অভিবাসী নির্বাচকদের জন্য রিমোট ভোটিং পাইলট প্রক্রিয়া চালু করছে কমিশন

বিশেষ প্রতিনিধি

দূরবর্তী ভোটগ্রহণ যন্ত্রের মহড়া দেখার জন্য এবার কমিশনের তরফে আগামী ১৬ জানুয়ারি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হল।

কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, ওই মহড়ায় রিমোট ভোটিং যন্ত্রের (যার পোশাকি নাম রিমোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা আরভিএম) যে প্রতিরূপ ব্যবহার করা হবে, তাতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে না।

একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা হিসাবে সেটি কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিক, পড়ুয়া, কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে যাওয়া অনেকেই দূরত্বের কারণে ভোটের সময়ে নিজের জায়গায় গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। তাঁদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতেই রিমোট ভোটিং বা ই-পোস্টাল ব্যালট চালুর এই ভাবনা। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকারি কর্মীদের জন্য জারি হওয়া পোস্টাল ব্যালটের মতো বাইরে থাকা ব্যক্তিদের নামে ই-ব্যালট ইস্যু করা হবে। নিজেদের কাজের জায়গায় একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে তার ভিত্তিতে নিজের কেন্দ্রের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন তাঁরা। প্রতি বছর নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৫ জানুয়ারিকে জাতীয় ভোটার দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সেই উপলক্ষেই গত বছরের ওই দিনে ‘রিমোট ভোটিং’কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। কিন্তু নভেম্বর মাসে আইন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। তাদের দাবি, যেখানে কারচুপির সম্ভাবনা রুখতে ইভিরাম তুলে দিয়ে ব্যালট পেপারে ফিরে যাওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে, সেখানে রিমোট ভোটিং সমর্থনের প্রশ্নই নেই। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে - ভারতের নির্বাচন কমিশন অভিবাসী নির্বাচকদের জন্য রিমোট ভোটিং পাইলট প্রক্রিয়া হিসেবে চালু করতে প্রস্তুত। অভিবাসী নির্বাচকদের তাদের নিজস্ব রাজ্যে গিয়ে ভোট দিতে হবে না। ইসিআই এক মাল্টি কনস্টিটুয়েন্সি রিমোট ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন তৈরি করেছে। এই প্রোটোটাইপ আরভিএম-এর ব্যবহার প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। একটি দূরবর্তী ভোটকেন্দ্র থেকে একাধিক নির্বাচন ক্ষেত্রের নির্বাচন আরভিএম-এর মাধ্যমে করা যাবে। এই নতুন পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কিত আইনি, পরিচালনগত, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির অভিমত জানার জন্য ইসিআই একটি কনসেপ্ট নোট বিলি করেছে।

আজ প্রযুক্তি যখন এত উন্নত তখন স্থানান্তকরণের কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া একটা কাম্য সমাধান নয়। ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল। মোট ৬৭.৪ শতাংশ। ৩০ কোটিরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে না এবং কোথাও অনিয়মিত ভোট পড়ছে, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন। দেখা গেছে বিভিন্ন কারণে এখন ভোটার নতুন জায়গায় ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তি থেকে বিরত থাকছে। তাই নিজের ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচনে বেশি পরিমাণে ভোট প্রদান ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে যেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে তারমধ্যে রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে থাকা অভিবাসী ভোটার যারা ভোট দিতে পারছে না। যদিও এবিষয়ে কোনও কেন্দ্রীভূত তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই, তবুও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য এটাই প্রতিভাত করে যে, কাজ, বিবাহ, কিংবা শিক্ষা সংক্রান্ত কারণে মূলত: ভোটারদের স্থানাস্তরন ঘটে। তারমধ্যে গ্রামীণ এলাকার ক্ষেত্রে মূলত বহিস্থানাস্তরন পরিলক্ষিত হয়। প্রায় ৮৫ শতাংশ এজেন্টদের সুবিধা, দূরবর্তী ভোটদানের প্রক্রিয়া, পদ্ধতিগত ও ভোটগণনা ইত্যাদি সমস্যাগুলির বিষয়ে একটি ধারণা পত্র বিলি করা হয়েছে।

আইনি বাধা :

• আইন বিধি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা

আরপি অ্যাক্ট ১৯৫০ এবং ১৯৫১ নির্বাচনী বিধিমালা ১৯৬১-র পরিচালনা

• ভোটারদের নিবন্ধন নিয়ম ১৯৬০

অভিবাসী ভোটার চিহ্নিতকরণ :

• ভোটের দিন অনুপস্থিতি থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে

• আসল বাসস্থানের এলাকায় নথিবদ্ধ রাখা এবং অস্থায়ী অনুপস্থিতির আইনি দিক।

দূরবর্তী ভোটদান সংজ্ঞায়িত করা :

• আঞ্চলিক নির্বাচনী ক্ষেত্র বিষয়ক সমস্যাবলীর সমাধান করা

• দূরবর্তী ভোটদানের সংজ্ঞা : নির্বাচনী এলাকার বাইরে, জেলার বাইরে বা রাজ্যের বাইরে

প্রশাসনিক বাধা :

• দূরবর্তী ভোটারদের স্বঘোষণা ?

• নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ প্রদান - দূরবর্তী স্থানগুলিতে ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা।

• দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের ব্যবস্থা করা এবং নকল ভোটারের সমস্যা এড়াতে ভোটারদের সনাক্তকরণ নিশ্চিত করা।

• ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ও স্থান

• প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মী নিয়োগ ও তত্ত্বাবধান।

• দূরবর্তী এলাকায় মডেল কোড অব কন্ডাক্ট (নির্বাচনী আচরণবিধি) বাস্তবায়ন (অন্যান্য রাজ্য)

প্রযুক্তিগত বাধা :

• দূরবর্তী ভোটদানের পদ্ধতি

• পদ্ধতি / মাল্টি কনস্টিটুয়েন্সি রিমোট ইভিএম অথবা অন্য কোনও প্রযুক্তির সাথে ভোটারদের পরিচিতি।

• দূরবর্তী ভোটকেন্দ্রে গৃহীত ভোটের গণনা এবং অন্য রাজ্যে অবস্থিত আর ওকে প্রেরণ।

একটি পাবলিক সেক্টর আন্ডার টেকিংয়ের সহযোগিতায় কমিশন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থানকারীদের বর্তমান আবাসস্থল থেকে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় ভোট দেওয়ার জন্য একটি মাল্টি কনস্টিটুয়ান্সি রিমোর্ট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পাইলট ব্যবস্থা হিসেবে চালু করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ইভিএমের এই পরিবর্তিত রূপটি একটি দূরবর্তী ভোটকেন্দ্র থেকে ৭২টি ক্ষেত্রের নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে ভোটারদের জন্য একটি সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং তারা তাদের নিজস্ব এলাকার সাথে যুক্ত থাকার অনুভূতি পেতে পারে। ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন, পর্যাপ্ত সামাজিক ও মানসিক সংযোগ না থাকার কারণে অনেকে কাজের জায়গায় নিজেদের তালিকাভুক্ত করতে অনিচ্ছুক হয়। এছাড়াও নিজেদের স্থায়ী বাসস্থান, সম্পত্তি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে বলে তারা অনেকে নাম মুছে ফেলতে অনিচ্ছুক। কমিশন ১৬-০১-২০২৩ তারিখে সমস্ত স্বীকৃত ৮টি জাতীয় এবং ৫৭টি রাজ্য রাজনৈতিক দলকে বহু নির্বাচনী প্রোটোটাই প রিমোট ইভিএমের কার্যকারিতা প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। কমিশনের পক্ষ থেকে ৩১-০১-২০২৩ এর মধ্যে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন, প্রশাসনিক পদ্ধতি, ভোটদানের পদ্ধতি, আরভিএম প্রযুক্তি ইত্যাদি রয়েছে। বিভিন্ন অংশীদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়া এবং প্রোটোটাইপের প্রদর্শনের ভিত্তিতে কমিশন যথাযথ দূরবর্তী ভোটিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.