন্য পয়সা লাগে। সেহেতু বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও পয়সা লাগবে। এ নিয়ে আর কোন দ্বিমত থাকতে পারে না। এবার বিধায়ক চান , গ্রামের শিক্ষিত ছেলে মেয়ের সংখ্যা বাড়ুক। রোজগার বাড়ুক। আর সবাই সচেতন নাগরিক হয়ে অন্যান্য কিছুর মতই বিদ্যুতের বিল ও পরিশোধ করুন সময়মতো।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.