রাজ্যের পর্যটন শিল্প
অভিষেক ভৌমিক
May 26, 2025
পর্যটন শিল্প এক বৈচিত্র্যময় শিল্প। এই শিল্পের সন্ধানে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি পর্যটন স্থল বা দুইয়ের যৌথ উদ্যোগে মনোরম পরিবেশ। তবে বিশেষত আজ যদি আমাদের রাজ্যের পর্যটন স্থল নিয়ে আলোচনা করি তাহলে বলা যায় আমাদের রাজ্যে প্রাকৃতিক উপাদানের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। এবার সেই উপাদানের যদি সঠিক ব্যবহার করা যায় তাহলে তা নিশ্চিত ইউরোপীয় সভ্যতার সৌন্দর্যের থেকেও কম কিছু হবে না। যদি রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থার কথা বলা হয় তাহলে আমাদের রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের ৫৯.৯৮% এলাকা বনাঞ্চল দ্বারা আবৃত এবং সেই বনাঞ্চলের মধ্যে নামহীন বহু ঝর্ণার উৎস রয়েছে, এমনি এক তথ্যের সন্ধান দিয়েছিলেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী। ২০২৫ সালের উনার দেওয়া তথ্যানুসারে রাজ্যে ২৫০ টি নামহীন ঝর্ণা রয়েছে। যেগুলো রাজ্যের ৫৯.৯৮% বনাঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে। রাজ্য সরকার যদি এই ২৫০ টি ঝর্নার পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে পারে তাহলে সেখান থেকে আর্থিক মুনাফার বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যাবে এবং দেশ-বিদেশের প্রকৃতি প্রেমি পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে, যার ফলে সেই নিকটস্থ অঞ্চলগুলিরও আর্থিক বিকাশ ঘটবে বলাই বাহুল্য সেখানকার উপজাতি অংশের জনগোষ্ঠীরাও আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হতে পারবে।
আগত পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় আরো স্থান পেতে পারে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবার, বার্শ-বেত শিল্প, রাজকীয় স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি আরো বহু। রাজ্যের এই ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো সমগ্র পৃথিবীর চক্ষু সমতলে করতে হলে পর্যটন বিভাগের গুরত্ব সীমাহীন দক্ষতাই প্রকাশ করে যেতে হবে এবং তা সম্ভব হবে শুধু স্বচ্ছ নীতি গ্রহণের মাধ্যমেই।
রাজ্যের পর্যটন বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২০২২ সালে রাজ্যে ২,৩৫,৬০০ জন পর্যটক ভ্রমণ করেছেন যা সর্বদাই উর্ধ্বতন রয়েছে বর্তমান সময়েও। তাদের মধ্যে যারা দেশিয় পর্যটক তারা মূলত অসম, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পড়ুচেরীর বাসিন্দা। বিদেশি পর্যটকদের সঠিক তালিকা না পাওয়ায় এই পর্যায়ে লেখা সম্ভব হয়নি। ইহা নেহাত স্বল্প সংখ্যক হবে তা আমরা মেনে নিতে পারি।
তেমনি এটাও বলা যায় শুধু পর্যটক আসলেই হবে না, সেইসঙ্গে অতিথেয় পর্যটকদের পরিষেবা দেওয়ার নিরিখে রাজ্যে আরও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন হওয়া দরকার, চিকিৎসা ব্যাবস্থায় আরও উন্নয়ন হওয়া দরকার, যোগাযোগের মাধ্যম আরও দ্রুত হওয়া দরকার। একাংশের উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বর্তমান সময়েও বিভিন্ন পাচ তারার হোটেল থেকে শুরু করে নিত্যনতুন কৃত্রিম পরিষেবার দ্বারোদঘাটন ঘটেই চলছে। তেমনি রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাজ্যের প্রধান পর্যটনস্থল গুলি যদি আরও বিশেষ আকর্ষণে আকর্ষিত করা যায় তাহলে রাজ্যের উন্নতির বণ্টনও সমতালে হবে। উত্তর থেকে দক্ষিণের কেন্দ্র বিন্দু যেন রাজ্যের রেল যোগাযোগের মাধ্যম দিয়ে আরও উন্নত হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ ভারতের দ্বিতীয় জলপ্রাসাদ নীরমহল থেকে শুরু করে অমরপুরের ছবিমুড়া, বিলোনিয়ার মৈত্রী পার্ক, ডুমুরের জলধারা, বড়মুড়ার আকাশচুম্বী চূড়া, খোয়াইর বনবিথী পার্ক ইত্যাদির সৌন্দর্য ও তার যোগাযোগর পথ যদি আরো মসৃণ করা হয় তবে পর্যটন স্থল রাজ্যের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকায় অঙ্গিকার বদ্ধ হয়ে উঠবে। পর্যটন স্থল থেকে বাদ দেওয়া যাবে না রাজ্যের ৪ টি অভয়ারণ্যে গুলোকেও। সেখানকার অদ্ভুত জীববৈচিত্র্যময় ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশও পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণে অনেকটা নান্দনিক হয়ে উঠবে যদি তা বাস্তবের মাটিতে কার্যকর হয়। রাজ্যের পর্যটনের তালিকায় আরও রয়েছে রাজন্য আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য শিল্প যা প্রায় ভগ্নদশায় পরিনত হতে চলেছে, সেগুলোর পুনরুদ্ধার করে যদি নিদর্শন হিসেবে পর্যটন স্থল হিসেবে পরিচিতি দেওয়া যায় তাহলে সেখান থেকেও মুনাফা অর্জনের পথ পাওয়া যাবে।
অতঃপর বলা যেতে পারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই উত্তর পূর্ব রাজ্যের মনোরম পরিবেশকে পর্যটন কেন্দ্রর কেন্দ্রস্থল বানাতে হলে সঠিক ও সৎ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটানো অনেকটাই অনাবশ্যক। যার চিন্তা শুধু কলমের কালিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাস্তবের সাথে তাল মিলিয়ে জীবকূলের দূর্দশা না ঘটিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে শিলান্যাস ঘটাতে হবে।
আরও পড়ুন...