বিজেপি-আইপিএফটি সরকারের ২ বছর প্রতিশ্রুতি ও রূপায়ন
জয়ন্ত দেবনাথ
৯ মার্চ ২০২০, “চলো পাল্টাই” শ্লোগান-এ ভর করে ক্ষমতাসীন বিজেপি-আইপিএফটি-র জোট সরকারের ২ বছর পূর্ণ হল। “চলো পাল্টাই”-এর শ্লোগান ছাড়াও ক্ষমতায় আসার প্রাক্কালে বিজেপি আইপিএফটি-র নির্বাচনী জোট তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে বেশ কিছু লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবং ক্ষমতায় আসলে কোন কাজটা কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবেন তারও সময় ভিত্তিক একটা ‘ভিসন ডকুমেন্ট’ জনতার সামনে পেশ করেছিলেন। ‘ভিসন ডকুমেন্টের’ সবচেয়ে লোভনীয় যে প্রতিশ্রুতিটি ছিল সেটি ছিল সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সমান হারে বেতনক্রম ও ভাতাদি প্রদান। এবং প্রতিশ্রুতি ছিল জোট সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই তা পুরন করা হবে। এই অনুযায়ী প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে কেন্দ্রীয় সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ লাঘু করতে একটি কমিশন (ভার্মা কমিশন) গঠন করা হয়। এবং কম বেশি যাই হোক শুধুমাত্র এই একটি প্রতিশ্রুতিই প্রথম বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা কার্যকর করা হয়।
একই রকম ভাবে প্রতিশ্রুতি ছিল অনিয়মিত কর্মচারীদের সকলকেই নিয়মিত করা হবে। কিন্তু দেখা গেলো অর্থ দপ্তরের অনুমোদন নেই অজুহাতে একাধিক ক্ষেত্রে অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরীচ্যুত করা হল। জাইকা, ইন্দো জার্মান, বায়ো ডাইভারসিটি, ট্রেজারী, ত্রিপুরা বেম্বো মিশন সহ বন দপ্তরের বেশ কিছু অনিয়মিত কর্মচারী যারা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রজেক্টে কর্মরত ছিলেন তারা চাকুরিচ্যুত হলেন। চাকুরীচ্যুতি ঘটতে চলেছে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের। অথচ ‘ভিসন ডকুমেন্টে’ প্রতিশ্রুতি ছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী আইনী পথে রক্ষা করা হবে।
তাছাড়া প্রতিশ্রুতি ছিল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যে ৫০ হাজারের মতো শূন্যপদ রয়েছে সেগুলি প্রথম এক বছরের মধ্যে পূরণ করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলো নয়া শূন্যপদ গুলিতে লোক নিয়োগ দূরের কথা ইতিপূর্বে ইন্টারভিউর মাধ্যমে যোগ্যতা অনুযায়ী টিপিএসসি-র মাধ্যমে বাছাই হওয়া বহু চাকুরী প্রার্থীর ইন্টারভিউ বাতিল হয়ে গেলো। নয়া নিয়োগ নীতি ঘোষণার নামে সর্বক্ষেত্রে নিয়োগ বন্ধ করে রাখা হলো। ২ বছর চলে গেলো শিক্ষা দপ্তর ছাড়া অন্য দপ্তরে ২ হাজার বেকারেরও চাকুরী হয়নি। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম এক বছরের মধ্যে দূরের কথা আগামী ৫ বছর মধ্যেও ৫০ হাজার বেকারের চাকুরী প্রদান কতটা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য। কেননা, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এখন বেকারদের বলছেন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস, মুরগ, গরু, ছাগল, মাছ চাষ ইত্যাদি করে স্বাবলম্বী হতে।
তাছাড়া প্রতিশ্রুতি ছিল ঘরে ঘরে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বেকারদের জন্য ব্যাপক হারে স্কিল ডেভেলাপমেন্ট ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হবে। দেখা গেলো নয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর, সরকারি স্তরে আগে যাও স্কিল ডেভেলাপমেন্ট ট্রেনিং ছিটেফোটা কিছুটা হচ্ছিল তাও প্রায় বন্ধ ।
‘ভিসন ডকুমেন্টে’ প্রতিশ্রুতি ছিল বেকারদের সবাইকে স্মার্ট ফোন দেওয়া হবে। এখন বলা হচ্ছে তা শুধু কলেজের চুড়ান্ত বর্ষের ছাত্রছাত্রীরাই স্মার্ট ফোন পাবেন। প্রতিশ্রুতি ছিল রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোগীদের সাহায্য নিয়ে ব্যাপক কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরী করা হবে। কিন্তু স্থানীয় যে ক’টি হাতে গোনা শিল্প ইউনিট এবং তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে নুন্যতম কোন সুযোগ সুবিধা তাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে না। বহু শিল্প ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে আরও কিছু বন্ধের মুখে। কেননা, রাজ্য তথ্য প্রযুক্তি নীতি-২০১৭ ও শিল্পনীতি-২০১৭ সংশোধন করে স্থানীয় উদ্যোগীদের বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা চালুর কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত প্রশাসনের আমলা কর্তা ব্যক্তিরা এসব সুযোগ সুবিধাগুলি চালু করতে পারেনি। উল্টো স্থানীয় উদ্যোগীরা যাতে টেন্ডারে অংশ গ্রহণই না করতে পারেন তার জন্যে এমন সব কঠিন শর্ত জুড়ে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে, তার ফলে কাজ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা থাকলেও দরপত্রে অংশ নিতে পারছে না। যার সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রকৃষ্ট উদাহরন হলো স্থানীয় প্রকাশনা সংস্থাগুলিকে বাঁকা পথে বাদ দিয়ে এস সি ই আর টি-র বই ছাপার বরাত কলকাতার দুই সংস্থাকে প্রদান।
তাছাড়া বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রি, বিদ্যুৎ সামগ্রী থেকে শুরু করে পি সি সি পোল, ষ্টীল পোল, ট্রান্সফরমার বা স্থানীয় ভাবে উপুলব্ধ তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা স্থানীয় কোম্পানি গুলির কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। ত্রিপুরা সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তরের কল সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে বহিঃরাজ্যে। অথচ রাজ্যের শিল্প নীতি ২০১৭ অনুযায়ী স্থানীয় উদ্যোগীদের ২০% কাজ বা অর্ডার কিংবা পন্য ক্রয়ে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একটি অংশের সরকারী আমলা অফিসার ইঞ্জিনিয়ারদের নেতিবাচাক মনোভাবের কারনে এসব দু-নম্বরী এখনো চালু রয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্যের তরুন মুখ্যমন্ত্রী এবং সদাহাস্য উপমুখ্যমন্ত্রী দুজনই সভা সমিতিতে বেকার সমস্যা সমাধানে স্থানীয়ভাবে ‘স্ব-উদ্যোগ স্থাপন’ বা ‘এন্টারপ্রিওনারশীপ’ ডেভেলাপমেন্টের কথা বলে বেড়ালেও বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টোটাই। গ্রাম-উন্নয়ন, নগর-উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প কিম্বা স্কিল ডেভেলাপমেন্ট কোন দপ্তরই স্থানীয় উদ্যোগীদের কথা ভাবছেন না। ফলত কি কৃষি ক্ষেত্র , কি শিল্প ক্ষেত্র কোন স্তরেই বেকার যুবক যুবতীরা স্থানীয় ভাবে স্ব-উদ্যোগে কিছু করার কথা ভাবতে পারছেন না। যারা ভাবছেন তারাও ব্যাঙ্কগুলির নেতিবাচক মনোভাবের কারনে পিছিয়ে যাচ্ছেন।
নানা কারনে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। অবশ্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা এটা স্বীকার করলেও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ এটা মানতে রাজী নন। ত্রিপুরাইনফো ডটকম ও ত্রিপুরা দর্পন সহ রাজ্যের একাধিক পত্রিকায় সম্প্রতি রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থা নিয়ে একটি তথ্যনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী এসম্পর্কে সরাসরি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও মন্ত্রী রতনলাল নাথ একাধিক দিন সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য সঠিক ছিল না। এবং রাজ্যে এই মুহুর্তে কোন আর্থিক সঙ্কট নেই বলে তিনি জোর গলায় দাবী করেন। যদিও মন্ত্রী রতনলাল নাথ যে সরকারী ডকুমেন্টস – এর উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করেছেন আমিও সেই সব সরকারী ডকুমেন্টস – এর উপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিলাম। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমি রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ভাল কি খারাপ এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করছিনা। শুধু সরকারী ভাবে প্রাপ্ত কিছু তথ্য এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করার চেষ্টা করবো।
তাই প্রতিবেদনের শুরুতেই এখানে এমন কিছু তথ্য পেশ করতে চাই যার উল্লেখ রয়েছে স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটি (এস এল বি সি)-র বিভিন্ন মিটিং মাইনোটস-এ। ২০১৮ সালের ৯ মার্চ বিজেপি আই পি এফ টি-র জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এস এল বি সি-র প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৭ই মার্চ ২০১৮ তারিখে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব স্বয়ং ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এস এল বি সি-র বৈঠক গুলিতে মূলত রাজ্যের সার্বিক আর্থিক অবস্থার রুপরেখা অর্থাৎ ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদান থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কিম বা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বা রাজ্যের যেসব অফিসার প্রতিনিধিরা সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন তারা মূলত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংশ্লিষ্ট বিষয় গুলিতে ব্যাঙ্ক গুলি কিভাবে সহায়তা করতে পারেন এবং কিভাবে কি করলে রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে অর্থাৎ রাজ্যের সামগ্রিক অগ্রগতি ঘটবে তার রুপরেখা তোলে ধরেন। সেই অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী তার প্রথম এস এল বি সি-র বৈঠকেই এমর্মে একটি স্পষ্ট বার্ত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে, ব্যাঙ্ক গুলিকে রাজ্যে তাদের লগ্নী বাড়াতে হবে। বেকার বা সাধারন মানুষ চাইতেই যেন ব্যাঙ্ক লোন পেয়ে যান। পাশাপাশি তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্কিম গুলির সুবিধা সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক গুলির সহযোগিতা চান। অর্থাৎ দায়িত্বভার গ্রহনের প্রথম দিন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিপ্লব দেব-এর একটি বার্ত্তা স্পষ্ট যে তিনি রাজ্যকে স্বয়ংসম্পুর্ন করে তুলতে চান। সরকারি চাকুরি নয়, বেকারদের তিনি স্বাবলম্বি বানাতে চান। আর এলক্ষ্যে তিনি কৃষি, মৎস, পশুপালন, হর্টি শিল্প ও পর্যটনকে বেছে নেন বেকারদের জন্যে ব্যাপক ভাবে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং গত দুই বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী তার প্রতিটি সরকারী বৈঠক, ভাষণ, বক্তৃতায় এই লক্ষ্যকে পূরণে রাজ্য সরকারের কৃত কর্তব্য সম্পর্কে বলে যাচ্ছেন।
বিজেপি আই পি এফ টি-র জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৭ই মার্চ ২০১৮ তারিখে এস এল বি সি-র প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আর এস এল বি সি-র সর্ব শেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ । এই দুই বৈঠকের মাইনোটস-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ীঃ-
• ২০১৮ সালের ৯ মার্চ যখন বিপ্লব দেব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন তখন রাজ্যের সি ডি রেশিও ছিল ৪৬%। ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে এক্ষণে ব্যাঙ্ক সি ডি রেশিও ৫৬%। অর্থাৎ গত দুবছরে সি ডি রেশিও বেড়েছে ১০%।
• ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রাজ্যে ব্যাঙ্ক গুলির বার্ষিক লগ্নী বা এনুয়েল ক্রেডিট (এ সি পি) সাইজ ছিল ৪৩৮৬ কোটি। ব্যাঙ্কগুলি এক্ষেত্রে ৭৯% লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে।
• একই রকমভাবে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এসিপি-র লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭৬২ কোটি। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি মাত্র ৫৫৩৯.৫২ কোটি ডিসবার্স করতে পেরেছে। অর্থাৎ সাফল্য ৭১%, যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের তুলনায় ৮% কম।
• ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কে সি সি ঋণের টার্গেট ছিল ৭১৩১৭ টি। মঞ্জুর করা হয়েছে ৩৩১৪৩ টি। সাফল্য মাত্র ৪৭%। টাকার অংকে ১৫০.৬৬ কোটি টাকা কৃষকদের কেসিসি খাতে ঋণ মঞ্জুর হয়েছে।
• ত্রিপুরা রুরাল লাইভলিহুড মিশন(টি আর এল এম) কর্তৃক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৪৮৯টি এস এইচ জি একাউন্টে ৬২.১৩ কোটি টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫৭৬টি একাউন্টে মাত্র ৩৬.৫৩ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া গেছে।
• রাজ্যের উৎপাদিত রাবারের ব্যবহারে রাজ্যে ছোট খাটু রাবার ইউনিট গড়ে তোলতে স্বাবলম্বন স্কিমে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩০০টি প্রকল্পে ঋণ দিতে ব্যাঙ্ক গুলির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু মাত্র ৩৪টি রাবার ইউনিটের জন্যে ঋণ মঞ্জুর করেছে ব্যঙ্কগুলি। একইরকমভাবে পি এম ই জি পি প্রকল্পে ৩৩৮টি রাবার ভিত্তিক ছোট শিল্প ইউনিটকে ঋণ দিতে শিল্প দপ্তর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৪১টি ইউনিট।
• পি এম ই জি পি প্রকল্পে ছোট খাটু ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনে শিল্প দপ্তর ৪৪৮৮টি প্রকল্পের মঞ্জুরী দিয়ে ব্যাঙ্ক গুলিতে পাঠিয়েছিল ঋণ মঞ্জুর করতে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী পি এম ই জি পি প্রকল্পে ব্যাঙ্ক গুলি মাত্র ৫৬৯টি প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে। একই রকমভাবে স্বাবলম্বন স্কিমে ৫২৬২ টির মধ্যে ২৯১ টি ইউনিটকে ঋণ দিয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যে বেকার কমানোর সবচেয়ে বড় এই দুই প্রকল্পে ৯৭৫০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৮৮৯০ জনই ঋণ পায়নি।
• পর্যটন ত্রিপুরার নয়া সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। বেকারদের পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে ‘পর্যটন সহায়ক প্রকল্প’ নাম দিয়ে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এর মেয়াদ। সরবোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। পর্যটন দপ্তর ৮% সুদ ভর্তুকি দেবেন। এপর্যন্ত মাত্র ৫৮টি প্রকল্প দপ্তর ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছেন ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্যে। কত জনকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছেন তথ্য পাওয়া যায়নি।
• এস এল বি সি-র তথ্য মোতাবেক প্রতিদিন রাজ্যে কম করেও ৫০০০ ছাগল কেটে তার মাংস বিক্রি হয়। ছাগলের চামড়া দিয়ে রাজ্যে ছোটখাটু বেশ কিছু শিল্প ইউনিট হতে পারে। কিন্তু ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে অসুবিধা। তাই চামড়া চলে যাচ্ছে বহিঃরাজ্যে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই তথ্যটি উপস্থাপন করে এস এল বি সি-র সর্বশেষ বৈঠকে ব্যাঙ্কগুলিকে এধরনের শিল্প ইউনিটে ঋণ দিতে অনুরোধ রেখেছেন।
• এস এল বি সি-র তথ্য মোতাবেক রাজ্যে প্রতিদিন ৫ লাখ ডিম-এর চাহিদা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এস এল বি সি-র সর্বশেষ বৈঠকে ডিম উৎপাদন করতে চেয়ে শিল্প ইউনিট গড়তে ইচ্ছুক বেকারদের ঋণ দিতে অনুরোধ করেছেন।
• প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৫৫৬.৭০ কোটি টাকা ঋণদানের লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৮৭৮০২ জন বেকারকে ৮৪৪.৭৯ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪% পূরণ করা গেছে। একই রকমভাবে স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে মাত্র ৩৩ জন বেকার ঋণ পেয়েছেন। কিন্তু তার পরও বলা হচ্ছে রাজ্যে বেকারের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ থেকে কমে এক্ষণে ১.৮৬ লাখে চলে এসেছে।
রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা যে খুব একটা ভালো নয় তা এস এল বি সি-র সর্বশেষ বৈঠকের উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্যাবলী থেকেও স্পষ্ট। কিন্তু তার পরও এক মন্ত্রী তা মানতে নারাজ। যদিও আজকের তারিখে এটা বিজেপি-র অনেক বড় মাপের নেতাও প্রকারান্তরে অস্বীকার করতে পারছেন না যে ৯ মার্চ ২০১৮, “চল পাল্টাই” শ্লোগান-এ ভর করে বিজেপি-আইপিএফটি জোট যে গগনচুম্বী প্রত্যাশা জাগিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল ২ বছর যেতে না যেতেই তাতে কিছুটা ভাটার টান পরেছে। এবং রাজ্য জুড়ে একটা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে গেছে। শুধু বিরোধীদের অফিসে তালা, অগ্নিসংযোগ বা হামলা হুজ্জুতির মতো রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা নয়। স্বদলীয় ও জোট শরীকদের মধ্যেও গত ২ বছর ধরে যে হানাহানি চলছে রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষ এসব পছন্দ করছেন না। বিশেষত গ্রাম পাহাড়ে যে অর্থনীতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তাতে যে আগামী দিনে রাজ্যজুড়ে একটা অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা বলাই বাহুল্য। কেননা, ইতিমধ্যেই বহু পাহাড়ী এলাকা থেকে উগ্রপন্থীদের কিছু নয়া গতিবিধির খবর আসতে শুরু করেছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে গ্রাম স্তরে অভাবী বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের শূন্য পদগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না করা হলে খুব শীঘ্রই যে রাজ্য জুড়ে একটা চরম অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । কেননা, রাজ্যের মানুষ এটা বিশ্বাস করেই বিজেপি-র মতো একটা দলকে এ রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বসিয়েছেন যে তারা ক্ষমতায় আসলে বেকারদের জন্যে ‘আচ্ছা দিন’ আসবে এবং ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ হবে। রেগার শ্রমিকরা ৩৪০ টাকা মজুরী পাবেন। যারা ভাতা প্রাপক তারা ভাতা ২০০০ টাকা পাবেন। ঠিকাদার ও সার্ভিস প্রোভাইডাররা ভেবেছিলেন তাদের দীর্ঘদিনের বকেয়া মিটিয়ে দেবে সরকার। সরকারী কর্মচারী অফিসাররা ভেবেছিলেন সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ভাতাদি সহ অন্যান্য সবিধা গুলিও কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসার ও কর্মচারীদের মতই তাদেরকে প্রদান করা হবে। শিক্ষকরা ভেবেছিলেন সুষ্ঠু বদলী নীতি চালু হবে। বেকাররা ভেবেছিলেন সুষ্ঠু নিয়োগনীতি চালু হবে। এবং রাজ্য সরকার খালি পরে থাকা প্রচুর পদে লোক নিয়োগ করবেন। অনিয়মিত শ্রমিক কর্মচারীরা ভেবেছিলেন চাকুরীচ্যুতি নয়, তাদেরকে নিয়মিত করা হবে। কিন্তু এসব কিছু হচ্ছে কই ?
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন তিনি তিন বছরেই ত্রিপুরাকে একটি মডেল রাজ্য বানাতে চান। এটা সত্য বিজেপি তাদের ভিসন ডকুমেন্টে যে পরিমানে প্রতশ্রুতি প্রদান করেছে সব কাজ ৫ বছরেও করা সম্ভব নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে যেভাবে প্রতিশ্রুতি খেলাপ করে নিয়মিতকরন দূরের কথা চাকুরীচ্যুত করা হচ্ছে কিংবা রেগার মজুরী ৩৪০ টাকা করা দূরের কথা বছরে নিয়ম অনুযায়ী রেগার কাজ ১০০ দিনের জায়গায় ৫৬ দিন মাত্র প্রদান করা হচ্ছে, এটা কিন্তু কোন ভাবেই মানুষ মেনে নিতে পারছেন না।
রাজ্যকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরকারী চাকুরী হ্রাস করে দেওয়ার পাশাপাশি আরও যে একটি কাজ করলেন সেটি হলো রাজ্যের নিজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন স্তরে কর বৃদ্ধি করতে শুরু করেছেন। তাই বিভিন্ন পুর কর, জমির বিভিন্ন স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ মাশুল,জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ অর্থাথা যেখানে সুযোগ পেয়েছেন কর বাড়ানো হয়েছে ও হচ্ছে। পাশাপাশি নেশামুক্ত ত্রিপুরার শ্লোগান দিয়েও মদ থেকে রাজস্ব কামাই বাড়াতে বেশ কিছু জায়গায় নয়া লাইসেন্স দিচ্ছেন।
রাজ্যের আপামর জনসাধারনই চান ত্রিপুরা নিজের পায়ে দাঁড়াক। তার জন্য সরকার যা যা করার করুন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও করুন যাতে সাধারন মানুষ, শ্রমিক, কর্মচারী, কৃষক, বেকার যুবক যুবতীদের নুন্যতম একটা অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা হয়। মানুষ যেন সেই টি ইউ জে এস ও কংগ্রেস জামানার মতো খাদ্যাভাবের শিকার না হন। এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা সবাই দেখতে চান। কিন্তু গত ২ বছরে সরকারী প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে রাজ্যের বাজার অর্থনীতিতে যে নেতি বাচক প্রভাব পরেছে তা থেকে নির্দ্বিধায় একটা কথা বলা যায় মানুষ খুব বেশী শান্তিতে নেই, আচ্ছে দিন এখনও আসেনি, সবকা সাথ সবকা বিকাশ হচ্ছে না।
বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার ২ বছরে সাফল্য এক নজরে
১) জনমুখী দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের লক্ষ্যে মেধাভিত্তিক নতুন নিয়োগনীতি, ই-টেন্ডারিং, জনতার দরবার ও অনলাইনে অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা চালু।
২) ৩৪ হাজার রিয়াং শরণার্থীদের রাজ্যে পূনর্বাসন।
৩) উপজাতিদের সার্বিক কল্যানে ৮৮০৩ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জূরীর জন্য দিল্লীতে ভারত সরকারের কাছে প্রেরণ।
৪) আগরতলা এয়ারপোর্টের নাম ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রমের নামে নামাঙ্কিত, গড়িয়া পূজোর দিন সরকারী ছুটি ঘোষনা।
৫) শিক্ষার সার্বিক গুনগত মান উন্নয়নে এন সি আর টি-র ক্যারিকুলাম চালু, নয়া দিশা, উদ্দীপন সহ ২৪ টি নয়া উদ্যোগ।
৬) ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়ীতে পাইপলাইনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবাহের লক্ষ্যে ৮৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে অটল জলধারা মিশন চালু।
৭) নূন্যতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু।
8) নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনে বিশেষ অভিযান শুরু। ৭২৮টি কেস নথীভুক্ত ১২৪৯ জনকে গ্রেপ্তার এবং প্রচুর পরিমানে নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত।
৯) ৪ লক্ষাধিক সুবিধাভোগীর জন্যে সামাজিক ভাতা বৃদ্ধ্বি করে এক হাজার টাকা করা হয়েছে।
১০) ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৩৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট পি এম কিষান সম্মান নিধি যোজনায় ১৩৮.০৩ কোটি টাকা প্রদান।
১১) আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় ৯.১২ লাখ সুবিধাভোগীর জন্যে ই-কার্ড প্রদান।
১২) ত্রিপুরাকে ১০০% উন্মুক্তস্থানে মলত্যাগ মুক্ত রাজ্যে উন্নীত করা হয়েছে। সুভাগ্য যোজনায় ১০০% , উজ্জ্বলা যোজনায় ৯১%, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন আবাস যোজনায় ৮৭% ও প্রধানমন্ত্রী আরবান আবাস যোজনার মঞ্জু্রীতে ১০০% সাফল্য।
১৩) আবেদন পত্র জমা দেওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে শিল্প ইউনিট স্থাপনে ছাড়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়েল ফেসিলিটেশন অ্যাক্ট-২০১৮ মোতাবেক সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালু। ২০১৮ সালের ৯ মার্চ এর পর থেকে এ পর্যন্ত ২৮১৬ টি নয়া শিল্প ইউনিট নথীভুক্ত।
১৪) সাব্রুমে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন (SEZ) ও নয়া ইন্টিগ্রেটেড চেক পোষ্ট (ICP)-র কাজ দ্রুত চলছে।
১৫) ক্যুইন আনারসকে রাজ্যিক ফল হিসাবে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যের ক্যুইন আনারসের রপ্তানি শুরু হয়েছে।
১৬) বাংলাদেশের চীটাগাং ও মঙ্গলা পোর্টের ব্যবহারে স্পেশাল অপারেটিং প্রোটোকল (এস ও পি)চুক্তি সম্পন্ন। ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত এগুচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে রেল লাইন বসানোর কাজ চলছে। নয়া এয়ারপোর্ট টার্মিনাল তৈরীর কাজ প্রায় শেষের পথে।
১৭) রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সপ্তম বেতনক্রম অনুযায়ী সব সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
১৮) কামধেনু প্রকল্পে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্বির লক্ষ্যে তিন হাজার সুবিধাভোগীকে সরকারি সুবিধা প্রদান।
১৯) ২০১৭-২০১৮ সালে রাজ্যে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় (ইনকাম) ছিল এক লাখ টাকার মতো। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.২৭ লাখ।
২০) ৮২০৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে জাতীয় সড়কের উন্নয়নে।
২১) ৩০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মান প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রচুর প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে।
২২) রাজ্যে সাফল্যজনক ভাবে নর্থ ইস্ট যুব উৎসব ২০১৮ ও ৬৪ তম জাতীয় স্কুল গেমস (ফুটবল ও জিমন্যাস্টিক্স) সম্পন্ন।
২৩) ১২ টি অতি পিছিয়ে পড়া ব্লকের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
২৪) ললিত কলা একাডেমীর একটি আঞ্চলিক সেন্টার আগরতলায় খোলা হয়েছে।
(তথ্যসূত্রঃ এস এল বি সি-র রিপোর্ট ও গত ৭ মার্চ ২০২০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কতৃক প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত “Transforming Tripura- Achievements in 2 Years- ডকুমেন্টস থেকে গৃহীত।)