মন কী বাতের যাত্রাপথ : জনসংযোগের মধ্য দিয়ে হৃদয় জয়ের কাহিনী
প্রোফেসর (ডা.) মানিক সাহা, মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা
মন কী বাত অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের অক্টোবর। সেদিন এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সম্প্রচারিত হয়েছিল। এখন আমরা জন উদ্যোগের এই অনুষ্ঠানের ১০০তম পর্ব সম্প্রচারের দিকে এগোচ্ছি। যা আগামী ৩০ এপ্রিল সম্প্রচারিত হবে। এই অনুষ্ঠান দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ‘মন কী বাত’ শুরু থেকেই একটি জনগণের অনুষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। My Gov পোর্টালে জনগণই এই অনুষ্ঠানের প্রকৃতি, কাঠামো, বিষয়, সময় সম্পর্কে প্রস্তাব রাখেন। তখন থেকেই My Gov ‘মন কী বাত'-এর জন্য ধারণা, প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৪-এর ৩ অক্টোবর সম্প্রচারিত ১ম পর্ব থেকেই ‘মন কী বাত' লক্ষ লক্ষ নাগরিকের জীবনকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে।
মন কী বাতের এই যাত্রাপথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী বহু বার ত্রিপুরার প্রশংসা করেছেন। জাতীয় স্বার্থে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ত্রিপুরার কাঁঠাল (৩০ মে ২০২১, ৭৭তম পর্ব), মাটির কাপ (৩০ অক্টোবর ২০২২, ৯৪তম পর্ব), বায়ো ফার্মিং (৩০ অক্টোবর ২০২২, ৯৪তম পর্ব) ও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। প্রায় ৯ বছর দীর্ঘ এই যাত্রাপথে এই অনুষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিদিন এই অনুষ্ঠানের দর্শক বেড়েছে এবং রেডিওতে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রসার ভারতীকে বিশাল অংকের রাজস্ব অর্জনে সাহায্য করেছেন এবং দেশের প্রত্যন্ত এলাকার কথা সংবেদনশীলতার সাথে তুলে ধরেছেন।
‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠান একাধিক বার দেশকে একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে সাহায্য করেছে। তার এক উদাহরণ হচ্ছে কোভিড-এর সময়কালীন লড়াই। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছিল এবং পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার নজির সৃষ্টি করেছিল। পরীক্ষার সময় এই অনুষ্ঠান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্বেগ লাঘব করেছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোদিজী আমাদের দেশবাসীকে সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করেছেন। আমাদের দেশের ভাই ও বোনেদের পরামর্শ অনুসারে মোদিজী সংস্কৃতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রগতিমূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন।
২০১৪ সালে তিনি খাদির ব্যবহার ও স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কথা তুলে ধরেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও স্বাস্থ্যের উপর তার সুপ্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর এই আহ্বান ছিল এক সার্বজনীন আহ্বান যা নাকি দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে স্বচ্ছ ভারত মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ২০১৪ সালের সমস্ত পর্বগুলিতে তিনি মঙ্গল গ্রহের অভিযান, দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন এবং নাগরিকদের দ্বারা উত্থাপিত বহু বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। দেশে যুব সম্প্রদায়কে ড্রাগ সেবন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে আহ্বান জানান। কেননা এরকম কার্যকলাপ থেকে উপার্জিত টাকা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহার হয়ে থাকে।
২০১৫-এর মুখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সাথে যৌথভাবে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলার পরামর্শ, মৃত্তিকা স্বাস্থ্য, ওয়ান র্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন (OROP), যোগা, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, কন্যা সন্তানের গুরুত্ব বাড়াতে কন্যার সাথে সেলফি, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইত্যাদি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী মূলত: ভারতীয়দের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলেন। যেমন-স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। জনগণের অজানা বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয় এবং কিভাবে তা পরিচালনা করা হয় তা জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়।
বর্তমানে সারা দেশে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' নিয়ে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দেশের একতা ও বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে সাদৃশ্য রয়েছে তা প্রতিভাত করার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ‘মন কী বাত' অনুষ্ঠানে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ভাবনার কথা আলোচনা করেন।
এখন আমরা এক নতুন ও পরিবর্তিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আগামী বছরগুলিতে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ৫ ট্রিলিয়ন মূল্যের অর্থনীতি গড়ে তোলা। এসব কিছুই সম্ভব হবে যদি দেশ সুবিন্যস্ত ও সমন্বিত ভাবে এগিয়ে যায়। আমি মনে করি এই সমন্বয় ও সুবিন্যাসের দিশা দেখানো হয় ‘মন কী বাত’-এর মধ্য দিয়ে। আমি সমস্ত ভাই ও বোনেদের আহ্বান জানাচ্ছি আসুন সবাই মিলে এই ১০০তম পর্ব উৎসবের মেজাজে উপভোগ করি৷