বিপ্লবকে স্বস্তি দিতে পারে সুধীরপন্থা
প্রদীপ চক্রবর্তী
গত ৪৮ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে এমন সব কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার প্রেক্ষিতে গনতন্ত্র, জীবন জীবিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে অধিকার বোধ নিয়ে। যে অধিকার সংবিধান স্বীকৃত।
মঙ্গলবার সকাল শুরু হয়েছে করোনা সচেতনতার উপর সীমান্ত এলাকায় লিফলেট বিলি এবং রাত প্রায় এগারোটায় সচিবালয় থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে না উঠে সোজা পাঁচ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সরকারী নিবাসে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। এর মাঝখানে যা সংঘটিত হয়েছে তা প্রত্যাশিত ছিল না। ১০৩২৩ শিক্ষকদের একাংশের পশ্চিম থানা ঘেরাও, তাদের হঠিয়ে দেয়ার নামে বলপ্রয়োগ, ধস্তাধ্বস্তি, মৃদু লাঠিচার্জে কয়েক জন আহত হয়েছেন। এদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছেন বিরোধী দলসমূহের নেতৃবৃন্দ।
এই ছিল গত ৪৮ ঘন্টার সংবাদ একনজরে। আসা যাক করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন ব্যবস্হা তথা পদক্ষেপ প্রসঙ্গে। বিশেষ করে সচেতনতা মূলক কার্যক্রমের উপরই জোর দেয়া হয়েছে। এটাই মূখ্য বলে স্বাস্হ্য আধিকারিকরা বলছেন।
রাজ্যের অবস্হান খুবই স্পর্শকাতর। কেননা প্রায় তিনদিকেই বাংলাদেশ। ওখানে করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। প্রচুর লোকজন প্রতিদিন আসা যাওয়া করেন। সংক্রমিত অঞ্চল থেকে আসা লোকজন থেকে সংক্রমনের আশঙ্কা প্রবল। যদিও দু'দেশের সরকার আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করেছে। এটা ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে।
যেদিন রাজ্যে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেদিন থেকেই পশ্চিম জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা বলবৎ-এর ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। এই ঘোষণা তখন ঘোষণা করা হয় তখন চলছিল ১০৩২৩ শিক্ষকদের অবস্থান। ভোর রাতে এদের অবস্থান ভেঙে দেয়া হয়। এরই প্রতিবাদে শিক্ষকদের একটি অংশ ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে অবস্থানে বসে। ঘেরাও করে বসে পশ্চিম থানা। বিচলিত পুলিশ এদের উঠাতে চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তি হয় পুলিশ ও শিক্ষকদের মধ্যে। হাতাহাতিতে কয়েকজন আহত হয়। অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের। পুলিশ অস্বীকার করছে এই অভিযোগ। কিন্তু শিক্ষকরা তাদের অভিযোগে অটল। প্রশ্ন যদি পুলিশ লাঠিচার্জ না করে থাকে তাহলে শিক্ষকদের কয়েকজন আহত হলেন কিভাবে? এখন এ নিয়েই চলছে তরজা। শিক্ষকদের আহত হওয়ার ঘটনা কোন মহল মেনে নিতে পারছেন না।
এই শিক্ষকদের প্রতি রাজ্যবাসীর বৃহদাংশে সহানুভূতি রয়েছে তা হলফ করেই বলা যায়। জীবন জীবিকার প্রশ্নে এরা আন্দোলনে বসেছে। কারন ৩১শে মার্চ পর্যন্ত এদের চাকরি রয়েছে। ১লা এপ্রিল থেকে চাকরি থাকবে না। তখন তো এরা জীবন সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে। ছেলে মেয়েদের পঠনপাঠন কিভাবে চালাবে? সংসার প্রতিপালনই কি ভাবে হবে? ব্যাংকের দেনাই বা কি ভাবে মেটাবেন? এই প্রশ্নের জবাব আপাতত সরকারের কাছে নেই।
তবে সরকার এদের বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করছেন বলেও মঙ্গলবার রাতের খবর। সামনে বিধানসভার অধিবেশন। ৫ দিনের জন্য। ধারনা করা হচ্ছে অধিবেশনে হয়ত মুখ্যমন্ত্রী ১০৩২৩ নিয়ে আশার আলো দেখাতে পারেন। মুখ্যসচিবকে নাকি এদের বিষয়ে পজেটিভ রিপোর্ট বা সুপারিশ মূলক নোট তৈরীর কথা বলা হয়েছে।
১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়ে তো নিদান দিয়ে গেছে সুধীর রঞ্জন মজুমদার রং নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। তখন সরকার বয়স উত্তীর্ণদের চাকুরী দিতে তৈরী করা হয়েছিল ভিকটিমাইজড কমিটি। চেয়ারম্যান করা হয়েছিল বিধায়ক অমল মল্লিককে। ওই কমিটির কাছে যারা আবেদন করেছিল তাদের আবেদন পরীক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পেশ করা হত। অনুমোদিত নামের তালিকা কয়েকটি ভাগ করে বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হত। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি প্রদান করা হয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরী পেয়েছেন। অমল মল্লিক বিজেপির বিলোনীয়া মন্ডলের নেতা। সজ্জ্বন ব্যক্তি। উনার কাছ থেকে তো বিপ্লব দেবের সরকার পরামর্শ নিতে পারেন। এতে তো বাধা নেই। সুধীর রঞ্জন মজুমদার সরকারের আমলের গৃহীত পন্থা অনুসরন করে তো বর্তমান সরকার ১০৩২৩ জনের ঝুলানো ভাগ্য সুনিশ্চিত করতে পারে। তবে এটাও ঠিক শিক্ষক হিসাবে এদের চাকরি দেয়া যাবেনা বা পূর্ণ বহাল করা যাবেনা। শিক্ষক হিসাবে বহাল মানেই সুপ্রীম কোর্টের রায়ের অবমাননা বলে আইনজীবী মহলের অভিমত। তবে এদের যেমন অন্যান্য দপ্তরে নিযুক্তি দেয়া যেতে পারে তেমনি শিক্ষা দপ্তরে ও অশিক্ষক পদ সৃষ্টি করে নিযুক্তি দেয়া যেতেই পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে কিন্তু রং উপর। তবে সম্ভবত সুধীর রঞ্জন মজুমদার সরকারের আমলের পন্থাই হয়তো বা বিপ্লব দেবের সরকারকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ করে দেবে। (লেখক প্রবীন সাংবাদিক)