দেশের সব মেয়েরা এভাবেই এগিয়ে যাক
Punarnava Dey
আজ প্রায় 12:50 নাগাদ আমি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই দুপুর বেলায় বটতলা,আগরতলা তে আমি এমন একটা কিছু দেখতে পাই যা আমার অবিলম্বে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল । আমি একজন মহিলা কে দেখতে পাই যে এত ট্রাফিকের মধ্য দিয়েও আত্মবিশ্বাসের সাথে একটি অটোরিকশা চালাচ্ছিলেন । তখন কেন জানিনা কিন্তু আমি গর্বের একটা অনুভূতি পেলাম । এখন তো মেয়েরা টো টো ও চালায়, অটোরিকশা চালায়,ফুড ডেলিভারির কাজও করে ।
এমন একটি সমাজে যেখানে কিছু পেশা এখনও পুরুষদের সাথে প্রধানত যুক্ত, সেখানে একজন মহিলাকে প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে পুরুষ-শাসিত পেশাকে আলিঙ্গন করতে দেখে আমার মনটা খুব আনন্দে ভরে গেলো। কোন কাজই ছোট নয় এবং নারীরা যে কোন ভাবেই পুরুষের চেয়ে কম সক্ষম নয় তার স্পষ্ট প্রমাণ ছিল।
আমি উনার অটোতে চড়লাম এবং সে কীভাবে এবং কখন অটোরিকশা চালাতে শুরু করেছিল তা জানতে আমি সত্যিই উতলা ছিলাম । উনার চোখে দৃঢ় বিশ্বাস লক্ষ্য করলাম। যেভাবে উনি অনায়াসে তিন চাকার যানটি চালাচ্ছিলেন দক্ষতার সাথে। তার আত্মবিশ্বাস এবং ফোকাস তার নির্বাচিত পেশায় যে তার অনেক ক্ষমতা আছে তা বোঝা কঠিন ছিলনা ।
মেয়েরা কী করতে পারে বা কী করতে পারে না সে সম্পর্কের পূর্ব ধারণাকে ভেঙে দিয়েছেন উনি। সামাজিক প্রত্যাশা বা স্টেরিওটাইপ নির্বিশেষে মেয়েরা যে তাদের বেছে নেওয়া যে কোনও কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহই নেই ।
আমি উনার সাথে অনেক কথা বলি ।
আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে
- এই যে আপনি অটোরিকশা চালান আপনার বাড়িতে কিছু বলেনি বা কোনো ধরনের বাধা দেয়নি ?
উনি বললেন যে
- উনার স্বামী এবং উনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুরোপুরি ভাবে উনাকে সমর্থন করে এবং তাদের কোন সমস্যা নেই ।
উনি আমাকে বললেন যে
- আমি যদি লজ্জা পেয়ে বশে থাকি তাহলে তো চলবেনা, আমার টাকা রোজগার করার অনেক দরকার আছে ,এইজন্যে সাহস করে সিদ্ধান্ত নিলাম এই অটোরিকশা চালানোর ।
অন্তত দিনের শেষে আমি বলতে পারি যে আমি কিছু টাকা নিজে উপার্জন করেছি । কিছু টাকার জন্য আমাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না বা হাত পত্তে হবেনা ।
সেই মুহুর্তে, আমি আরও সমতাবাদী সমাজের জন্য নতুন করে আশার অনুভূতি অনুভব করেছি।
একজন মহিলাকে নির্ভীকভাবে এবং দক্ষতার সাথে একটি অটোরিকশা চালাতে দেখে আমাকে বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করেছিল যে জেন্ডার কখনই কারও আবেগকে অনুসরণ করতে বা যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে করতে বাধা হওয়া উচিত নয়।
কৃতজ্ঞতার অনুভূতি আমার হৃদয়ে ভরে গেল। আমি সেই সব নারীদের জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করি যারা সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করে এবং তাদের সীমাবদ্ধ বাধাগুলি ভেঙে দেয়।
একজন মহিলাকে অটোরিকশা চালাতে দেখার অভিজ্ঞতা এবং তার সাথে কথা বলা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যেন প্রত্যেক ব্যক্তি, তাদের জেন্ডার নির্বিশেষে, সমান সুযোগ এবং স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। এটা আমার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে যে কোনো কাজই ছোট নয় এবং নারীরা অনস্বীকার্যভাবে অসাধারণ কৃতিত্ব সম্পন্ন করতে সক্ষম।
আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে রিকশার ভাড়া টা দিয়ে বিনয়ের সাথে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম
"দিদি একটা ছবি তুলি"
আমি জানি না কেন তবে আমি সত্যিই আনন্দিত বোধ করেছি । আমি আমার মুখে একটা হাসি নিয়ে হাঁটা শুরু করি । আমি সাথে অনুপ্রেরণা এবং অটুট বিশ্বাস নিয়ে এগোলাম যে আমরা মেয়েরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করতে পারি। তবে সব মেয়েরা বা বিবাহিত মহিলারা ইচ্ছে করলে অনেক কাজেই সাফল্য অর্জন করতে পারে । শুধু একটু সাহস ,কনফিডেন্স এবং নিজের উপর বিশ্বাস দরকার আর অবশ্যই সাথে পরিবারের আর নিজের মানুষ এর সাপোর্ট আর ভালোবাসার দরকার । দেশের সব মেয়েরা এগিয়ে যাক।