‘’মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায়’’

শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ

লতা মঙ্গেশকরের প্রতিভার পরিমাপ করা সত্যি অসম্ভব। গীতিকার এবং কবি জাভেদ আখতার একবার বলেছিলেন, ‘’ মাইকেল এঞ্জেলো, বিঠোভেন অথবা শেক্সপিয়ার’এর মতো প্রতিভাধরদের সম্পর্কে আলোচনা করলেই আমাদের মনে পড়ে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ওদের অসামান্য অবদানের কথা। ‘লতা মঙ্গেশকর’ নামটিও আমাদের হৃদয় আর মননে একই অনুরণন তুলে।‘’ দীর্ঘ আট দশক ধরে তিনি তাঁর মধুময় সুরেলা কণ্ঠে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে বিমোহিত করে রেখেছিলেন। গান গেয়েছেন এ দেশের ৩৬টি ভাষায়। তাঁর গান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে উপমহাদেশের অগণিত মানুষ। উজ্জীবিত হয়েছে সবাই রোমান্সের বর্ণচ্ছটায়। অনুপ্রাণিত হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের শ্রোতা এবং সংগীতকারেরা।

প্রবাদ প্রতীম এই কিম্বদন্তী শিল্পীকে নিয়ে আখ্যানের অভাবও কম নয়। জন্মের (২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) পর তাঁর নামকরণ হয়েছিল হেমা। কিন্তু হেমার পরিবর্তে লতা হন তাঁর বাবার বিখ্যাত নাটক ‘ভাব বন্ধন’এর চরিত্র লতিকার নামানুসারে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই গাইতে শুরু করেন ওই সময়ের বিখ্যাত গায়ক আমান আলি খান সাহিব এবং আমানত খানদের সঙ্গে। তবে উপার্জনের জন্য লতা মঙ্গেশকর মাত্র তেরো বছর বয়সেই যে শিল্প-জীবন শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আক্ষরিক অর্থেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য সুর-সম্রাজ্ঞী। একমেবাদ্বিতীয়ম এই শিল্পীর সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে কেউ ছিল না ! তাঁর সাফল্য এবং উচ্চতার ধারে কাছে পৌঁছার মতো ক্ষমতা সম সাময়িক শিল্পীদের কারোরই ছিল না। নিজের গায়কী ভঙ্গি নিয়ে তিনি তৃপ্ত ছিলেন না তবু। গণ মাধ্যমে একবার সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘’নিজের গান শুনতে চাই না কখনই। শুনতে যদি হয়ই, মনে হয় তখন, অভিনিবেশ সহকারে নিজের শৈল্পিক সত্তার প্রয়োগে আরও ভালো গাইতে পারতাম, আরও উচ্চতায় তুলে নিয়ে যেতে পারতাম। তবে মাঝে মধ্যে অবশ্য নিজের গাওয়া মীরার ভজন এবং ধ্যানেশ্বরী শুনতে মন্দ লাগে না। এর বাইরে নিজের গাওয়া অন্য সব গান শুনি না! ‘’ আমাদের তখন ভাবতে বেগ পেতে হয়, নিজের কাজ সম্পর্কে তাঁর মতো একজন প্রতিভাবান শিল্পী কী পরিমাণ সমালোচক হতে পারেন ! আত্ম-প্রশস্তির বিপ্রতীপে এ হল একজন পবিত্র শিল্পীর নিষ্করুণ আত্ম সমালোচনা। অথচ নিন্দুকেরা তাঁকে এক আত্মপ্রেমী নার্সিসিস্ট বলে কত গাল দিয়েছে !

আত্ম সমালোচনার এমন গুণ ছিল বলেই মন প্রাণ উজাড় করে সব গান নিখুঁত করে গাইবার চেষ্টা তিনি আজীবন করে গিয়েছেন। গেয়েছেন এমন ভাবে, এটিই যেন তাঁর জীবনের শেষ গান। নিরন্তর চেষ্টা করে গিয়েছেন শেষ গানটিই যেন তাঁর আগের গাওয়া গানটিকে ছাপিয়ে যায়। এমন সুতীব্র প্যাশন আর কতজন শিল্পীর হয় ! নিজের কাজের বিষয়ে শিল্পী কতখানি ধ্যানমগ্ন ছিলেন তা একটি ঘটনার মধ্যেই বোঝা যায়। তিনি একবার গান গাইবার জন্য স্টুডিওতে যাবার জন্য সবে প্রস্তুত হয়েছেন। এমন সময়ই তাঁর বাংলোতে এসে হাজির আয়কর দপ্তরের আধিকারিকেরা। আয়কর সংক্রান্ত কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল বলে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকেরা তাঁর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করতে চাইছিল। লতা মঙ্গেশকর তখন তাঁদের বলেছিলেন, ‘’ঠিক আছে। গাড়ি তোমরা এখন তোমাদের হেফাজতে রাখো। আমায় শুধু স্টুডিওতে একটু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।‘’ এরপর সারা দিন আয়কর দপ্তরের হানার বিষয়ে তিনি আর একটিও কথা বলেন নি। সম্পূর্ণভাবে তিনি তাঁর গানের ভুবনেই নিমগ্ন ছিলেন।

এমন শিল্পীর ব্যক্তিগত কিম্বা পারিবারিক জীবন নিয়েও নিন্দুকেরা কম কাটা ছেড়া করে নি। রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনুজ বোন আশা ভোঁসলের সাফল্য তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তাই ঈর্ষাণ্বিত লতা মঙ্গেশকর নাকি বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন।



এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘’হ্যাঁ, মাঝে একবার আশার সঙ্গে মতান্তর হয়েছিল ঠিকই। তবে তা গান নিয়ে নয়। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কখনই কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। মাত্র ষোল বছর বয়সে আশা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন বলে আমাদের পরিবারের কেউ তা মেনে নিতে পারেন নি। মা খুবই বেদনাহত ছিলেন। আশার সঙ্গে তখন সাময়িক কালের জন্য আমারও বাক্যালাপ বন্ধ ছিল। পরে সম্পর্ক ফের সহজ হয়। কিন্তু গান নিয়ে আশার সঙ্গে আমার রেষারেষি কখনই হয় নি। আর তা করতে যাবই বা কেন; আমরা তো একই প্রফেশনে রয়েছি। গায়ন ভঙ্গি নিয়ে হয়তো ক্বচিৎ কখনও মৃদু বিরোধ হয়েছে। কিন্তু ওইসব বিরোধ এতই তুচ্ছ যে কখনই ঈর্ষায় পরিণত হয় নি। নিন্দুকেরা সেসব ঘটনাকেই বাড়িয়ে চড়িয়ে বলেছে যে আশা আর আমার মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব চলছে। সৌভাগ্যের কথা এটাই যে, আমাদের দুই বোনের মধ্যে যাবতীয় বিরোধ আমরা নিজেরাই নিজেদের মতো করে সব সময় নিস্পত্তি করে নিয়েছি।‘’

আশা ভোঁসলের প্রতিভা নিয়ে বস্তুত লতা মঙ্গেশকরের মনে কখনই কোনও সংশয় ছিল না। নিজের আশিতম জন্মদিনে বোনের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘’ আশা নিঃসন্দেহে একজন বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন গায়িকা।‘’ লতা মঙ্গেশকর জানতেন আশা ভোঁসলের গায়ন রীতি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর। দুই বোন একসঙ্গে অনেক গান গেয়েওছেন। সত্যি কথা বলতে কী, বসন্ত বাহার (১৯৫৬)এ ‘’কর গয়া মুঝ পে জাদু’’, জ্বালা (১৯৫৮)য় ‘’ আহা লে গয়ী’’ কিম্বা উৎসব (১৯৮৪) এ ‘’মন কিউঁ বেহকা’’ র মতো দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া লতা এবং আশার গানগুলি শুনলে কে যে কাকে ছাপিয়ে গিয়েছেন শ্রোতার পক্ষে বোঝা সত্যি দুস্কর হয়ে উঠে ! দুজনের কণ্ঠস্বর এবং গায়ন ভঙ্গি এতটাই আলাদা যে, এখানে তুলনাই অর্থহীন। তবে লতা মঙ্গেশকরকে যে জীবনের প্রথমাবস্থায় ওই সময়ে অনেক চলতি সামাজিক প্রথা এবং ধ্যান ধারণার বিরোধিতা করে এগোতে হয়েছিল, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রামের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এমন সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির সংখ্যাও কম ছিল না। একবার তাঁকে ধীরে ধীরে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও হয়েছিল ! ১৯৬৩’র ঘটনা। লতা মঙ্গেশকরের স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি ঘটছিল। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তখন । চলচ্ছক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিছানা ছেড়ে উঠার ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত ছিল না । অথচ শরীরে কোনও রোগের সংক্রমণ ছিল না। যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন, প্রতি দিনের খাবারে বিষ মেশানো হতো বলেই লতা মঙ্গেশকরের স্বাস্থ্যের এমন সংকট জনক পরিস্থিতি হচ্ছিল। এরপর তাঁর পরিচারিকা রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই পরিচারিকার হদিশ আর মেলে নি। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লেগেছিল লতার । ফিরে এসেছিল কণ্ঠস্বরের সতেজ ভাব। টানা মাস তিনেক বিশ্রামের পর স্টুডিওতে গিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপিত গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুরারোপিত কোহরা ফিল্মের " ঝুম ঝুম ঢলতি রাত" এবং ‘’ও বেকারার দিল’’ লতার গাওয়া এই দুটি গানই সেই সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল !

লতাকে নিজেদের পারিবারিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থা নিরসনের জন্য অল্প বয়সেই চলচ্চিত্রে গান গাইবার জন্য উদ্যোগী হতে হয়েছিল । মিহি মোলায়েম কণ্ঠস্বরের জন্য তখন তাঁর গান শুনে বিরক্ত হয়েছিলেন অনেকেই। শামসাদ বেগম, নূর জাহান, আমির বাই কর্ণাটকি এবং গীতা দত্তের মতো গায়িকারা ছিলেন সেই সময় বোম্বাইয়ের চলচ্চিত্রের অবিসম্বাদিত অধীশ্বরী। অডিশনে লতা মঙ্গেশকরের গান শুনে অনেকেই তাঁকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই একবাক্যে বলেছিল, এই মেয়ের গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন না দেখাই ভালো ! পিতার মৃত্যুর পর অর্থোপার্জনের জন্য নিরুপায় লতা মঙ্গেশকর তখন চলচ্চিত্রে ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করতেও বাধ্য হয়েছিলেন । ১৯৪২ থেকে ১৯৪৮’র মধ্যে আটটিরও বেশি ফিল্মে তিনি অভিনয় করেছিলেন। গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখা তবু ছাড়েননি। তাঁর স্বপ্ন’কে বাস্তবায়িত করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সেই সময়ের অন্যতম সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দার। যে ফিল্ম



ইন্ডাস্টি ঘৃণা ভরে লতা মঙ্গেশকর’কে প্রত্যাখ্যান করেছিল সেখানেই গায়িকা হিসেবে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গুলাম হায়দার আক্ষরিক অর্থেই চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেন নি। কারোর কাছ থেকেই সে রকম সাড়া না পেয়ে গুলাম হায়দার অবশেষে সংগীত পরিচালক হিসেবে মজবুর (১৯৪৮) ফিল্মে লতা মঙ্গেশকরকে গান গাইবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। গীতিকার নাজিম পানিপতের লেখা, ‘’দিল মেরা তোড়া, মুঝে কহি কা না ছোড়া’’ গানটি গাইবার পর লতা মঙ্গেশকর শ্রোতাদের মাঝে প্রভুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তারকা ব’নে গিয়েছিলেন রাতারাতি। তারপর আর পেছন ফিরে তাকান নি। কিন্তু গুলাম হায়দারের সাহায্য সহায়তার কথা লতা মঙ্গেশকর আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রেখেছিলেন। স্বীকারোক্তির মতো সর্বত্র তিনি এই কথাই বলেছিলেন যে, গায়িকা হিসেবে শুরুয়াতের সেই সব দিনে গুলাম হায়দারের মতো গড ফাদারের সাহায্য সহায়তা না পেলে জীবনে খ্যাতি প্রতিপত্তি কিম্বা স্বীকৃতি অর্জন, কোনও কিছুই সম্ভব হতো না।

কিন্তু এহেন খ্যাতি প্রতিপত্তির জন্য জীবনভর যথেষ্ট মূল্যও তাঁকে দিতে হয়েছিল। তার জন্য আক্ষেপও কম ছিল না সুর সম্রাজ্ঞীর। দূরদর্শনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘’আমার অবাধ স্বাধীনতার দিনগুলি হঠাৎই কী ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল যেন !’’ ছোটবেলায় তিনি নাকি বড্ড ছটফটে ছিলেন। দুষ্টুমিও করতেন খুব। দিনভর রাস্তায় খেলে বেড়াতেন। প্রতিবেশীদের বাগান থেকে ফলমূল চুরি করে খেতেন। পিতা দীননাথ মঙ্গেশকরের সংগীত সাধনায় তখন উৎসাহিত হন নি। তবে দীননাথ তাঁর শিষ্যদের যে গান শেখাতেন তা লতা মঙ্গেশকর নিভৃতে শুনেই শিখে নিতেন। রসুইঘরে রান্না করতেন মা শেবন্তী মঙ্গেশকর। সেই ঘরের তাকে বসে তখন লতা মঙ্গেশকর নিরন্তর গেয়ে চলতেন। বিরক্ত হতেন শেবন্তী মঙ্গেশকর। ক্ষিপ্ত গলায় তিনি মেয়েকে বলতেন, ‘’থামবি তুই !‘’

আগেই বলেছি, দীননাথ মঙ্গেশকরের অকস্মাৎ মৃত্যুর পর পরিবারের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে লতাকে রুটিরুজির জন্য অল্প বয়সেই কাজে নামতে হয়েছিল। ফিল্ম স্টুডিও’তে তখন থেকেই যাতায়ত শুরু তাঁর। তিনি বলেছিলেন, ‘’ পরিবারের অন্ন সংস্থানের জন্য আমি গান গাইতে, অভিনয় করতে প্রস্তুত ছিলাম। মালাড স্টেশন থেকে স্টুডিও অনেকটা দূরে ছিল। সেখানে সবাই ঘোড়ায় টানা দু চাকার গাড়িতে বসে যেতেন। পয়সা বাঁচানোর জন্য আমি হেঁটেই চলে যেতাম। কেননা ঘরে ফেরার সময় এই পয়সা দিয়েই শাকসবজি কেনা সম্ভব হতো। দুপুরে স্টুডিওতে মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় সবাই ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার কিনে খেতো। আমি ইচ্ছে করে গোটা দিনই অভুক্ত থাকতাম। খাবার কিনে পয়সা খরচ করতাম না। পরিবারের জন্য বরং পয়সা বাঁচিয়ে রাখাটাই শ্রেয়তর মনে হতো।‘’

এহেন শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের উত্থান কিম্বা আখ্যান শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্যের নিরিখে দেখলে চলবে না। আধিপত্যবাদী পুরুষের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্ডাস্টিতে অপরিসীম দক্ষতায় নিজের স্থান পাকা করে নিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনোত্তর ভারতে অবশ্যই আরও বেশ কয়েকজন গুণবতী মহিলা ছিলেন যাঁরা নিজেদের পরিশ্রম আর প্রতিভা বলে প্রচলিত বিভিন্ন পুরুষতান্ত্রিক প্রথাসমূহ চূর্ণ করে সামনে এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এমন জগদ্দল ব্যবস্থায় লতা মঙ্গেশকর নিছক বিজয়নী ছিলেন না; মায়াবিনী সুরের মাধুর্যে জয় করে নিয়েছিলেন উপমহাদেশের অগণিত মানুষের হৃদয় এবং মন। তাঁর সেই জনপ্রিয়তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বজনীন। ইএমআই লন্ডনের প্ল্যাটিনাম ডিস্ক সহ পাঁচটি অত্যন্ত মর্যাদা ব্যঞ্জক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত এই একজন এশিয়ানই এই পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৭’এ ভূষিতা হয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান ‘লেজিওঁ দনর’।

লতা মঙ্গেশকরের মতো শিল্পীর প্রতিভার পরিমাপ কিম্বা সংজ্ঞায়িত করা দুঃসাধ্য। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যে ভাবে বিভিন্ন প্রতিকুলতা জয় করে তিনি নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে তুলেছিলেন তা ভারতের মতো সদ্য স্বাধীন দেশে নারী শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিল এবং



দেশের ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম সব সময় স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে। গুলজার’এর লেখা গীতিকবিতায় লতা গেয়েছিলেন, ‘’নাম গুম জায়েগা/ চেহেরা ইয়ে বদল জায়েগা/ মেরি আওয়াজ হি পেহচান হ্যায় !’’ ... এর চাইতে চূড়ান্ত সত্য কথন আর কী হতে পারে !


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.