নার্সিং এবং প্রাচীন ভারতীয় ব্যবস্থা: বিশ্ব নার্সিং দিবসে একটি বিকল্প দৃষ্টিকোণ

ডঃ অমিতাভ রায়

"যত্ন করা নার্সিং এর সারমর্ম।" - জিন ওয়াটসন

ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এটি আদিম ব্যবস্থা এবং এটি আধুনিক প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবার সাথে প্রাসঙ্গিক। একটি সম্পূর্ণ সংগঠিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রমাণ প্রাক এবং উত্তর- বৈদিক যুগ থেকে পাওয়া যায়। ঔষধি উপাদান এবং অস্ত্রোপচার সহ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত ছিল। অনেক বেনামী প্রচারক, নিরাময়কারী এবং চিকিৎসা প্রশিক্ষক প্রাচীনকালে সংগঠিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করেছিলেন। এদের মধ্যে অত্রেয়া, ধন্বন্তরী, সুশ্রুতরা প্রাচীন ভারতে বহু পাণ্ডুলিপি ভিত্তিক চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ভগবান বুদ্ধ চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সমর্থন করার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। ভগবান বুদ্ধ নিজে অসুস্থদের সেবা করতেন। অসুস্থদের দেখাশোনা করা একটি মহৎ কারণ হিসাবে বিবেচিত হত। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য ভ্রমণকালে বুদ্ধ বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ বিহার (মঠ) তৈরি করেন এবং সমস্ত বিহারে অসুস্থদের যত্ন ও চিকিৎসা শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

প্রায় ২৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নালন্দা ও তক্ষশীলার প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শিক্ষা চালু হয়। প্রাচীন ভারতে 'চতুষ্পদ চিকিৎসা' চিকিৎসার ৪টি ডানা ছিল।

1. চিকিৎসক - ভিষক

2. নার্স - উপচারিকা

3.ওষুধ - দ্রব্য

4. রোগী - অধ্যায়

রাজা অশোক (২৭২-২৩৬ খ্রিস্টপূর্ব) মানুষ এবং পশুদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। রোগ প্রতিরোধকে প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং স্বাস্থ্যকর অনুশীলনগুলি গৃহীত হয়েছিল। চিকিৎসক এবং ধাত্রিদের বিশ্বস্ত এবং দক্ষ হাতে নিজ দায়িত্য পালন করতেন। দেহের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ছিল ধর্মীয় ও মৌলিক কর্তব্য।পরিষ্কার জামাকাপড় পরা এবং নখ ছোট করে কাটার অভ্যাস এই ব্যবস্থার উদাহরণ স্বরুপ। শয়নকক্ষগুলি ভাল বায়ুচলাচলের কথা মনে রেখে নির্মান করা হত। সুদ্ধি করনের বহু বৈঁজ্ঞানিক বিধি ও প্রার্থনা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পূর্বে পালন করার রেয়াজ ছিল। উপচারিকা সাধারণত পুরুষ বা বৃদ্ধ মহিলা ছিল। সে কালিন সাস্থ্য ব্যাবস্তা সমাজ ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা প্রদানে সক্ষম ছিল। কালো জাদু এবং টোটকার অন্ধকার যুগ সত্ত্বেও আমাদের অতীতের সিস্টেমকে অনেক সভ্যতার স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অগ্রদূত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সে যুগে উপচারিকা (নার্স) এর চরিত্রের উল্লেযোগ্য বিন্দু গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে

শুচি - শারীরিক এবং মানসিক পরিচ্ছন্নতা

দক্ষ- যোগ্যতা

অনুরক্ত - যত্ন নিতে ইচ্ছুক

বুদ্ধিমান - বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়কারী

উপরের সমস্ত গুণাবলী এখনও বর্তমান নার্সিং যুগের সংগে প্রাসঙ্গিক। পরবর্তীতে প্রায় 1 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বৃদ্ধিকে থামিয়ে দেয়। যদিও স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনেক ফিউশন এবং নতুন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বিদেশী আক্রমণকারীরা এবং পরবর্তী উপনিবেসিক চিন্তা ধারা মধ্য প্রচ্চের ব্যবস্থাকে বিদ্যমান আয়ুর্বেদিক ব্যবস্থার সাথে একত্রিত করে নিয়ে আসে। ১০০০ সালের অধিক সাংস্ক্রিতিক অবক্ষয় প্রাচীন ব্যবস্থাকে বিকল ও কলুষিত করেছে। এবং, সেই যুগে বিভিন্ন ধর্মীয় বিধিনিষেধ এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনুশীলন সম্ভবত নার্সিংয়ের বিকাশকে হ্রাস করেছিল।

শ্রেষ্ঠ পরিকাঠামো সত্তেও শীর্ষে অবস্থিত ভারতের ব্যাবস্তাপনা এতে প্রভাবিত হয়। বিদেশী আক্রান্তা ও ক্রমাগত লুঠের কারনে দেশের অর্থনৈতি পিছিয়ে পরে। ফলে দেশে দেখা দেয় ভয়ানক অবস্থা, যার অধীনে শিশুরা উচ্চ মৃত্যুর হারের কারণ হিসাবে স্বীকৃত হয়। কারণ অপ্রশিক্ষিত ধাত্রিরা সন্তান প্রসবের সময় নারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।

বহু অগ্রনী পরিবারে ধাত্রি প্রশিক্ষাকে হেঁয় চোখে দেখতোএবং বহু সংখক সমাজ অপপ্রচারের ফলে নিজেদের এই পেশা তে আসতে চাইতেন না। অপর দিকে বিদেশী প্রশিক্ষন ও প্রয়োগ রোগীদের পুরানো প্রথাগত পদ্ধতি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল না।

"নার্সরা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই আরাম, সমবেদনা এবং যত্ন প্রদান করে।" -ভাল সেন্টসবারি

ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলই প্রথম মহিলা যিনি ভারতে নার্সিংয়ের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলেন এবং 1861 সালে সামরিক ও বেসামরিক হাসপাতালে সংস্কার আনেন। দিল্লির সেন্ট স্টিভেনস হাসপাতাল 1867 সালে ভারতীয় মহিলাদের নার্স হিসাবে প্রশিক্ষণ শুরু করে। 1871 সালে, সরকার মাদ্রাজের জেনারেল হাসপাতাল চারজন ছাত্র নিয়ে মিডওয়াইফদের জন্য প্রথম নার্সিং স্কুল দিয়ে শুরু হয়েছিল। ভারতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে তার অপরিসীম অবদানের জন্য প্রতি 12 মে আমরা ভারতেও বিশ্ব নার্সিং দিবস হিসাবে উদযাপন করি। এই দিনেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে "প্রদীপের সাথে মহিলা" এর অবদানকে স্মরণ করা হয়।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.